আপনি কি ৭৫, ৫৮৫, ৮৯৫ এবং ৮৯, ৭৩২, ৬১৯ সংখ্যা দুইটি গুণ করতে পারবেন?
নিশ্চয়ই না।
কিন্তু ক্যালকুলেটর আপনার জন্যে এই জটিল গুণ অংকটি সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন করে দিতে পারবে।
এটাকে আপনি হয়তো একটা সাধারণ ব্যাপার ভাবছেন। ক্যালকুলেটরের কাজ তো এটাই আর তার কাজ তো সে করবেই!
একদিক থেকে এটা স্বাভাবিকই, কিন্তু আপনি কি জানেন ক্যালকুলেটর কে আবিস্কার করেন আর এর নেপথ্যের গল্পটি কেমন ছিল?
আজ আমরা যত সহজে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে ছোট ও সাধারণ অংক থেকে অনেক বড় ও জটিল সংখ্যার হিসেব করে থাকি, ক্যালকুলেটর তৈরি করাটা এতটা সহজ ছিল না। কারণ, এর পেছনে অনেক সময় ও শ্রম দিতে হয়েছে, আর মেধা খাটানোর বিষয় তো প্রথমেই রয়েছে যাতে এটি ঠিক মতো কাজ করে।
ক্যালকুলেটরে যেসব ইকুইপমেন্ট থাকে
আপনি যদি ঊণিশ শতকের ক্যালকুলেটর পেতেন আর সেটি খুলতেন, তবে এর ভেতরে শতাধিক ইকুইপমেন্ট দেখতে পেতেন। যেমন-
- প্রিসিশন গিয়ার,
- এক্সলেস
- রডস্
- লেভারস্, ইত্যাদি।
কিন্তু আধুনিক ইলেকট্রিক ক্যালকুলেটর খুলে আপনি অবাক হয়ে ভাববেন, এত কম জিনিস! আমি অবশ্য আপনাকে কিছুতেই উৎসাহিত করছি না যে, আপনার প্রয়োজনীয় ক্যালকুলেটরটি খুলে দেখে নিন। পরে সেটি নষ্ট হয়ে গেলে আমাকে বকবেন। তারচেয়ে জেনে নিন একটা ক্যালকুলেটরে প্রধাণত কি কি পার্ট থাকে।
- ইনপুট-কিবোর্ড: প্রায় ৪০টি ছোট আকারের প্লাস্টিকের কী থাকে, যেগুলোর নিচে রাবারের ঝিল্লি দেয়া। আর রাবারের নিচে থাকে টাচ-সেনসেটিভ সার্কিট।
- প্রসেসর: একটি মাইক্রোচিপসহ প্রসেসর। এটি পুরনো দিনের ক্যালকুলেটরের গিয়ারের মতোই একই কাজ করে।
- আউটপুট: আমাদের প্রত্যাশিত নাম্বারের ক্যালকুলেশন দেখানোর জন্যে একটি লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে (এলসিডি)।
- পাওয়ার সোর্স: একটি দীর্ঘস্থায়ী লিথিয়াম ব্যাটারি। কিছু ক্যালকুলেটরে সূর্যের আলো থেকে পাওয়ার সঞ্চয়ের জন্যে সোলার সেল থাকে।
ক্যালকুলেটর ও মানব মস্তিস্ক
আমরা যখন দুই আর দুয়ে যোগ করি, তখন আমাদের ব্রেন মূলত একটি নাম্বার লাইন কল্পণা করে থাকে যা দুই থেকে শুরু আর ৪ হওয়ার জন্যে ব্রেন কিছু স্পট হপ করে থাকে। নিদেন পক্ষে, যতক্ষণ না উত্তরটি মাথায় না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত ব্রেন এই হপিং প্রক্রিয়াটি চালাতে থাকে। সিম্পল, এটা খুবই সিম্পল। বস্তুত, দুয়ে দুয়ে কত হয় তা ঠিক করার প্রসেসটি আমাদের ব্রেনে অ্যানালগ পদ্ধতিতেই হয়ে থাকে।
কিন্তু ব্রেন যদি নাম্বার লাইন কল্পণা করতে না পারে! বিশেষ করে, বড় সংখ্যার ক্ষেত্রে যে লাইনটি অনেক বড় হয়, তখন ব্রেনের কি অবস্থা হয়!
যদিও আমাদের ব্রেনের ক্ষমতা বিশাল, প্রতি সেকেন্ডে সেটি কম্পিউটারের চেয়ে ৫ গুণ দ্রুত ক্যালকুলেশন করতে পারে। কিন্তু নাম্বার লাইন কল্পণা করতে পারে না। যারফলে, কম্পিউটার বা ক্যালকুলেটরের প্রয়োজন হয়।
ক্যালকুলেটর কিভাবে কাজ করে?
আমরা যখন ক্যালকুলেটরে কোনও নাম্বার ইনপুট দেই, তখন সফলতার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কিছু কার্যক্রম ঘটে। কার্যক্রমগুলো নিচে দেয়া হলো-
- আমরা প্রথমে ক্যালকুলেটরের উপরিভাগে থাকা প্লাস্টিক বোর্ডে থাকা নাম্বার বাটন প্রেস করি। এতে নাম্বারের নিচে থাকা রাবার ঝিল্লি সংকোচিত হয়। এটি এক ধরনের ক্ষুদ্র ট্রাম্পোলিন যা প্রতিটি কী এর নীচে সরাসরি একটি ছোট রাবার বোতাম এবং তার নীচে ফাঁকা স্থান রয়েছে। নাম্বার প্রেস করলে ওই ফাঁকা স্থানের ঝিল্লি থেকে নাম্বার কালেক্ট হয়ে যায়।
- রাবার বাটনটি যখন নিচের দিকে চাপ দেয়, তখন কিবোর্ড সেন্সরের নিচে থাকা দুটি লেয়ারের মধ্যে ইলেকট্রোনিক যোগাযোগ তৈরি হয়। আর তখনই কিবোর্ড সার্কিট ইনপুট দেয়া নাম্বারটি ডিটেক্ট করে নেয়।
- এরপর, প্রসেসর চিপ নাম্বার বা প্রেস করা কী-টি ফিগার আউট করে।
- প্রেস করা নাম্বারের সাথে করোসপেন্ডিং করে প্রসেসর চিপে থাকা একটি সার্কিট ক্যালকুলেট করার জন্যে উপযুক্ত সেগমেন্ট অ্যাক্টিভেট করে।
- আমরা যখন একাধিক নাম্বার প্রেস করি, প্রসেসর চিপ তখন সেগুলো ডিসপ্লে করে এবং যতক্ষণ না আমরা যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ বা অন্য কোনও অপারেশন বা ফর্মুলা প্রেস না করি, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রসেসর কী একই কাজ করতে থাকে।
- ক্যালকুলেটরে থাকা রেজিস্টার নামের একটি মেমোরি নাম্বারগুলো এবং অপারেট করার প্রক্রিয়াটি স্টোর করতে থাকে। আর ফাইনালি, অপারেশন সাক্সেস করে ডিসপ্লেতে ফলাফল শো করে।
আশা করি, ক্যালকুলেটর কিভাবে ক্যালকুলেট করে সেটা বুঝতে আর বাকী নেই। অধিকন্তু ক্যালকুলেটর সম্পর্কে আরো কিছু অতিরিক্ত তথ্য জানলেন যা আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়েছে নিশ্চয়ই।
Hasibul says
ক্যালকুলেটরের ক্যালকুলেশন সিস্টেম সম্পর্কে আগে জানা ছিল না। এই লেখাটি পড়ে ক্যালকুলেটর সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য জানলাম যা উপকারে এসেছে।