এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মূল বিষয় কারো পণ্য প্রচারের মাধ্যমে বিক্রি করে কমিশন পাওয়া। পণ্য প্রচারের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলো মেনে না চললে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সাধারণ ভুল গুলো আলোচনা করা হলো।
সাধারণভাবে দেখলে এফিলিয়েট মার্কেটিং বিষয়টি খুবই সহজ। যার কারণে অনেকে বিভিন্ন এফিলিয়েট মার্কেটপ্লেসে যোগদান করছেন। কিন্তু বেশিরভাগ মার্কেটার কিছু ছোট খাট ভুলের জন্য তাদের কাঙ্খিত সফলতা পাচ্ছেন না। কারণ আমরা জানি, কোনো কিছু সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কিছু নিয়মের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম প্রয়োজন, তাহলেই সফলতা পাওয়া সম্ভব। এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সাধারণ ভুলগুলো বা নতুন মার্কেটাররা যে-সব ভুল করে থাকে সেগুলো এড়িয়ে চললে সফলতা পাওয়া যাবে।
এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সাধারণ ভুল
ফ্রিল্যান্সারদের কাছে এফিলিয়েট মার্কেটিং সবচেয়ে জনপ্রিয়। এর দ্বারা ঘরে বসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন অতি সহজে, যদি এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের পদ্ধতিতে কোন ভুল না করেন। কিন্তু এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সাধারণ ভুলগুলো বুঝে উঠতেই মার্কেটারদের অনেক সময় চলে যায়। যার কারণে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পোঁছাতে না পেরে অনেকে কাজ ছেড়ে দেন। এমন পরিস্থিতি যেন আর সৃষ্টি না হয় তাই এই আলোচনা।
অনেক মার্কেটপ্লেসে একসাথে কাজ করা
একসাথে অনেক মার্কেটপ্লেসে কাজ না করাই ভাল। কারণ প্রতিটা মার্কেটপ্লেসের বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। যার ফলে বিভিন্ন নিয়ম পালন করতে পারা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে এবং কাজ করতে বেশী সময় ও শ্রম দিতে হবে। ফলে সফলতায় বাধা আসবে।
কিওয়ার্ড রিসার্চ না করা
এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সাধারণ ভুলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভুল কিওয়ার্ড রিসার্চ না করা।
কিওয়ার্ড হচ্ছে আমরা যা লিখে সার্চ দেই তাই, অর্থাৎ অনলাইনে আমরা কোনো জিনিস খোঁজার জন্য যেটা লিখে সার্চ দেই, সেটাই কি-ওয়ার্ড। আর কিওয়ার্ড রিসার্চ হচ্ছে কোনো জিনিস কত বার খোঁজা হচ্ছে, কোন দেশ থেকে খোঁজা হচ্ছে, জিনিসটি নিয়ে মার্কেটাররা কাজ করছে কি না, জিনিসটি নিয়ে কাজ করলে কতটুকু সফলতা পাওয়া যাবে, ইত্যাদি রিসার্চ করা।
এক কথায় পণ্য বিক্রি হবে কি না সেটার পূর্বাভাস জানা যাবে। মনে করেন, চামচ নিয়ে মার্কেটিং করছেন। কিন্তু চামচ যদি কেউ না খোঁজে, তাহলে তো চামচ বিক্রি হবে না। তাহলে বুঝতে পারছেন কি-ওয়ার্ড রিসার্চ কতটা জরুরী এবং কি-ওয়ার্ড রিসার্চ না করা এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে একটা বড় ধরণের ভুল।
কিওয়ার্ড রিসার্চের জন্য ব্যবহার করতে পারেন জনপ্রিয় টুলস Long Tail Pro যা পেইড এবং Google Adwords Keyword Planner যা সম্পূর্ণ ফ্রি।
নিম্নমানের পণ্য
আপনি যে পণ্যটি নিয়ে মার্কেটিং করছেন সেটার গুণগত মান ভাল হতে হবে। পণ্যের মান ভাল না হলে বিক্রির সম্ভাবনা থাকে না।
যেহেতু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মানে অন্যের পণ্য প্রচার। তাই ভাল পণ্য বোঝার উপায় হচ্ছে প্রথম সারির মার্কেটপ্লেসের পণ্য নিয়ে কাজ করা এবং পণ্যের রেটিং দেখা ও ভাল রেটিংয়ের পণ্য নির্বাচন করা।
অল্প জ্ঞান
পণ্য সম্পর্কে জ্ঞান বৃ্দ্ধি করতে। অল্প জ্ঞান দিয়ে সফল হওয়া যাবে না।
এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে পণ্য নির্বাচন হয়ে গেলে পণ্য সর্ম্পকে অনলাইনে যা পাওয়া তা screenshot দিয়ে রাখতে হবে এবং বার বার পড়তে হবে। পণ্য সর্ম্পকে সম্ভাব্য প্রশ্ন চিন্তা করা এবং উত্তর বের করা। পণ্য সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে, তা প্রচার করতে হবে।
ট্রাফিক ট্র্যাকিং না করা
ট্রাফিক হচ্ছে ভিজিটর। আপনার ওয়েবসাইটে ট্র্যাকিং পদ্ধতি রাখতে হবে। এটা আপনাকে যে-সব তথ্য দিবে তা হলো ট্রাফিক কেন আপনার ওয়েবসাইট ত্যাগ করছে, ট্রাফিক কোনটি ক্লিক করছে, কত সময় কি করছে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এতে করে ওয়েবসাইটের দুর্বল দিকগুলো বুঝতে পারবেন এবং যত দ্রুত সম্ভব সে-গুলো সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে Google Analytics ব্যবহার করতে পারেন যা ফ্রী এবং জনপ্রিয়।
ট্রাফিক লিস্ট তৈরি
ট্রাফিক বা ভিজিটর লিস্টের সংখ্যা যত বাড়বে সফলতা তত বেশী আসবে। এজন্য একটি Subscription form তৈরি করতে হবে। ট্রাফিক যখন আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবে, তৈরিকৃত form টি automatic চলে আসবে। সেখানে ট্রাফিক চাইলে email দিতে পারে আবার নাও পারে।
যদি দেয় তাহলে বুঝতে হবে সে আপনার ওয়েবসাইটের প্রতি আগ্রহী এবং লিস্টের অন্তভুক্ত করে পরে email দিতে পারবেন। ফলে পণ্যের বিক্রয় বেড়ে যাবে কারণ আপনার ওয়েবসাইটের পণ্যের প্রতি তার আগ্রহ আছে বলেই email দিয়েছে। এক্ষেত্রে Mailchimp আপনাকে শতভাগ সাহায্য করবে।
সোসাল মিডিয়া
শুধু search engine এর উপর নির্ভর থাকলে চলবে না। বিভিন্ন সোসাল মিডিয়ায় পণ্যের প্রচারণা করতে হবে। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ সোসাল মিডিয়া ব্যবহার করে। ফলে পণ্য বিক্রির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সোসাল মিডিয়ার ভাল দিক হচ্ছে ফ্রি, অল্প সময় দিতে হয়, সহজ ব্যবহার এবং অধিক ট্রাফিক পাওয়া যায়। এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য পৃথিবীর জনপ্রিয় সোসাল মিডিয়াগুলো Facebook, Youtube, Twitter, Reddit, Pinterest, Tumblr, Google+, Linkedln, VK, Flicker ।
মিথ্যা তথ্য
পণ্য সর্ম্পকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া যাবে না। তাতে আপনার ওয়েবসাইট বা যার মাধ্যম প্রচার করবেন সেখানে ট্রাফিক কমে যাবে। আবার, আকৃষ্ট করার জন্য টাইটেল পরিবর্তন করা যাবে না। বিষয়টি হচ্ছে টাইটেলে দিলেন beautiful pen, কিন্তু পণ্যটি book, এমন করা যাবে না। তাতে যেমন ট্রাফিক হারাবেন, তেমনি ওয়েবসাইটের র্যাকিং কমে যাবে।
নিম্নমানের আর্টিকেল
পণ্যের বিবরণ লেখার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পণ্যের সব তথ্য সঠিকভাবে থাকে। কাঙ্খিত লক্ষ্যে পোঁছাতে এ বিষয়টি খুবই প্রয়োজন। নিম্নমানের আর্টিকেল বা সব তথ্য না থাকলে বিক্রি হবার সম্ভাবনা থাকে না। যদি পণ্য সর্ম্পকে সব তথ্য না দেন, তবে ক্রেতারা সেটা কিনতে আগ্রহী হবে না।
এক্ষেত্রে প্রচারের জন্য নির্বাচিত পণ্যটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে, এটা সর্ম্পকে ভিজিটর কি জানতে চাইতে পারে তা ভাবতে হবে। তবেই সমাধান পাওয়া যাবে।
পেইড প্রচার
পেইড প্রচার আপনার লক্ষ্যে অতি দ্রুত পোঁছাতে সাহায্য করবে।
মনে করেন, আপনি facebook মার্কেটিং করছেন। Facebook এর একটি পদ্ধতি হচ্ছে কিছু টাকা দিলে তারা আপনার post কে মানুষের কাছে অল্প সময়ে পোঁছে দিবে। তা আবার আপনি যে পেশার মানুষের কাছে বলবেন।
উপরের পদ্ধতির মত আপনি আপনার ওয়েবসাাইটকে এবং বিভিন্ন সোসাল মিডিয়াকে অতি সহজে মানুষের কাছে পোঁছে দিতে পারবেন। যার ফলে অল্প সময়ে সফলতা পাবেন।
সোসাল মিডিয়াকে BOOST পদ্ধতিতে যা প্রতিটি সোসাল মিডিয়াতে অপশন থাকে এবং ওয়েবসাাইটকে পে-পার-ক্লিক পদ্ধতিতে Google এর Google Adwords-PPC ব্যবহার করতে পারেন।
উপরের প্রতিটি বিষয় এফিলিয়েটমার্কেটিংয়ের জন্য আবশ্যকীয়। নিয়মগুলো মেনে কাজ করলে অল্প সময়ে সাফল্য অর্জন করবেন। তবে মনে রাখবেন প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। আশা করি এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চলবেন এবং শ্রীঘ্রই আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবেন।
MD Sohan says
ধন্যবাদ ভাই, এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সাধারণত আমরা যে-সব ভুল করে থাকি, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে অনেক উপকার হলো।