মানুষের জন্য সত্যিকালের ভালোবাসার সংজ্ঞাটা বোঝা আসলেই অনেক কঠিন। সহজভাবে বলতে গেলে, এমন একজন মানুষকে বেছে নেওয়া, যাকে সে ভালোবাসে। আর একারণেই প্রায় সময় আমরা দ্বিধা-দ্বন্দের সম্মুখীন হয়ে পড়ি। অনেকে আবার এটিকে শুধুমাত্র একটি অনুভূতি ভেবে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে।
খুব সহজেই অনুমান করা যায় যে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে যারা শুধুমাত্র আবেগের উপর নির্ভর করে কারো সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, পরবর্তীতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সিদ্ধান্ত ভুল বলে প্রমাণিত হয়।
জীবন চলার পথে আমাদের অনেক মানুষের সাথেই পরিচয় হয়। এদের মধ্যে অনেককেই আমাদের ভালো লাগে যা কোন কোন ক্ষেত্রে পরবর্তীতে ভালোবাসায়ও রূপান্তরিত হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে, একই সাথে একাধিক মানুষকে আমাদের ভালো লাগতে শুরু করে। আমরা বুঝে উঠতে পারি না যে, এদের মধ্যে কে আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো জীবনসঙ্গী হিসেবে প্রমাণিত হবে। ফলে আমরা মানসিকভাবে দুঃচিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ি।
আপনার যদি একসঙ্গে দুই জনকে ভালো লেগে যায় এবং আপনার মনে হয় যে আপনি একসঙ্গে দুইজনের প্রেমে পড়েছেন, তবে পরিস্থিত সামলানোর উপায়গুলো জেনে নিন। তারপর, বুঝে শুনে সামনের দিকে অগ্রসর হোন। আর একসঙ্গে ২ জনের প্রেমে পড়লে কিভাবে ১ জনকে বাছাই করে নেবেন তা জানতে পড়তে থাকুন এই লেখাটি।
ভালো গুণাবলী:
একজন মানুষকে বাহ্যিকভাবে আপনার যত ভালোই লাগুক না কেন, প্রকৃত পক্ষে তার মধ্যে যদি একজন ভালো মানুষের গুনাবলী না থাকে, তাহলে সাময়িকভাবে ভালোবাসার সম্পর্কটা আপনার কাছে ভালো লাগলেও পরবর্তীতে সেটিই আপনার মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাড়াবে।
আপনি একই সাথে দু’জন মানুষকে পছন্দ করে থাকলে, তাদের মধ্যে যে কোন একজনকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার প্রথম বিবেচ্য বিষয় হতে হবে যে, তারা কতটা ভালো গুনাবলীর অধিকারী।
তাদের সাথে সময় অতিবাহিত করার সময় তাদের মধ্যে কি কি গুনাবলী রয়েছে, সেগুলি জানার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি তারা কিভাবে সমাজে চলাফেরা করে, সমাজের অন্যান্য মানুষদের প্রতি তাদের মনোভাব কেমন, ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে তারা কতটা সততার সাথে কাজ করে ইত্যাদি বিষয়ে যত বেশি সম্ভব তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করুন।
যখন দুইজনের ইতিবাচক গুনাবলী সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়ে যাবেন, তখন তাদের মধ্যে তুলনা করে দেখুন যে কে কতটা ভালো বৈশিষ্টের অধিকারী।
মন্দ গুণাবলী
একজন মানুষের মাঝে ভাল গুণের পাশাপাশি কিছু মন্দ গুণও থেকে থাকে। পারিবারিক, সামাজিক এবং ব্যক্তি জীবনে আমরা অধিকাংশ সময়ই প্রিয় মানুষদের ক্ষেত্রে আমরা কিছু মন্দ গুণাবলীকে সেক্রিফাইস করে থাকি। কিন্তু এমন কিছু মন্দ গুণবালী রয়েছে যেগুলো সেক্রিফাইস করে চলা ভবিষ্যৎ সম্পর্কের জন্যে ক্ষতিকর।
কাজেই, যে দু’জন মানুষকে ভালবেসে ফেলেছেন, দেখে নিন তাদের মাঝে মন্দ গুণাবলীর পরিমাণ কতটা। এক্ষেত্রে আপনি যদি ছেলে হয়ে থাকেন, তবে এই ৩ ধরণের মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন। আর যদি আপনি একজন মেয়ে হয়ে থাকেন, তবে এই ৩ ধরণের ছেলের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে সাবধানতা অবলম্বণ করুন।
গুরুত্ব দেয়ার প্রবণতা:
২ জন মানুষের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে হলে এটিই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। আপনি যাদেরকে পছন্দ করেন, হতে পারে তাদের একজন হয়তো সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি সেই সব গুণের অধিকারী যা আপনি আপনার সঙ্গীর মধ্যে খুঁজছেন।
আর অন্যজন হয়তো এমন কেউ যে শুধু মাত্র একটি ম্যাসেজ পাঠালেই আপনি অত্যন্ত খুশি হয়ে ওঠেন। এমন পরিস্থিতিতে কি করবেন? ভেবেছেন কখনো? তাই এবার যখনি আপনি তাদের সাথে দেখা করবেন, তখন তারা দেখতে কেমন, তার সাথে সাথে আপনি তাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটিও বিবেচনা করবেন।
আপনার সাথে থাকাকালীন সময়ে তারা উভয়েই আপনাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে এবং আপনি ছাড়াও অন্য কোন মেয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ প্রকাশ করছে কিনা এটা যাচাই করুন। আপনি যে জিনিসগুলি ভালোবাসেন সেই কাজগুলিকে করার জন্য কে কতটা আগ্রহী এটা লক্ষ্য করে দেখুন।
এছাড়া আপনার মধ্যে থাকা গুণবাচক বেশিষ্ট্যগুলিকে সে কিভাবে মূল্যায়ন করে তা আপনাকে জানতে হবে। একই সাথে আপনি তার কাছে কতটা বিশেষ কিছু তা বোঝানোর উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে।
নেতিবাচক বৈশিষ্ট:
কোন মানুষ প্রতিটি বিষয়েই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে সমর্থ নয়। মানুষ মাত্রই তার মধ্যে ভালো গুণের পাশাপাশি কিছু খারাপ বৈশিষ্ট্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এখানে বিবেচনার বিষয়টি হলো যে, একজন মানুষ তার ভুলগুলিকে বোঝার ক্ষমতা রাখে কিনা।
যদি সে তার ভুল বুঝতে পারে এবং পুনরায় একই ধরনের ভুল না করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে সে দ্বিতীয়বার সুযোগ পাওয়ার যোগ্য। অপরদিকে কেউ যদি নিজের খারাপ দিকগুলিকেও বিনা কারণে অর্থহীন যুক্তিদ্বারা ভালো কিছু হিসাবে প্রমাণের চেষ্টা করে, তাহলে তার থেকে দুরে থাকাটাই ভালো।
যাদের মধ্য থেকে একজনের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া কথা ভাবছেন, আগেই নিশ্চিত হয়ে নিন যে তাদের মধ্যে কি কি ভালো বৈশিষ্ট রয়েছে। আর তার চেয়ে বড় কথা তারা নিজেরা এই খারাপ অভ্যাস বা বৈশিষ্টের দিকগুলি উপলব্ধি করতে পারছে কিনা। একই সাথে এগুলি থেকে বের হয়ে আসার জন্য কে কতটা আগ্রহী এবং চেষ্টা করছে।
বন্ধুদের পরামর্শ নিন:
কারো একার পক্ষে কোন মানুষের সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারাটা অসম্ভব। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে পরিচিত মানুষদের সাহায্য নিতে হবে। আর যেখানে সিদ্ধান্তটা ভালোবাসার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের, সেখানে অবশ্যই প্রথমেই সবকিছু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়াটাই ভালো।
আপনার বন্ধুদের মধ্যে যদি আপনার পছন্দের মানুষ দুজনের পরিচিত কেউ থেকে থাকে, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে আলোচনা করুন এবং উভয়ের সম্পর্কে তাদের মতামত নিন। একই সাথে তাদের বন্ধুমহলেরও কেউ যদি আপনার পরিচিত থাকে, তাহলে একই বিষয়ে তাদের সাথেও কথা বলুন।
সামঞ্জস্য এবং অসামঞ্জস্য:
এখন সময় এসেছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের। আপনি যাদের সম্পর্কে ভাবছেন তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের করে আপনাকে অবশ্যই দুজনের মধ্যে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষন করতে হবে। দুজনেরই ভালো মন্দ সবগুলির দিক বিবেচনা করুন। প্রয়োজনে একটি তালিকা তৈরী করুন।
আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, আপনি আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে একটি নিতে চলেছেন আর এক্ষেত্রে কোনভানেই আবেগের বশে বা তাড়াহুড়া করে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে না। সময় নিন, ভাবুন তারপরেই সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হোন।
আপনি দুজনের সম্পর্কে কি ভাবেন, তারা আপনার প্রতি কেমন মনোভাব পোষন করে, দুজনের মধ্যে ভালো মন্দ কি কি বৈশিষ্ট রয়েছে, সমাজে তারা কিভাবে চলাফেরা করে, বন্ধুমহল ও অন্যান্য মানুষদের চোখে তারা কে কেমন ব্যক্তি ইত্যাদি বিষয়ে তুলনা করে তারপরেই নিজের সিদ্ধান্ত নিন।
Leave a Reply