কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের উপায় রয়েছে অনেক। তার মাঝে সবচেয়ে ভাল উপায়গুলো জানা থাকলে, আপনার কম্পিউটারকে রক্ষা করতে পারবেন অনেক অবাঞ্চিত ক্ষতির হাত থেকে। কম্পিউটারকে কমপ্লিটলি ভাইরাস মুক্ত রাখতে, ফাইল-ফোল্ডার হারানোর ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। সর্বোপরি কম্পিউটারকে ভাল রাখতে ও দীর্ঘস্থায়ী করতে সঠিকভাবে স্ক্যান করে নিতে হয়।
গণনাকারী যন্ত্রের ধারণা থেকে কম্পিউটার নামক যন্ত্রটির উৎপত্তি ঘটলেও, আজ তা কল্পণার সীমা অতিক্রম করে অসাধ্য সাধণ করেই চলেছে। আধুনিক বিজ্ঞান জগতের প্রতিনিধি, কম্পিউটার আজ আমাদের নিত্যদিনের সহচর। দৈনন্দিন এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যাতে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় না। আসলে কম্পিউটার এর অভাব অনুমেয় না হলে এর গুরুত্ব বুঝে ওঠা আমাদের অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।
কল্পণা করুন তো, এক দিনের জন্য কম্পিউটার না থাকলে আমরা কি রকম পিছিয়ে পড়তাম! তাই, আমাদের নিরন্তর এগিয়ে রাখা এই কম্পিউটারের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে আর জানতে হবে উপায়গুলো।
কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের উপায়
কাজ করার সময় আপনার সাধের এই ইলেকট্রিক ডিভাইসটি বিভিন্ন ক্ষমতাবান শক্তির সম্মুখে পড়তে পারে। যেমনঃ Computer Virus, Malware, Hard Drive Failure ইত্যাদির সন্মুখীণ হতে পারে। আপনার কম্পিউটারটিকে অকার্যকর করার দায়িত্ব তারাই স্ব-চিত্তে গ্রহণ করবে। তাই, আপনার কম্পিঊটারটির ব্যবহার্য ফাইল রক্ষণাবেক্ষণ করা একান্ত অপরিহার্য। তাই, হৈচৈ বাংলায় আমার প্রথম লেখা কিভাবে আপনার ডিভাইসটিকে সচল রাখতে এবং সকল তথ্য ব্যাক-আপ রাখতে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করবেন।
ম্যালওয়্যার প্রতিরোধ
ম্যালওয়্যার হল এক ধরণের প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার যেটা আপনার কম্পিউটার নিষ্ক্রিয়করণে নিরন্তর চেষ্টা করে থাকে। অথবা আপনার ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশাধিকার লাভ করে বসে থাকে আপনার অজান্তেই। viruses, worms, Trojan horses, এবং spyware সহ নানা রকম ম্যালওয়্যার রয়েছে।
সাধারণত ম্যালওয়্যারগুলো ইন্টারনেটে বিচরণ করে এবং এটি প্রায়ই অন্য সফ্টওয়্যারলোর সাথে যুক্ত হয়। ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায় হল এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ইনস্টল করা। যেমন, অ্যাভাস্ট, অ্যাডওয়্যার, এভিজ, বিট ডিফেন্ডার, নর্টন বা ক্যাসপারস্কি। কম্পিউটারের জন্যে এই সব এন্টিভাইরাস সফট্ওয়্যার ফ্রিতেই পাওয়া যায়। পছন্দ মতো বা প্রয়োজনীয় ফিচার অনুযায়ী যে কোনটি ডাউনলোড করে কম্পিউটারকে ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করুন।
অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কম্পিউটারকে অবাঞ্চিত ম্যালওয়ার ইনস্টল হওয়া থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। সেই সাথে এটি আপনার কম্পিউটার থেকে ম্যালওয়্যার সরাতে পারে। আপনি যখন ওয়েব ব্রাউজ করছেন বা ইমেইল ব্যবহার করছেন, তখন আপনার বিচক্ষণতাকে কাজে লাগানো গুরুত্বপূর্ণ। যদি একটি ওয়েবসাইট ব্রাউজিং বা ইমেল লিংক সন্দেহজনক দেখায়, তবে ব্রাউজ করা বা ইমেল খোলা থেকে বিরত থাকুন। আর যদি ইতিমধ্যেই এ-সব অবাঞ্চিত অতিথি ব্রাউজ, ইমেল বা কোন কিছু ডাউনলোড করার মাধ্যমে ঢুকে পড়ে থাকে, তবে কম্পিউটার থেকে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার দূর করার পদ্ধতি জেনে নিন।
অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে মনে রাখবেন, আপনার অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামটি সবকিছু ধরতে পারে না। তাই ম্যালওয়ার ধারণ করতে পারে, এমন কিছু ডাউনলোড করা থেকেও বিরত থাকুন। সন্দেহজনক কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেই তার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারী হিসেবে বুদ্ধিমানের কাজ। আর কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের উপায় হিসেবে এটিই সবচেয়ে ইফেক্টিভ।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যাকআপ
কল্পনা করুন, আপনার কম্পিউটার চলমান কাজে হঠাৎ শাট ডাউন হলে কি হবে! আপনি কোন গুরুত্বপূর্ণ নথি, ছবি, বা অন্যান্য ফাইল হারাবেন। পরে আপনার কম্পিউটার মেরামত করা সম্ভব হতে পারে, তবে আপনার ফাইল চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। সৌভাগ্যক্রমে, আপনার এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ বা একটি অনলাইন ব্যাকআপ ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। আপনার সমস্ত ফাইলের ব্যাকআপ কপিগুলো (অথবা শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি) গুগল ড্রাইভ, ড্রপ বক্সসহ যে কোন ফ্রি ক্লাউড সার্ভারে আফলোড করে রাখতে পারেন। এটি ম্যালওয়্যার এর বিরুদ্ধে পূর্ব প্রস্তুতি স্বরূপ।
এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার
আপনি একটি এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ কিনে সেটিতে আপনার কম্পিউটারের ফাইলগুলো কপি করে রাখতে পারেন। এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ কেনার জন্যে যদি আপনার বাজেট না থাকে এবং আপনার কাছে যদি পুরনো কোন কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক থেকে, তবে সেই হার্ডডিস্ককে ইউএসবি বানিয়ে নিতে পারেন সহজেই।
প্রাথমিকভাবে ব্যাকআপ করতে বেশ কয়েক ঘন্টা সময় নিতে পারে। তাই, আপনাকে আপনার কম্পিউটারে অ্যাক্সেসের প্রয়োজন না হলে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের নির্বাচন করে ব্যাক-আপের কাজটি করতে হবে। যে সময়টা কাজ থাকে না, সে সময় ব্যাক-আপ রান করে সাধারণত ভাল ফল পাওয়া যায়।
এজন্য ব্যাকআপ পদ্ধতিটি একটি নিয়মিত ভিত্তিতে পরিচালিত করা উচিত, কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদি গ্রহণ করা মোটেও সহনীয় নয়। এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ এর একটি দুর্বলতা হলো এটি হারিয়ে যেতে পারে, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই, উপরে উল্লেখিত অনলাইন ব্যাক-আপ সার্ভিসগুলোতেই আফলোড করে রাখা উচিৎ।
অবাঞ্ছিত ফাইল সরানো
আপনার কম্পিউটার যেন আপনার মেজাজ বিগড়ে না দেয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ফাইল এবং ফোল্ডারলো সাজিয়ে রাখা জরুরী। ছড়ানো-ছিটানো বা অসংগঠিত ফোল্ডারগুলো আপনাকে প্রয়োজনীয় কাঙ্ক্ষিত ফাইলগুলো খুঁজে পেতে আরও কঠিন করে তুলবে। একই সাথে, আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ফাইলটি খুব সহজেই খুঁজে পাবেন।
তদুপরি, অবাঞ্ছিত ফাইল অবশেষে আপনার হার্ড ড্রাইভ পূরণ করতে পারে, যা আপনার কম্পিউটারটিকে ধীর এবং কর্মব্যস্ত করে তুলবে । এজন্য সকল অবাঞ্ছিত অপ্রয়োজনীয় ফাইল মুছে আপনি আপনার কম্পিউটার এর কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারেন।
কম্পিউটার ঘাতক ফাইল ডিলিট
আপনার যদি কোনও অবাঞ্ছিত ফাইল থাকে, তাহলে আপনি ম্যানুয়ালি তাদের মুছে ফেলতে পারেন। এটি করার জন্য, তাদেরকে Recycle Bin বা Trash এ টেনে আনুন, তারপর ফাইলগুলিকে স্থায়ীভাবে মুছে ফেলতে এটি খালি করুন। অপ্রয়োজনীয় ঘাতক ফাইলগুলো ডিলিট করা কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের উপায় হিসেবে দারুণ কার্য্যকর।
Disk Derangement ব্যবহার
কম্পিউটার স্লো হয়ে গেছে- এটি একটি নিত্য নৈমিত্তিক সমস্যা। এই সমস্যাটি অধিকাংশ সময়ে ব্যবহারকারীর আক্ষেপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আপনি যদি উইন্ডোজ ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তবে উইন্ডোজ এর কন্ট্রোল প্যানেলে একটি ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্টার প্রোগ্রাম খুঁজে পাবেন। যদি আপনার কম্পিউটার ধীরে ধীরে কাজ করতে থাকে, তাহলে ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্টার চালানোর ফলে এটি দ্রুত গতিতে কম্পিউটারকে কাজ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আরো অন্যান্য আরো ১০টি উপায়ে কম্পিউটারের গতি বাড়িয়ে নিতে পারেন।
Disk Cleanup ব্যবহার
কম্পিউটারে বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার সচল রাখার কারণে বিভিন্ন ডিস্কে টেম্পোরারি ফাইল জমা হয়ে থাকে যা কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে। উইন্ডোজ কন্ট্রোল প্যানেলে Disk Cleanup নামক একটি প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে। এটা আপনার কম্পিউটার স্ক্যান করে অস্থায়ী ফাইল এবং অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকারক ফাইল মুছে ফেলতে পারে। তারপর আপনি আপনার হার্ড ড্রাইভের স্থান খালি করতে সেই টেম্পোরারি ফাইলগুলি চূড়ান্তভাবে মুছে ফেলতে পারেন।
আপনার নিত্যদিনের সহচর কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের উপায় জেনেছেন। এবার এটিকে যদি কর্মক্ষম রাখতে চান, তাহলে উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন। তবেই কম্পিউটার আপনার মন মতো অ্যাকটিভ এবং সচল থাকবে।
Leave a Reply