কাঁচা মরিচের স্বাস্থ্য উপকারিতা জানা থাক আর না থাক, আমরা সকলেই এটি খেয়ে থাকি। অর্থাৎ, নিজেদের অজান্তেই আমরা কাঁচা মরিচের নানা রকম উপকারিতা পেয়ে থাকি। আর যদি উপকার জানা থাকে, তবে নিশ্চয়ই এখন থেকে আমরা সচেতনভাবেই কাঁচা মরিচ খাবো, আগের থেকে একটু বেশিই খাবো।
কাঁচা মরিচের ব্যবহার কি কেবল রান্নায় ঝাল আর সুগন্ধ বাড়ানোর জন্য? খাবারের প্লেটে কাঁচা মরিচ ছাড়া অনেকে খেয়ে তৃপ্তি পান না। আর আজ থেকে আরো বেশি তৃপ্তি পাবেন যখন এর বিস্ময়কর কিছু উপকারিতার কথা জানবেন।
কাঁচা মরিচ ভিটামিনেরও এক চমৎকার উৎস। এতে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণও। জেনে নিতে পারেন কাঁচা মরিচে কি কি ভিটামিন আর পুষ্টি আছে।
পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলেন, আপনি যদি মুটিয়ে যাওয়ার মোকামে থাকেন আর সেখান থেকে বেরোতে চান, আবার একই সঙ্গে ভিটামিনও হারাতে চান না, তবে কাঁচা মরিচ খান। কারণ, কাঁচা মরিচে ক্যালোরির পরিমাণ জিরো অর্থাৎ নাই বললেই চলে। কাজেই, মুটিয়ে যাওয়ার ভয় নেই, উপরন্ত রয়েছে অনেক বাড়তি পাওনা।
এছাড়াও, খাদ্য বিশারদরা বলেন, খাবারের স্বাদ বাড়াতে যদি ঝালের ব্যবহার চান, তবে শুকনো মরিচ নয়, কাঁচা মরিচ দিয়ে রান্না করুন। আমরা, রান্নায় যেমন কাঁচা মরিচ খাই, তেমনই খাই বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে কামড়ে কামড়ে। আর কাঁচা মরিচ ছাড়া তো সালাদের কথা চিন্তাই করা যায় না।
কাঁচা মরিচের স্বাস্থ্য উপকারিতা
কাঁচা মরিচ হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
আমরা যা কিছু খাই তা যদি ঠিক-ঠাক মতো হজম না হয়, তবে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ আরো কিছু রোগের আশংকা থাকে। সুতরাং, খাবার দ্রুত হজম হওয়া জরুরী। আর আপনি অবাক হবেন এটা জেনে যে, যে কোনও খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে সেটাকে হজম করার শক্তি ৫০ পার্সেন্ট বাড়িয়ে দেয় কাঁচা মরিচ।
কাঁচা মরিচ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা
কাঁচা মরিচে, বিশেষত সবুজ রঙের কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে যা প্রাকৃতিক স্কেভেঞ্জার্স হিসাবে আমাদের শরীরে দারুণ কাজ করে। আমাদের শরীরে থাকা ফ্রি র্যাডিকালগুলির বিরুদ্ধে স্কেভেঞ্জার্স বড় ধরণের ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই, শরীরকে ফ্রি র্যাডিকালমুক্ত করে ক্যান্সার থেকে বাঁচতে প্রতিদিন অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ কাঁচা মরিচ খান।
কাঁচা মরিচ হৃৎযন্ত্রকে সুস্থ্য রাখে
আমাদের শরীরের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম বা হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া-কলাপে বেশ কিছু উপকারী প্রভাব ফেলে কাঁচা মরিচ। বিশেষত, এটি আমাদের অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। কারণ, কাঁচা মরিচ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড স্তর এবং প্লেটলেট সমষ্টি কমিয়ে এনে ফাইব্রিনোলিটিক ক্রিয়াকলাপকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে, শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবণা কমে যায় যা হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে আমাদের মুক্ত রাখে। এক কথায়, কাঁচা মরিচ আমাদের হৃৎযন্ত্র ভাল রাখে।
কাঁচা মরিচ ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখে
ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ কাঁচা ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সহায়তা করে। এমনকি, আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর, মসৃণ ও ঝকঝকে রাখার ক্ষেত্রে এটি দারুণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, কাঁচা মরিচে রয়েছে ওয়াটার সলিউবল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা কোলাজেন সিনথেসাইজ করতে সাহায্য করে। আর আমরা জানি ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্যে কোলাজেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইলিমেন্ট।
কাঁচা মরিচ মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখে
ভাবছেন মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে আবার কাঁচা মরিচের কি সম্পর্ক! সম্পর্ক আছে এবং সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কাঁচা মরিচে এন্ডোরপিনস্ নামক এমন একটা হরমোন রয়েছে যা আমাদের ব্রেনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেলকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে, যে সেলগুলো আমাদেরকে উদ্দীপ্ত রাখে, মনকে সতেজ করে তোলে। ফলে, কাঁচা মরিচের এই উপাদানটি আমাদেরকে সুখী হতে সাহায্য করে, মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে সব সময় চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, জেনে নিন মারাত্মক মানসিক চাপে পড়লে কি করবেন।
কাঁচা মরিচ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
কাঁচা মরিচে ক্যাপসাইসিন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। মেডিকেল সায়েন্টিস্টরা ক্যাপসাইসিনকে ব্রেনের কুলিং সেন্টার বলে থাকেন। কারণ, এটি ব্রেনের হাইপোথ্যালামাসকে সব সময় ঠান্ডা রাখে। আর কাঁচা মরিচে থাকা এই বিশেষ উপাদানটি গরমের দেশের মানুষের জন্যে অত্যন্ত দরকারি।
কাঁচা মরিচ আয়রনের ঘাটতি জণিত ক্লান্তি দূর করে
যারা আয়রনের অভাবে ভোগেন, তাদের জন্যে কাঁচা মরিচ আর্শিবাদ স্বরূপ। নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে আয়রনের অভাবে দূর্বল কিংবা ক্লান্ত বোধ করতে হয় না। কাজেই, শুধু তরকারি স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্যে নয়, বরং আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্যেও কাঁচা মরিচ খেতে হবে।
কাঁচা মরিচ রক্তের সুগার লেভেল ঠিক রাখে
ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের সুগার লেভেল ঠিক না থাকলেই বিপর্যয় ঘটে। আর সুগার লেভেলের ব্যালেন্স রাখার ক্ষেত্রে কাঁচা মরিচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জানালেন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা।
কাঁচা মরিচ চুলের যত্নে উপকারি
আপনি হয়তো হাসছেন, চুলের যত্নে কাঁচা মরিচ! না ভাই, কাঁচা মরিচের জুস বানিয়ে চুলে মাখতে হবে না, জাস্ট প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খেতে হবে। কারণ, কাঁচা মরিচে রয়েছে প্রাকৃতিক সিলিকন যা মাথার ত্বক ও ফলিকলের ব্লাড সার্কুলেশন ব্যবস্থা উন্নত করে। একই সাথে, চুলের নিচের ত্বকে থাকা ডাই-হাইড্রো টেস্টোস্টেরনের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি প্রভাবকে নষ্ট করে দেয়। ফলে, মাথার ফলিকল থাকে অক্ষত আর চুল থাকে স্বাস্থ্যোজ্জল।
হাড়ের যত্ন কাঁচা মরিচ
সবুজ রঙের কাঁচা মরিচে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন কে থাকায় এটি প্রাকৃতিকভাবে আপনার হাড়ের যত্ন নেয়। বিশেষ করে, আপনি যদি কোন কারণে হাঁড়ে আঘাত পেয়ে থাকেন, তবে আহত হওয়ার পরে অস্টিওপোরোসিস এবং রক্তপাতের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে কাঁচা।
কাঁচা মরিচের স্বাস্থ্য উপকারিতা হিসেবে এগুলো ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক কিছু। যেমন, কাঁচা মরিচে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরকে নানা রকম ফ্রি রেডিক্যাল ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে, স্ট্রেস এবং ক্ষত সংক্রমন থেকে রেহাই দেয়।
এছাড়াও, গরম কালে কাঁচা মরিচ খেলে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে। ফলে, ধীরে ধীরে শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। কাঁচা মরিচ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি দাঁতের মাড়ি শক্ত করে, নার্ভের সমস্যা দূর করাসহ আরো অনেক উপকার করে।
তবে, কাঁচা মরিচের কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্যে, বিশেষ করে এর মাঝে থাকা ভিটামিন সি কে ধরে রাখার জন্যে এটিকে ঠান্ডা ও শীতল জায়গায় সংক্ষণ করতে হবে।
Leave a Reply