ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করা যায় এই কথা এখন সবার নিকট চলে গেছে। তবে সেই ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করার পদ্ধতি অনেকের নিকট অজানা। ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করার অসংখ্য পদ্ধতি আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ডোমেইন নেম কেনা বেচা করেও টাকা আয় করা সম্ভব।
ডোমেইন নেম কেনা বেচার জন্য আপনার ডোমেইন সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি। এছাড়া কোথা থেকে ডোমেইন কিনবেন আবার কোথায় বিক্রি করবেন প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি। আপনাদের জন্য আনন্দের সংবাদ হল আজকের এই লেখায় ডোমেইন নেম কেনা বেচার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
আশা করি লেখাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাল করে পড়বেন। আর এর আগে ডোমেইন নেম কেনার আগে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া জরুরি যা ইতোমধ্যে হৈচৈ বাংলাতে পাবলিশ হয়েছে পড়ে নিতে পারেন।
ডোমেইন নেম কেনা-বেচা করে আয়
ডোমেইন নেম কি
যারা জানেন না তাদের মাথায় প্রথম প্রশ্ন আসতে পারে ডোমেইন নেম কি? সহজ ভাষায় বললে ডোমেইন নেম হল ওয়েবসাইটের ঠিকানা। সাধারণত ওয়েবসাইটগুলো বিভিন্ন সার্ভার কম্পিউটারে সেভ করা থাকে। সেই কম্পিউটার গুলোতে পৃথিবীর যে কেউ প্রবেশ করতে পারবে। তবে সেখানে প্রবেশ করতে হলে নির্দিষ্ট কিছু কোড টাইপ করতে হয় যেমন 123.23.45.5 আর এই কোডকে বলা হয় আইপি অ্যাড্রেস।
কিন্তু সমস্যা হল, পৃথিবীতে কোটি কোটি ওয়েবসাইট আছে এতগুলো কোড কিভাবে মনে রাখবে মানুষ! এই সমস্যা সমাধানের জন্য আসলো ডোমেইন নেম। অর্থাৎ এই কোডগুলো নামে পরিবর্তন করা যেমন hoicoibangla.com। এখানে .com ডোমেইন হল ডোমেইন নেম এক্সটেনশন। ডোমেইন নেম সর্বোচ্চ ৬৩ অক্ষরের মধ্যে লিখতে হয়। ডোমেইন নেমে শুধু অক্ষর, নাম্বার এবং – হাইফেন চিহ্ন ব্যবহার করা যায়।
ডোমেইন নেম কিভাবে কেনা বেচা করে
বিভিন্ন ব্যক্তি, কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইট তৈরি করার পর ডোমেইন ক্রয় করে। ডোমেইন নেম ক্রয় করার অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল কোম্পানি ডোমেইন ক্রয় করবে ডোমেইন কেনা বেচার সাইট থেকে, তাহলে আমি আয় করবো কিভাবে?
মাথা ঠান্ডা করুন, কয়েকটা ঘটনা বলি, ২০১০ সালে ফেসবুক fb.com এই ডোমেইনটি ক্রয় করে। কিন্তু ডোমেইনটি কোন ডোমেইন কেনা বেচার ওয়েবসাইটের অধীনে ছিল না, ডোমেইনটি ছিল একটা ছেলের অধীন যে কিনা এই ডোমেইনটি আগেই কিনে রেখে ছিল। পরবর্তীতে ফেসবুক যখন এটা কেনার ইচ্ছা পোষণ করে, তখন ঐ ছেলে এটা ৮.৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে।
এছাড়া বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় মোবাইল ফোন নির্মাতা কোম্পানি শাওমি তাদের mi.com ওয়েবসাইটটিও এই ভাবে ২০১৪ সালে ৩.৬ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ক্রয় করে নেয়। এইবার ভাবুন তো আপনি যদি শাওমি কোম্পানি তৈরি হওয়ার আগে mi.com নামে একটা ডোমেইন ক্রয় করে রেখে দিতেন, তবে কি অবস্থা হত!
চিন্তা-ভাবনা তো অনেক হল এইবার চলুন প্রফেশনালি কিভাবে ডোমেইন নেম কেনা বেচা করতে হয় তা জেনে নেই। প্রথমে বলে নেই এই কাজকে সাধারণত ডোমেইন পাকিং বা ডোমেইন ফ্লিপিং বলা হয়। আজকাল ডোমেইন কেনার ওয়েবসাইটগুলোই তাদের সাইট থেকে ডোমেইন কেনার পর সেটা আবার অন্যের কাছে বিক্রি সুবিধা দিয়ে থাক। এ রকম জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট হল:
উপরে উল্লেখিত ওয়েব সাইট থেকে আপনি প্রথম দিকে ৭ থেকে ১০ ডলারের বিনিময়ে ১ বছরের জন্য ডোমেইন ক্রয় করতে পারবেন। এইবার এই ডোমেইনকে আপনি আপনার ইচ্ছা মত দাম দিয়ে তাদের ওয়েবসাইটে বিক্রয় করতে পারবেন এবং ডোমেইন বিক্রি হওয়ার পর ওয়েবসাইটে সরাসরি টাকা জমা হয়ে যাবে। নিচে নেমচিপ ওয়েবসাইটের ডোমেইন বিক্রির ছবি দেখলেই আশা করি বুঝে যাবেন।
ডোমেইন নেম কেনা বেচার কিছু টিপস
ব্যবসায় সফল হতে হলে যেমন অনেক টিপস এবং ট্রিকস অনুসরণ করতে হয়, তেমনি ডোমেইন কেনা বেচা করার জন্যেও বেশ কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নিচে এরকম কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করা হল:
টার্গেট নির্ধারণ করুন: আপনি কাদের নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ ডোমেইন নেম কি ভিত্তিক হবে। আপনি টার্গেট নিতে পারেন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ই-কমার্স, কোম্পানি, কারখানা, মানুষের নাম, সংগঠন ইত্যাদি। এখন এক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে আপনাকে দাম দিতে হবে। অনেকে আছে পছন্দ হওয়া স্বত্বেও দাম বেশী হলে সে অন্য নামে ডোমেইন কিনে নিতে পারে। তাই এমন কিছুকে টার্গেট করুন যারা আপনার ডোমেইন কিনতে বাধ্য।
মেয়াদ উত্তীর্ণ ডোমেইন কিনুন: অনেক ওয়েবসাইট মালিক আছে যাদের ডোমেইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় কিন্তু ডোমেইন রিনিউ করে না কিংবা মনে থাকে না। সেই সব ডোমেইন কিনে নিতে পারলে আপনি অনেক বেশী লাভবান হবেন। কেননা এদের গুগল র্যাঙ্ক বেশী হওয়ায় মানুষ কিনতে আগ্রহী হয় বেশী।
মার্কেট রিসার্চ করুন: নিয়মিত মার্কেট রিসার্চ করুন। মানুষ কোন ধরণের ডোমেইন বেশী কিনছে সেই দিকে খেয়াল রাখুন।
সঠিক কি-ওয়ার্ডে ডোমেইন নির্বাচন করুন: সঠিক কি-ওয়ার্ড বলতে যেমন একজন গাড়ি বিক্রির সাইট তৈরি করতে চাইলে গাড়ি সম্পর্কিত কি-ওয়ার্ডে বেশী প্রাধান্য দেয়া। এছাড়া সঠিক কি-ওয়ার্ড এসইও র্যাঙ্কের জন্য জরুরি।
ডোমেইন নেম কেনা বেচার ভবিষ্যৎ
অনেক কিছুই তো জানা হল আশা করি। এবার নিশ্চই আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ডোমেইন নেম কেনা বেচার ভবিষ্যৎ কি? এক কথায় উত্তর দেয়া সম্ভব না একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। গত মার্চ মাসে ডোমেইন বিক্রির কিছু সাইটে নতুন ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের পরিসংখ্যান দেখুন:
- GoDaddy = ১,৬৯৯,৩২০টি
- NameCheap = ৭,৮১,৬৯৭টি
- Uniregistrar Corp = ৬৩,৭০১টি
- Xin Net Technology = ৩,২৮,২৭২টি
- Tucows Domains Inc. = ৪০,৩৯২টি
এখানে শুধুমাত্র ৫টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরকম শত শত সাইট আছে যারা ডোমেইন বিক্রি করে। তাহলে এবার চিন্তা করুন নিয়মিত কি পরিমাণ ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। এবার ডোমেইন বিক্রি করে লাখপতি কিংবা কোটিপতি হওয়া কয়েকজনের তালিকা দেখুন:
- CarInsurance.com = $49.7 million ৪৯ মিলিয়ন ডলার
- Insurance.com = ৩৫.৬ মিলিয়ন ডলার
- VacationRentals.com = ৩৫ মিলিয়ন ডলার
- PrivateJet.com = ৩০.১৮মিলিয়ন ডলার
- Internet.com = ১৮ মিলিয়ন ডলার
আশা করি, ডোমেইন কেনা বেচা সম্পর্কে আর কিছু বলতে হবে না। আপনি যদি ধৈর্য এবং মেধার সঠিক ব্যবহার করতে পারেন, তবে আপনিও হয়তো এই মিলিয়নদের একজন হয়ে যেতে পারেন।
শেষ কথা
ব্যবসায়ে ঝুঁকি বিদ্যমান, এখানে ঝুঁকির পরিমাণ কম। কেননা ডোমেন কিনে নিয়ে এখানে আপনি বিজ্ঞাপন দিয়েও বছর শেষে আপনার বিনিয়োগের টাকা তুলতে পারবেন। মনে রাখতে হবে ডোমেইন বেচা কেনা করে আপনি রাতা রাতি ধনী কিংবা সফল হতে পারবেন না। এজন্য দরকার চেষ্টা, শ্রম আর ধৈর্য।
ডোমেইন নেম কেনা বেচা ছাড়াও ২০টি অনলাইন ব্যবসা আইডিয়া থেকে যে কোনটি শুরু করে দিতে পারেন। আশা করি, বর্তমান অনলাইন দুনিয়ায় আপনিও নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
মোঃমনিরুজ্জামান says
ধন্যবাদ, মো: মনিরুজ্জামান ভাই। ক্ষুদ্র হলেও উদ্যোক্তা হওয়ার প্রচেষ্টায় আপনাকে অভিনন্দন। দোয়া করি, আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসাটা একদিন অনেক বড় হোক। যাইহোক, ব্যবসার প্রচার ও প্রসারে ওয়েবসাইটের গুরুত্ব অনেক। আর ওয়েবসাইটের জন্যে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনতে হয়। ডোমেইনের দাম সাধারণত ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা হয়ে থাকে। আরো কম টাকায়ও ডোমেইন কেনা যায়, আমাদের দেশের অনেক ব্রোকার অনেক কম টাকায় ডোমেইন অফার করে থাকে। সেগুলো না কেনাই ভাল।
মোঃমনিরুজ্জামান says
ডোমেইন কেনা-বেচার মাধ্যমে আয় করার উপায়গুলো খুব ভাল লাগলো। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমার একটি ওয়েবসাইট করা দরকার। আমি কিভাবে অল্প খরচে একটি ব্যবসায়ীক ওয়েবসাইট বানাবো। ডোমেইন, হোস্টিং আর ডেভেলপিং-এ কেমন খরচ হবে?
টি আই অন্তর says
ধন্যবাদ, ভাই মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। আপনার ব্যবসার জন্যে অবশ্যই একটি ওয়েবসাইট প্রয়োজন। কারণ, বর্তমান সময়ে ওয়েবসাইট হচ্ছে ব্যবসার অন্যতম আইডেনটিটি এবং পাওয়ারফুল মার্কেটিং টুল। ওয়েবসাইট থাকলে আপনার বিক্রি বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। একটা ডোমেনইন কিনতে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা খরচ হয়। আর মোটামুটি ভাল মানের হোস্টিং কিনতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হবে। ডেভেলপিং খরচটা নির্ভর করবে আপনার রিকোয়্যারমেন্টের উপর এবং যাকে দিয়ে আপনি ডেভেলপ করাবেন তার ডিমান্ডের উপর।