আমেরিকার কসমেটিক ব্র্যান্ড সারা পৃথিবীতেই বিখ্যাত। পৃথিবীর অধিকাংশ পণ্য চীনের তৈরি হলেও, কসমেটিকের ক্ষেত্রে বড় জায়গাটি দখল করে আছে আমেরিকা। কসমেটিক আইডিয়া ও ইনোভেশন, উৎপাদন ও উদ্যোক্তা এবং মার্কেটিং ও মানি-ক্যাপচারিংয়ে গত কয়েক বছরে সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে আমেরিকার কসমেটিক ব্র্যান্ডগুলো।
গত বছর আমেরিকার কসমেটিক্স কোম্পানীগুলো ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারের ব্যবসা করেছে বলে জানিয়েছে বিজনেস ইনসাইডার ও মার্কেট রিসার্চ ডট কম। চলতি বছর এই কোম্পানীগুলো আরও প্রসার লাভ করেছে এবং আগামী বছর পুরো পৃথিবীর কসমেটিক বিজনেসকে এরাই ডমিনেট করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাল্টি-কালচারাল কনজিউমারকে মাথায় রেখে অ্যামেরিকান বিউটি প্রোডাক্টস্ কোম্পানীগুলো প্রতিনিয়তই নিত্য নতুন পণ্য নিয়ে আসছে বাজারে। গ্লোবাল বিজনেসের এই যুগে খুব দ্রুতই প্রচার পাচ্ছে তাদের পণ্যগুলো। সারা পৃথিবী জুড়েই মানুষের কাছে আমেরিকার কসমেটিক সমাদৃত। আসুন, সেখানকার বিখ্যাত কিছু ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানি যা আপনাকে কসমেটিক ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করবে।
আমেরিকার বিখ্যাত কসমেটিক ব্র্যান্ড
Avon
নিউ ইয়র্ক সিটির বিভিন্ন বাড়ির দরজায় দরজায় ঘুরে ঘুরে নিজের বানানো কসমেটিক প্রোডাক্টস্ বিক্রি করতেন David H. McConnell নামের একজন অ্যামেরিকান। কালক্রমে তার সেই ভ্রাম্যমান কসমেটিক কোম্পানীটিই আজ ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের অধিকারী। আর এ কোম্পানীতে বর্তমানে ৬.৫ মিলিয়ন কর্মচারী রয়েছে। প্রতি বছর এই কোম্পানীটি প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের কসমেটিক প্রোডাক্টস্ সেল করে থাকে।
Avon এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হচ্ছে ডিরেক্ট সেলিং স্ট্র্যাটেজি যা কোম্পানীর প্রতিষ্ঠার পেছনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে। মূলত, একটু মডিফাইড মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং সিস্টেমে এই কোম্পানী তাদের পণ্য বিক্রি করে থাকে।
Revlon
আমেরিকার মাস-মার্কেট কসমেটিক্স বিজনেসের আইডল ধরা হয় Revlon কোম্পানীকে। যদিও প্রায় সব ধরণের বিউটি পণ্যই উৎপাদন করে Revlon, তবু এটি ডিউডোরেন্টের জন্যেই বেশি বিখ্যাত। সৌন্দর্য্য প্রসাধনীর পাশাপাশি এই কোম্পানিটি সব ধরণের বিউটি টুলস্ও উৎপাদন করে থাকে। Almay এবং Flesh নামে Revlon এর আরো দু’টি ব্র্যান্ড রয়েছে।
নিউ ইয়র্কে অবস্থিত অ্যামেরিকান মাল্টি-ন্যাশনাল কসমেটিক্স, স্কিন কেয়ার, ফ্রেগনেন্স এবং পার্সোনাল কেয়ার কোম্পানী হিসেবে Revlon প্রতি বছর প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে থাকে।
১৯৩২ সালে অ্যামেরিকান ইহুদি দুই ভাই চার্লস্ রেভসন ও জোসেফ রেভসন Revlon কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে চার্লস্ লেকম্যান নামের একজন কসমেটিক কেমিস্ট দিয়ে একটা নেইল পলিশ উৎপাদন করে এই কোম্পানীর যাত্রা শুরু হয়।
Coty
শুধু আমেরিকাতেই নয়, Coty সারা পৃথিবীতেই একটি বিখ্যাত ও বড় কসমেটিক ব্র্যান্ড। এই কোম্পানীটি প্রায় সব ধরণের বিউটি প্রোডাক্টই উৎপাদন করে থাকে। তবে, কালার কসমেটিক, সুগন্ধি পণ্য এবং প্রপেশনাল হেয়ার কেয়ার ও স্টাইলিং প্রোডাক্টের জন্যে কোটির কদর বেশি।
কোটির ৩টি সিস্টার কনসার্ন রয়েছে। এগুলো হল প্রপেশনাল বিউটি, কোটি লাক্সারি এবং কোটি কনজ্যুমার বিউটি।
১৯০৪ সালে কোটি ইনকর্পোরেশন নামের এই কসমেটিক ব্র্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা করেন Francois Coty। ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোটির মোট ব্র্যান্ড দাঁড়িয়েছে ৭৭টি আর সম্পদের পরিমাণ ৯ বিলিয়ন ডলার।
Olay
প্রতিষ্ঠাকালীণ নাম ছিল Oil of Olay, ১ বছরের মধ্যে নাম পরিবর্তণ করে রাখা হয় Oil of Ulay। আর ব্র্যান্ড বাড়ার সাথে সাথে নাম পাল্টে হয়ে যায় Olay যা এখন এক নামে তাবৎ পৃথিবীর কাছেই পরিচিত। অনেক ধরণের বিউটি প্রোডাক্টস্ থাকলেও, ওলে’র সবচেয়ে বেশি মনোযোগ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের দিকে। আর এ ধরণের প্রোডাক্টগুলোই ওলেকে ইউনিক করেছে।
১৯৫২ সালে ইউনিলিভারের একজন নামকরা কেমিস্ট Graham Wulff এই ব্র্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে ত্বক ফর্সাকারি একটি ক্রিম দিয়ে এই কোম্পানীর যাত্রা। Graham Wulff ক্রিমটি বাজারে আনার আগে প্রথমে তার ওয়াইফ ও একজন মেয়ে বন্ধুর উপর অ্যাপ্লাই করেন। ভাল ফল পাওয়ার পরই তিনি এটি বাজারে ছাড়েন। বর্তমানে ওলে ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি কসমেটিক কোম্পানী।
Estee Lauder
প্রেস্টিজিয়াস কসমেটিকের জগতে Estee Lauder দখল করে আছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বিউটি প্রোডাক্ট তৈরিতে এটি মাল্টি-ন্যাশনাল ম্যানুফেকচারার; স্কিন কেয়ার, মেকাপ, ফ্রেগরেন্স এবং হেয়ার কেয়ারসহ আরো নানা রকম পণ্যই এরা উৎপাদন করে থাকে। আর প্রতি বছর Estee Lauder ৪.১১ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ আয় করে থাকে।
আমেরিকার কসমেটিক ব্র্যান্ড আমাদের দেশে খুব বেশি পরিচিত না হলেও অনেক দোকানেই পাওয়া যায়। বিশেষ করে, বড় বড় শপিং সেন্টারগুলোতে রয়েছে সব ধরণের কসমেটিক নিয়ে সাজানো দোকান। আর সেগুলোতেও উপরোল্লিখিত ব্র্যান্ডগুলোর কসমেটিক পণ্যও পাওয়া যায়।
md. Abu sayed says
আপু, সালাম নিবেন। আশা করি ভালো আছেন। আপনি যেহেতু ব্লগ লিখেন, তাই অনেক বিষয়ে নলেজ রাখেন, আমার ধারনা। আপনার বিজনেস আইডিয়ার কিছু ব্লগ পড়লাম। আমি আসলে বিউটি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে চাই। সেক্ষেত্রে, কোন ধরনের পন্য নিয়ে শুরু করবো, বাংলাদেশে অরিজিনাল পন্যগুলো পাবো কিনা, কেমনভাবে শুরু করলে ভালো হয়, এসব কিছুর ধারনা আমি কিভাবে পেতে পারি, ইত্যাদি জানালে উপকৃত হবো।
ধন্যবাদ আপু।
জেসিকা জেসমিন says
ধন্যবাদ, আবু সাঈদ ভাই। আমার লেখা পড়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একইভাবে অগ্রিম অভিনন্দন জানাচ্ছি কসমেটিক ব্যবসার জগতে। এই জগতে আসলে অনেক কিছু জানার আছে। আপনি শুরুতে যদি এমন কারো সঙ্গে সম্পর্ক করে নিতে পারেন, যে কিনা বিউটি প্রোডাক্টের ব্যবসা করছেন। তাহলে, তার কাছ থেকে অনেক কিছু জেনে নিতে পারবেন। আর এক্ষেত্রে তো পণ্যের অভাব নেই, হাজারো রকমের পণ্য রয়েছে। আপনি যদি কোথাও দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে আপনাকে সব ধরণের পণ্য নিয়েই কাজ করতে হবে। আর যদি অনলাইনে ব্যবসা করতে চান, তবে শুরুর দিকে অল্প কিছু পণ্য নিয়ে কাজ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।