যারা মি সিক্স বা ওয়ান প্লাস ফাইভ কিনবেন বলে ঠিক করে নিয়েছেন, তাদের উচিৎ হবে এই নোকিয়া এইট নিয়ে এই রিভিওটি পড়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া। এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের নোকিয়া এইটের সব খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানাবো। তারপর আপনি নিজেই ঠিক করে নিবেন, কোন ফোনটি আপনার জন্য ভালো হবে। যদিও দামের দিক দিয়ে ফোনগুলো এক না। তাই সিদ্ধান্ত আপনার, তাহলে জেনে নিন নোকিয়া এইটে কী কী থাকছে।
ডিজাইন
নোকিয়া এইটে নতুন কোনো ডিজাইন দেয়া হয়নি। নোকিয়া ফাইভের কপি বলা যায়। পেছন থেকে দেখলে মনে হবে নোকিয়া ফাইভ। ফোনের বাটন পজিশন ঠিক আগের মতোই রয়েছে। তাছাড়া ফোনটি খুব বেশি স্লিম না। ৭.৩ মিলিমিটার থিক। ফোনটি মেটাল বডি। ফ্রন্ট প্যানেলের ২.৫ডি কার্ভ গ্লাস এবং বডির এজ কার্ভ খুবই স্মোথ। যার জন্য হাতে নিলে কোনো সার্প মেটালের উপস্থিতি বুঝা যায় না।
ফোনটি এক হাতে খুব কমফোর্টেবলভাবে ব্যবহার করা যায় এবং হাতে নিয়ে প্রিমিয়াম ফিল হয়। ফোনটির ডিজাইন নোকিয়া ফাইভের মতো হলেও ফোনটি যথেষ্ট্য প্রিমিয়াম। ফোনের টপ সাইডে রয়েছে হেডফোন জ্যাক, বোটম সাইডে আছে ইউএসবি ৩.১ টাইপ সি এবং ভেরি লাউড লাউডস্পীকার। ব্যাক সাইডে রয়েছে বিশাল সাইজের ক্যামেরা বাম্প। তবে এর নিচে থাকা নোকিয়ার লোগোতে একটু সমস্যা আছে। এর প্রতিটি অক্ষর আলাদা আলাদা মেটাল পিস, যা গ্লু দিয়ে লাগানো।
সমস্যা হলো এই মেটাল পিসগুলো উঠে যেতে পারে। ফোনটিতে নটিফিকেশন লাইট দেয়া হয়নি। তবে নোকিয়া এইট ফোনটি এতোই মজবুত যে ইচ্ছে করে আপনার গায়ের সব জোর দিয়েও চুল পরিমাণ ব্যান্ড করতে পারবেন না।
ফোনটির ডিসপ্লের নিচে তাকালে দেখতে পাবেন একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার। স্ক্যানারটি খুবই ভালো কাজ করে। তবে এর রিকোগনেশন স্পীড একটু স্লো। তবে সমস্যা হলো ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভুল হলেও ভাইব্রেট করে আবার সঠিক হলেও ভাইব্রেট করে।
ডিসপ্লে
ফোনটির বডি রেশিওর জন্য ডিসপ্লে ৫.৩ ইঞ্চি হলেও এটি একটি ৫.৫ ইঞ্ছি ফোনের সমান। নোকিয়া এইটের ডিসপ্লে গরিলা গ্লাস ৫ দ্বারা প্রোটেকটেড। এই গ্লাস প্যানেলটি খুবই স্মোথ, ফলে আঙুল আটকে যায় না স্লাইড করা সময়। নোকিয়া এইট ফোনটিতে আপনারা পাবেন ৫.৩ ইঞ্চি ১৪৪০পি/২কে আইপিএস ডিসপ্লে। আর এর পিপিআই হচ্ছে ৫৫৪।
রেজুলেশন বেশি হওয়ায় ফোনের ডিসপ্লেতে লেখাগুলো দেখতে সার্প লাগে। এর কালার রিপ্রোডাকশন, ভিউ এঙ্গেল এবং টাচ রেসপন্স খুবই ভালো। তবে এর ব্ল্যাক কালারটা বেশ ডীপ। এতে একটি অলওয়েজ অন ডিসপ্লে টাইপ একটি ফিচার দেয়া হয়েছে। যাকে নোকিয়া নাম দিয়েছে গ্ল্যান্স। এটি বেশ ভালো কাজ করে। তবে বেশি সময় ব্যাটারি ব্যাকআপ পেতে এটি অফ করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
তবে এর একটি নেগেটিভ সাইট রয়েছে। ডিসপ্লেটা খুব বেশি ব্রাইট না। দিনের বেলা বাড়ির বাইরে ফোন ব্যবহার করা একটু কষ্টকর। এছাড়া, এটি খুব দারুণ একটি ডিসপ্লে।
প্রসেসর
নোকিয়া এইটে আপনারা পাবেন স্ম্যাপড্রাগন ৮৩৫, ৪ জিবি র্যাম, ৬৪ জিবি রম, ৩০৯০ এমএএইচ ব্যাটারি। এর পারফর্মেন্স ছিলো খুবই ভালো। ব্যাটারি কম পরিমাণে ব্যবহার করে বিধায় প্রায় ৫ ঘন্টার মতো স্ক্রিন অন টাইম পাওয়া যাবে। ফনটি খুব দ্রুত চার্জ হয়। অ্যাপ ওপেনিং এবং ক্লোজিং এ কোনো লেক ছিলো না।
তবে গেমিং এ কিছুটা লেক পাওয়া যায়। রেজুলেশন বেশি হওয়ায় গেইমসগুলোর গ্রাফিক্স দেখতে অনেক ভালো লাগছিলো। কিছু কিছু গেইমে লেক পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ গেইম স্মোথ খেলা যায়।
ক্যামেরা
ক্যামেরার দিক দিয়ে ফোনটির পারফর্মেন্স খুবই ভালো। ফোনটির ব্যাক সাইডে রয়েছে ডুয়াল ১৩ মেগাপিক্সেল এফ/২.০ লেজার এবং ফেইস ডিটেকশন অটোফোকাস ক্যামেরা। এদের একটি কালার সেন্সর এবং অন্যটি মনোক্রোম সেন্সর। দিনের বেলা ফোনটি দিয়ে খুব ভালো ছবি উঠানো যায়। ছবির কালার ঠিক থাকে এবং দেখতে বেশ ভালো লাগে।
তবে ডায়নামিক রেঞ্জ একটু কম। অর্থাৎ দুরের কোনো কিছুর ছবি উঠালে সবকিছু ঠিকঠাক বুঝা যায় কিন্তু ডিটেইল একটু কম। যদিও এটা তেমন কোনো বড় বিষয় না। তবে কাছের অবজেক্টগুলোর সার্পনেস এবং ডিটেইল সুপার।
এর ফোকাসিং স্পীড কিছুটা স্লো। তবে দিন বা রাত যেকোনো সময় এটি সঠিকভাবে ফোকাস করতে পারে। ক্যামেরার ম্যানুয়াল মুডে ছবি উঠানোর জন্য অনেকগুলো মুড দেয়া আছে।
ফ্রন্ট সাইডে ব্যবহার করা হয়েছে ১৩ মেগাপিক্সেল এফ/২.০ ক্যামেরা। এটি একদম ব্যাক ক্যামেরার মতো। তাই সেলফি ছবিগুলোর কুয়ালিটিও ব্যাক ক্যামেরার মতো ভালো।
কম আলোতেও নোকিয়া এইট খুব ভালো ছবি উঠাতে পারে। তবে গুগল পিক্সেলের কাছাকাছি না হলেও এর পরের অবস্থানে থাকবে ফোনটি। এই দামে খুবই ভালো ক্যামেরা বলা যায়। আপনাদের জন্য নোকিয়া এইট দিয়ে উঠানো একটি ছবি আমি দিয়ে দিলাম।
এই ছিলো নোকিয়া এইট রিভিউ। এখন আপনি ভেবে দেখুন কোন ফোনটি কিনবেন। তবে আমার মতে নোকিয়া এইটের ক্যামেরা, ডিসপ্লে, বিল্ড কোয়ালিটি অন্যগুলোর থেকে ভালো। আপনাদের জন্য অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে বিভিন্ন সোর্স এবং ভিডিও দেখে এই রিভিও লিখলাম। যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর আপনি যদি আপনার পছন্দের কোনো ফোনের রিভিউ পেতে চান, তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাকে জানান। নতুন নতুন ফোনের রিভিও পেতে চোখ রাখুন এই ওয়েবসাইটে।
Leave a Reply