আজকের দিনে ফেসবুকে যে কোন কিছু শেয়ার করাটা যেন এক প্রকার ট্রেন্ড হয়ে পড়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত যাই করি না কেন, সব সময় বন্ধু বান্ধব এবং পরিচিত মানুষদের আমাদের সেই সব কর্মকান্ড সম্পর্কে জানাতে আমরা ফেসবুকে বিভিন্ন পোষ্ট দিয়ে থাকি। আর ফেসবুক পোস্টে নতুনত্ব নিয়ে এসেছে জিফ ইমেজ।
কখনও কখনও আমরা মজার কিছু পেলে সেটিও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি আবার কিছু কিছু সময় আমাদের ব্যক্তিগত কোন মতামত বা আবেগেরও প্রকাশ ঘটাই এই ফেসবুক পোষ্ট এবং ষ্ট্যাটাস এর মাধ্যমে। কারণ যাই হোক না কেন, ফেসবুকে পোষ্টিংকে কোনভাবেই যেন আমরা বাদ দিতে পারিনা।
ফেসবুক তৈরী হওয়ার পর থেকেই সময়ে সময়ে বদলেছে পোষ্টিং এর ট্রেন্ড। ফেসবুক যখন প্রথম পর্যায়ে চালু হয়, তখন বেশিরভাগ মানুষই ষ্ট্যাটাস কিংবা ছবির মাধ্যমেই বেশিরভাগ পোষ্ট করতো। পরবর্তীতে ফেসবুকে জিআইএফ এবং ভিডিও পোষ্টিং এর মত ফিচারগুলিও যোগ করা হয়, যা আমাদের শেয়ারিং করার আনন্দকে বাড়িয়ে তোলে বহুগুণে।
আর শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে আমরা আগের চাইতেও আরও বিস্তারিত ভাবে নিজেদের ভাবের প্রকাশ ঘটাতে পারি। যাই হোক, আমাদের আজকের আলোচনা যেহেতু ফেসবুকে জিফ ইমেজ শেয়ার করার ব্যপারে, তাই চলুন আগে এই জিফ ইমেজের ব্যপারে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
আমরা সবাই কমবেশি জিফ ইমেজের সাথে পরিচিত। বিভিন্ন জনপ্রিয় ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্লগ বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রায়ই দেখে থাকি এবং এটিই সেই বিশেষ ধরণের ইমেজ যা বাজফিডের মতো বিনোদনভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলিকে এতো বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে।
ফেসবুকে কিভাবে জিফ ইমেজ শেয়ার করবেন
সঠিক কন্টেন্টের সাথে যদি যথাযথ ভাবে জিফ ইমেজ যোগ করা হয়, তাহলে এটি ভাইরাল হতে সময় লাগে না। আর এ কারণেই এটি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটিং টুলগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। আপনি যদি আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে এটি ব্যবহার করতে চান, তাহলে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে এগুলি সংগ্রহ করতে পারেন।
এছাড়া অ্যান্ড্রয়েডের জন্য গুগল প্লে ষ্টোরে অসংখ্য অ্যাপ রয়েছে যা মুহুর্তের মধ্যেই আপনার জন্য জিফ ইমেজ তৈরী করবে।
জিফ ইমেজ কি?
একটি জিফ ইমেজ হল এমন একটি ইমেজ যা একাধিক ইমেজের সমন্বয়ে একটি অ্যানিমেটেড ফাইলের সৃষ্টি করে। একাধিক ইমেজের সমন্বয়ে গঠিত একটি ফাইলই গ্রাফিক্স ইন্টারচেঞ্জ ফরম্যাট বা আমাদের সবার কাছে জিফ ইমেজ হিসেবে পরিচিত।
অন্যান্য ইমেজের মতই জিফ ইমেজ তৈরীরে একটি বিশেষ ধরনের অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা ইমেজের মানকে কম বা বেশি করে ফাইল সাইজকে অনেক বেশি কমিয়ে দেয়।
একাধিক ইমেজের সমন্বয়ে গঠিত ইমেজটি সবগুলি ইমেজকে একের পর এক প্রদর্শনের মাধ্যমে একটি সফল জিফ ফাইলের নির্মাণ করে। জিফ ইমেজে ডিফল্টভাবে সবগুলি ইমেজ একবারই প্রদর্শন করানো হয়ে থাকে এবং এটি ইমেজগুলি প্রদর্শনের পর সর্বশেষ ইমেজে এসে থেমে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু বর্তমানে আমরা যে-সব জিফ ইমেজ দেখতে পাই, তাতে লুপ বা ইমেজগুলির বার বার পুনরাবৃত্তি করানোর জন্য সেটিংস করা হয়ে থাকে। বর্তমানে ফেসবুকে অতিরিক্ত ভিডিও পোষ্টের কারণে কম্পিউটারে বা মোবাইলে ফেসবুক ব্রাউজ করা খুবই বিরক্তিকর এক অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করে। একারণে অনেকেই জিফ ইমেজের মাধ্যমে পোষ্ট শেয়ারে ক্রমশই আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
ফেসবুকে জিফ ইমেজ পোষ্ট করা:
ফেসবুকে জিফ পোষ্ট করার কৌশলটি খুবই সহজ। আপনি প্রথমে নির্ধারণ করুন যে আপনি কোন জিফ ইমেজটি ফেসবুকে শেয়ার করতে চান। সেটি যদি আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে আগে থেকেই সেভ করা থাকে, তাহলে পোষ্টিং এর সময় ফটো/ভিডিও অপশনটি সিলেক্ট করে আপনার পছন্দের জিফ ইমেজটি আপলোড করে দিন।
আর যদি সেটি আপনার জিফ তৈরী করার মত অবস্থা না থাকে, সেক্ষেত্রে অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রচুর পরিমাণে ফ্রি জিফ ইমেজ পাওয়া যায়। সেখান থেকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী একটি জিফ ইমেজ পছন্দ করুন। তারপর ঐ ইমেজটির লিংকটি কপি করে নিন।
এবার ফেসবুকে পোষ্টিং এর সময় আপনার কপিকৃত লিংকটি পেষ্ট করে দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে দেখতে পাবেন যে আপনার নির্বাচিত জিফ ইমেজটি সেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে। এখন আপনি চাইলে পেষ্ট করা লিংকটি মুছে দিয়ে সেখানে আপনার প্রয়োজনীয় কোন কথা লিখে পোষ্ট করতে পারেন।
জিফ ইমেজ শেয়ারের মাধ্যমে একে অন্যকে আনন্দ দেয়ার ব্যাপারটি যদি কিছু সময়ের জন্য পাশে রেখে দিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করা হয়, তাহলে আপনি এর বিপুল পরিমাণ সম্ভাবনা দেখতে পাবেন। আজকের দিনে বহু কোম্পানী, ব্র্যান্ড, এজেন্সী এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাদের প্রচারের জন্য জিফ ইমেজ শেয়ার করে থাকেন।
মজার জন্য ছাড়াও অনলাইন ভিত্তিক ব্যানার, লিডারবোর্ড, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের কাজে সবচেয়ে বেশি জিফ ইমেজের ব্যবহার গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর বড় একটি কারণ হলো জিফ এমন একটি ইমেজ ফরম্যাট যাকে সবগুলি জনপ্রিয় ব্রাউজারই সমর্থন করে থাকে।
এ-সব কারণের ফেসবুকের পাশাপাশি অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও জিফ ইমেজ ব্র্যান্ড মার্কেটিং এর বড় একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একটি মানানসই জিফ ইমজের সাথে তথ্য সম্বলিত একটি আর্টিকেল এই সময়ে কোম্পানীগুলির বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেবার শক্তিশালী হাতিয়ার।
এমনকি আপওয়ার্ক, ফাইভারের মত ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতেও আজকাল প্রচুর পরিমাণে জিফ ইমেজ তৈরীর কাজ পাওয়া যায়। ঘরে বসে জিফ তৈরী করা খুবই সহজ। অ্যাডোবি ফটোশপ, গিম্প এবং মাইক্রোসফ্ট জিফ এর মতো অ্যানিমেটর সফট্ওয়্যারগুলির সাহায্যে খুবই সহজে মানসম্মত জিফ ইমেজ তৈরী করার মাধ্যমে নিজের বার্তা মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া সম্ভব।
Leave a Reply