গুগল কীপ হচ্ছে গুগলের ডেভেলপ করা একটি নোট টেকিং অ্যাপ্লিকেশন। যা স্মার্টফোন, কম্পিউটার, স্মার্টওয়াচের মতো সব ধরণের ডিজিটালে ডিভাইসে ব্যবহার করে নোট নেওয়ার কাজটি সম্পাদন করা যায়। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস এর জন্য গুগল কীপের মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। অন্যান্য প্লাটফরমের জন্য থাকছে এর চমৎকার ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ও ব্রাউজার এক্সটেনশন। অর্থাৎ আন্ড্রয়েড ও আইওএস ছাড়া অন্য কোন অপারেটিং সিস্টেমে এটি ব্যবহার করতে হয় ওয়েব ব্রাউজার থেকে।
২০১৩ সালের ২০ শে মার্চ ওয়েব ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন এবং একই সাথে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে গুগল কীপ যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১৫ সালে মুক্ত হয় এর আইওএস অ্যাপ। এছাড়া অ্যাপটি ওয়ারওএস অর্থাৎ অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টওয়াচেও ব্যবহার করা যায়।
শুরু থেকে অ্যাপটি ব্যবহারীদের নিকট বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে এটি সেরা পাঁচটি নোট টেকিং অ্যাপের মধ্য একটি। এই জনপ্রিয়তার একটি কারণ অবশ্যই গুগল ইকোসিস্টেমে অর্থাৎ গুগলের সবগুলো প্রোডাক্টের মধ্যে গুগল কীপ এর শক্তিশালী এবং কার্যকর অবস্থান। কিন্তু গুগল কীপের জনপ্রিয়তার এটিই একমাত্র কারণ নয়। কেননা, গুগলের আরও অনেক অ্যাপ ইকোসিস্টেম এর অংশ হওয়া সত্ত্বেও হারিয়ে গেছে। তাহলে গুগল কীপের বিশেষত্ব কী?
বিশেষত্ব হলো এর ফিচার, ডিজাইন এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যাবলী। সুন্দর, সহজ এবং দরকারি ফিচার সমৃদ্ধ এই অ্যাপটির ডিজাইন এবং চমৎকার কিছু ফিচার নিয়ে আজ জানবো বিস্তারিত।
গুগল কীপ কেন ব্যবহার করবেন?
আপনি যদি দৈনন্দিন কাজে ডিজিটাল নোটবুক ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে গুগল কীপ আপনার জন্য ভালো একটা অপশন হতে পারে। সাইজে ছোট এই অ্যাপটি আপনার যে কোন ধরণের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়। চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে এর ডিজাইন এবং উল্লেখযোগ্য কিছু ফিচার সম্পর্কে জেনে নিই।
ডিজাইন ও ইন্টারফেস
একটি অ্যাপ ব্যবহারকারীদের নিকট কতোটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তার অনেকটাই নির্ধারিত হয় এর ডিজাইন এবং ইন্টারফেসের উপর। বর্তমান গুগলের মিনিমাল ধাঁচের স্মুথ ডিজাইনে তৈরী করা হয়েছে অ্যাপটি। দেখতে যতোটা সুন্দর, ততটাই সহজ আর আরামদায়ক এটি ব্যবহার করা। হোমপেজে নোটগুলোর প্রিভিউ দেখা যায় লিস্ট এবং গ্রাইড সিস্টেমে। কালারফুল এই ভিউ যে কোন বয়সের মানুষেরই ভালো লাগবে।
অ্যাডভান্সড সার্চ সিস্টেম
গুগল কীপের সার্চ সিস্টেম প্রচলিত অন্য সব নোটবুকের চেয়ে নিঃসন্দেহে সেরা। নোটের টাইটেলে বা মধ্য থাকা শুধু শব্দ খোঁজা নয়, এর সার্চ অপশনের সাহায্য নোটের ধরণ, লেবেল, বিষয়বস্তু, কোলাবোরেশান ইত্যাদির ভিত্তিতে আলাদা করে সার্চ করা যায়। তবে, সবচেয়ে চমকপ্রদ যে বিষয়টি তা হচ্ছে, এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে পারে।
ধরুণ, আপনি কোন গানের ইউটিউব বা অন্য কোন লিংক এতে সেভ করে রাখলেন। সেটি পরবর্তীতে খুঁজে বের করতে চাইলে সার্চ অপশন থেকে মিউজিকে গেলেই আপনি গানের সবগুলো লিংক পেয়ে যাবেন। কিংবা ধরুন, কোন নোটের মধ্য কোন খাদ্যদ্রব্যের নাম লিখেছেন। এবার যে ভাষাতেই লিখুন না কেন ফুড সেকশনে গেলেই আপনি তা পেয়ে যাবেন।
সময় ও স্থান ভিত্তিক রিমাইন্ডার
একটা নোট লিখে টাইম সেট করে দিলে সেই টাইমে আপনাকে জানিয়ে দেবে, এই ফিচারটি সব নোটবুকেই কমন। কিন্তু কেমন হয়, যদি আপনার নোটবুকটি নির্দিষ্ট স্থানে গেলে আপনাকে কোন কাজের কথা মনে করিয়ে দেয়?
হ্যাঁ, সেই চমৎকার কাজটি করে গুগল কীপ। বাজারের লিস্ট বা যে কোন নোট যদি রিমাইন্ডার অপশনে গিয়ে Time এর পরিবর্তে Place সিলেক্ট করে নির্ধারিত স্থান যুক্ত করে দেন। তাহলে, পরবর্তীতে যখনই ঐ স্থানে যাবেন, তখনই গুগল কীপ আপনাকে নোটটি দেখিয়ে দেবে!
স্মুথ ড্রয়িং প্যানেল
নোটবুক অ্যাপগুলোর মধ্যে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ড্রয়িং টুলসটি গুগল কীপ এর। তিন রকম ব্রাশ ব্যবহার করে শুধুমাত্র আঙুল দিয়েই সুন্দর যে কোন কিছু একে ফেলা সম্ভব। এছাড়া সিলেক্ট অপশন ব্যবহার করে প্রতিটি রেখা আলাদা আলাদা করে স্থানান্তর এবং ছোটবড় করা যায়।
ড্রয়িং প্যানেলের স্মুথনেস শুধু ব্যবহার করলেই বোঝা সম্ভব। সহজ কথায় বললে, একদম প্রফেশনাল ড্রয়িং অ্যাপ ছাড়া এ-রকম স্মুথ ড্রয়িং এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যায় না। তবে, এতে শেপ বা কালার ফিলিং এর মতো কিছু দরকারি ফিচার যোগ করার সুযোগ রয়েছে।
কোলাবোরেশান
গুগল ডকস এর মতো গুগল কীপেও কোলাবোরেশান করে কাজ করা যায়। অর্থাৎ, একই সাথে কয়েকজন মিলে একটি নোট লেখার ব্যবস্থা রয়েছে। এভারনোট বা ওয়াননোটের মতো প্রোফেশনাল নোট টেকিং অ্যাপে এ সুবিধাটি রয়েছে। সম্পূর্ণ ফ্রী এবং এ-রকম ছোটখাটো অন্য কোন অ্যাপে সেটি নেই। তাই, এদিক দিয়েও এগিয়ে রাখতে পারেন গুগল কীপকে।
এতসব সুবিধা থাকলেও টেক্সট ফরম্যাটিং বা ওয়েব ক্লীপারের মতো চমৎকার কিছু ফিচারের কমতি রয়েছে এতে। হয়তোবা গুগল কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এই ফিচারগুলো এতে যুক্ত করবে। তবে, আপনি যদি খুব বেশি প্রফেশনাল কাজে এটি ব্যবহার না করেন, তাহলে এ নিয়ে মোটেও ভাবতে হবে না। ব্যাক্তিগত বা দৈনন্দিন নোটবুকের প্রয়োজনীয় সকল কাজই স্বাচ্ছন্দে করতে পারবেন গুগল কীপে।
তো, গুগল কীপ এর ফিচার নিয়ে এই ছিলো আজকের বিস্তারিত। আপনি কি গুগল কীপ ব্যবহার করেন? কেমন লাগে গুগল কীপ? অথবা স্মার্টফোনে অন্য যে কোন নোট টেকিং অ্যাপ ব্যবহার করে থাকলে সেটি সম্পর্কে আপনার অনুভূতি জানিয়ে দিন কমেন্ট বক্সে!
Abdur Rahman says
আমি ৩ বছর যাবত গুগল কীপ এটা ব্যবহার করি। এর সব চেয়ে বড় সুবিধা হলো ফোন চেঞ্জ করলেও নিজের গুগল একাউন্ট সাইন ইন করলে নোটগুলা খুব অল্প সময়ে ও স্বল্প নেটওয়ার্কেও রিস্টোর হয়ে যায়। ঝামেলা নেই কোনো!
মাকসুদ says
কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আবদুর রহমান ভাই। অনিচ্ছাবশত দেরীতে সারা দেওয়ার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
গুগল কীপের এই সুবিধাটির জন্য আসলে নোটগুলা হারিয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা প্রায় একদমই নেই। একই ভাবে কিন্তু ফোনের কন্টাক্টও গুগল কন্টাক্ট এ সেভ করে রাখতে পারেন। এতে করে সিম এবং ফোন চেঞ্জ করলেও হারিয়ে যাবে না কন্টাক্ট।