বর্তমান বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ডিজিটাল ডিভাইস হ্যাক হচ্ছে। আসলে আজকাল আমরা ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর প্রতি আগের থেকে অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। কিন্তু কিছু বছর আগেও ই-রিডার, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, নোটবুক, স্মার্ট হোম ডিভাইস, গেমিং সিস্টেম, স্মার্ট টিভি এবং আরও অনেক কিছু যা আজ ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত আছে, এসব জিনিসের উপর মানুষের তেমন আগ্রহ ছিল না। বর্তমানে এসব ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহারের পরিমান বৃদ্ধির পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে ডিজিটাল ডিভাইস হ্যাক হওয়ার প্রবণতা।
বর্তমানে অনেক ডিভাইস তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার গুরুত্ব না দিয়ে, ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত আছে। অনেকের ধারণা ব্লাক হ্যাট হ্যাকাররা শুধুমাত্র কম্পিউটার এবং স্মার্টফোনই হ্যাক করে। এটা আসলে সত্য নয় বরং হ্যাকাররা বর্তমান সময়ের অধিকাংশ ডিজিটাল ডিভাইস হ্যাক করার জন্য বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে।
যে সব কারণে ডিজিটাল ডিভাইস হ্যাক হতে পারে
বর্তমানে এমন অনেক ডিজিটাল ডিভাইস আছে যেগুলো সম্পূর্ণ সুরক্ষিত নয়। কারণ ব্যবহারকারী তাদের প্রয়োজনে সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে না অথবা তারা পরিমাণমতো নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না। এটা কোন ব্যাপার না যে আপনি কোন ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করেন, তবে ব্যাপার হল এর জন্য আপনি কি রকম নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।
মূলত কিভাবে আপনার ডিভাইসগুলো হ্যাক হতে পারে, আমি এমন কয়েকটি বিষয় নিচে উল্লেখ করেছি।
ই-মেইল স্পাইওয়্যার প্রেরণের মাধ্যমে
অনেক সময় পরিচিত বন্ধুদের থেকে অপ্রয়োজনীয় ফাইল বা অ্যাপস্ এর ই-মেইল পেয়ে থাকেন। এ সবের মধ্যে কিছু হতে পারে, যা আসলে আপনার বন্ধুর ইমেইল অ্যাকাউন্টে পাঠানো স্পাইওয়্যার। যা কিনা আপনার বন্ধুর অজান্তেই, হ্যাকাররা আপনার বন্ধুর মেইল দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর একবার যদি এই স্পাইওয়্যার আপনার মোবাইল ডিভাইসে অথবা কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে, তবে হ্যাকার আপনার সকল তথ্য বিনা কষ্টে পেয়ে যাবে। আপনার অনান্য বন্ধুরা কিংবা ডিভাইসগুলো এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
রহস্যময় ইউএসবি ডিভাইস
টাইটেলে ‘রহস্যময় ইউএসবি ডিভাইস’দেখে নিশ্চই অবাক হয়েছেন। আসলে আমরা যখন এলাকার লোকাল ক্যাফে কিংবা ভাসির্টির কম্পিউটার ল্যাবে যাই তখন অনেক সময় ছোট ছোট ইউএসবি ডিভাইস পাশে ঝুলানো বা পড়ে থাকে।
মাঝে মাঝে এমন হয় যে কেউ ভুলে রেখে গেছে আবার এমনও হতে পারে একজন হ্যাকার ইচ্ছা করেই এটা রেখে গেছে। যেটা কিনা সম্পূর্ণ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত আর এটা দিয়ে যখন একটি ফাইল ওপেন করলেন আর ঠিক তখনই আপনার ডিভাইসটি ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হয়ে আপনার সকল তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। সুতরাং, এ সব রহস্যময় ইউএসবি ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
ফ্রি ওয়াই ফাই হটস্পট
যখন আপনি একটি পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন, আসলে তা হটস্পট নামে পরিচিত। যদিও তা সুবিধাজনক, কারণ ফ্রি ব্যবহার করতে পারছেন। কিন্তু এটি আসলে হ্যাকারদের জন্য বাঁধাহীন খেলার মাঠ, যেখান থেকে তারা সহজেই আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারবে।
প্রায় ৯০% পাবলিক ওয়াই-ফাই অনিরাপদ। সাধারনত বাড়িতে, আপনার ওয়্যারলেস রাউটার আপনার নেটওয়ার্ক এবং কম্পিউটার রক্ষা করার জন্য একটি ফায়ারওয়াল হিসাবে কাজ করে কিন্তু পাবলিক হটস্পটগুলিতে আপনার ডিভাইস হ্যাকারের আক্রমণের মুখে সম্পূর্ণরূপে অসহায়। সুতরাং, ফ্রি ওয়াই ফাই হটস্পট ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
পাসওয়ার্ড বিহীন ওয়াই ফাই
আপনার বাড়ির ওয়ারলেস রাউটারটিতে যদি কোন পাসওয়ার্ড না থাকে, তাহলে একজন হ্যাকার খুব সহজেই তার সঙ্গে সংযুক্ত সকল ডিভাইসকে ট্র্যাক করতে পারবে। এটা আসলে পুরো পৃথিবীতে সকল হ্যাকারদের জন্য একটি ফ্রি আমন্ত্রণপত্রের মতন। কাজেই, নিরাপত্তার জন্য নিজের বাসার ওয়ারলেস রাউটারে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখুন।
হাই রেজুলেশনের ক্যামেরা
কিছু হ্যাকার হাই রেজুলেশনের ক্যামেরা ব্যবহার করে থাকে আপনার পাসওয়ার্ড এবং লগিন তথ্য দেখার জন্য। তাই অচেনা পরিবেশ বা রুমে কোন কিছুতে লগিন করার সময় সতর্ক থাকুন এবং নিশ্চিত হন যে আপনাকে কেউ লক্ষ্য রাখছে কিনা।
মোবাইল থেকে মোবাইল
স্মার্টফোনগুলো বাস্তবিক বুদ্ধিমান সম্পন্ন হয়, আপনি এগুলো ব্যাবহার করতে পারেন বিশ্বের যে কোনো কিছুতে প্রবেশ এর জন্য। কিন্তু ফলাফল স্বরূপ অন্য স্মার্টফোনগুলো আপনার ডিভাইসটিতে প্রবেশ করতে পারবে। যখন আপনি আপনার ডিভাইসে কথা বলেন অথবা ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন, প্রকৃতপক্ষে তখন হ্যাকার আপনার অতি নিকটে আসতে পারে। তবে এটা নির্ভর করে আপনি ডিভাইসটিতে কিরূপ প্রাইভেসি দিয়ে রেখেছেন। যদি, সেটা উইক হয়, তবে এখনই আপনার ডিভাইসের প্রাইভেসি সেটিংস্ এ গিয়ে স্টং করে দিন।
হারানো ডিভাইস ফেরত পাওয়া
আপনি কি হঠাৎ করে বুঝতে পারলেন যে আপনার মোবাইলটি পাবলিক প্লেসে হারিয়ে গেছে, কেউ তা পেয়ে আপনাকে নিরাপদেই ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আসলে কি তা নিরাপদ?
এটা মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার হ্যাকারদের জন্য, কয়েক মিনিটের ভিতরে একটি স্পাইওয়্যার আপনার ডিভাইসটিতে ইনস্টল করে দিতে পারে। আপনাকে করতে পারে ভোক্তভোগী। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, হ্যাকার শুধুমাত্র আপনার ডিভাইসটি চায় কিস্তু একজন হ্যাকার আসলে তার থেকে বেশী চায়। তারা আপনার আর্থিক তথ্য এবং আপনার অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায়।
ক্ষতিকর ওয়েবসাইট
কিছু ওয়েবসাইট আছে দেখতে খুব আকর্ষণীয়, বিভিন্ন অফার এবং মিথ্যা খবর দ্বারা পরিপূর্ণ, যাতে আপনি প্রবেশ করে থাকেন। দুর্ভাগ্যবশত এরকম অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলোতে আপনি যখন প্রবেশ করেন আর কিছু ফাইল বা সফ্টওয়্যার ডাউনলোড করেন যা কিনা ম্যালওয়্যার। আপনার ডিভাইসে এইগুলো ইনস্টল বা ওপেনের দ্বারা হ্যাকার আপনার ডিভাইস থেকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ডাউনলোড শুরু করে দেয়। সুতরাং, ওয়েব ব্রাউজিংয়ে সাবধান হোন, কোন ওয়েবসাইটকে অনিরাপদ মনে হলেই সেটি থেকে বেরিয়ে আসুন।
ব্যবহৃত পণ্য ক্রয়
যদিও হতে পারে ব্যবহৃত পণ্য ক্রয় একটি স্মার্ট পদ্ধতি কিন্তু এর ক্ষতিকর দিকটিও এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না। যদি আপনি একটি ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইস ক্রয় করে থাকেন, তাতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে যে হ্যাকার কিছু সফ্টওয়্যার ইন্সটল করে রেখেছে। ইনস্টল থাকা সফ্টওয়্যার দিয়ে হ্যাকার আপনার ব্যাক্তিগত সকল তথ্য হাতিয়ে নিবে।
শেষ কথা
বর্তমান সময়ে আমরা প্রতিনিয়ত খবর পাচ্ছি তথ্য চুরির। একটা সময় ছিল যখন অর্থ-সম্পদ চুরি হত কিন্তু এখন চুরি হয় তথ্য। আর তথ্য চুরির দ্বারা চুরি করা সম্ভব আপনার সকল অর্থ-সম্পদ। তাই নিজের নিরাপত্তা সম্পর্কে চিন্তা করুন। আপনি আপনার তথ্যের নিরাপত্তার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন কমেন্ট করে আমাদের জানান?
Leave a Reply