ওয়েবের পূর্ণরূপ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা World Wide Web। পদার্থ বিজ্ঞানী ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী Sir Tim Berners-Lee ১৯৮৯ সালে ওয়েব আবিষ্কার করেন। তিনি ওয়েব তৈরি করেছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানীদের সুবিধার জন্য। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল খুব সহজে ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করতে পারা। দীর্ঘ ২৮ বছর পর আমরা পেতে চলেছি তৃতীয় প্রজন্মের ওয়েব ৩.০ যা সৃষ্টি করবে নতুন দিগন্ত।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার চমকপ্রদ আবিষ্কারের মত ওয়েব আবিষ্কার মানুষের জীবনকে সহজ, সুন্দর করে তুলেছে। ওয়েব আবিষ্কারের উদ্দেশ্য ছোট থাকা সত্ত্বেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে গেছে। কারণ তা মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তণ ঘটিয়েছে। আবিষ্কৃত ওয়েবকে বলা হয় ওয়েব ১.০ ও বর্তমানে ব্যবহৃত ওয়েবকে বলা হয় ওয়েব ২.০। নতুন ওয়েব বা তৃতীয় প্রজন্মের ওয়েব ৩.০ অতি দ্রুত আসছে আমাদের জীবনকে আরো এক ধাপ এগিয়ে দিতে।
তৃতীয় প্রজন্মের ওয়েব ৩.০
এটি একটি আকর্ষণীয় সিস্টেম যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তাসহ জীবনকে উন্নত ও সহজ করবে। তৃতীয় প্রজন্মের ওয়েব ৩.০ বুঝতে ওয়েব সর্ম্পকে এবং ওয়েব ১.০ ও ২.০ সর্ম্পকে কিছুটা ধারণা থাকতে হবে।
ওয়েব
এটি একটি তথ্য ব্যবস্থা যা ফাইলগুলোকে লিঙ্কের দ্বারা একে অপরের সাথে সংযুক্ত করার অনুমতি দেয় এবং বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান করতে সাহায্য করে।
ওয়েবের কাজ করার পদ্ধতি
ওয়েব ধাপে ধাপে কাজ সম্পূর্ণ করে থাকে। কোন একটি সম্পূর্ণ না হলে স্কিনে কোড নাম্বার প্রদর্শন করে সমস্যার কথা জানিয়ে দেয়।
যখন ব্রাউজারে ইউআরএল দেওয়া হয়, সে সংকেতটি ইন্টারনেট ডাটাবেসে বা ডোমেন নামের সার্ভারে প্রেরণ করা হয়। ডোমেন নামের সার্ভার একটি আইপি অ্যাড্রেস প্রেরণ করে। প্রেরণকৃত আইপি অ্যাড্রেসটিকে ব্রাউজার ওয়েব সার্ভারের কাছে প্রেরণ করে এবং সাথে যে পেজটি দেখতে চাওয়া হচ্ছে তার আবেদন পাঠায়। এরপর ওয়েব সার্ভার আবেদনকৃত পেজের ফাইলগুলো প্রেরণ করে। সর্বশেষ ওয়েব ব্রাউজার স্কিনটিকে HTML, CSS বা যে ভাষায় লিখা রয়েছে সে অনুযায়ী সাজিয়ে প্রদর্শন করে।
ওয়েব ১.০
ওয়েবের পথচলার ভার্সনের নাম ওয়েব ১.০। এই ভার্সটি মানুষকে তেমন সুযোগ-সুবিধা দিতে পারে নি। তবে আমাদের উপহার দিয়েছে গেটওয়ে ইন্টারফেস, সিস্টেম অফ সার্ভার ফাইল, এইচটিএমএলের ব্যবহার।
ওয়েব ১.০ এমন এক পদ্ধতি যাতে ইন্টারনেট দিয়ে শুধুমাত্র পড়তে পারা যেত বা একপক্ষের কথা বলার সুবিধা ছিল। অর্থাৎ পোস্টে মন্তব্য করা যেত না। তবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য ফর্মের ব্যবস্থা ছিল। আবার, ব্যয়বহুল হওয়ায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম ছিল এবং ইন্টারনেটের গতি ছিল কচ্ছপের মত।
সবচেয়ে বড় সম্যসা ছিল যোগাযোগ মাধ্যমের। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে সর্ম্পক স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত ভাল তথ্য ছিলো না এবং অল্প কিছু বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
ওয়েব ২.০
প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৯৯ সালে এবং ২০০৪ সালে O’Reilly Media এবং MediaLive ওয়েব ২.০ এর কনফারেন্স করেন। এটি তৈরির সময় ভাবা হত এতে শুধু বিশ্বের পরিবর্তণ হবে না বরং বিশ্বের পরিবর্তণের দিক পরিবর্তণ হবে। ওয়েব ২.০ তে ১.০ এর সম্যসাগুলো সমাধান করা হয়েছে। যেমন: পোস্ট শুধুমাত্র পড়ার জন্য নয় এতে মন্তব্য, বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া, শেয়ার, ট্যাগিং, বিভিন্ন সাইটে ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট তৈরি, যে কোন ফাইল আপলোড, উচ্চগতির ইন্টারনেট, ব্যবহারকারীদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক মজবুত হয়েছে।
এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ, ইন্টারনেটের বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা, ব্যক্তির স্বাধীনতা নিশ্চিত, বিভিন্ন তথ্য সুন্দরভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যাতে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়, ক্লাউড কম্পিউটিংরের মত নিখুঁত বিষয় পাওয়া গেছে।
তৃতীয় প্রজন্মের ওয়েব ৩.০ আসছে
ওয়েব ৩.০ নিয়ে কল্পনার শেষ নেই। কেউ বলে ২০০৪ সালে Media wank শব্দটি ব্যবহার করেন, আবার কেউ বলে ২০০৬ সালে জন মার্কোফ ব্যবহার করেন। সে যাই হোক, আমরা এটি বুঝতে পারি যে, এটি একটি শব্দ যা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এবং ওয়েব ২.০ এর পরবর্তী ওয়েব। বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতি ব্যবহার করছি তার মাঝে এটিও রয়েছে। তবে তা সামান্য পরিমাণ এবং সম্পূর্ণ পেতে আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন।
ওয়েব ৩.০ তৈরি হয়েছে সিমান্টিক মার্কআপ এবং ওয়েব সেবার উপর ভিত্তি করে।
নিচের ছবিতে ওয়েবের তিনটি ভার্সনের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হল:
যা থাকছে ওয়েব ৩.০ এ:
বর্তমান সময়ে হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত বা গুরুত্বপূণ্য তথ্যের জন্য সম্যসায় পড়ছি। এই হ্যাকিং ঠেকাতে আসছে ব্লকচেইন প্রযুক্তি। কারণ সব তথ্য এনক্রিপ্টেড হবে।
বর্তমানে তথ্য আদান-প্রদানে অন্য এক পক্ষ সাহায্য করছে। যেমন: আমরা যখন কাউকে ফেইসবুকে ম্যাসেজ দিয়, সেটা ফেইসবুক নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে তৃতীয়পক্ষের দ্বারা না গিয়ে সরাসরি চলে যাবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তথ্যের মালিক হবে না বরং নিজেই নিজের তথ্যের মালিক হবে । বর্তমানে আমরা যে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের ব্যবহার দেখছি তারই ফল।
ওয়েব ৩.০ থেকে আমরা পেতে চলেছি-
- সিমান্টিক ওয়েব ( যা সত্য জ্ঞানের মধ্যে সর্ম্পক স্থাপন এবং কম্পিউটারকে নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারদর্শী করা)
- কৃত্রিম বুদ্দিমত্তা (মনে করেন, আপনি রেসটুরেন্টে যাবেন। এক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্দিমত্তা আপনার অবস্থান ও সোশ্যাল মিডিয়ায় রিভিউ চেক করে রেসটুরেন্টে সাজেস্ট করবে)।
- প্রাকৃতিক ভাষায় অনুসন্ধান (আমরা যে ভাষায় কথা বলি)
- ৩D গ্রাফিক্স যার মধ্যে ৩D ওয়েবসাইট অন্যতম
- উন্নত ও নিরাপদ যোগাযোগ
- নতুন মডলের সফটওয়্যার
- ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হবে ডাইনামিক
- পেজ হবে এক্সিকিউটেবল
- মাইক্রোফরম্যাট
- গড় ব্যান্ডউইথ ১০ মেগাবিট যা উচ্চগতির ইন্টারনেট।
সংক্ষেপে বললে এমন একটি ব্যবস্থা যা একে অপরের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ এবং তথ্য সহজে অনুসন্ধানের জন্য সহজ ইন্টারফেস ব্যবহার।
ওয়েব ৩.০ এর উন্নয়নের জন্য কাজ করছে W3C যা ওয়েবের কনসেপ্টগুলিকে পরিপাটি করে, OMFICA যা আইসিডিএল ভাষা তৈরি করছে।
সব জল্পনা-কল্পনা ছাড়িয়ে অতি শ্রীঘ্রই আসছে ওয়েব ৩.০। নিঃসন্দেহে এটি মানুষের জীবনযাপনের ধারা পাল্টে দিবে। তাইতো তৃতীয় প্রজন্মের ওয়েব ৩.০ এর অপেক্ষায় পুরো বিশ্ববাসী।
Leave a Reply