নতুন ফার্নিচার দিয়ে ঘর সাজানোর স্বপ্ন দেখেন সকলেই। বিশেষ করে, যারা নব-দম্পত্তি, মাত্র বিয়ে করেছেন আর ঘর সাজানোর কথা ভাবছেন। কিন্তু বিয়ে করা মাত্রই তো আর ভাগ্য বদলে যায় না। তাই, সামর্থ্যের অভাবে অনেকেই নতুন ফার্নচিার দিয়ে স্বপ্ন সাজাতে পারেন না। তাদের ভরসা কম দামে পুরনো ফার্নিচার যা অনেক সময় নতুন হিসেবেই পাওয়া যায়।
পুরনো ফার্নিচার মানেই যে পুরনো বা বহুল ব্যবহৃত, এমন নয়। বরং, প্রায়ই এমন সব পুরনো ফার্নিচার পাওয়া যায় যেগুলো খুব একটা ব্যবহৃত হয়নি।
হয়তো কোনও দম্পত্তি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ফার্নিচার কোম্পানী থেকে অনেক টাকা খরচ করে সুন্দর সুন্দর অনেক ফার্নিচার বানিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ এমন বিপদে পড়েছে যে টাকা পয়সার অভাবে ঘরের আসবাব-পত্র বিক্রি করে দিয়েছে।
তাদের কাছে ফার্নিচারগুলো কম দামে কিনে এনেছে কোনও এক ব্যবসায়ী। আর এখন সে কিছুটা লাভ রেখে আবার সেগুলো কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। এই হচ্ছে মূলত পুরনো ফার্নিচারের বাজার।
তবে, এ-সব বাজারে অনেকদিন ব্যবহৃত ফার্নিচারও পাওয়া যায় যেগুলোর দাম একেবারেই কম। অল্প কিছুদিন ব্যবহৃত হয়েছে এমন ফার্নিচারের দাম মাঝামাঝি। আর যে ফার্নিচারগুলো খুব একটা ব্যবহৃত হয়নি, সেগুলোর দাম অন্যগুলোর চেয়ে একটু বেশি হলেও অনেকেরই হাতের নাগালে।
আসুন, এ-রকম কিছু বাজারের সঙ্গ পরিচিত হওয়া যাক যেখানে আপনি কম দামে অনেক ভাল ভাল ফার্নিচার পাবেন।
পুরনো ফার্নিচারের মধ্যে কি কি পাওয়া যায়?
- সিঙ্গেল খাট, ডাবল খাট, সেমি ডাবল খাট, জাহাজের খাট
- ছোট আলমারি, বড় আলমারি
- বিভিন্ন সাইজের ড্রেসিং টেবিল
- বিভিন্ন সাইজ ও ডিজাইনের ওয়্যারড্রব
- সোফা সেট
- বিভিন্ন রকমের শোকেইস
- কাঠের বুক সেলফ্, গ্লাস কিংবা মেটালের বুক সেলফ্
- ডাইনিং টেবিল ও চেয়ার এবং ফুল সেট
- শ্যু র্যাক, ইত্যাদি।
পুরনো ফার্নিচারের দাম কেমন?
বিভিন্ন ধরণের পুরনো ফার্নিচারের দাম নির্ভর করছে সেগুলোর অবস্থার উপর। যদি খুব বেশি পুরনো হয়, তবে দাম থাকে কম। নতুনের মতো হলে দাম একটু বেশি হয়। আবার, ডিজাইন ও কারুকার্যের উপর নির্ভর করেও দামের কম-বেশি হয়ে থাকে। তবে, আমরা এখানে অ্যাভারেজ একটা দামের আইডিয়া দিচ্ছি-
- সিঙ্গেল খাট-ক্যাটেগরি-১: ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
- সিঙ্গেল খাট-ক্যাটেগরি-২: ৩০০০ থেকে ২০০০০ টাকা।
- ডাবল খাট-ক্যাটেগরি-১:: ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা্।
- ডাবল খাট-ক্যাটেগরি-২:: ৫০০০ থেকে ২৫০০০ টাকা্।
- সেমি ডাবল খাট: ৪০০০ থেকে ৩০০০০ টাকা।
- ওয়্যারড্রোব-ক্যাটেগরি-১: ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা।
- ওয়্যারড্রোব-ক্যাটেগরি-১: ৪০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা।
- আলমারি-ক্যাটেগরি-১: ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা।
- আলমারি-ক্যাটেগরি-২: ১০০০০ থেকে ২৫০০০ টাকা।
- ডাইনিং টেবিল: ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
- ডাইনিং টেবিলের চেয়ার: ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।
- ডাইনিং টেবিল সেট-ক্যাটেগরি-১: ২৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা।
- ডাইনিং টেবিল সেট-ক্যাটেগরি-২: ৫০০০ থেকে ২৫০০০ টাকা।
নোট: এখানে দামের যে আইডিয়া দেয়া হলো তা কিন্তু নিশ্চিত নয়, কম/বেশি হতে পারে, এমনকি অনেক কম কিংবা অনেক বেশিও হতে পারে। আপনাকে যেটা করতে হবে, সেটা হচ্ছে সরেজমিনে দেখে কেনা। এবার আসুন, জানা যাক কোথা থেকে কিনবেন।
কম দামে পুরনো ফার্নিচার কিনবেন কোথা থেকে?
১. পান্থপথ, ঢাকা
ঢাকার সবচেয়ে বড় পুরনো ফার্নিচারের মার্কেট পান্থপথে অবস্থিত। কাওরান বাজারের মাথা থেকে শুরু করে একেবারে পান্থপথের শেষ মাথা পর্যন্ত একটানা অসংখ্য ফার্নিচারের দোকান দেখা যায়।
বসুন্ধরা সিটির উল্টো পাশের এই দোকানগুলোতে একদিকে যেমন পুরনো ফার্নিচার পাওয়া যায়, অন্যদিকে নতুন ফার্নিচারের পাশাপাশি জাহাজের ফার্নিচারও কেনা-বেচা হয়।
নোট: মঙ্গলবার বন্ধ থাকে।
২. সেগুনবাগিচা, ঢাকা
পুরনো ফার্নিচারের জন্যে আরেকটি ঐতিহ্যবাহী স্থান ঢাকার সেগুনবাগিচা। তবে, পান্থপথের দোকানগুলো যেমন সিরিয়ালে সাজানো, সেগুনবাগিচায় সে-রকম নয়। এখানকার ফার্নিচারের দোকানগুলো বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত।
শিল্পকলা একাডেমীর পাশ থেকে শুরু করে সেগুনবাগিচার প্রায় সবটা জুড়েই রয়েছে অসংখ্য ফার্নিচারের দোকান। এতে আপনাকে হয়তো একটু বেশি ঘুরা-ফেরা করতে হতে পারে। কিন্তু আপনি অবশ্যই পান্থপথের চেয়ে অনেক কম দামে এখান থেকে ফার্নিচার কিনতে পারবেন।
নোট: শুক্রবার বন্ধ থাকে।
৩. মিরপুর, ঢাকা
পুরনো হোক আর নতুন হোক, ফার্নিচারের জন্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এলাকা কিন্তু মিরপুর। ঢাকার জনবহুল এই এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে নতুন পুরনো ফার্নিচারের দোকান।
তবে, পুরনো ফার্নিচারের জন্যে মিরপুরের যে-সব এলাকা সবচেয়ে বেশি পরিচিত সেগুলো হলো মিরপুর স্টেডিয়াম ও মিরপুর-২।
নোট: ভিন্ন এলাকা ভিন্ন ভিন্ন দিন বন্ধ, যাওয়ার আগে জেনে নিন
৪. গুলশান, নাভানা টাওয়ারের বিপরীতে
ভাবছেন, গুলশানে আবার পুরনো ফার্নিচার কিনতে যাবে কে! দেখে অবাকই হবেন যে অন্যান্য বাজারের তুলনায় বরং এখানকার ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। তবে, এখানে বাসা-বাড়ির ফার্নিচারের চেয়ে অফিস-আদালতের ফার্নিচার বেশি পাওয়া যায়।
নোট: প্রতি রবিবার বন্ধ থাকে।
৫. কচুক্ষেত, ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা
ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কচুক্ষেতে যারা থাকেন, তারা জানেন যে শাপলা চত্বরের সামনে রয়েছে বিশাল একটি ফার্নিচার মার্কেট। আর এই মার্কেটে শুধু কচুক্ষেত বা ক্যান্টমেন্টের লোকেরাই, বরং আশে-পাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে পুরনো ও নতুন ফার্নিচার কিনে নিয়ে যান।
নোট: প্রতি বুধবার বন্ধ থাকে।
৬. নয়াবাজার, ঢাকা
পুরান ঢাকার নয়াবাজারে কাঠপট্টি নামে একটি বড় মার্কেট রয়েছে। আর এই মার্কেটেও পাওয়া যায় সুন্দর সুন্দর পুরনো ফার্নিচার। এই বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে পুরান ঢাকার লোকজন ছাড়াও রয়েছে বুড়িগঙ্গার ওপারের বসবাসকারিরা।
নোট: নয়াবাজারের কাঠপট্টি শুক্রবার বন্ধ থাকে।
৭. মোহাম্মদপুর, ঢাকা
নতুন ও পুরনো সব ধরণের ফার্নিচারের জন্যেই মোহাম্মদপুর বেশ বিখ্যাত। মোহাম্মদপুরের প্রায় সব এলাকাতেই ছোট বড় অনেক ফার্নিচারের দোকান দেখতে পাওয়া যায়। তবে, পুরনো ফার্নিচারের জন্যে বিশেষভাবে বিখ্যাত টাউনহলের পাশের শহীদ পার্ক। এই পার্কের মাঠের চারপাশে অগণিত পুরনো ফার্নিচারের দোকান রয়েছে।
নোট: বন্ধ থাকে প্রতি বৃহস্প্রতিবার।
৮. আজিমপুর, ঢাকা
ঢাকার আজিমপুরেও বেশ কিছু পুরনো ফার্নিচারের দোকান রয়েছে। তবে, সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের পাশে অবস্থিত বড় ফার্নিচার মার্কেটটিতে।
নোট: শুক্রবারে গেলে পস্তাবেন, কারণ এই দিন বন্ধ থাকে।
৯. যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে রয়েছে কয়েকটি পুরনো ফার্নিচারের দোকান। তার মাঝে ১৬৮ ও ১৭২/২ উত্তর যাত্রাবাড়ীতে সবচেয়ে বেশি দোকান দেখতে পাওয়া যায়।
১০. ঢাকার অন্যান্য এলাকা
ঢাকার আরামবাগ, মিরপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে, কুড়িল বসুন্ধরা, বাড্ডা ও উত্তরায় রয়েছে পুরনো ফার্নিচারের দোকান।
শেষ কথা
যদি কম দামে পুরনো ফার্নিচার কিনতে চান, তবে উপরোক্ত মার্কেটগুলোতে যেতে পারেন। তবে, হাতে সময় নিয়ে যাওয়া ভাল হবে যাতে আপনি ঘুরে-ফিরে দেখে-শুনে কিনতে পারেন। তাছাড়া, যাতে দর-দাম করতেও যথেষ্ট্য সময় পান।
Adourd says
প্রান্থ পথ থেকে কি জাহাজ থেকে আনা ডাইনিং পাওয়া যাবে লকডাউন কালে? আমাকে ফোন করতে 01710900222.