ডকুমেন্ট (Document) শব্দটিকে সংক্ষেপে ডক (Doc) বা ডকস্ (Docs) বলা হয়ে থাকে। গুগল ডকস্ হচ্ছে টেকজায়ান্ট কোম্পানি গুগল কর্তৃক নির্মিত ওয়েব বা ক্লাউড ভিত্তিক একটি অ্যাপ্লিকেশন। এটি মূলত ওয়ার্ড প্রসেসিং এর জন্য ব্যবহৃত হয়। চমৎকার অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যাক্তিগত ব্যবহারের জন্য একদম ফ্রী। অর্থাৎ গুগলের আরও বেশ কিছু সার্ভিসের মতো এটি ব্যবহার করতেও কোন রকম টাকার প্রয়োজন নেই।
ওয়ার্ড প্রসেসিং এর কাজ করার পাশাপাশি হিসাব-নিকাশ বা স্প্রেডশীট অর্থাৎ এক্সেলের কাজ করার জন্য এতে রয়েছে Sheets। আর প্রেজেন্টেশন তৈরীর এবং সম্পাদনার কাজ করার জন্য রয়েছে Slides নামের দুইটি অ্যাপ্লিকেশন। এছাড়াও বিভিন্ন জরিপের কাজ করার জন্য এতে রয়েছে Forms নামের আরও একটি অ্যাপ্লিকেশন।
এই চারটি অ্যাপ্লিকেশনই একত্রে প্যাকেজ হিসেবে পাওয়া যাবে গুগল ডকস্ এর ওয়েব সাইটে। আর সবগুলো অ্যাপ্লিকেশনই যেহেতু ফ্রী এবং ক্লাউড ভিত্তিক তাই, এগুলো ব্যবহার করতে শুধু প্রয়োজন হবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় এমন একটি কম্পিউটার এবং একটি গুগল একাউন্ট।
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, কম্পিউটারের পাশাপাশি স্মার্টফোনের জন্যে সেরা কিছু অফিস অ্যাপস্ এর মধ্যেও রয়েছে গুগল ডকস্। এটি অ্যান্ড্রয়েড ওবং আইওএস উভয় অপারেটিং সিস্টেমের জন্যে রয়েছে যা প্লে স্টোর কিংবা অ্যাপ স্টোরে Google Docs লিখে সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে।
গুগল ডকস্
গুগল ডকস্ কী?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে গুগল ডকস্ হচ্ছে, অনলাইনে ওয়ার্ড প্রসেসিং অর্থাৎ মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতো কাজ করার একটি অ্যাপ্লিকেশন। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় এমন একটি কম্পিউটার এবং একটি গুগল একাউন্ট থাকলেই এটি ব্যবহার করা যায়।
গুগল ডকস্ ব্যবহার করে কোন ওয়ার্ড ডকুমেন্ট তৈরী, সম্পাদনা এবং সংরক্ষণের কাজটি করা যায়। যেহেতু গুগল ডকস্ এর কাজ অনলাইনে করতে হয়, তাই এর প্রত্যেকটা চেঞ্জ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেভ হয়ে থাকে গুগল ড্রাইভে। আর পরর্তীতে ইন্টারনেট সংযোগ আছে এমন যে কোন কম্পিউটার থেকে সেগুলোতে এক্সেস করা যায়।
এছাড়াও একাধিক কম্পিউটার থেকে একাধিক ইউজার একই সাথে গুগল ডকস্ এ একটি ডকুমেন্ট সম্পাদনা করতে পারার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে কোন ইউজার কোন অংশটি পরিবর্তণ করল সেটা ঐ সময় ডকুমেন্টের সাথে সংযুক্ত সকল ইউজারই দেখতে পাবেন। আমার কাছে একাধিক ইউজারের একই ফাইল ব্যবহার ও এডিট করার সুযোগটা গুগল ডকুমেন্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা মনে হচ্ছে।
এটি প্রচলিত প্রায় সব ওয়ার্ড প্রসেসিং অ্যাপ্লিকেশনের ফাইল ফরম্যাট সাপোর্ট করে। ফলে সেগুলো অনায়াসেই এতে ইমপোর্ট করে সম্পাদনা করা যায় এবং পরে প্রয়োজন মতো ফরম্যাটে ডাউনলোড বা এক্সপোর্ট করা যায় কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভে।
গুগল এর অফিস অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজের অন্য অ্যাপ্লিকেশনগুলোর অর্থাৎ Google Sheets, Google Slides এবং Google Forms এর যে কোন ডকুমেন্ট ফাইল সহজেই অ্যাটাচড করা যায় এখানে।
এছাড়া গুগল ক্রোম ব্রাউজার থেকে এটি অফলাইনেও ব্যবহার করা যায়। ফলে এক কথায় বলা যায় যে, এ রকম দারুন সব ফিচারযুক্ত গুগল কর্তৃক নির্মিত ওয়েব ভিত্তিক ওয়ার্ড প্রসেসিং অ্যাপ্লিকেশনটিই হচ্ছে গুগল ডকস্।
কিভাবে এটি ব্যবহার করবেন?
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার বলে ফেলেছি যে গুগল ডকস্ ব্যবহার করতে গেলে দুইটি জিনিসের প্রয়োজন। একটি হলো, ইন্টারনেট সংযুক্ত একটি কম্পিউটার; অন্যটি, একটি গুগল একাউন্ট। স্মার্টফোনেও গুগল ডকস্ ব্যবহার করা যায়, তবে সেটি নিয়ে আজকে আলোচনা করব না।
ধরে নিচ্ছি, আপনার একটি কম্পিউটার রয়েছে। এবং সেই কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগও রয়েছে। যদি না থাকে তাহলে আপনার হাতের স্মার্টফোনটি দিয়ে কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে নিতে পারেন। যাইহোক, ইন্টারনেট সংযুক্ত একটি কম্পিউটার পাওয়া গেল।
এবার কম্পিউটারে একটি ব্রাউজার ওপেন করুন। ভালো হয়, গুগল ক্রোম ব্রাউজারটি ব্যবহার করলে। কেননা, গুগল ডকস্ এর সবগুলো ফিচার এতে স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করা যায়। কম্পিউটারে গুগল ক্রোম ইনস্টল করা না থাকলে গুগলের মেইন সাইটে গিয়ে ইনস্টল করে নিতে পারবেন।
এবার ব্রাউজার থেকে https://docs.google.com ব্রাউজ করুন। অথবা ছবির নিচে থাকা Google Docs বাটনে ক্লিক করুন।
এখন প্রয়োজন একটি গুগল একাউন্ট। আনন্দের কথা, অ্যান্ড্রয়েড ফোন আসার পরে এটি এখন সবারই থাকে। আপনার যদি নাও থাকে তাহলেও সমস্যা নেই। এক মিনিটের মধ্যি আপনি একটি গুগল একাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন।
যাইহোক, ব্রাউজারে যদি আপনার কোন গুগল একাউন্ট লগ-ইন করা থাকে তাহলে লিংকে ক্লিক করে সরাসরি Google Docs এর হোম পেজে চলে যেতে পারবেন। না থাকলে, আপনাকে লগ ইন করতে বলবে। এক্ষেত্রে আগের কোন একাউন্ট থাকলে লগ-ইন করে নিন। একাউন্ট না থাকলে নতুন একটি একাউন্ট খুলে নিন।
একাউন্ট খোলা শেষ হলে, অথবা লগ-ইন করা হলে আপনি Google Docs এর হোমপেজ দেখতে পাবেন। এবার এখানে বামপাশে উপরের লেখা “Strat a new document” সেকশন থেকে Blank লেখা + চিহ্ন যুক্ত থাম্বনেইলটাতে ক্লিক করুন। ব্যাস, আপনার জন্য একটি নতুন ডকুমেন্ট তৈরি হয়ে গেল। এছাড়া https://docs.google.com/create এই লিংকে ক্লিক করেও নতুন একটি ডকুমেন্ট তৈরী করতে পারবেন।
এবার ইচ্ছে এবং প্রয়োজন মতো আপনার ডকুমেন্ট তৈরী করুন, এডিট বা সম্পাদনা করুন। কাজ শেষে ডাউনলোডও করে নিতে পারবেন পছন্দের যে কোন ফরম্যাটে। এবং শেয়ার অপশনে গিয়ে একই সাথে অনেকের সাথে একই ডকুমেন্টে একইসময় কাজ করতে পারবেন। আরও সহজে ও সময় বাঁচিয়ে কাজ করতে ব্যবহার করতে পারেন গুগল ডকস্ এর শর্টকাটগুলো।
গুগল ডকস্ কী তা বলার সময় বলেছিলাম, এর দ্বারা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের কাজ করা যায় বলেছিলাম। Google Docs এবং মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর সাথে কতোটুকু সামঞ্জস্য পূর্ণ এবং দুইটির মধ্য কে সেরা তা জানতে চোখ রাখুন হৈচৈবাংলা ডটকমে। Google Docs নিয়ে চমৎকার কিছু লেখা আসছে সামনের দিনগুলোতে। এর মাঝে Google Docs নিয়ে আপনার স্পেসেফিক কিছু জানার থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানান।
Abu Syem says
গড়বাজাইল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের গুগল ডকস্ ব্যবহার করা উচিৎ।