অর্থ উপার্জনের দিক থেকে ইন্টারনেটে দুই ধরনের ওয়েবসাইট রয়েছে। এদের এক ধরন হলো অলাভজনক ওয়েবসাইট যারা ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন না করে শুধুমাত্র ডোনেশনের উপর নির্ভর করে সাইট পরিচালনা করে। আর অপরটি হলো লাভজনক ওয়েবসাইট যারা বিভিন্ন উপায়ে সাইট মনিটাইজ করে তা থেকে অর্থ উপার্জণ করে থাকে।
আজ থেকে ১০ বছর আগেও ওয়েবসাইট থেকে অর্থ উপার্জন করা ছিল যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কিন্তু ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার পর থেকেই এ ব্যাপারে সবার ধ্যান ধারণা পরিবর্তিত হতে শুরু করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের মূল পেশার পাশাপাশি বাড়তি কিছু ইনকামের আশায়, কেউবা আবার শখের বসে ব্লগিং করতে শুরু করে। যা পরবর্তীতে তাদের জন্য লাভজনক জীবিকা হিসেবে জায়গা করে নেয়। কারণ, নিজের ব্লগ থেকে আয় করার সকল উপায় এখন সবারই জানা।
মনিটাইজেশন কি?
ইংরেজী monetize শব্দটিকে মনিটাইজ আবার মানিটাইজ দু’টোই বলা যায়। একইভাবে monetization শব্দটিকে কেউ মনিটাইজেশন, আবার কেউ মানিটাইজেশন বলে থাকেন। মনিটাইজ শব্দটির মানে হচ্ছে কোন কিছুকে বৈধ উপায়ে টাকায় রূপান্তর করা – to legalize something as money। শব্দটির আরো অর্থ করা যায় এভাবে – কারো সম্পদ বা ব্যবসাকে থেকে আয় বা উপার্জণ করার ক্রিয়া বা প্রক্রিয়া – the action of earning revenue from someone’s business or asset.
ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন কি?
ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন ওয়েবমাস্টার তার ওয়েবসাইটে আসা ট্রাফিককে রেভিনিউয়ে রুপান্তরিত করেন।
ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ওয়েবমাস্টার কিংবা ওয়েবসাইট মালিকদের কাছে নিজেদের ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন নানা কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, সেই কারণগুলো জানি।
রেভিনিউ বাড়ানো: ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন করার সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করা উপার্জণ বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। কারণ, মনিটাইজেশনের মাধ্যমে একটা ওয়েবসাইটের রেভিনিউ বেড়ে যায় অনেক গুণ। আর একটা ওয়েবসাইটে কি পরিমাণ ভিজিটর রয়েছে তার উপর নির্ভর করে মনিটাইজেশনের উপায় ও আয় বাড়ানোর পরিমাণ।
প্যাসিভ ইনকামের সুযোগ: ওয়েবসাইটে আসা ট্রাফিকের উপর ভিত্তি করে এফিলিয়েট, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট, ওয়েব পুশ অ্যাডস্, ইত্যাদি নানা উপায়ে একটা ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন করা হয়। কিন্তু একটা ওয়েবসাইট কেবল এগুলোতেই সীমাবদ্ধ নয়। সবচেয়ে, বড় কথা হচ্ছে, একটা ওয়েবসাইটের এ জাতীয় ইনকামগুলোর মধ্যে প্রায় সবই প্যাসিভ ইনকাম। অর্থাৎ, সবসময় চলমান আয়। সত্যি বলতে কি, ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন হচ্ছে অনলাইনের সেরা কাজ যাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও আয় করা যায়।
ব্লগ থেকেও আয়ের সুযোগ: মনেটাইজেশনের মাধ্যমে একটা ব্যক্তিগত ব্লগ থেকেও আয় করার সুযোগ রয়েছে। আপনি হয়তো নিতান্তই শখের বশে একটা ব্লগ খুলেছেন যেখানে আপনি হয়তো বিভিন্ন বিষয়ে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা-লেখি করছেন। কিন্তু মানুষ আপনার অভিজ্ঞতা, আপনার লেখা পছন্দ করতে শুরু করেছে, আপনার ব্লগটি মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়ে গিয়েছে। সুতরাং, এই ব্লগটিকে মনিটাইজ করে আপনি আয় করতে পারেন।
ব্লগ বা ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন করার উপায়
অ্যাডভার্টাইজমেন্ট থেকে শুরু করে ডোনেশন পর্যন্ত, একটি ওয়েবসাইটকে মানিটাইজ করার শতাধিক উপায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে-
- বিজ্ঞাপন থেকে আয়
- অ্যাফিলিয়েটিং
- ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রয়
- ডোনেশন
- ওয়েবসাইট বিক্রয় করা
বিজ্ঞাপন থেকে আয়:
এখন থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে গুগল অ্যাডসেন্স তার যাত্রা শুরু করে। বিজ্ঞাপন ভিত্তিক ইকোসিস্টেম তৈরীর কারণে কয়েক বছরের মধ্যেই এটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠে। একদিকে বিশ্বের কোটি কোটি কোম্পানীকে গুগল তাদের ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সুযোগ করে দেয়। অপরদিকে বিভিন্ন ব্লগার ও ওয়েবমাস্টারদের তাদের ওয়েবসাইটে এসব বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করানোর মাধ্যমে রেভিনিউ প্রদান করতে থাকে।
শুরুর দিকে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট পাওয়া ও সাইটকে সেই অনুযায়ী অপটিমাইজ করা অনেক কঠিন ছিল। সেসময় গুগল শুধুমাত্র ইংরেজী ভাষায় তৈরী ওয়েবসাইটগুলোতেই তাদের অ্যাডসেন্স দিত। কিন্তু বর্তমানে এসবের কোনটিই আর এত জটিল নেই। যে কেউ চাইলে খুব সহজেই ওয়েবসাইট তৈরী করে গুগলের অ্যাড প্লেস করার মাধ্যমে রেভিনিউ ইনকাম করতে পারে।
আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটে থাকা গুগল অ্যাডসেন্স বিষয়ক টিউটোরিয়ালগুলিকে ফলো করে নিজের ওয়েবসাইটের জন্য অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট নিতে পারেন। কারণ আমরা আপনাকে দিচ্ছি গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়ার ১০০% গ্যারান্টি।
তবে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্যে যে শুধু গুগলের উপর ভরসা করে থাকতে হবে তা কিন্তু নয়। গুগল অ্যাডসেন্সের বিকল্প হিসেবেও বেশ কিছু সাইট রয়েছে যা আপনাকে একইভাবে রেভিনিউ প্রদান করে থাকে।
অ্যাফিলিয়েটিং:
অনলাইনে ওয়েবসাইট তৈরীর মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট করার জন্য অ্যাফিলিয়েটিং অনেক বেশি জনপ্রিয়। ইন্টারনেটে থাকা প্রতিটি পণ্য বা সেবার জন্যই এখন অ্যাফিলিয়েশন লিংক পাওয়া যায়। আপনার ওয়েবসাইটকে সেখানে রেজিস্ট্রার করানোর মাধ্যমে আপনি সহজেই নিজেকে একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। এ ধরনের মার্কেটিংয়ের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো আমাজন।
আপনার ওয়েবসাইটে আপনি এ ধরনের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে থাকা পণ্যের রিভিউ তৈরী করার মাধ্যমে সেগুলি বিক্রয় করতে পারেন। আপনার ওয়েবসাইট থেকে কোন ভিজিটর যদি আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে ওই প্রোডাক্ট ক্রয় করে, তাহলে আপনি নির্ধারিত কমিশন পেয়ে যাবেন। আর আমাজনের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো একটু মজার। আমাজন তার অ্যাফিলিয়েটরের সাইট থেকে আসা ভিজিটরগণ ২৪ ঘন্টার মধ্যে যাই ক্রয় করুক না কেন তার কমিশন উক্ত অ্যাফিলিয়েটকে দিয়ে থাকে।
ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রয়:
ধরে নিন আপনার সাইটে আপনি এসইও বিষয়ক টিউটোরিয়াল শেয়ার করেন। এখন যদি আপনি চান, তাহলে এসইও বিষয়ক একটি পূর্ণাঙ্গ টিটোরিয়াল ইবুক বা ভিডিও টিউটোরিয়াল আকারে রেকর্ড করে সেটিকে আপনার ওয়েবসাইটে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন।
এটিও প্যাসিভ ইনকাম, কারণ আপনি একবার টিউটোরিয়াল প্রকাশ করলে সেটি বিক্রয় হতেই থাকবে যেখানে আপনার খরচ বলতে কিছুই নেই। আপনি যদি এ ধরনের টিউটোরিয়াল বানাতে না পারেন, তাহলে আপনি সামান্য কিছু বিনিয়োগ করে এক্সপার্টদের থেকে এমন কন্টেন্ট তৈরী করিয়ে নিতে পারেন।
আবার ইচ্ছা করলে কমিশনের ভিত্তিতে অন্যরা যাতে তাদের তৈরী ডিজটাল কন্টেন্ট আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রয় করতে পারে এমন প্লাটফর্ম তৈরীর মাধ্যমেও ইনকাম করা সম্ভব।
ডোনেশন:
অনেক ওয়েবসাইট তাদের তৈরীকৃত ফ্রি টুলসগুলো অনলাইনে শেয়ার করে থাকে। আপনারা দেখে থাকবেন অধিকাংশ ফ্রি সফটওয়্যারের ওয়েবসাইটেই ডোনেশন বাটন থাকে। সফটওয়্যার ব্যবহারকারীগণ তাদের ইচ্ছানুযায়ী বিভিন্ন সময়ে উক্ত সাইটকে ডোনেশন প্রদান করে থাকে। তবে শুধু ডোনেশনের উপর ভিত্তি করে কোন ওয়েবসাইট তৈরী করা হয় না। ডোনেশনের পাশাপাশি সেইসব ওয়েবসাইটে অন্যান্য মানিটাইজেশন প্রক্রিয়াও সচল থাকে।
ওয়েবসাইট বিক্রয় করা:
ওয়েবসাইট বিক্রয় করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি অ্যাফিলিয়েটরদের মধ্যে দেখা যায়। অনেকে বানিজ্যিকভাবে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যেই ওয়েবসাইট তৈরী করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো আপনি যে সাইটটি বিক্রয় করবেন সেটিকে অবশ্যই আর্নিং ওয়েবসাইট হতে হবে।
এক্ষেত্রে অধিকাংশরা যা করেন, তা হলো তারা নির্দিষ্ট একটি নীশ এর উপর ওয়েবসাইট তৈরী করে। নির্দিষ্ট নীশ নিয়ে কাজ করার কারণ হচ্ছে এর মাধ্যমে সবচেয়ে কম সময়ে, কম খরচে সার্চ ইঞ্জিনে নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডে র্যাংক করানো সম্ভব। এরপর তারা অ্যামাজনের মত জনপ্রিয় কোন সাইটের অ্যাফিলিয়েট নিয়ে সেখান থেকে পণ্য বাছাই করে সাইটকে র্যাংক করান। এভাবে সাইট যখন ইনকাম করতে শুরু করে, তখন সেটিকে বিক্রয় করে দেন।
ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন তো করলেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে সাইট কিনবে কে? আপনি জেনে অবাক হবেন যে, ইন্টারনেটে এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যারা আপনার ওয়েবসাইটের ৬ মাসের গড় আয়ের ২০-৩০ গুন বেশি টাকায় আপনার ওয়েবসাইটটি কিনে নেবে। এদের মধ্যে ফিপ্পা ডট কম অন্যতম।
Shibbir Ahmed Pappu says
মুভি ডাউনলোডিং সাইট ক্রিয়েট করে কোন মাধ্যম থেকে ইনকাম করাটা সেফ ও সহজ হবে জানাবেন, প্লিজ।
টি আই অন্তর says
মুভি ডাউনলোডিং সাইট সেফ হবে না, ভাই। কারণ, যে মুভিগুলো আপনি ডাউনলোড করার অপশন দেবেন, সেগুলোর মালিকানা রয়েছে, কপিরাইট ওনার রয়েছে। আপনি যদি আপনার সাইটের মাধ্যমে ডাউনলোড করার অপশন দেন, তবে আপনি কপিরাইট আইন ভঙ্গ করবেন এবং এ জন্যে আপনাকে মামলা খেতে হতে পারে। এ রকম সাইটকে গুগল র্যাংক দেয় না, এ-রকম সাইটে গুগলের অ্যাড বসানো যায় না। তাহলে, এমন সাইট না করাটাই উত্তম। আপনি বরং, মুভি রিভিউ সাইট করতে পারেন যেখানে আপনি বিভিন্ন মুভির রিভিউ লিখবেন। আর সাইটটাকে র্যাংক করাতে পারলেও আপনি বহু দিক থেকে ইনকাম করতে পারবেন।
সজীব says
ভাই, আমার সাইটে যদি আমি অন্য কারো ইউটিউবের ভিডিও শেয়ার করি, তবে কি আমার ওয়েবসাইটে কপিরাইট ক্লেইম হবে? আর blogspot.com দিয়ে কি আমি মনিটাইজেশন পাব?
টি আই অন্তর says
প্রশ্নের জন্যে ধন্যবাদ, সজীব।
আপনি যদি কারো ইউটিউব ভিডিও ডাউনলোড করে নিজের সাইটে আপলোড করেন, তবে কপিরাইট ক্লেইম হবে। আর যদি শুধুমাত্র এমবেড করেন, তবে ক্লেইম হবে না। মনিটাইজেশনের জন্যে আপনার ওয়েবসাইটটির ডোমেইন টপ লেবেল হতে হবে। যেমন, islamicbani27.com। সাব ডোমেইন দিয়ে মনিটাইজেশনসহ আরো অনেক কিছুই করা যায় না।