বেশির ভাগ বাচ্চাই ভিডিও গেম খেলতে চরম ভালোবাসে। ভিডিও গেমের মাধ্যমে বাচ্চারা অনেক কিছু শিখতে পারলেও কোন অভিভাবকই সারাক্ষণ তার সন্তানের হাতে গেমিং কন্ট্রোলার দেখতে চান না। বাচ্চারা ভিডিও হেমস এর প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে যে, কোন অভিভাবক চাইলেও এটিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে পারেন না।
গুগলের প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী অধিকাংশ বাবা-মা তাদের সন্তানকে কিভাবে ভিডিও গেমস থেকে দুরে রাখবেন সে-সব তথ্য সার্চ করে থাকেন।
বাচ্চারা খেলাধুলা করবে এটাই স্বাভাবিক। কম্পিউটারে গেমস খেলাটাও দোষের কিছু নয়। কিন্তু সেটা যখন কোন শিশুর জন্য আসক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন অভিভাবকের দুঃচিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভিডিও গেমস খেলার জন্য কোন বাচ্চা আসক্ত হয়ে পড়লে সে তার বাবা মায়ের কাছে অতিরিক্ত সময় ধরে গেমস খেলার কথা গোপন করতে শুরু করে। মাঝে মাঝে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কথা এবং অন্যান্য সামাজিক ক্রিয়া বা আউটডোর গেমস এর প্রতি অনিহা প্রকাশ করতে শুরু করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্তানকে এধরনের আসক্তি থেকে বের করে আনার জন্য বাবা-মাকে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
আপনি একজন অভিভাবক হিসেবে সব সময় আপনার সন্তানের মঙ্গল কামনা করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শিশুরা কোমলমতি হয়। আপনার যে কোন একটি ভুল পদক্ষেপ তার মনে চিরদিনের জন্য বিতৃষ্ণার জন্ম দিতে পারে। তাই আপনার সন্তানকে সারাক্ষণ গেম খেলা থেকে বিরত রাখতে চাইলে, আপনাকে কিছু কৌশল অবলম্বন করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
গেমের ধরণ পাল্টে দিন:
হুম, এই কৌশলটিকেই আগে এনেছি, কারণ হুট করেই আপনি সন্তানের গেম খেলা বন্ধ করতে পারবেন না। তাই, প্রথমেই আপনার উচিৎ আপনার সন্তানের গেমের ধরণ পাল্টে দেয়া। খেয়াল করুন সে কি ধরণের গেম খেলে, তার আগ্রহের দিকটা বিবেচনা করে ১০টি শিক্ষামূলক অ্যাপ বা গেম থেকে একটা একটা করে তার ট্যাবে বা মোবাইলে ডাউনলোড করে দিন। প্রয়োজনে আপনি নিজেও তার সাথে এই ধরণের শিক্ষামূলক গেম খেলায় অংশ নিন।
আপনার সন্তান কি অংকে কাঁচা বা অংকে ভাল, তবে আর ভাল হওয়া প্রয়োজন বলে আপনি মনে করছেন? তাহলে, আপনার সন্তানের গেম খেলাটাকে অংক শেখায় পরিবর্তণ করে দিন। না, গেম খেলা বন্ধ করে নয়, বরং গেম খেলার ছলেই অংক শেখা হবে তার। কিভাবে? প্লে-স্টোরে অনেক অংক শেখার অ্যাপ বা গেম রয়েছে, ওই গেমগুলোই তাকে খেলতে দিন। এই গেমগুলো খেলাও যে মজা এটা তাকে বোঝান এবং সম্ভব হলে আপনিও ওর সাথে অংক শেখার গেমে জয়েন করুন।
আপনার সন্তান নিশ্চয়ই অন্য সবার মত ড্রইং করতে পছন্দ করে। ড্রইং সব শিশুদেরই পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত। এখনকার প্রায় প্রত্যেক স্কুলেই বাচ্চাদের ড্রইং শেখানোর জন্যে আলাদা সেকশন থাকে। আপনার সন্তানকে তাই ড্রইং গেম বা ড্রইং অ্যাপে লাগিয়ে দিন। একদিকে যেমন সে গেম খেলার মজা পাবে, অন্যদিকে তার ড্রইং শেখাটাও ঝালাই হয়ে যাবে।
পরিষ্কার নিয়ম তৈরী করুন:
আপনার সন্তানের পরিবর্তণ হতে থাকা ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট নিয়মের প্রয়োজন। আপনাকে তাকে পরিষ্কারভাবে বোঝাতে হবে যে, আপনি কি চান এবং তার কাছ থেকে কি ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করেন।
এছাড়া এই নিয়মের বাইরে চলাফেরা করলে আপনি কি ব্যবস্থা নেবেন সেটি সম্পর্কেও তাকে অবগত করুন। আপনার বাচ্চাকে সময় দিন এবং তার সাথে কথা বলুন।
আপনি যখন তার সাথে এ বিষয়ে কথা বলবেন, তখন আপনার সন্তানের কাছ থেকে কোন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশা করবেন না। কোন শিশুই তাকে বলা নতুন নিয়ম সহজভাবে মেনে নিতে পারে না, বিশেষকরে তখন, যখন এর পূর্বে এমন কোন নিয়ম ছিলই না।
হতে পারে সে আপনার উপর রাগ করবে, খেতে চাইবে না, কাদঁবে বা চুপ করে থাকবে। এসময় আপনাকে যথেষ্ট ধৈর্যশীল একজন অভিভাবকের পরিচয় দিতে হবে এবং সে যাতে নিজে থেকেই নতুন নিয়মের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে, এজন্য আস্তে আস্তে তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
খেলার সময় নির্ধারণ করুন:
আমি আগেও বলেছি যে আপনি চাইলেও পুরোপুরিভাবে ভিডিও গেমসকে আপনার সন্তান থেকে আলাদা করতে পারবেন না। অবশ্য এটি করার প্রয়োজন আছে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না। ভিডিও গেমসেরও অনেক উপকারী দিক রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ শিশুদের তুলনায় যে-সব বাচ্চারা ভিডিও গেমস খেলে, তারা অধিক বুদ্ধিসম্পন্ন, কৌশলী ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়ে থাকে।
এজন্য আপনি পুরোপুরিভাবে তাকে গেমস খেলতে নিষেধ না করে পরিবর্তে তার ভিডিও গেমস খেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিন। পাশাপাশি কেন আপনি এটি চান, সেটি তাকে ব্যখ্যা করুন। এর ফলে আপনার বাচ্চার মনে কোন রকম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে না এবং সেও আপনার আশানুরুপ আচরণ করবে।
যৌক্তিক থাকার চেষ্টা করুন:
আমি অনেক বাবা-মাকে দেখেছি যে, তারা তাদের বাচ্চাদের কোন অন্যায় বা ভুলের শাস্তি হিসেবে তাকে ভিডিও গেমস খেলা থেকে বিরত রাখেন। এ ধরনের কাজে কখনোই আপনার সন্তানের জন্য কোন উপকার বা ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসে না। উল্টো এর ফলে সে হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করে।
আপনার সন্তানের মধ্যে কখনও যেনো অপরাধবোধ জন্ম না নেয়, সেই দায়িত্ব আপনার নিজের। সে যদি কোন অন্যায় করেও থাকে, তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়ার বদলে কেন সেই কাজটি তার করা উচিৎ নয়, সেটি বুঝিয়ে বলতে শিখুন।
ঠিক একই ভাবে অতিরিক্ত ভিডিও গেমন খেলা কেন তার জন্র ক্ষতিকর এবং ভবিষ্যতে এর কি কি প্রভাব তার জীবনে পড়তে পারে, সেগুলি নিয়ে বাবা-মা উভয়ে একসাথে বসে তার সাথে কথা বলুন।
কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করুন:
আপনার বাসার কম্পিউটার কোথায় রাখা থাকবে, এটা আপনিই নির্ধারণ করেন। সুতরাং আপনি যদি সেটিকে আপনার বাচ্চার শোবার কক্ষে রাখেন এবং সে যদি সময়ে অসময়ে সেটিকে ব্যবহার করে, তাহলে তার দায়ভারও আপনার। কারণ, আপনি পরোক্ষভাবে তাকে এটি ব্যবহারে উৎসাহিত করছেন।
বাসার ফোন এবং কম্পিউটার কখনোই শিশুদের কক্ষে রাখা উচিৎ নয়। পরিবর্তে এটিকে এমন কোন স্থানে রাখুন, যেন খুব সহজেই এটি সবার চোখের সামনে থাকে। সবচেয়ে ভালো হয় বাসায় ডেক্সটপ কম্পিউটারের পরিবর্তে ল্যাপটপ ব্যবহার করা। এতে একদিকে এটিকে আপনি আপনার নিজের কক্ষেই রাখতে পারবেন, আবার অন্যদিকে আপনার সন্তানের স্কুল বা কলেজের কোন কাজের জন্য প্রয়োজন হলে সে আপনার কাছ থেকে নিয়ে এটি ব্যবহার করতে পারবে।
বাচ্চাদের কাছ থেকে কিছু নিতে হলে পরিবর্তে তাদের কিছু উপহার দেওয়াটাও জরুরী। আপনি যদি শুধু তার গেমস খেলাই বন্ধ করে দেন, তাহলে সে এটাকে শাস্তি হিসেবে গ্রহণ করবে। সামনা সামনি কিছু না বললেও আপনার সম্পর্কে তার মনে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হতেই থাকবে।
আপনার সন্তানকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইন্টারনেট এবং ভিডিও গেম খেলতে দেওয়ার পাশাপাশি তাকে অন্যান্য খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করুন। মাঝে মাঝে তাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান এবং অন্য শিশুদের সাথে তার বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
এতে একদিকে যেমন সেও ভিডিও গেমস আসক্তি থেকে বের হয়ে আসবে. অন্যদিকে আপনিও তার কাছে নিজেকে তার বন্ধু হিসেবে প্রমাণিত করতে সক্ষম হবেন।
Leave a Reply