ব্লগিং এর চর্চা প্রথমে একটি শখ থেকে শুরু হয়, আর পরবর্তীতে এটি একটি দারুণ পেশা হিসেবে পরিণত হয়। অনেক লেখক শুধুমাত্র ব্লগের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। শুধু তাই নয় এমন অনেক ব্লগার রয়েছেন যারা ব্লগিং করে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে যে পরিমাণ আয় করেন তা আপনার চিন্তারও বাইরে। তাই, কেউ যদি কোন বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন, সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সেই বিষয়টি নিয়ে ব্লগের মাধ্যমে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন। কিন্তু ব্লগিং শুরু করার আগে আপনাকে বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা নিয়ে রাখতে হবে।
এই লেখা যারা নতুন ব্লগ শুরু করতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য। আপনার শখের যে কোনো বিষয়কে আপনি ব্লগের বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই লেখাতে তাই আপনার জন্য ব্লগিং সম্পর্কে প্রাথমিক দিক নির্দেশনা মুলক প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হলো।
ব্লগিং শুরু করার আগে যা যা জানা উচিৎ
নতুন ব্লগ শুরু করার আগে অবশ্যই পরিকল্পনার প্রয়োজন। এটা ব্লগের নাম ঠিকানা নির্বাচনের মাধ্যমে শুরু করতে হবে। ব্লগিং শুরু করার আগে, ডোমেইনের নাম নির্বাচন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাঠককে আকৃষ্ট করার জন্য ওয়েব সাইটের url একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আপনার ডোমেইনের নামই হবে, আপনার ওয়েবসাইটের ইউআরএল।
তাই, ওয়েব সাইটের url এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যাতে এটা সহজে মনে রাখা যায়। রাশেদুল ইসলাম পাভেলের আপনার ব্লগের ডোমেইন নেম যেমন হওয়া উচিৎ লেখাটি পড়ে নিলে আপনি পুরোপুরি বুঝে যাবেন আপনার ব্লগের ডোমেইনের নাম ঠিক করবেন কীভাবে।
ব্লগের নাম থেকে সবাই এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা করে থাকে, তাই ব্লগের বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত নাম নির্বাচন করতে হবে। ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র বিষয়বস্তু নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্লগের বিষয়বস্তু নির্বাচন সাধারণত দুইভাবে করতে দেখা যায়।
এক.
আপনি যদি কোন বিষয়ে পারদর্শী হন সে বিষয়ে আপনি ব্লগ তৈরী করতে পারেন। এক্ষেত্রে বিষয়বস্তু স্বতন্ত্র বা অন্যদের থেকে আলাদা হলে ব্লগের জনপ্রিয়তার জন্য ভালো। তাই এই বিষয়ে কোন আলোচনা না করে এটা আপনার উপরই ছেড়ে দিলাম।
দুই.
যে কোনো জনপ্রিয় বিষয়কে নির্বাচন করা। এক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর নির্বাচনের জন্য গুগলের সহায়তা নিতে পারেন। Google সার্চ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত সহযোগিতা পাবেন। কিন্তু এতে প্রচুর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে, তাই ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
একাধিক বিষয়বস্তু নির্বাচন না করে, যে কোন একটি বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। জনপ্রিয় ব্লগের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এগুলো যে কোনো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ব্লগের উপাদান অবশ্যই তথ্যবহুল হতে হবে যাতে পাঠক ব্লগ থেকে উপকৃত হয়।
ব্লগের হোস্টিং এবং আয়
অধিকাংশ ব্লগার wordpress.com এবং blogger.com হোস্টিং হিসেবে ব্যবহার করে। ওয়ার্ডপ্রেস এবং ব্লগারে বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা, এগুলো বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় এবং পরবর্তীতে অর্থের বিনিমযয়ে এদের বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করা যায়। এগুলো ব্লগের জন্য খুব সহজ প্ল্যাটফর্ম, যে কেউ ব্যবহার করতে পারে এবং খুব অল্প সময়েই এগুলোতে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। মাত্র ৫ মিনিটে তৈরি করুন ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রি ওয়েবসাইট, অভিজিৎ মোদকের এই লেখাটি পড়লেই আমার কথার প্রমাণ পাবেন। তবে ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রি ওয়েবসাইটের অনেক অসুবিধা রয়েছে, সেগুলো আগে জেনে নিন।
এছাড়াও কিছু হোস্টিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা কিনা খুব কম অর্থের বিনিময়ে ব্লগারদেরকে হোস্টিং এর ব্যবস্থা করে থাকে। এর জন্য ব্লগারদের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানার কোনো প্রয়োজন নেই।
ফ্রি ব্লগিং সাইটগুলোর, যেমন ব্লগার ও ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রি ওয়েবসাইটের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এই কারণে ওয়েব সাইটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে সাথে কিছু সমস্যা হতে পারে। সেই সময় paid service ব্যবহার করাই সবচেয়ে উত্তম। কিন্তু প্রাথমিকভাবে শুরু করার জন্য এবং ব্লগিংকে বোঝার জন্য ফ্রি সার্ভিস দিয়ে শুরু করাই সবচেয়ে ভাল।
ব্লগিং থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য গুগল অ্যাডসেন্স এবং amazon সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। বিশ্বের বড় বড় ব্লগাররা এই মাধ্যম দুটো ব্যবহার করে থাকে। এই সাইটের রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের লিংক ব্লগে প্রদর্শন করে থাকে।
গুগলের কিছু নীতিমালার কারণে অ্যাডসেন্সে অ্যাকাউন্ট খোলা বর্তমানে খুব জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অনেকেই এটার ভুক্তভোগী। এর মূল কারণ হচ্ছে ব্লগ পর্যাপ্ত তথ্য সমৃদ্ধ না হওয়া। এর জন্য আপনার ব্লগের কনটেন্ট কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
ব্লগের বিষয়বস্তু তথ্যবহুল এবং অন্য ব্লগের থেকে আলাদা হতে হবে। ব্লগের প্রত্যেকটা article এক হাজার শব্দের বেশি হলে ভালো হয়। এরপর ভালোভাবে ব্লগের বিষয়বস্তু এবং টেম্পলেটকে সাজিয়ে অ্যাডসেন্সের জন্যে অ্যাপ্লাই করতে হবে। অ্যাপ্লাই করার আগে ৩ পর্বের অ্যাডসেন্স পাওয়ার ১০০% গ্যারান্টি লেখাটি পড়ে নিন।
অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে উপার্জনের সুযোগ প্রদান করে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী যখন ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন থেকে কোন পণ্য ক্রয় করে তখন সেই পণ্যের একটা নিরদিষ্ট লভ্যাংশ amazon ব্লগারকে প্রদান করে থাকে। এর মাধ্যমে আপনার ব্লগ থেকে যত পণ্য বিক্রয় হবে আপনি তত লাভবান হবেন।
ব্লগের প্রচারণা
নতুন ব্লগের উন্নতির জন্য এর প্রচারণাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুব কম সংখ্যক ব্লগই গুগল এর মাধ্যমে প্রদর্শিত হয় বিশেষ করে প্রাথমিক অবস্থায়। তাই ব্লগিংয়ের প্রচারের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেকটা নতুন ব্লগের পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক-টুইটারে শেয়ার করা উচিৎ। তবে একটা পোস্ট একাধিকবার শেয়ার না করা ভালো, এতে সবাই বিরক্ত হতে পারে।
এছাড়াও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর মাধ্যমে ব্লগের প্রচারণা বৃদ্ধি করতে পারেন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ফোরাম এবং ওয়েবসাইটে আপনার ব্লগ এবং ব্লগের আর্টিকেল এর পোস্ট শেয়ার করে প্রচারণা করতে পারেন।
এই পোস্টে খুব সংক্ষেপে ব্লগিংয়ের বিষয়ে আপনাদেরকে ধারণা দেওয়া হলো। ব্লগিং এর সফলতা সর্বোপরি আপনার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ওপরই নির্ভর করবে। আপনি যদি ব্লগিং বিষয়ে খুব আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে দেরি না করে এখনই শুরু করে দিতে পারেন।
তবে প্রাথমিক অবস্থায় চর্চার জন্য ফ্রি ব্লগিং প্লাটফর্ম দিয়ে শুরু করতে পারেন। কিন্তু এরপর ব্লগিংয়ের প্রসারের জন্য আপনাকে domain name এবং হোস্টিং ক্রয় করতে হবে। সেই সাথে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করতে হবে এবং ধৈর্যধারণ করতে পারলেই আপনি সফল ব্লগার এ পরিণত হবেন।
Leave a Reply