কিউ আর কোড হচ্ছে বহুল প্রচলিত বারকোডের একটি দ্বিমাত্রিক এবং আপগ্রেডেড রুপ। বার-কোড জিনিসটি আমরা সবাই কম বেশি দেখেছি। যে কোন প্রোডাক্টের গায়ে বা বইয়ের পিছনের মলাটে সাদার মধ্য কালো ডোরাকাটা বেশ কিছুটা লম্বা লাইন থাকে, সেটিই বার-কোড। বারকোড ব্যবহার করা হয় মূলত কোন প্রোডাক্টের আইডেন্টি নাম্বার প্রকাশ করার জন্য।
সংক্ষিপ্ত যে কোন তথ্যকে দ্রুত ও সহজভাবে যন্ত্রের কাছে পঠন যোগ্য করার জন্য এই ধরণের কোডগুলো ব্যবহার করা হয়। অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (OMR) প্রযুক্তি অপটিক্যাল ক্যারেকটার রিকগনিশন (OCR) প্রযুক্তির তুলনায় দ্রুত, কম ব্যায়বহুল এবং নির্ভুল হওয়ায়, কম তথ্য যন্ত্রের নিকট তুলে ধরার জন্য খুবই উপযুক্ত।
বার-কোড বা কিউ আর কোড জাতীয় কোডে ঠিক এই কাজটিই করা হয়। যে কোন ক্যারেক্টারে লেখা কোন তথ্যকে উপস্থাপন করা হয় মেশিন রিডেবল কিছু মার্কের মাধ্যমে।
কিউ আর কোড
কিউ আর কোডের ব্যবহার বারকোডের মতো এতো সীমিত পরিসরে নয়, এর ব্যবহার অনেক বিস্তৃত। বার কোডে যেখানে কেবলমাত্র সংখ্যা ও হাতে গোনা কিছু আসকি ক্যারেকটার নিয়ে কাজ করে, সেখানে কিউ আর কোড সাপোর্ট করে ৪ হাজারেরও বেশি ইউনিকোড ক্যারেক্টার!
যার অর্থ শুধুমাত্র প্রোডাক্ট আইডেন্টি বা সংখ্যা ভিত্তিক কোন কিছু নয়, বরং যে কোন ধরণের শব্দ এতে ব্যবহার করা সম্ভব। আর এ কারণেই কিউ আর কোডের ক্ষেত্র বিস্তৃতি হয়েছে ব্যাপকহারে।
কিউ আর কোডের ব্যবহারঃ
আমাদের দেশে কিউ-আর কোডের ব্যবহার কিছুদিন আগে খুব বেশি ছিলো না বললেই চলে। এখন এটি বেশ দেখতে পাওয়া যায়। পেমেন্ট সিস্টেম বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম বিকাশের অ্যাপ আসার পরে এটির ব্যবহার বলা গেলে লক্ষণীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে!
তবে শুধু মাত্র লেনদেন বা ব্যবসায়িক কাজেই নয়, আপনি চাইলেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার করতে পারেন। যেমন-
- ফোন বুক শেয়ারিং।
- বিজনেজ কার্ড শেয়ারিং।
- ওয়াইফাই শেয়ারিং।
- ওয়েব সাইটের ঠিকানা আদান প্রদান।
- যে কোন ধরণের লিংক শেয়ারিং।
- পেমেন্ট সিস্টেম।
এ রকম সব ক্ষেত্র ছাড়াও আরও হাজার রকম কাজে ব্যবহার করা যায় কিউ আর কোড। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ১০০০ ক্যারেক্টারের মধ্য লেখা যে কোন তথ্যকে প্রকাশ করতে পারেন কিউ আর কোডের মাধ্যমে। যেটি ক্যামেরা আছে এ রকম যে কোন ডিভাইসের কাছে হবে দ্রুত পঠনযোগ্য।
কীভাবে তৈরি করবেন কিউ আর কোড
স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটার দুইটির যে কোন একটি ব্যবহার করে খুব সহজেই তৈরি করতে পারবেন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কিউ আর কোড। অনলাইন কিংবা অফলাইনে।
অনলাইনে কিউ আর কোড তৈরী
অনলাইনে কিউ আর কোড তৈরী করর জন্য ওয়েব সাইট এর সংখ্যা কম নয়। গুগলে সার্চ করলেই একগাদা ওয়েবসাইট আপনার সামনে এনে হাজির করবে। সমস্যা হচ্ছে কোন সাইটেই বলা গেলে পূর্ণাঙ্গ সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় না।
আমি এখানে তাই দুইটি সাইটের কথা বলব। একটি একেবারে সাধারণ, অন্যটি একটু উন্নত ফিচার সমৃদ্ধ। এই দুইটি সাইট থেকে একদম সাধারণ ঝামেলা বিহীন ব্যক্তিগত কৌতুহল মেটানো থেকে শুরু প্রোফেশনালভাবে বা ব্যাবসায়িকভাবে কিউ আর কোড তৈরী করা সম্ভব।
The-Qrcode-Generator
রেজিস্ট্রেশনের ঝামেলা নেই। পেমেন্টের ব্যাপারও নেই। জাস্ট যাবেন। কী কাজের জন্য কিউ আর কোড তৈরী করতে চান, সেটি সিলেক্ট করবেন। তারপরে আপনার তথ্যগুলো লিখবেন, পাশেই কিউ আর কোড জেনারেট হতে থাকবে।
লেখা শেষ হলে Save লেখাটির উপরে চাপ দিয়ে ফাইলনেম লিখে সেভ করে দিলেই ডাউনলোড হয়ে যাবে! ব্যাস! সিম্পল, বিগিনার লেভেলের প্রয়োজনের জন্য এটিই যথেষ্ট।
QR-Code-Generator
এটি প্রফেশনাল বা বিগিনার সবার জন্যই উপযুক্ত একটি সাইট। কিউ আর কোডের যত রকম ফিচার থাকা সম্ভব, সবই এখানে পাবেন। একেবারে ঝামেলা বিহীন সিম্পল কিউ আর কোড তৈরী থেকে শুরু করে ডিজাইন, লোগো যুক্ত, ভেক্টর ফরম্যাটে কোড ডাউনলোড, এমনকি ডায়ানামিক কিউ আর কোড তৈরীর সুবিধা রয়েছে এই সাইটে।
উল্লেখ্য, যে কিউ আর কোড কোড প্রিন্ট করে ফেলার পরও কোডের তথ্য পরিবর্তণ করতে পারে এখানে।
সাইটটি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কিংবা রেজিস্ট্রেশনসহ ব্যবহার করতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ফিচার কম। মাত্র পাঁচ টাইপের কিউ আর কোড তৈরী করা যায়। ফ্রেম অ্যাড ছাড়া কোন কাস্টমাইজড বা ডায়ানামিক কোড তৈরীর ফিচার পাওয়া যাবে না।
যদি কষ্ট করে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেন, তাহলে ১৫ দিনের ফ্রি ট্রায়াল পাবেন, যার মাধ্যমে সকল ফিচার ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। ১৫ দিনের ট্রায়াল শেষ হয়ে গেলে ভয়ের কিছু নেই। একাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফ্রি প্ল্যানে তখন কনভার্ট কয়ে যাবে।
এতে আপনি একটি ডায়ানামিক কোড (শুধুমাত্র ওয়েবসাইট এর), ৫টি সাধারণ কোড তৈরী, এর ডিজাইন পরিবর্তণ করা, লোগো যোগ করা এসব সুবিধা পাবেন। এর চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলে যে কোন সময় একাউন্ট আপগ্রেড করে নিতে পারবেন।
অফলাইনে কিউ আর কোড
অনলাইনে পেইড, নন-পেইড, রেজিস্ট্রেশন এ-সব বাস্তবিক অর্থে আসলেই একটু ঝামেলার। ডিজাইন বা লোগো ছাড়া সাধারণ কোডে যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে, তাহলে ভরসা করতে পারেন অফলাইনের সফটওয়ার বা অ্যাপের উপর।
কম্পিউটারে কোন কিছুর QR Code বানানোর জন্য ডাউনলোড করে ফেলুন নিচের সোর্স লিংকে থাকা সফটওয়ারটি। এটি একদম ফ্রি। ম্যাক এবং উন্ডোজের দুইটি ভার্সনই এখানে পাবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী ডাউনলোড করে ইন্সটল করলেই নির্দিষ্ট অপশন থেকে তৈরী করে নিতে পারবেন প্রয়োজনীয় কিউ আর কোড।
স্মার্টফোনেও এই কাজটি করার জন্য রয়েছে অ্যাপ। আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড ইউজার হন, তাহলে নিচের ডাউনলোড বাটনটাতে চাপ দিন। প্লে স্টোরে থেকে সম্পূর্ণ ফ্রি ও অ্যাডমুক্ত Barcode Generator নামের 1.6MB এই অ্যাপটি নামিয়ে নিন। ইন্সটল হয়ে গেলেই অ্যাপ ওপেন করে Add Code >> QR Code অপশন থেকে ইচ্ছেমতো কিউ আর কোড তৈরী করে নিতে পারবেন।
ব্যক্তিগতভাবে আমি সাধারণত এই অ্যাপ ব্যবহার করেই কিউ আর কোড তৈরী করে থাকি। প্লে স্টোরে এই কাজের জন্য আরও অনেক অ্যাপ থাকলেও এটিকে আমার একদম পূর্ণাঙ্গ মনে হয়। ডায়ানামিক কিউ আর কোড, কিউ আর কোডের মাঝে লোগো যোগ করা বা কিউ আর কোডটিকে আরও দৃষ্টিনন্দন করার জন্য ডিজাইনের অপশন এতে না থাকলেও একটি সাধারণ কিউ আর কোড তৈরীর জন্য এটি একটি অনবদ্য অ্যাপ।
এছাড়া এটিতে কিউ আর কোড ছাড়াও বারকোড, অ্যাজটেক কোড এর মতো আরও ১০ রকম কোড তৈরী সুযোগ থাকায় কিছু না হোক ওএমআর কোডের ব্যাপারে আপনার কৌতুহল ও আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলবে। কিউ আর কোড সংক্রান্ত যে কোন ব্যাপারে কমেন্টের অপেক্ষায় থাকলাম।
Tareq says
দারুণ লেখা, কিউ আর কোড সম্পর্কে জানলাম, তৈরি করার প্রক্রিয়াটাও সহজই মনে হল।
মাকসুদ says
অনেক ধন্যবাদ Tareq ভাই! পাঠকের ভালো লাগাই আসলে সবচেয়ে বড় সার্থকতা। অনেক অনেক ভালো থাকবেন।
মোহাম্মদ জীমন says
আমি কিউ আর কোড বানাতে পারি, কিন্তু এ সম্পর্কে ধারণা কম। আমি যেটা বানাই সেটা আপনি 2 নাম্বারে দিয়েছেন। কিন্তু আমি যেটা বানাই সেটা হচ্ছে শুধুমাত্র স্কেন করলে যে লেখাগুলো আমি ওখানে লিখেছি সেগুলাই আমি, আমি চাই। কিউ আর কোড স্ক্যান করা মাত্রই কোন একটা ওয়েবসাইটে অটোমেটিক ঢুকে যেতে পারি। মনে করেন, একটা কোম্পানীর প্রোডাক্টে একটা বারকোড আছে, সেটা স্ক্যান করলে দেখা যায় যে আমরা সরাসরি ঐ কোম্পানীর ওয়েবসাইট দেখতে পারি। যেমন স্যামসাং কোম্পানীর ওয়েবসাইট, আমি মনে হয় আপনাকে বুঝাতে পেরেছি।
আপনি কি আমাকে বুঝিয়ে দিতে পারেন এ ধরণের কিউ আর কোড কিভাবে তৈরী করতে হয়। আমি অনেক চেষ্টা করেও পারতেছি না। যদি তেমন কোন ভিডিও লিংক থাকে, তাহলে আমাকে দিলে খুবই উপকৃত হব। আমার ইমেলই নাম্বার jimon.ctg2013@gmail.com। আশা করছি, আপনার কাছ থেকে খুব তাড়াতাড়ি এর কোন সমাধান পাব।
OBAIDUL HAQUE says
QR কোড নিয়ে খুবই তথ্যবহুল একটি লেখা যা পড়ে যে কেউ এই মেট্রিক্স বার কোড সম্পর্কে সম্যক আইডিয়া পেয়ে যাবে।