আয়রন যুক্ত খাবার আমাদের দেহের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। আয়রন এক ধরণের খনিজ যা দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে। সমস্ত শরীর জুড়ে অক্সিজেন বহন করা এবং রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি করতে সাহায্যে করা এই কাজগুলোর মাঝে অন্যতম।
আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা কিংবা অবসাদ – ক্লান্তির মত লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পিরিয়ডের সময়ে নারীদের যদি আয়রনের অভাব হয়, তাহলে তারা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে থাকবে।
স্বাস্থ্যবিদগনের মতে আমাদের দৈনিক ১৮ মিলিগ্রাম আয়রন গ্রহণ করা উচিৎ। তবে, এটা শরীরের শোষণ পরিমাণের উপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হল, আয়রনের মত এ-রকম অপরিহার্য পুষ্টিকর উপাদানটি আপনি বিভিন্ন খাবার থেকে পেতে পারেন।
সত্যি বলতে, আয়রন আমাদেরকে দৈনন্দিন খাবার থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। যদিও কিছু ঔষধ কোম্পানী আয়রন সাপ্লিমেন্ট বের করেছে, তবু বিজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ হচ্ছে সেগুলো গ্রহণ না করে খাবার থেকে আয়রন গ্রহণ করা।
আমি আজকে সবচেয়ে বেশি আয়রন আছে এ-রকম ১০টি খাবার নিয়ে আলোচনা করবো।
যেসব খাবারে সবচেয়ে বেশি আয়রন আছে
আয়রন আছে এমন খাবারের সংখ্যা অনেক। দৈনন্দিন আমরা যে-সব খাবার খেয়ে থাকি, সেগুলোর অনেকটাতেই যথেষ্ট্য পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। তবে, যারা আয়রনের অভাবজণিত রোগ-ব্যাধিতে ভুগছেন, তাদের জন্যে সেগুলো যথেষ্ট্য নয়। তাদের চাই এমন সব খাবারের তালিকা যেগুলোতে আয়রন পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে। বেশি আয়রণযুক্ত এ-রকম কিছু খাবারের তালিকা দেখে নিন।
আয়রন যুক্ত খাবার
মাংস
ইংরেজিতে রেড মিট আর বাংলায় মাংস বললে প্রায় সবাই চিনেন। মাংসের মধ্যে প্রায় ১৫% আয়রন থাকে। এছাড়া মাংস ভিটামিন বি, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং উচ্চ মানের প্রোটিন সমৃদ্ধ। ১০০ গ্রাম মাংসতে প্রায় ২.৭ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
গবেষণা করে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত মাংস, পোল্ট্রি এবং মাছ খায়, তাদের মধ্যে আয়রনের অভাব দেখা যায় না। যাদের রক্তশূন্যতা আছে, তাদের জন্য মাংস খুব গুরুত্বপূর্ণ খাবার। বিশেষ করে, রেড মিটে প্রচুর পরিমাণে হিমি আয়রন আছে এবং যে কারো শরীরে আয়রনের অভাব দূর করতে শুধুমাত্র মাংসই যথেষ্ট্য বলে মত দিয়েছেন অনেক খাদ্য বিশেষজ্ঞ।
আমাদের দেশে মাংস বলতে আমরা সাধারণত গরুর মাংসকেই বুঝে থাকি। আর মজার ব্যাপার হল মাংসের মধ্যে গরুর মাংশেই আয়রন বেশি থাকে। এছাড়া, ছাগলের মাংসেও অনেক আয়রন থাকে। আর যারা গরু বা খাশির মাংস খান না, তাদের জন্যে রয়েছে আয়রনযুক্ত বিকল্প মাংসের ব্যবস্থা। আর সেগুলো হলো মুরগি এবং হাসের মাংস। প্রতি ৫ আউন্স মুরগির মাংশে প্রায় ৫ মিলিগ্রামের মতো আয়রন মেলে। আর হাসের মাংসে এর থেকেও বেশি।
কুমড়ো বীজ
মিষ্টি কুমড়ো আমরা কমবেশি সবাই খাই। কারণ, আমরা জানি এই সবজিটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে যা চোখের জন্যে দারুণ উপকারি। তবে, মিষ্টি কুমড়োর বীজ আমরা অনেকেই খাই না। কিন্তু মিষ্টি কুমড়ার বীজ একটি সুস্বাদু এবং আয়রনযুক্ত খাবার। মাত্র ২৮ গ্রাম কুমড়োর বীজে প্রায় ৪.২ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। সুতরাং, আয়রন যুক্ত খাবার হিসেবে কুমড়োর বীজ অতুলনীয়।
উপরন্তু, কুমড়া বীজ ভিটামিন কে, জিঙ্ক এবং ম্যাঙ্গানিজের একটি ভাল উৎস। যে-সব মানুষের দেহে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি আছে, তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো উৎস এই মিষ্টি কুমড়োর বীজ। ২৮ গ্রাম কুমড়োর বীজে প্রায় ৩৭% ম্যাঙ্গানিজ থাকে। এই ম্যাঙ্গানিজ ইনসুলিন তৈরি করে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ডাল
আমাদের অনেকের খাবার টেবিলে ডাল না থাকলে চলেই না। আসলে না চলাটাই স্বাভাবিক। কেননা ডালে প্রচুর আয়রন থাকে। আধা কাপ ডালের মধ্যে প্রায় ৬.২৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। তাই, গরিবের আমিষ ও আয়রনের অভাব পূরণে ডালের কোন বিকল্প নেই।
প্রায় সব ধরণের ডালেই আয়রনের উপস্থিতি রয়েছে। এর মাঝে বেশি আয়রন পাওয়া যায় মুগ ডালে। তবে, কেউ যদি ডাল থেকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পেতে চায়, তবে তার উচিৎ বিভিন্ন ধরণের ডালকে মিক্স করে রান্না করা। আর ডাল আমাদের শুধু আয়রনই সাপ্লাই দেয় না, সব ধরণের ডালেই রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কুপার।
টার্কি মুরগী
পূর্বে রেড মিট নিয়ে বলা হয়েছে। যদিও টার্কি রেড মিডেরই অন্তর্ভূক্ত, কিন্তু টার্কিকে একটু আলাদাভাবে বলা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক টার্কি দেখা যাচ্ছে। অনেকে টার্কি লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। টার্কির মাংস স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু খাবার। টার্কির মধ্যে কালো রঙের টার্কিতে সবচেয়ে বেশি আয়রন থাকে।
১০০ গ্রাম টার্কি মাংসে ২.৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। তবে, সাদা টার্কিতে এর পরিমাণ ১.৩ মিলিগ্রাম। এছাড়া, টার্কিতে ভিটামিন বি, মিনারেল, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়ামও রয়েছে।
টার্কির মধ্যে থাকা উচ্চ মাত্রার প্রোটিন আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া, টার্কির মাংস আপনার দেহের হাড়ের ক্ষয় রোধ করে, পেশীকে করবে শক্তিশালী।
ফুলকপি
শীতকালে বাংলাদেশে প্রচুর ফুলকপি দেখা যায়। অবিশ্বাস্যভাবে ফুলকপি যেমন পুষ্টিকর খাবার, তেমনি এতে রয়েছে আয়রন। ১৫৬ গ্রাম ফুলকপিতে ১ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে। ফুলকপিতে শুধু আয়রন নয় বরং ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফাইবারের মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের উপস্থিতিও রয়েছে। কাজেই, শীতের এই সবজিটি বেশি বেশি করে খান, যদি আয়রনের অভাব থেকে মুক্ত থাকতে চান। কারণ, ফুলকপি আয়রন যুক্ত খাবার হিসেবে উৎকৃষ্ট।
ফুলকপি ছাড়াও প্রায় সব ধরণের শাক-সবজিতেই কম-বেশি আয়রন থাকে। বিশেষ করে, সবুক শাক-সবজিতে আয়রনের পরিমাণটা প্রচুর। তবে, শাক কিংবা সবজি থেকে যথেষ্ট্য পরিমাণে আয়রন পেতে হলে এগুলোকে পুরোপুরি সিদ্ধ না করে অল্প আঁচে রান্না করে খাওয়াটা উত্তম বলে জানিয়েছেন খাদ্য বিজ্ঞানিরা।
ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেট নাম শুনলে মনে হয় বাচ্চাদের খাবার। আসলে, এটা বড়দের জন্যেও উপকারী। এই ডার্ক চকলেট যেমন সুস্বাদু, তেমন পুষ্টিকর। ২৮ গ্রাম ডার্ক চকলেটে প্রায় ৩.৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
ডার্ক চকলেটে আয়রনের পাশাপাশি কপার, ম্যাগনেসিয়াম, প্রিবায়োটিক ফাইবার রয়েছে। প্রিবায়োটিক ফাইবার আপনার পেটের মধ্যে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে বাঁচিয়ে রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, চকলেট কোলেস্টেরলের উপর উপকারী প্রভাব রাখে। যার ফলে, আপনার হার্ট অ্যাটাক ঝুঁকি কমে যায়।
যাইহোক, সব চকলেট আবার এক রকম নয়। তাই, সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কমপক্ষে ৭০% কোকো দিয়ে তৈরি চকলেট খেতে হবে।
শিম ও মটরশুঁটি জাতীয় খাবার
শীতকালে শিমের দেখা মিলে। শিম মূলত শীতকালীন সবজি। তবে বাংলাদেশে হরেক রকমের শিমের দেখা পাই আমরা। শিম, মটরশুঁটি, ছোলা ও সয়াবিন সবগুলো একই রকম। এগুলো আয়রনের অনেক বড় উৎস।
১৯৮ গ্রাম শিম ও মটরশুঁটি জাতীয় খাবারে প্রায় ৬.৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। এছাড়া ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস এই শিম জাতীয় খাবার। হার্টের রোগ এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শিম অনেক বেশি উপকারী খাবার।
যারা ডায়েট করেন এবং ওজন কমানোর চিন্তা করছেন, তারা নিয়মিত শিম খেতে পারেন। কারণ, শিম ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
পালংশাক ও শাক জাতীয় খাবার
শাকের ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই। শাকের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। বাংলাদেশের সকল ঋতুতেই বিভিন্ন রকম শাকের দেখা মেলে। শাকের মধ্যে ক্যালরি কম থাকলেও অন্যান্য উপকারী উপাদান অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে। বিশেষ করে, আয়রন যুক্ত খাবার হিসেবে শাকের কথা ডাক্তাররা প্রায়ই সাজেস্ট করে থাকেন।
১০০ গ্রাম শাকে ৩.৬ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন সি তো রয়েছে। শাক ক্যান্সারের মত ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এছাড়া চোখের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে শাক। কাজেই, শুধু আয়রন নয়, আরো নানা রকম পুষ্টি উপাদান পেতে নিয়মিত শাক খান।
কলিজা
মাংসের মধ্যে যদিও কলিজা অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু তারপরেও কলিজাকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করার প্রধান কারণ এর মধ্যে থাকা আয়রন। কলিজাতে আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি, এটি হিমি ও নন-হিমি দুই ধরণের আয়রনেরই অনেক বড় একটি উৎস। সব ধরণের প্রাণীর কলিজাতেই প্রচুর আয়রন থাকলেও গরুর কলিজাতে থাকে সবচেয়ে বেশি। আর আমাদের দেশের মানুষের কাছে গরুর কলিজা অনেক সুস্বাদু খাবারও বটে।
১০০ গ্রাম কলিজাতে প্রায় ৬.৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। কলিজাতে প্রোটিন, ভিটামিন বি, কপার এবং সেলেনিয়াম রয়েছে। কলিজার মধ্যে থাকা উপাদান ব্রেইন এবং লিভারের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই, প্রচুর আয়রন দরকার এমন যে কাউকে অনায়াসেই কলিজা খাওয়াতে পারেন। বিশেষ করে, গর্ভবতী মহিলা যাদের দরকার বেশি পরিমাণে আয়রন, তাদেরকে পারলে প্রতিদিন গরুর কলিজা খাওয়ান।
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। সাগরের চিংড়িও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। কেননা ১০০ গ্রাম চিংড়ি মাছে রয়েছে ৩ মিলি গ্রাম আয়রন। এছাড়া ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু মাছে ১০০ গ্রামে প্রায় ২৮ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।
সামুদ্রিক মাছ রক্তে কোলোস্টরলের মাত্রা ঠিক রাখে। এছাড়া দেহে থাকা ক্ষতিকর টক্সিন প্রতিরোধ করে সামুদ্রিক মাছ। আর জেনে রাখা ভাল যে, শুধু সামুদ্রিক মাছই নয়, প্রায় সব ধরণের মাছেই কিছু না কিছু আয়রন থাকে। সুতরাং, আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্যে সব ধরণের মাছই, বিশেষ করে আমাদের দেশী মাছগুলো নিয়মিতই খাওয়া উচিৎ।
শেষ কথা
বিভিন্ন রোগ গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, মানুষের দেহে যেসব রোগ হয় তার মাঝে একটা বিরাট অংশ রক্তবাহিত। আর রক্তে আয়রনের অভাবে দেখা দেয় অ্যানেমিয়াসহ আরো বেশ কিছু রোগ। গবেষণায় জানা গিয়েছে, পৃথিবী জুড়ে মানুষের যেসব রোগ হয় তার ২০% অ্যানেমিয়ার সঙ্গে রিলেটেড। এমনকি, আরো ৫০% ম্যাটারনাল মৃত্যুর পরোক্ষ কারণও এটি। কাজেই, বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে হলে শরীরে যথেষ্ট্য পরিমাণে আয়রন থাকা নিশ্চিত করতে হবে।
আয়রন আমাদের দেহে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয় না। তাই, আমাদের দেহ সুস্থ রাখতে হলে প্রতিদিন আয়রন যুক্ত খাবার খেতে হবে। এ কারণে যেসব খাবারে সবচেয়ে বেশি আয়রন রয়েছে, উপরে সেগুলোর তালিকা ও ছোট্ট বর্ণনা দিলাম। বুদ্ধিমানের কাজ হবে, একই খাবার নিয়মিত না খেয়ে প্রতিদিন খাবারের মেন্যু পরিবর্তণ করা।
আর উপরের এই ১০টি খাবার ছাড়াও আরো যেসব খাবারে কম-বেশি আয়রন পাওয়া যায়, সেগুলোর একটি তালিকাও সংগ্রহে রাখতে পারেন।
হিমি আয়রন (Heme Iron) পাবেন যে-সব খাবারে-
- ঝিনুক
- টিনজাত সার্ডাইনস
- বাছুরের মাংস
- সামুদ্রিক মাছ
নন-হিমি আয়রন (Heme Iron) পাবেন যে-সব খাবারে-
- আয়রন-সুরক্ষিত নাস্তার সিরিয়াল
- টোফু
- স্কোয়াশ বা তিলের বীজ
- চাল, রুটি এবং পাস্তা
- ছোলা
- কিডনি মটরশুটি এবং লিমা মটরশুটি
- বাদাম
- শুকনা এপ্রিকট
- সেকা আলু
- ব্রোকোলির কাণ্ড
- যে-সব খাবারে হিমি এবং নন-হিমি দুই ধরণের আয়রনই পাবেন-কমলা
- লেবু
- কমলালেবু
- সব ধরণের শাকের পাতা
- ব্রোকোলি
- মরিচ
- স্ট্রবেরি
- তরমুজ
- টমেটো
যাই হোক, শক্তিদাতা আয়রনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই জেনেছি। এখন, আমাদের উপরোক্ত খাবারগুলো গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে এটির যোগান দিতে হবে।
Leave a Reply