বিশ্বের বহুল কাঙ্খিত স্কলারশিপগুলোর মাঝে তুর্কি বুর্সলারি স্কলারশিপ অন্যতম। এটি তুরস্কের সরকারি স্কলারশিপ। অনার্স লেভেলে স্কলারশিপ খুবই দুর্লভ, বিশেষত ইউরোপিয়ান কান্ট্রিগুলোতে। তাই, এই স্কলারশিপ হতে পারে আপনার শ্রেষ্ঠ সুযোগ যদি বাইরে পড়ার ইচ্ছা থেকে থাকে।
প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবারো তুরস্ক সরকার তুর্কি বুর্সলারি স্কলারশিপ ২০২০ এর জন্যে আবেদন আহবান করেছে। এই স্কলারশিপের আওতায় তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, মাস্টার্স এবং পিএইচডি করা যাবে।
উল্লেখ্য যে, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মেডিকেল সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ আরো অনেক বিষয়ে পড়তে পারবেন। অনেক দিক থেকে তুর্কি বুর্সলারি স্কলারশিপ অন্যান্য স্কলারশিপ থেকে ব্যতিক্রম। তো চলুন দেখা যাক।
তুর্কি বুর্সলারি স্কলারশিপ
পূর্বে আমাদের সাইটে প্রকাশিত ভ্যানিয়ের কানাডা গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ সম্পর্কে আপনারা হয়তো অনেকেই জেনেছেন। আজ জানুন তুর্কি সরকারের বুর্সলারি স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত।
তুর্কি বুর্সলারি স্কলারশিপের ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
প্রথমত আপনি অনার্স লেভেলে ভাল কোন দেশে স্কলারশিপ পাবেন না। আর যদি ভাগ্য জোরে পেয়েও যান, তবে সর্ব প্রথম যে সমস্যার মুখোমুখি হবেন সেটা হল টাকা। তারা আপনাকে স্কলারশিপ দিবে মানে হচ্ছে পড়ার সুযোগ দিবে। কিন্তু গাটের পয়সা খরচ করে পড়তে হবে।
আপনি আরো বেশি ভাগ্যবান হলে কোনো ফান্ডিং পেয়ে যাবেন। না পেলে পার্ট টাইম কাজ করে টাকা উপার্জন করতে হবে, সেক্ষেত্রেও আবার রয়েছে নির্ধারিত কর্মঘন্টা। এর বেশি কাজ করতে পারবেন না। এখন আপনি পড়বেন নাকি টাকা জোগাড় করবেন?
কিন্তু তুর্কি বুর্সলারিতে এ-সব ঝামেলা একদমই নেই। এটি সম্পূর্ন সরকারি বিধায় সরকার আপনার যাওয়া, আসা, টিউশন ফি এমনকি মাস শেষে একটা স্টাইপেন্ডও দিবে, হাত খরচা বাবদ।
দ্বিতীয়ত, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো টিউশন ফি ছাড়াই পড়া যায় আমেরিকার ৮টি ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু আমেরিকাসহ উন্নত যে-কোনো দেশে স্কলারশিপ পেতে প্রথমেই চাইবে আইএলটিএস স্কোর। আর অনার্সের আগে কেউ তেমন জানেই না আইএলটিএস সম্পর্কে। তো প্রথমেই বাদ।
কিন্তু তুর্কি বুর্সলারিতে আপনার আইএলটিএস লাগবে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। অল্প কিছু সাবজেক্ট, নির্ধারিত কিছু ভার্সিটিতে এটি লাগে। বাকি অন্যান্য ক্ষেত্রে আপনি তুর্কি ভাষায় পড়তে হবে। আর সরকারই আপনাকে এক বছর ভাষা শেখাবে। অনেকেই আইএলটিএস দিয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে যান, কিন্তু আমি রিকোমেন্ড করব তুর্কি ভাষায় পড়ার জন্য। কারণ, এতে আপনার নতুন একটি ভাষা শেখা হল। আপনার কোয়ালিটি তো বাড়বেই, সাথে তুরস্কে চাকরির সম্ভাবনাও।
তাছাড়া আরেকটি সুবিধা হল এখানে আপনি পাসপোর্ট ছাড়াই আবেদন করতে পারবেন। অন্যন্য সমস্ত স্কলারশিপের ক্ষেত্রে আপনি পাসপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, হেলথ ক্লিয়ারেন্স এসব আগেই জমা দিতে হবে আবেদনের সময়। এগুলো সংগ্রহ করতে মোটামুটি বেশ ভাল এ্যামাউন্টের টাকা খরচ হয়। তারপর যদি স্কলারশিপ না পান, আপনার টাকাটা গচ্চা। তুর্কি বুর্সলারিতে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধনের ইংরেজি কপি দ্বারাই আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের সময় ও যোগ্যতাঃ
প্রতিবছর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে এই স্কলারশিপ ছাড়া হয়। এ বছর ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীকে https://www.turkiyeburslari.gov.tr/ এই সাইটে গিয়ে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। তারপর কী কী করতে হবে সব বিস্তারিত লেখা আছে, আপনি শুধু ফলো করবেন। এতেও না হলে ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে নিতে পারেন।
একটি সতর্কতা সবার জানা থাকা জরুরি- এই স্কলারশিপে আবেদন করতে কোনো আবেদন ফি লাগে না। আপনি যদি কোনো এজেন্সি থেকে আবেদন করান, তাহলে তারা হয়ত একটি সার্ভিস চার্জ নিবে। কিন্তু মূল আবেদনের জন্য কোনো ফি নেই। যদি কেউ বলে ফি লাগে, তো আগেই কেটে পড়ুন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আমি সাজেস্ট করব যদি আপনার নিজের ল্যাপটপ-কম্পিউটার থাকে তো নিজেই আবেদন করুন।
স্কলারশিপের আওতায় যা যা পাবেন –
- টিউশন ফি সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় খরচ (রিসার্চ ফেলোশিপ প্রাপ্তরা ব্যতীত)
- একোমোডেশন তথা থাকা সরকারী ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে। আর খাবারের একটি বড় অংশ সরকার বহন করে বা ভর্তুকি দেয় (রিসার্চ ফেলোশিপ প্রাপ্তরা ব্যতীত)
- প্রথমবার যাওয়া ও পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফেরার বিমান টিকেট (রিসার্চ ফেলোশিপ প্রাপ্তরা ব্যতীত)
- স্বাস্থ্য বীমা তথা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা (রিসার্চ ফেলোশিপ প্রাপ্তরা ব্যতীত)
- মাসিক সম্মানী ভাতা (আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে প্রায় ১০ হাজার টাকা, মাস্টার্সে প্রায় ১৪ হাজার টাকা এবং পিএইচডিতে প্রায় ২১ হাজার টাকা)|
- এক বছর মেয়াদী তার্কিশ ভাষা কোর্স
আবেদনের যোগ্যতা-
- আবেদন করার সময় তুরস্কের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়া যাবেনা
- আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে আবেদন করার ক্ষেত্রে ২১ বছরের নিচে হতে হবে। (১-১-১৯৯৯ এর পরে জন্মগ্রহণকারীরা)
- মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য ৩০ বছরের নিচে হতে হবে। (১-১-১৯৯০এর পরে জন্মগ্রহণকারীরা)
- পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য ৩৫ বছরের নিচে হতে হবে। (১-১-১৯৮৫ এর পরে জন্মগ্রহণকারীরা)
- আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে মেডিসিন, ফার্মেসি এবং এসংক্রান্ত সাবজেক্টে আবেদন করতে এইচএসসিতে ৯০% নাম্বার এবং বাকি অন্যান্য সাবজেক্টে আবেদন করতে এইচএসসিতে ৭০% নাম্বার থাকতে হবে।
- মাস্টার্সের ক্ষেত্রে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে ন্যূনতম ৭৫% নাম্বার থাকতে হবে
- সর্বশেষ ডিগ্রী সেপ্টেম্বর ২০১৯ এর মধ্যে সম্পন্ন হতে হবে। অর্থাৎ এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
- সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে
আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- সকল পরীক্ষার সার্টিফিকেট.
- সকল পরীক্ষার মার্কসিট.
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- পাসপোর্ট/এনআইডি/জন্মনিবন্ধনের ইংরেজীতে অনুবাদ করা কপি. তবে পাসপোর্ট দেয়া বেটার
- IELTS, TOFEL, YÖS, SAT, GRE ইত্যাদির সার্টিফিকেট. (যদি থাকে)
- ২ টি রেফারেন্স লেটার
- পিএইচডি প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে রিসার্চ প্রোপোজাল
এ-সব কাগজপত্র আপনাকে সত্যায়িত করতে হবে যদি স্কলারশিপের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন, প্রথম আবেদনের সময় এগুলোর দরকার হবে না। এটিও তুর্কি বুর্সলারির একটি সুবিধা। তো আবেদন করতে চাইলে আজই করে ফেলুন। আর যে কোন দেশের ক্ষেত্রেই স্কলারশিপ পাওয়ার পর আপনার কিছু অধিকার রয়েছে, সেগুলো জেনে নিন।
Leave a Reply