আমাজন কিভাবে আয় করে, এই কথাটি জানাটা কিন্তু খুব জরুরি। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ই-কমার্স কোম্পানিটি নানা উত্থান পতনের মাধ্যমে সময় পার করেছে। জেফ বেজসের প্রতিষ্ঠিত আমাজনে কর্মচারীর সংখ্যা ৭ লক্ষ ৯৮ হাজার। এছাড়া, ২০১৯ সালে এদের আয়ের পরিমাণ ২৮০.৫২২ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন বই বিক্রেতা ওয়েবসাইট হিসাবে আমাজন চালু হয়েছিল। কিন্তু, বর্তমানে এর অধীনে ক্লাউড সার্ভিসেস, ডিজিটাল অ্যাডভার্টাইজ, ইলেকট্রনিক্স, সিডি – ডিভিডি, সফটওয়্যার, ভিডিও গেম, আসবাবপত্র ইত্যাদি বিক্রি করে থাকে।
এছাড়া, এদের গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের বিকল্প অ্যালেক্সা পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়েছে এবং তারা অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মুভি এবং টিভি শো বিক্রি করে।
বর্তমানে আমাজনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হল আলীবাবা এবং ওয়ালমার্ট। ক্লাউড সেবাতে গুগল এদের প্রতিদ্বন্দ্বী, জেনে নিন গুগল কিভাবে হাজার কোটি টাকা আয় করে? এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক, আমাজন আয় করে কিভাবে।
আমাজন কিভাবে আয় করে
আমাজনের অর্থনৈতিক অবস্থা
বাজার মূল্যের ভিত্তিতে অ্যামাজন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির একটি। গত ৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ এ অ্যামাজনের মার্কেট শেয়ার ছিল ৮৬৭.৪ বিলিয়ন ডলার।
প্রতি বছর কোম্পানির আয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ হচ্ছে। ২০১৭ সালে ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে ১০.১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ অর্থবছরের অপারেটিং আয়ের পরিমাণ ছিল ১২.৪ বিলিয়ন ডলার, অপরদিকে ২০১৭ অর্থবছরে যা ছিল ৪.১ বিলিয়ন ডলার। গত বছর অ্যামাজনের নিট বিক্রয় ছিল ২৩২.৯ বিলিয়ন ডলার।
অ্যামাজনের ব্যবসায়িক বিভাগসমূহ
অ্যামাজন তার ব্যবসাকে তিনটি বিভাগে বিভক্ত করেছে। যথা:
- উত্তর আমেরিকা
- ইন্টারন্যাশনাল
- AWS
এই বিভাগগুলির মধ্যে উত্তর আমেরিকা এবং ইন্টারন্যাশনাল এই দুটি অংশ অ্যামাজনের ভৌগলিক অংশকে বোঝায়। অর্থাৎ, তাদের পণ্য বিক্রয়ের প্লাটফর্ম এই দুটি অংশতে বিভক্ত।
তারা উত্তর আমেরিকা এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে খুচরা বিক্রয় এবং সেইসাথে সাবস্ক্রিপশন থেকে আয় করে থাকে। খুচরা বিক্রিগুলো অনলাইন এবং ফিজিক্যাল স্টোরে দুই ভাগে বিভক্ত।
আমাজনের অনলাইন স্টোরগুলো থেকে ২০১৮ সালে প্রায় ১২৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেন। অপরদিকে, আমাজন ফিজিক্যাল স্টোরগুলো থেকে ১৭.২ বিলিয়ন ডলার বিক্রয় করেছে।
উত্তর আমেরিকা
আমাজনের উত্তর আমেরিকা বিভাগটি, তাদের আয়ের প্রধান উৎস বলা যেতে পারে। আমাজন ২০১৮ সালে ১৪১.৪ বিলিয়ন এবং অপারেটিং আয়ের পরিমাণ ৭.৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে উত্তর আমেরিকা থেকে। আর এটা হল তাদের মোট আয়ের ৬০.৭%।
এছাড়া, উত্তর আমেরিকার আয়ের অন্যান্য উৎস হল আমাজন প্রাইম, সাবস্ক্রিপশন, মুভি, টিভি শো স্ট্রিমিং সহ ইত্যাদি আরও অনেক মাধ্যম।
ইন্টারন্যাশনাল
বর্তমানে আমাজনের ইন্টারন্যাশনাল বিভাগটি ততটা সমৃদ্ধ নয়। এই বিভাগের মূল লক্ষ্য অনলাইন স্টোর। এই বিভাগ থেকে খুচরা পণ্য বিক্রি এবং সাবস্ক্রিপশন বিক্রি করা হয়। তবে, তারা সব দেশে পণ্য বিক্রি করে না। যে-সব দেশে বিক্রি করে –
- ভারত
- চীন
- জাপান
- অস্ট্রেলিয়া
- ব্রাজিল
- স্পেন
- ইতালি
- নেদারল্যান্ডস
- জার্মানি
- ফ্রান্স
অন্যান্য দেশগুলোতে সীমিত আকারে পণ্য বিক্রি করে থাকে। তবে, আলী-বাবার মত তার আন্তর্জাতিক বাজারে ততটা সক্রিয় নয় পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে। আমাজন গত ৩ বছরে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আশানুরূপ মুনাফা পায়নি। ২০১৮ সালে, আন্তর্জাতিক বিক্রয় ২.১ বিলিয়ন হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে, আমাজনের আন্তর্জাতিক বিভাগটির আয়ের পরিমাণ ছিল কোম্পানির নেট বিক্রয়ের ২৮.৩%।
অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস (AWS)
২০০৬ সালে চালু হওয়া অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস (AWS), গত তিন বছরে মুনাফার পরিমাণ কয়েকগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি একটি ক্লাউড প্লাটফর্ম যেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন কোম্পানি তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।
আমাজনের এই বিভাগটি ২০১৮ সালে মোট ২৫.৭ বিলিয়ন ডলার এবং অপারেটিং থেকে ৭.৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে। গত তিন বছরে AWS এর বিক্রয় ও লাভ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। যদিও, AWS এর বিক্রয় উত্তর আমেরিকার পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক নিচে। তবে, দুটি অংশই ২০১৮ সালে অপারেটিং আয় পরিমাণ খুব কাছাকাছি এসেছিল।
২০১৮ সালে আমাজন ক্লাউড মার্কেটের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করেছিল। AWS এর নিকটতম প্রতিযোগী মূলত মাইক্রোসফট কর্পো অ্যাজুরি এবং গুগল ক্লাউড।
আমাজনের বর্তমান পদক্ষেপ
সম্প্রতি আমাজনের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ হল অ্যাডভার্টাইজ বিক্রি। আর, এই মুহূর্তে তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী গুগল এবং ফেসবুক। অ্যাডভার্টাইজ সার্ভিসের মাধ্যমে আমাজন প্ল্যাটফর্মের ভিতরে এবং বাইরে উভয়ই পণ্য প্রচার করতে সহায়তা করে।
আমাজন তার বার্ষিক প্রতিবেদনে অন্যান্য সেবার পাশাপাশি তার অ্যাডভার্টাইজ সার্ভিসের পরিসংখ্যান দাখিল করে। অ্যাডভার্টাইজ সার্ভিসটি অ্যামাজনের দ্রুত বর্ধনশীল পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে।
শেষ কথা
আমাজন বর্তমানে ই-কমার্স দুনিয়ার একটি বিস্ময়ের নাম। সেই সাথে বিস্ময়ের নাম এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজস। জেফ বেজস বর্তমানে সারা দুনিয়ার ৫ম ধনী ব্যক্তি। আর এই লেখায় আলোচনা করা হয়েছে তার কোম্পানি আমাজন কিভাবে আয় করে। আর, এই আয় জেফ বেজসকে ধনী হতে সাহায্য করেছে।
Leave a Reply