আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট তৈরীর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে থাকেন এবং আপনার ডোমেইন নেম আপনার ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করে এ ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই ডোমেইন কেনার আগে আপনাকে কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। একটি ওয়েবসাইট তৈরীর জন্য যে সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে থাকে ডোমেইন কেনা তার মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
একটি ডোমেইন একটি ব্যক্তিগত ব্লগ বা একটি ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটের পরিচয় বহন করে। সাথে সাথে ওয়েবসাইট বা ব্লগের জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতারও বেশ কিছু বিষয় ডোমেইন নেমের উপর নির্ভরশীল। তাই ওয়েবসাইট তৈরী করার চিন্তা মাথায় আসার সাথে সাথেই তাড়াহুড়া না করে ডোমেইন কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
ব্যক্তিগত ব্লগ আর ব্যবসায়িক ডোমেইনের নাম ঠিক করতে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করতে হয়। ব্লগের নাম সাধারণত যেমন হয়, ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটের নাম সে রকম হয় না। আপনি যদি ব্লগিং করবেন বলে ঠিক করে থাকেন এবং তার জন্য ডোমেইনের নাম কেমন হওয়া উচিৎ তাই নিয়ে দ্বিধায় পড়ে থাকেন, তাহলে দেখে নিন আপনার ব্লগের ডোমেইন নেম যেমন হওয়া উচিৎ। আর যদি আপনি আপনার বিজনেস ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে জেনে নিন আপনার বিজনেস ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন নাম কেমন হওয়া উচিৎ। এরপর আসুন, জেনে নেই ডোমেইন কেনার আগে যে-সব বিষয় আপনার অবশ্যই চেক করে নেয়া উচিৎ।
ডোমেইন কেনার আগে এ বিষয়গুলো চেক করুন
ডোমেইন কেনার সময় কিছু সাধারণ ভুল কম-বেশি সবার মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। তার মধ্যে প্রথমটি হয় ডোমেইনের নাম নির্বাচন নিয়ে। একটি ভালো মানের ডোমেইন নেম নির্বাচন করতে যেয়ে অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। অনেকে আবার নিজে ভাবতে না পেরে অন্যের পরামর্শ অনুযায়ী একটি ডোমেইন নেম বেছে নেন।
দ্বিতীয় সমস্যাটি হয় কোথা থেকে ডোমেইন কিনবেন সে বিষয় নিয়ে। প্রথম সমস্যাটির ক্ষেত্রে আমি বলবো আপনি ইচ্ছা করলে কারো পরামর্শ নিতেই পারেন, তবে কারো কথায় প্রভাবিত না হয়ে বরং আপনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। সেই সাথে আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, আপনার টার্গেটেড ভিজিটর ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে একটি সহজ ডোমেইন নেম বেছে নিন।
আর দ্বিতীয় সমস্যাটির সহজ সমাধান হচ্ছে গুগল করুন। গুগলে সার্চ করুন এবং দেখে নিন যে সবচেয়ে ভালো ডোমেইন সার্ভিস কারা দিয়ে থাকে। প্রাপ্ত রেজাল্ট থেকে ভালো এবং বিশ্বস্ত কোন কোম্পানী থেকে ডোমেইন ক্রয় করুন আর নিচে বর্ণিত কিছু বিষয়ের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।
ট্রেডমার্ক এড়িয়ে চলুন
ডোমেইন কেনার আগে সর্বাগ্রে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যে এই নামটির সাথে কোন প্রকারের ট্রেডমার্কগত জটিলতা রয়েছে কিনা। যদি এ ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে বর্তমানে কোন সমস্যার উদ্ভব না ঘটলেও ভবিষ্যতে ঘটবে না এমনটি বলা যাবে না। তবে এ সমস্যা এড়িয়ে চলার জন্য USPTO এবং Trademarkia এই দুইটি ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন। যদি এই দুটি ওয়েবসাইটে চেক করার পর দেখেন যে, আপনি যে নামটি নির্বাচন করেছেন তার সাথে এ ধরনের কোন সমস্যা নেই, তাহলে এবার দ্বিতীয় বিষয়টির দিকে নজর দিন।
চুরিকৃত ডোমেইন কেনা থেকে বিরত থাকুন
একটি ওয়েবসাইট তৈরীর সকল ধাপেই যে কোন ধরনের অনৈতিকতা বর্জন করে চলা উচিত। কারণ আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আপনার কষ্টে তৈরী করা ওয়েবসাইটটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেকেই নিজের ওয়েবসাইটকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলার জন্য অন্য কারো হ্যাককৃত বা চুরি করে ডোমেইন কিনে থাকেন।
যদি আপনিও এমনটা ভেবে থাকেন তাহলে আমি এটাকে আপনার সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত বলবো। যদি এমন চিন্তা মাথায় এসেও থাকে, তাহলে সেটাকে ঝেড়ে ফেলুন। কারণ আপনি এমনটি করলে খুব শীঘ্রই এমন সময় আসবে যখন আপনার কষ্টে উপার্জিত অর্থ অন্য কেউ নিয়ে যাবে।
বানানের দিকে লক্ষ্য রাখুন
যদি আপনি এমন কোন ডোমেইন নেম খুঁজে পেয়ে থাকেন যা আপনার কাছে সব দিক থেকে উপযুক্ত মনে হয়, তাহলে আরেকবার লক্ষ্য করুন যে ডোমেইনটির বানান সঠিক আছে কিনা। সাধারণভাবেই বলা যায় যে, আপনি যদি এমন কোন ডোমেইন ক্রয় করেন যাতে বানান ভুল রয়েছে তাহলে সেটাকে অর্থের অপচয় ব্যাতীত আর কিছুই বলা যায় না। আপনি কখনও ভবিষ্যতে এ ধরনের ডোমেইন রিসেল করতে পারবেন না।
চেক করে নিন ডোমেইনটি ব্লাকলিস্টেড কিনা
আপনি যদি আপনার সংগ্রহে বেশ কিছু ডোমেইন কিনে রাখতে এবং পরবর্তীতে সেগুলিকে রিসেল করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ডোমেইনটি গুগল বা অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা ব্লাকলিষ্ট করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। যদি তা হয়ে থাকে তাহলে আপনি ওই ডোমেইন কিনলেও কোন সার্চ ইঞ্জিন সেটিকে ইনডেক্স করবে না এবং উক্ত ডোমেইনে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে না।
সাধারণত একটি ওয়েবসাইটকে র্যাংক করানোর জন্য যদি ব্লাকহ্যাট এসইও’র মতো কোন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তখন সার্চ ইঞ্জিন উক্ত ডোমেইনটিকে ব্লাকলিষ্ট করে। এক্ষেত্রে আপনি BannedCheck.com থেকে আপনার ডোমেইনটি ইতিমধ্যে ব্লাকলিষ্ট হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
ডোমেইনের ইতিহাস জেনে নিন
ডোমেইন কেনার আগে অবশ্যই একবার Archive.org তে চেক করে দেখুন যে এই ডোমেইনটি ইতিপূর্বে কোন কোম্পানী ব্যবহার করেছে কিনা। যদি করেও থাকে তাহলে তারা কি কাজে ডোমেইনটি ব্যবহার করতো তার বিস্তারিত তথ্য আপনি এখান থেকে পেয়ে যাবেন।
আপনি যদি ভুলবশত এমন কোন কোম্পানীর ব্যবহৃত ডোমেইন কেনেন যাদের ব্যবসায়িক সুনাম মোটেও ভালো নয় সেক্ষেত্রে আপনার কোম্পানীর উপরেও তার প্রভাব পড়তে পারে।
দাম যাচাই করুন
সব ওয়েবসাইটে ডোমেইনের দাম এক রকম হয় না। আমি একটি ডোমেইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন রকমের দাম হতে দেখেছি। এজন্য আপনাদেরও বলব ডোমেইন কেনার আগে অবশ্যই সেটির রেজিষ্ট্রেশন মূল্য এবং নবায়ন মূল্য যাচাই করে নিন।
নাম যাচাই করার জন্য DNPric.es এই ওয়েবসাইটটিতে যান এবং আপনার কাঙ্খিত ডোমেইনের নাম লিখে সার্চ করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রস্তাবকৃত মূল্য তুলনা করে দেখুন এবং সেখান থেকে যেটি আপনার কাছে সাশ্রয়ী এবং লাভজনক মনে হয় সেটি থেকেই ক্রয় করুন।
একটি ডোমেইন আপনার আজীবনের সম্পদ। তাই সেটি যেখান সেখান থেকে রেজিষ্ট্রেশন না করে ডোমেইন কেনার আগে উপরের বিষয়গুলির দিকে খেয়াল রাখুন। উপরের বিষয়গুলি ছাড়াও আপনি যেখান থেকে ডোমেইন কিনতে চাচ্ছেন তারা কি কি মাধ্যমে পেমেন্ট নিয়ে থাকে এবং ঐ কোম্পানীটির ব্যবসায়িক সুনাম এবং তথ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন সে সব বিষয়েও নিশ্চিত হয়ে নিন।
Pix Solution says
ডোমেইন বায়িং গাইড নিয়ে ভালো একটি আর্টিকেল। ডোমেইন সম্পর্কে এই রকম আরো কিছু জানতে আমার আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
মহসিন হোসেন says
ডোমেইন নিয়ে দারুণ লেখা, আপনার পোস্ট পড়ে আমি সব সময় অনুপ্রেরণীত হই, ধন্যবাদ ভাই।
Rayhan says
ডোমেইন কেনার ক্ষেত্রে অসাধারণ একটা গাইড লাইন, হোস্টিং নিয়েও এমন একটা গাইড লাইন চাই।