আপনি এখন এই লেখাটি পড়ছেন তার অর্থ ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে আপনার আগ্রহ রয়েছে। তবে ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়টি কী সে ব্যাপারে আপনার যদি ভালো ধারণা না থাকে, তাহলে এই আলোচনাটি আপনার কাছে একটু খাপছাড়া লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং কী বা কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ এ সবকিছু সুন্দর ভাবে জানার জন্য “কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার শুরু করবেন” লেখাটি পড়ে ফেলুন।
জীবনে যে কোন ক্ষেত্রেই একটি অবস্থান তৈরী করতে হলে সে বিষয়ে কিছু দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিশাল দুনিয়ার জন্য সেটি আরও বেশি সত্যি। এখনকার সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীর চেয়ে কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতাই সব জায়গায় বেশি প্রাধান্য পায়। অসংখ্য প্রতিযোগীর মধ্য থেকে একজন ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয়ে দক্ষ হতে হবে, আজকের আলোচনা সেসব নিয়েই।
চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এখন দেখে নিই একজন ভালো ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে আপনাকে কী কী দক্ষতা অর্জণ করতে হবে।
ক্রিয়েটিভিটি
হ্যাঁ, ভালো একজন ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে আপনাকে একটু ক্রিয়েটিভ অবশ্যই হতে হবে। একটি প্রোডাক্ট অথবা কোন সেবা নিয়ে আপনাকে হয়ত বছরে শতাধিক বার কথা বলার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে একই কথা বারবার বললে মানুষের বিরক্তি চলে আসবে।
একটি প্রোডাক্ট বা সেবার মধ্য অন্যদের চোখে পড়ছে না এরকম যদি কোন গুণ বের করতে পারেন, তাহলে কেবল মাত্র সেটি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে বাধ্য। তাই এ ব্যাপারে দক্ষতা বৃদ্ধি জরুরী।
যোগাযোগ
মার্কেটিং সেক্টরটিতে যোগাযোগ সর্বদাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিজিটাল মার্কেটিং এর পরিধি আরো একটু বিস্তৃত। এখানে সফলতার সাথে যোগাযোগের একটি ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনাকে সব সময় দুইটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে। এক, নিয়মিত বা ধারাবাহিকভাবে ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করা। দুই, স্পষ্টভাবে আপনার বক্তব্য উপস্থাপন করা।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জণ করতে পারলে সহজেই ভালো মানের একজন ডিজিটাল মার্কেটার হওয়া সম্ভব। তাই সাবলীলভাবে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার অভ্যাস তৈরী করুন। বাস্তব জীবনে মানুষের সাথে সুন্দর করে কথা বলার চর্চা করুন, ই-মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদিতে স্মার্টলি অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে শিখুন।
কন্টেন্ট, ভিজুয়াল কন্টেন্ট এবং ভিডিও
কন্টেন্টকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রাণ বলা যেতে পারে। একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে আপনার কাজ একটি প্রোডাক্ট বা সেবাকে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আর এজন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এ কন্টেন্টের বিকল্প কিছু নেই।
ব্লগপোস্ট, প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর বর্ণনা, রিভিউ, ছবি, ভিডিও, ইনফোগ্রাফ ইত্যাদি সবকিছুই কন্টেন্ট। তবে টেক্সট বা ব্লগপোস্টের চেয়ে কোন প্রোডাক্ট বা সেবা সম্পর্কে জানার জন্য মানুষ ভিজুয়াল কন্টেন্টের প্রতি বরাবরই বেশি আগ্রহী। বর্তমানে ২ মিনিট দৈর্ঘ্যর ভিডিও তো রীতিমতো ভিজুয়াল কন্টেন্ট মার্কেটিং এর অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গুগল, আমাজন, আপল, স্যামসাঙ, অ্যাডিডাস ইত্যাদি সব নামকরা কোম্পানিই এই ট্রেন্ড ব্যবহার করছে। কেননা মানুষ অল্প সময়ে সহজভাবে প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে চায়।
তাই কন্টেন্ট বা ভিজুয়াল কন্টেন্ট বিশেষ করে ভিডিও তৈরী করার ক্ষেত্রে আপনার পারদর্শিতা ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে আপনাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
একদম প্রোফেশনাল ভিডিওমেকার হতে হবে না, মোটামুটি ভাবে ভিডিও তৈরী করা, এডিট করা বা ক্যামেরার সামনে প্রেজেন্টেশন দেওয়া ইত্যাদি যোগ্যতা অর্জণ করলেই হবে। আর এসব কাজের জন্য সেরা কিছু ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি ইনফোগ্রাফ তৈরী, ছবি তৈরী এবং লেখালিখি অভ্যাসটিও আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন।
ডাটা এনালাইসিস
আপনি যতক্ষণ এই লেখাটি পড়ছেন ততক্ষণে ইন্টারনেটে মিলিয়ন পরিমাণ নতুন ডাটা এসে যুক্ত হয়েছে এবং প্রতিমুহূর্তে এটি বেড়ে চলছে। এই বিপুল পরিমাণ ডাটা সংগ্রহ করে, বিশ্লেষণ করে সেটি কাজে লাগানোর মতো তৈরী করাটা হচ্ছে ডাটা এনালাইসিস।
এটি কীভাবে করে সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানা না থাকলে ডিজিটাল মার্কেটার হওয়া সম্ভব নয়। তাই ডাটা এনালাইসিস সম্পর্কে দক্ষতা অর্জণ করুন। গুগল, ফেসবুক, টুইটার, অ্যামাজন, আলীবাবা ইত্যাদির সব প্রতিষ্ঠানে সাফল্যের পিছনে কাজ করছে এই ডাটা এনালাইসিস। মনে রাখবেন, ডাটা এনালাইসিসে আপনি যতো বেশি দক্ষ হবেন, ভবিষ্যতে আপনার চাহিদা তত বেশি থাকবে।
SEO এবং SEM
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) এবং সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM) একটি অপরিহার্য বিষয়। এই সেক্টরে প্রবেশ করতে চাইলে আপনাকে অন্তত SEO এবং SEM এর ব্যাপারে বেসিক জ্ঞান থাকতেই হবে। কন্টেন্টকে মানুষের কাছে পৌঁছানোর অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে, SEO এবং SEM।
একটা সময় ছিলো আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট থাকলেই তা মানুষের কাছে পৌঁছাতো, জনপ্রিয়তা পেত। কিন্তু ওয়েবসাইট সংখ্যা অকল্পনীয় পরিমাণে বৃদ্ধি পাবার কারণে সার্চ ইঞ্জিনই এখন মানুষের একমাত্র ওয়েবসাইট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়েবসাইটে তাই মানসম্মত কন্টেন্ট থাকার পাশাপাশি সেটির র্যাংক বাড়ানো ভীষণ জরুরী।
SEO এবং SEM এ আপনি দক্ষ হলে ঠিক এই কাজটিই করতে পারবেন। এ দুইটিই আপনাকে ডাটা এনালাইসিস এবং কন্টেন্ট মার্কেটিং সম্পর্কে কৌশলী করে তুলবে।
টাইম ম্যানেজমেন্ট
নোটিফিকেশন, পুপ-আপ, GIFs, অ্যাড ইত্যাদির কারণে ইন্টারনেটে কোন কাজে মনোযোগ ধরে রাখা এক রকম অসম্ভব। সময় নষ্টও হয় প্রচুর। আর ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে বেশিরভাগ সময়ই আপনাকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু এসব জিনিস যেহেতু বন্ধ করা সম্ভব নয়, তাই সময়টাকে কিভাবে আরও বেশি করে কাজে লাগনো যায় সেটি জানা জরুরী। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি টাইম-ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার থেকে পছন্দ মতো যে কোনটি ব্যবহার করুন।
দিনে অন্তত পাঁচটি কাজ ঠিক করুন। একটি কাজ ধরলে সেটি শেষ করার আগে কোন নোটিফিকেশন, ই-মেইল, অ্যাড এসবের পিছনে সময় নষ্ট করবেন না। টাইম ম্যানেজিং এর এই দক্ষতা ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে আপনার ক্যারিয়ারকে তো এগিয়ে নিবেই, সেই সাথে জীবনেও এর চমৎকার সব ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ করতে পারবেন।
উপরে আলোচিত বিষয়গুলো আসলে খুব কঠিন কিছু নয়। তবে অন্য সবকিছুর মতোই এই বিষয়গুলোতে দক্ষতা অর্জণ করতে হলে এর পিছনে আপনাকে শ্রম ও সময় ব্যয় করতে হবে। যথাযথ দক্ষতাই আপনাকে একজন ভালো ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তুলবে।
Zubayer Ahmend says
প্রযুক্তির উন্মুক্ত সুবিধায় ব্যবসা-বাণিজ্যের বহুল প্রসার ঘটেছে। ফলে, ডিজিটাল মার্কেটারের চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। যারা নিজেদেরকে এই চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চান, ডিজাটাল মার্কেটার হয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্যে এটি একটি দারুণ লেখা।