স্থবির জীবন- এই অংশটার সাথে ব্যক্তিগতভাবে হয়ত কারও কারও পরিচয় থাকতে পারে। কিন্তু, জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও জীবন স্থবির হতে পারে। হয়ত গত এক বছর আগেও আমাদের এটা জানা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে এটাই আমাদের কাছে স্বাভাবিক। জীবনের মোড় এমনভাবেই ঘুরিয়ে দিয়েছে কোভিড-১৯।
দিশেহারা সূচনাকারী
কৃষ্ণচূড়ার উজ্জ্বল রঙ দিয়ে জীবনটাকে সাজানোর স্বপ্ন থাকে আমাদের সবারই। কেউ সেক্ষেত্রে সফল হয়। কেউ বা ব্যর্থ। আবার, অনেকেই ঠিক যা চেয়েছিল তা না পেলেও অন্য কোনো ক্ষেত্রের সাফল্য দিয়ে জীবনটাকে বেশ চালিয়ে নেয়। কিন্তু কোভিড-১৯ এর করাল গ্রাসে দিন দিন ব্যর্থতার হারটাই যেনো বাড়ছে। এক উদ্যোক্তা-যে করোনার কারণে গৃহবন্দী, মাথায় চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে কীভাবে টাকার সন্ধান করা যায়! কেননা, পরিবারের হালটা তো ধরতে হবে।
বৃদ্ধ বাবা এই প্রতিকূল পরিবেশেও পরিশ্রম ছাড়তে পারছে না। পরিবারের সবাই সুস্থ থাকবে তো- এত সব দুশ্চিন্তা নিয়ে কি তার পক্ষে সত্যিই সম্ভব কোনো অভাবনীয় ফলাফল প্রদর্শন করা? বরং, চারদিকের ঝামেলা মাথায় জটলা পাকিয়ে তাকে করে দিবে দিশেহারা। ফলাফল- ঘরের কোণায় বসে থাকা। কিংবা কোনো অনৈতিক কাজ অথবা আত্মহত্যার মত বড় কোনো ভুল সিদ্ধান্ত।
বিকাশহীন ভবিষ্যৎ
ছোট ছোট ফুটফুটে বাচ্চাগুলো-এই বয়স হবে ৫ কিংবা ৬ এর আশেপাশে। মানসিক বিকাশের বয়স তাদের এখন। তারা স্কুলে যাবে। নতুন নতুন বন্ধু হবে। সামাজিকীকরণ শিখবে। একে অন্যের প্রতি সহনশীলতা, সহমর্মিতা, সাহায্যের মনোভাব এগুলো বৃদ্ধি পাবে। প্রতিদিন নতুন কিছু শিখবে। খেলাধূলা করবে, যাতে তাদের মানসিক এবং দৈহিক দুদিক দিকেই বিকাশ ঘটে।
বাবা মায়ের সাথে সুন্দর কিছু মুহূর্ত পার করবে। ঘুরতে যাবে বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গায়, যেখান থেকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এগুলো সম্পর্কে জানবে। ধীরে ধীরে একজন সুনাগরিক হয়ে ওঠার গুণাবলী অর্জণ করার শুরুটাই তাদের আজ কাটছে ফোনের ভিডিও গেইমে কিংবা রঙিন টিভির পর্দায়। এরকমই যদি চলতে থাকে, তবে আগামী দিনে এক সুন্দর উন্নত দেশের আশা কীভাবে করতে পারি আমরা?
রুগ্ন যুবসমাজ
কিশোর বয়স উদ্দামের। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের একটা কবিতা আছে না.. আঠার বছর বয়স! এ বয়স উত্তেজনার, অন্যায়কে রুখে দেওয়ার, প্রতিবাদ করার। কিন্তু, করোনা ভাইরাস তার হুল ফুটিয়ে দিল এ বয়সের গোড়াতেও। সস্তা সামাজিক মাধ্যমের বিনোদন, পাবজি, ফ্রি ফায়ার, ক্যান্ডি ক্রাশের মত গেইমগুলো, বন্ধুবান্ধবের সাথে অনলাইন আড্ডা এসব নিয়েই কাটছে এদের দিনকাল।
পরিবারের সাথে দূরত্ব তো বাড়ছেই। তার সাথে শিক্ষামূলক কর্মসূচিগুলো তাদের কাছে যেনো আজ মরীচিকা। বিভিন্ন উদ্ভাবনের নেশায় যাদের উন্মত্ত থাকার কথা তারা আজ গাজা মদ সিগারেটের নেশায় বুঁদ হয়ে আছে।
পড়াশোনার সাথে তো বিচ্ছেদ হয়ে গেছে সে বহুদিন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ডিসকভারি চ্যানেলে হন্যে হয়ে তথ্য খোঁজার বদলে তাদের মন খোঁজে সস্তা বিনোদনের সামগ্রী। ঘরবন্দী এই যুবসমাজের এহেন কার্যকলাপে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের চেহারাটা কেমন হতে পারে ভাবলেও শিওরে ওঠে শরীর।
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বাবা-মা
বাবা মায়ের চিন্তা! কীভাবে আহার জোটাব আমার সন্তানদের মুখে! যদি বাবার কিছু হয়ে যায় তবে কী হবে সে সংসারটার! ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে কে মানুষ করবে! পড়ালেখা না চললেও স্কুল কলেজের ফি তো ঠিকই লাগছে।
বড়টা সারাদিন মোবাইল ফোন আর বন্ধুবান্ধবদের মাঝেই পড়ে আছে। কী হবে তার ভবিষ্যৎ? দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না। দুজন মিলে সারারাত চিন্তা করে কী করা যায়? কী করা যায়? কখনো বা সকালে উঠে বাবার স্ট্রোকের গল্প।
করোনার প্রভাব যেনো আমাদের জীবনে সাপের নিঃশ্বাসের মত। কতদিন যে এর জের টেনে যেতে হবে তা সত্যিই বলা মুশকিল।কতদূর এর আয়ত্তে বসবাস তা অজানা। কিন্তু এর মাঝেও নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করে যেতে হবে। ঘরবন্দী থেকেও পরিবারের মানুষদের সাথে সুন্দর সময় কাটাতে হবে। ভালোভাবে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। হয়ত একদিন এমন এক দিনের দেখা মিলবে যা করোনামুক্ত এক উজ্জ্বল দিনের প্রতিচ্ছবি। সে সূর্যের আশাতেই জীবনটা গড়ে তুলি সুন্দরভাবে।
Nurul Mostak says
শুধু করোনা কালেই নয়, সব সময়ই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেয়া উচিৎ। কারণ, কারো যদি মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে, তখন তার শারিরিক স্বাস্থ্যও আর ঠিক থাকে না।
জেসিকা জেসমিন says
সঠিক কথা বলেছেন, নূরুল মোস্তাক ভাই। সবারই সবসময় মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি পর্যাপ্ত নজর দেয়া উচিৎ।