আজকাল অনেকেই ভিন্নধর্মী কাজের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী থাকেন। অর্থ উপার্জন যার জন্য অনিবার্য, তিনি কি পারবেন এর দায় এড়াতে! কিন্তু গতানুগতিক সরকারী কিংবা বেসরকারী চাকরিগুলোতে অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠেন। জীবন হয়ে ওঠে বিস্বাদময়, তিক্ত, একঘেঁয়ে। আবার, অনেকের ক্ষেত্রে সরকারী চাকরীটার জন্য প্রয়োজনীয় ডিগ্রি অর্জনের আগেই অর্থ উপার্জনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে কিংবা অর্থ উপার্জনের কাজটাকেই জীবনের সাথে মিলিয়ে জীবন এবং কাজ দুটোকেই উপভোগ্য করে তুলতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে আয় করার তুলনা কিন্তু খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
ব্যক্তিগতভাবে এই কাজটি অনেকেরই পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। বিশেষত, যারা শিল্পী বা শিল্প সত্তার অধিকারী। কারণ একটি অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুনিপুণভাবে পরিচালনা করতে বুদ্ধির পাশাপাশি শিল্প মনটারও প্রয়োজন পড়ে খুব। কিন্তু, পেটের দায় এবং জীবনের আবদার সম্পূর্ণ মিটল কিনা সেটাও তো খেয়ালে রাখতে হবে। জেনে নিতে হবে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে কীভাবে উপার্জন করা সম্ভব।
আসুন, তাহলে সেটাই জেনে নেয়া যাক।
১.নির্দিষ্ট ক্ষেত্র নির্বাচন করাঃ
একজন ইভেন্ট প্ল্যানার প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। কমিউনিকেশন স্কিল বা আলাপ গড়ে তোলার যে দক্ষতা – এটিই তাকে অনন্য করে তোলে। তবে, একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার৷ সব ধরণের অনুষ্ঠান কিন্তু একরকমভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে সেই অনুষ্ঠানের ডেকোরেশন বা সাজসজ্জা, খাবার মেন্যু, সঠিক জায়গা, সব ধরণের জিনিসের সুষ্ঠু ব্যবহার ইত্যাদি সব নিখুঁতভাবে বিবেচনা করার ক্ষমতা থাকতে হবে। নয় তো সে কাজে তার সফলতার পরিমাণ হবে সামান্য।
প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানেই অন্যগুলোর তুলনায় কিছুটা ভিন্নতা থাকবে। যেমন, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের সামগ্রিক বিষয়াবলি যেমন হবে, কোনো বিজনেস বা ব্যবসা সম্পর্কিত অনুষ্ঠান যেমন কোনো কোম্পানির আয়োজন কিন্তু কখনোই একরকম হবে না। কর্মক্ষেত্রের অনুষ্ঠানগুলোতে সবসময়ই প্রাতিষ্ঠানিক এবং মার্জিত ছাপ থাকা আবশ্যক, যেখানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকে কোমলতা এবং আনন্দের জলছবি। তাই, আপনাকে প্রথমেই বেছে নিতে হবে যে আপনি কোন ধরণের ইভেন্টে বেশি আগ্রহী।
আপনি যে ইভেন্টে বেশি আগ্রহী, সে ধরণের ইভেন্টে আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। একজন দক্ষ প্ল্যানার হওয়ার পর হয়ত সব ধরণের আয়োজনই আপনি করতে পারবেন। কিন্তু, প্রথম ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রতে দক্ষতা অর্জন করলে এবং সে অনুযায়ী এগিয়ে গেলে আপনার সাফল্যে তা অত্যন্ত সহায়ক হবে। তবে, এক্ষেত্রে আরও একটু কৌশলী হওয়া আপনার জন্যই লাভজনক হবে। আপনার পছন্দের পাশাপাশি কোন সেক্টরের বাজার দর ভালো চলছে, সেটা যদি যোগ করে ফেলেন, তবে এই সাফল্যেই নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। সেজন্য সব ধরণের ইভেন্ট সম্পর্কে জেনে তারপর এ সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২. সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ইভেন্ট প্ল্যানিং এর প্রচারণা বা পরিচিতি গড়ে তুলুন
আপনি কি জানেন প্রায় ৪৬% বিয়ের কনে সামাজিক মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে ইভেন্ট প্ল্যানারদের খোঁজ করে থাকেন এবং তার মধ্যে ৩৪% অর্ডারও এভাবেই হয়? সামাজিক মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, পিনটারেস্ট ইত্যাদিতে আপনি যখন বিভিন্ন আকর্ষণীয় ইভেন্ট প্ল্যানিং এর উদাহরণ এবং আপনার দক্ষাতাগুলো তুলে ধরবেন, তখন তা আরও বেশি কার্যকর হবে আপনার জন্য।
বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। তার উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাবে এখন বেশিরভাগ কাজই অনলাইনে করতেই আমরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকি। তাছাড়াও, ইন্টারনেট ছাড়া সবসময় ইভেন্ট প্ল্যানারদের সাথে যোগাযোগ করাও কঠিন। তাই, সামাজিক ক্ষেত্রে নিজেকে পরিচিত করে তুলুন।
বিশেষ করে, ফেসবুকে নিজেকে তুলে ধরুন। প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলুন। জেনে রাখুন, ফেসবুক পেজ খোলার ৮টি লাভ রয়েছে। এটা শুধু যে আপনার কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বাড়াবে, তা-ই নয়; বরং আপনাকে নানা রকম লাভ এনে দেবে।
পূর্বে কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজ করে থাকলে আপনার পেজে সেটা হাইলাইট করুন। নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করার জন্য সব ধরণের সুবিধার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ফোকাস করুন। তাহলে, আপনার ইনকামের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন আপনি।
৩. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে আয় করতে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও পরিচিতি গড়ে তুলুন
অনলাইনে যদি আপনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত না করতে পারেন, তাহলে আপনি অনেক কাস্টমারই হারাচ্ছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন। তবে, অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও আপনার হয়ে উঠতে হবে পরিচিত। বর্তমান যুগে যে পরিমাণে চোর বাটপারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাছে, অনলাইনের উপর থেকে অনেকেরই এতে বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। তাই, আপনার গ্রাহকদের সাথে সবসময়ই সুসম্পর্ক রাখুন, যেনো তারা তাদের পরিচিতদের সবসময় আপনার সম্পর্কেই জানায়।
বিভিন্ন ধরণের সার্ভিস অফারকারীদের প্রতি সকলেরই বিশেষ নজর থাকে। সেই নজরটা কাড়তে পারলেই আপনি অনেক দূর এগোতে পারবেন। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে ৫২% বিয়েতে কনে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে যে ইভেন্ট প্ল্যানার সম্পর্কে জানতে পারেন, তাকেই হায়ার করে থাকেন। অর্থাৎ, অনুষ্ঠানটির প্ল্যানিং তাকেই দিয়ে থাকেন। ৭৪% মানুষ তার আত্মীয় স্বজন কিংবা বন্ধু বান্ধবের মুখের কথার প্রেক্ষিতেই ইভেন্ট প্ল্যানারের সাথে যোগাযোগ করে থাকেন।
তাই, আপনি যদি আপনার কাস্টমারদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা রাখতে পারেন, তবে তা পরবর্তীতে আপনার জন্যই লাভজনক হবে। আর তার পাশাপাশি আপনার পরিচিত যারা আছেন, তাদের সাথেও যোগাযোগ রাখবেন যেনো তারা তাদের পরিচিতদের আপনার সম্পর্কে অবহিত করে।
৪.ইভেন্ট প্ল্যানিং এ কাস্টমারের চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দেওয়াঃ
একটি ইভেন্ট প্ল্যানিং এ আপনাদের বিভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। সব ক্ষেত্রে আপনি সমান লাভ করতে পারবেন, এমন নয়। ধরুন, আপনি ৫টি ইভেন্ট যদি পরিচালনা করে থাকেন, তবে তা হবে ৫ রকমের। আর, সেক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন হতে হবে।
আপনি কোনো ধরণের ইভেন্ট নিয়ে কাজ করেন, সেটা প্রথমেই আপনার পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে। আর সে অনুযায়ী আপনার টার্গেট কাস্টমার থাকবে। বিভিন্ন রিসার্চের মাধ্যমে আপনাকেই বুঝে নিতে হবে যে আপনার টার্গেট কাস্টমার কে। আর সেই অনুযায়ী আপনার কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। তাহলে, বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আপনি খুব সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারবেন। এতে আপনার জন্য কাজ পাওয়াও সুবিধাজনক হবে।
৫.ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে আয় এবং আউটসোর্সিং এর সুবিধা
একজন ইভেন্ট প্ল্যানার হিসেবে আপনার নিজস্ব ইনকাম বাড়ানোর আরও কিছু সুযোগ রয়েছে। একটি পুরো ইভেন্টের কাজ অবশ্যই আপনি একা হাতে করতে পারবেন না। আপনি পরিকল্পনা তৈরি করে সেই মত নির্দেশনা দেবেন। যেটা অনুযায়ী সকল কাজ অন্যরা করে দেবে অর্থাৎ আপনি যাকে যে কাজে নিয়োগ দেবেন।
কিন্তু, এখানে আপনার বাড়তি ইনকামের আরেকটু সুযোগ রয়েছে। আর সেটা নির্ভর করবে আপনি কীসে দক্ষ তার উপর। আপনি হয়ত ব্যক্তিগতভাবে খুব সুন্দর ফুলের কাজ করতে পারেন, কিংবা দেয়াল সাজাতে পারবেন, কিংবা স্টেজের কাজ ভালো পারেন, অথবা ইলেকট্রনিকস এবং প্রযুক্তির কাজও ভালো পারেন। যে কাজটায় আপনি দক্ষ, সেই কাজে অন্য কাউকে নিয়োগ না করে আপনি নিজেই সেটা করে ফেলুন।
এতে আপনি দ্বিমুখী সুবিধা পেতে পারেন। প্রথমত, অন্য কাউকে নিয়োগ করলে যে অর্থটা তাকে দেওয়া লাগত, সেই অর্থ আপনার পকেটেই থেকে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আপনার এই দক্ষতায় আপনার ক্লায়েন্ট যথেষ্ট সন্তুষ্ট হবেন। যা আপনার ব্যবসার প্রসারে অত্যন্ত লাভজনক হবে। এমনও হতে পারে যে আপনার দক্ষতার কাজটির জন্য অন্য কোনো জায়গায় বিশেষভাবে আপনার ডাক পড়ল।
তবে, এর জন্য আপনাকে যথেষ্ট পরিশ্রমী হতে হবে। এমনও হয়ত হতে পারে যে, আপনাকে রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটাতে হবে। কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা থাকলে এক্ষেত্রে আপনার ইনকাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
একজন ইভেন্ট প্ল্যানারকে প্রথম দিকে অনেকটা পরিশ্রম করেই পরিচিতি পেতে হয়। তবে, সে যখন একবার তাকে সবার কাছে প্রশংসিত হওয়ার যোগ্য করে তুলতে পারে, তারপর আর একজন ইভেন্ট প্ল্যানার হিসেবে তার পিছনে তাকিয়ে দেখার দরকার নেই। অর্থাৎ, তিনি সফলভাবেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে আয় করতে সক্ষম হবেন। অতএব, সুকৌশলী এবং সকলকে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় কাজ করার পরিকল্পনা থাকলে সাফল্য আসবেই।
Leave a Reply