প্লে স্টোর থেকে আয় করার নানা রকম উপায় রয়েছে। উপায়গুলো যদি আপনার জানা থাকে, তবে এখান থেকে আয় করার ইচ্ছেটাকে আপনি গুরুত্ব দিতে পারেন অর্থাৎ আয়ের ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারেন। এমনকি, আপনার জন্যে আয় করাটা সহজ হয়ে যাবে, যদি আপনি সঠিক উপায়গুলো জানেন এবং সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করেন।
গুগল থেকে আয় করার ৫টি বিশেষ উপায় এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে প্লে স্টোর যেখান থেকে আপনি অনায়াসেই আয় করতে পারেন। আসলে ইন্টারনেট এখন শুধু ফেসবুক কিংবা ইমেলে সাধারণ যোগাযোগের কাজেই ব্যবহৃত হয় না, বরং নিত্য ব্যবহারের পাশাপাশি রয়েছে বহুমাত্রিক আয়ের সুযোগ। আর এ সুযোগটি গ্রহণ করছে বর্তমান প্রজন্মের বহু ব্যবহারকারী।
যারা বিশেষ কোনও কাজে দক্ষ, হতে পারে সেটা গ্রাফিক্স ডিজাইন কিংবা ওয়েব ডিজাইন অথবা কন্টেন্ট রাইটিং, তারা নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ভালোই আয় করছেন। যারা কোনও বিশেষ কাজে দক্ষ নন, তাদের জন্যেও রয়েছে আয় করার উপায়।
মোট কথা, আপনি দক্ষ হোন আর অদক্ষ হোন, চাইলেই আপনি নিজের বুদ্ধি আর সময় ব্যয় করে ইন্টারনেট থেকে কিছু না কিছু আয় করতে পারবেন। গুগলের প্লে স্টোর অনেকের জন্যেই আয়ের একটি বড় মাধ্যম। এর
এর আগে আমরা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে আয় করার উপায় জেনেছিলাম। আজ জানবো প্লে স্টোর বা গুগল প্লে থেকে আয় করার উপায়।
প্লে স্টোর থেকে আয় করার উপায়
অ্যাপ সেল করে আয়
গুগল প্লে স্টোর বা গুগল প্লে থেকে আয় করার সবচেয়ে ভাল ও উপযুক্ত উপায় হলো অ্যাপ বিক্রি করা, এটি সম্পর্কে কোনও সন্দেহ নেই। আপনি যদি ডেভেলপার হয়ে থাকেন, তবে এই অপশনটি আপনার জন্যে বেস্ট। আর ডেভেলপার না হয়েও আপনি অন্যদের দিয়ে অ্যাপ ডেভেলপ করে এখানে বিক্রি করতে পারেন।
যদিও আপনি আপনার অ্যাপ ব্যবহারকারীদের অর্থের বিনিময়ে আপনার অ্যাপ ব্যবহার করতে দেবেন, তবু অ্যাপটির মার্কেটিং করার জন্যে একটি ফ্রি ভার্সণও রাখতে পারেন। তাছাড়া, আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের কাছে আপনার অ্যাপটি জনপ্রিয় করে তুলতে চান, তবে আপনাকে অন্যদের তুলনায় আরও ভাল পরিষেবা সরবরাহ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, অ্যাপ বিক্রি করে আয় করতে চাইলে, ভাল মানের অ্যাপ ডেভেলপ করার পাশাপাশি অ্যাপটিকে জনপ্রিয় করে তোলার বিকল্প নেই। এবার সেটা আপনার মার্কেটিং টেকনিক কিংবা ফ্রি বা পেইড প্রমোশন, যেটা দিয়েই হোক না কেন।
তবে, অ্যাপ বিক্রির মাধ্যমে আয় করাটা সব সময় সহজ ব্যাপার নয়। এ জন্যে আপনাকে প্রথমেই এমন একটি নিশ চুজ করতে হবে যা ইউজাররা সব সময়ই পছন্দ করে থাকেন। বিশেষত, যদি এমন অ্যাপ তৈরি করতে পারেন যা ইউজারদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম কিংবা বিশেষ কোনও বিষয়ে সলিউশন দিতে সক্ষম, তবে আপনার সফলতার সম্ভাবণা অনেকখানি বেড়ে যাবে। কাজেই, হাবিজাবি বিষয় নিয়ে অ্যাপ না বানিয়ে ভাল কোনও বিষয়ে অ্যাপ বানান এবং সেটাকে মান-সন্মত করার দিকে মনোযোগ দিন।
ইন-অ্যাপ পারচেস থেকে আয়
অ্যাপ দিয়ে প্লে স্টোর থেকে আয় করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে ইন-অ্যাপ পারচেস অপশন। এই অপশনটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গেম এবং অন্যান্য এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাপের বেলায় কার্য্যকর হয়ে থাকে। বিভিন্ন আইটেম, নতুন ক্যারেক্টার, ক্যারেক্টারের আউটফিট, নতুন লোকেশন, নতুন গাড়ি, ইত্যাদি বিভিন্ন কেনার উপায় খুলে দেয়াই হচ্ছে ইন-অ্যাপ পারচেস অপশন।
এই ক্ষেত্রে আপনার অ্যাপটি আপনি ফ্রিতে ডাউনলোড করার অপশন দিতে পারেন যেখানে ইউজাররা ফ্রিতেই ইউজ করবে, কিন্তু বিভিন্ন আইটেম কিনে আপনার আয় বাড়াবে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনার অ্যাপ বা গেমের বেসিক ফাংশন আপনি ফ্রিতেই উন্মুক্ত করবেন, কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট্য ফিচার প্রিমিয়াম রেখে দেবেন যেগুলো আনলক করতে হলে পে করতে হবে। প্লে স্টোর থেকে আয় করার এটা একটা ভাল বুদ্ধি যা প্রায় সব ডেভেলপারই ব্যবহার করে থাকেন।
সে ক্ষেত্রে আপনার অ্যাপটিকে এমন আকর্ষণীয় আর ইন্টারঅ্যাক্টিভ করতে হবে, যাতে ইউজার এটির প্রতি অ্যাডিক্টিভ হয়ে যায় এবং নতুন নতুন ফিচার কিনতে বাধ্য হয়। তবে, এটাও মাথায় রাখতে হবে যে বেশি ফিচার লক করে রাখা যাবে না। কারণ, গত কয়েক বছরের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স থেকে দেখা গিয়েছে, যে-সব অ্যাপ বা গেমে বেশি ফিচার লক থাকে, ইউজাররা সেগুলো থেকে বেরিয়ে যায়। কাজেই, আপনাকে ইন-অ্যাপ পারচেসের ক্ষেত্রে একটা ব্যালেন্স বজায় রাখতে হবে।
ইন-অ্যাপ অ্যাডভার্টাইজিং থেকে আয়
বিভিন্ন সার্ভে থেকে জানা যায় যে ৪৯ পার্সেন্ট অ্যাপেই ইন-অ্যাপ অ্যাডস্ ফিচার রয়েছে। এই অপশনটি আপনাকে ইউজারদের জন্যে আপনার অ্যাপ ফ্রিতে উন্মুক্ত করে দেয়ার সুবিধা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে, আপনি যত বেশি পরিমাণ আপনার গেম বা অ্যাপের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারবেন, তত বেশি সেটি ডাউনলোড হবে। আর যত বেশি লোক আপনার অ্যাপ ডাউনলোড ও ব্যবহার করবে, তত বেশি আপনার অ্যাড থেকে আয় করার সম্ভাবণা বাড়বে।
কিছু অ্যাপ ডেভেলপার ফ্রি অ্যাপের সাথে একদিকে যেমন ইন-অ্যাপ পারচেস অপশন রাখেন, অন্যদিকে ইন-অ্যাপ অ্যাডস্ অপশনও রাখেন। আপনিও চাইলে দুইটোই রাখতে পারেন অথবা শুধু অ্যাড অপশনটি রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে, অ্যাপ বা গেমের ডেসক্রিপশনে উল্লেখ করে দিতে পারেন যে, নো ইন-অ্যাপ পারচেস। এতে আপনার ইউজার বেড়ে যাবে। আর যদি দুটোই রাখতে চান, তবে দুটোর মধ্যে ভাল ব্যালেন্স রক্ষা করতে হবে।
অ্যাপের অ্যাড থেকে আয় করতে হলে, আপনাকে আরেকটা বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। আর সেটা হচ্ছে ঘন ঘন অ্যাড শো না করা। কিছু অ্যাপ মিনিটে মিনিটে অ্যাড চালুর অপশন রাখায় ইউজাররা ভীষণ বিরক্ত। আপনি যদি এ কাজটি না করেন, তবে আপনার ইউজাররা দীর্ঘদিন আপনার অ্যাপটি ব্যবহার করবে।
ইউজারদেরকে ভিডিও দেখায় উৎসাহিত করার জন্যে রিওয়ার্ডের ব্যবস্থা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। অর্থাৎ, প্রতি বার ভিডিও অ্যাড দেখার জন্যে সে কোন না কোন পুরস্কার পাবে। হতে পারে সেটা পয়েন্ট যা দিয়ে সে কোন ফিচার আনলক করতে পারবে কিংবা বাড়তি সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
স্পন্সরশিপের মাধ্যমে আয়
প্লে স্টোর থেকে আয় করার আরো একটি ভাল উপায় হচ্ছে অ্যাপের জন্যে স্পন্সরশিপ নেয়া। আপনি যদি পরিচিত কিংবা বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর স্পন্সরশিপ ডিল করতে পারেন, তবে সেটি আপনাকে শুধু টাকাই এনে দেবে না, সেই সাথে আপনার অ্যাপের পাবলিসিটিও বাড়িয়ে দেবে।
মনে রাখবেন, ভাল মানের স্পন্সরশিপ পেলে আপনার অ্যাপ বা গেমের বিভিন্ন রকমের নতুন ডিজাইন, ফিচার ডেভেলপমেন্টসহ মার্কেটিং খরচ বেছে যাবে। অর্থাৎ, স্পন্সরশিপ থেকে আয়কৃত টাকা দিয়ে আপনি অনায়াসেই এ-সব খরচ বহণ করতে পারবেন। ফলে, আপনার মূল রেভিনিউ থেকে যাবে।
সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম থেকে আয়
আপনার অ্যাপ যদি সাবস্ক্রিপশন মডেলের জন্যে উপযোগী হয়, তবে এটি আপনাকে আয়ের আরেকটি পথ খুলে দেবে। যেমন ধরুণ, আপনার অ্যাপটি যদি ফিটনেস রিলেটেড হয় আর সেটিতে যদি ফিটনেস রুটিন নামে একটি ফিচার থাকে, তবে আপনি আরো ওয়ার্কআউট রুটিনের জন্যে সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম অফার করতে পারেন।
অথবা, আপনার অ্যাপ যদি হয় মিউজিক কিংবা ভিডিও স্ট্রিমিং রিলেটেড, তবে আপনি আরো বেটার কোয়ালিটি, প্লে-লিস্ট কিংবা ডাউনলোড অপশনের জন্যে ইউজারদেরকে সাবস্ক্রিপশন গ্রহণ করতে উৎসাহিত করতে পারেন।
এছাড়াও, আপনি আপনার অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন, কুপন কিংবা ডিসকাউন্ট চালু করতে পারেন যেগুলোর জন্য গ্রাহকদেরকে অবশ্যই সাবস্ক্রাইভ করতে হবে। সাবস্ক্রিপশন ফি হিসেবে আপনি খুব সামান্য অংক রাখতে পারেন। কিন্তু যদি সাবস্ক্রাইভার বেশি হয়, তবে এই সামান্য টাকাই আপনাকে অসামান্য সফলতা এনে দেবে।
শেষ কথা
মোবাইল অ্যাপ দুনিয়া দিন দিনই বড় হচ্ছে এবং নানা রকম ইনোভেশন যোগ হচ্ছে। সেই সাথে অ্যাপ দিয়ে গুগল প্লে স্টোর থেকে আয় করার সুযোগও বাড়ছে। আর আয় করার রয়েছে নানা রকম উপায়ও যেগুলোর কয়েকটি নিয়ে উপরে আলোচনা করেছি। আপনি চাইলে যে কোন উপায় কিংবা কয়েকটি উপায়ের কম্বিনেশন ব্যবহার করতে পারেন।
Raihan says
ভাই, আপনার কথাগুলো অনেক ভাল লেগেছে। আপনাকে ধন্যবাদ।