অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীরা নিজের মুঠোফোনেই তৈরি করতে পারেন প্রয়োজনীয় অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস্। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস্ তৈরি করতে আপনার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই বিশেষ উচ্চ শিক্ষারও। আপনার হাতের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেটটির সাহায্যেই অন্যদের মোবাইলের জন্য অ্যাপস্ তৈরি করতে পারেন। জেনে নিন মোবাইল দিয়ে অ্যাপস্ তৈরির সহজ কৌশল। অাপনার বিশেষ কোন কম্পিউটার বা ডিভাইস প্রয়োজন হবে না। শুধু মাত্র একটা অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোনই যথেষ্ট।
উল্লেখ্য, অ্যাপস্ তৈরির অনেক সাইট রয়েছে যেখানে বিনামূল্যে অ্যাপস্ তৈরি করা যায়। তবে অ্যাপস্ তৈরির কৌশল এবং নির্মিতব্য অ্যাপস্ এর ফিচারে অনেক ভিন্নতা রয়েছে। এখানে যে লিংকটি দেয়া হল তা অত্যন্ত সহজ পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস্ তৈরির সুযোগ দিচ্ছে।
অাপনি কি প্রস্তুত? শুধু ২০-৩০ মিনিট সময় প্রয়োজন হতে পারে মাত্র। এই লিংকটিতে প্রবেশ করুন, এবার নিচের পেজটি ওপেন হবে।
‘Create an App’ – লেখাটিতে ক্লিক করুন। এবার কী ধরণের অ্যাপ তৈরি করতে চান, সেটি সিলেক্ট করে দিন। এখানে ক মার্কেটিং অ্যাপ থেকে শুরু করে মিউজিক অ্যাপ পর্যন্ত প্রায় সব ধরণের অ্যাপের ক্যাটেগরি রয়েছে, যে কোনটি সিলেক্ট করে দিন।
যে কোন ক্যাটেগরি সিলেক্ট করার পর সেটির সাব-ক্যাটেগরিগুলো শো করবে। আর আপনাকে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় সাব ক্যাটেগরিটি সিলেক্ট করে দিতে হবে। যেমন, আমি বিজনেস অ্যাপ তৈরি করতে চাইছি, তাই বিজনেস ক্যাটেগরিতে ক্লিক করলাম। আর এ ক্যাটেগরিতে নানা ধরণের অ্যাপ তৈরির সাজেশন হিসেবে নিচের পেজটির মত একটি পেজ পেলাম, যেখান থেকে আমি সাব ক্যাটেগরি হিসেবে ফেসবুক বিজনেস অ্যাপ সিলেক্ট করবো।
প্রত্যেকটা সাব ক্যাটেগরির নিচে দেখুন নীল বাটনে Create লেখাটি রয়েছে। এখন এই Create লেখাটির উপরে ক্লিক করুন। এবার আপনাকে এই ওয়েবসাইটের সাইন আপ পেজে নিয়ে যাওয়া হবে। সুতরাং, আপনার ইমেল এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন আপ করে নিন, আপনি চাইলে ফেসবুক প্রোপাইল দিয়েও সাইনআপ করতে পারেন।
সাইন আপ করার পর, অাপনার মোবাইলে নিচের ছবিটির মত পেজ দেখতে পাবেন। এই পেজে অাপনার অ্যাপটির জন্য একটি নাম লিখুন এবং ‘Get Started’ লেখাটায় ক্লিক করুন।
নতুন একটি পেজ দেখতে পাচ্ছেন। পেজটির উপরে ডান দিকে দেখুন ‘Create A New App’ লেখা অাছে। লেখাটির উপরে চাপ দিন। এবার অাপনার মোবাইলের পর্দায় নিচের পেজটি দেখতে পাবেন।
এবার অাপনাকে প্রথম লাইনে নতুন অ্যাপটির জন্য অ্যাপটির নাম পুনরায় লিখতে হবে, এখানে যে নাম দিবেন সে নামেই অাপনার অ্যাপটি পরিচিতি পাবে। দ্বিতীয় লাইনে অাপনার নিজের নামের প্রথম অংশ এবং শেষ অংশ লিখুন। তারপরে অাপনার ইমেইল অাইডি দিন। এবার নিচে নেক্সট স্টেপ লেখাটির উপর চাপ দিন।
এখন অাপনে চলে এলেন এমন একটি পৃষ্ঠায়( চিত্র – ৪) যা অাপনাকে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপসের সাথে পরিচিত করবে। অাপনারা অবশ্যই অবগত অাছেন যে এন্ড্রয়েড অ্যাপস্ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন শিক্ষা সংক্রান্ত, ব্যবসা সংক্রান্ত, সামাজিক যোগাযোগ, সংবাদপত্র, ছোট প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরা সংক্রান্ত ইত্যাদি, ইত্যাদি।
আপনি অাপনার পছন্দের বিষয়টা ঠিক করুন। যদি আপনি শুরুতেই মানে সাইন আপ করার আগেই কী ধরণের অ্যাপ তৈরি করতে চান তা ঠিক করে দিয়ে থাকেন, তবে এখানে এ অপশনটি আর নাও লাগতে পারে। যাইহোক, সিলেক্ট বাটনে চাপ দিয়ে অপেক্ষা করুন। উল্লেখ্য, নির্ধারিত কোন বিষয় যুতসই না হলে, অাপনি এমটি (Empty) ক্যানভাস সিলেক্ট করে নিজের পছন্দমতো মেনু তৈরি করতে পারেন।
অাপনার মোবাইলের পর্দায় এবার নিচের ছবিটির মত একটি পেজ দেখতে পাবেন। এখন অাপনি অ্যাপটির জন্য হোম স্ক্রিন পছন্দ করতে পারেন। লক্ষ করুন বাম দিকে নিচে তিনটি নীল রং এর অাইকোন রয়েছে। এ তিনটি অাইকোন ব্যবহার করে অাপনি খুব সহজেই অাপনার অ্যাপের স্ক্রিনের জন্য ছবি ও রং পছন্দ করতে পারবেন। প্রদত্ত ডিজাইন থেকে সহজে যে কোন একটি পছন্দ করতে পারেন। অার যদি নিজের পছন্দমত ছবি অাপলোড করতে চান, তাও করতে পারেন, সেক্ষেত্র ছবিটি অবশ্যই কমপক্ষে ৭৬৮x১০২৪ পিক্সেলের হতে হবে।
বাম পার্শে উপরে দেখুন কিছু Common Function রয়েছে। এখান থেকে অাপনার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো অ্যাপে অন্তর্ভূত করতে পারেন। প্রয়োজনীয় বিষয়টির উপর চাপ দিয়ে টেনে নিয়ে যান মধ্যস্থানের মোবাইল স্ক্রিনে। যেমন এখানে ‘ইউটিউব’, ‘ফেসবুক’ এবং ‘ডকুমেন্ট’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অাপনি অনেক অপশন এবং ইভেন্ট যুক্ত করতে পারবেন। সোসাল ফিডস ( Social feeds) লেখাটার উপর চাপ দিন। অাপনার চাহিদা অনুসারে পছন্দের মেনুগুলো একটি একটি করে নিজের সুবিধা মত প্রস্তুত করুন। অাইটেমের উপরে চাপ দিলে ডান দিকে একটি উইনডো দেখা যাবে।
এবার অাইটিমটির নাম, অাইকোন, ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করতে চাইলে পরিবর্তন করে নিতে পারেন। যেমন মেনুর নাম পরিবর্তন করে ইউটিউব এর পরিবর্তে ভিডিও, টিভি চ্যানেল, ড্রামা ইত্যাদি অাপনার অ্যাপের প্রকৃতি অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারেন। তবে ইউআরএল অ্যাড্রেস যুক্ত করতে ভুলবেন না। তা অবশ্যই সঠিক হতে হবে। লিংক কপি করে এনে পেষ্ট করে দিতে পারেন এবং + চিহ্নে চাপ দিয়ে দিয়ে একাধিক লিংক যুক্ত করতে পারেন। এভাবে কিছু লাইভ টিভি চ্যানেলের লিংক যুক্ত করে অাপনি একটি টিভি চ্যানেল সংক্রান্ত অ্যাপ তৈরি করে নিতে পারেন। তবে শুধু টিভি চ্যানেল নয়, এখানে অনেক রকমের প্রয়োজনীয় এন্ড্রয়েড অ্যাপস্ আপনি মুঠোফোনে তৈরি করে নিতে পারেন।
যদি ভুলবশত কোন অপ্রয়োজনীয় অাইটেম সিলেক্ট করে মোবাইল স্ক্রিনে নিয়ে এসে থাকেন, তবে তা সহজেই বাতিল করতে পারেন। এ জন্য অাইটিমটি চেপে ধরে মোবাইল স্ক্রিনটির নিচে নিয়ে যেতে হবে। তারপর বাতিল করার জন্য ‘Ok’ বোতামে চাপ দিতে হবে।
এবার সেভ করে পরবর্তী পেজে অাসুন। এখানে নিচের ছবিটির মত একটি পৃষ্ঠা দেখতে পাবেন।
এখানে আপনার অ্যাপটি যে নামে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটে পরিচিত হবে এবং তার যে ইউআরএল অ্যাড্রেস থাকবে তা প্রদর্শিত হবে। অাপনি এখানে অাপনার অ্যাপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং স্বাগত বক্তব্য লিখতে পারবেন। প্রয়োজনীয় তথ্য যুক্ত করুন এবং ‘সেভ এন্ড নেক্সট’ বাটনে চেপে চেপে অগ্রসর হউন। অবশেষে ‘সেভ এন্ড পাবলিশ’ বোতামে প্রেস করে অ্যাপটি কার্যত তৈরি করে নিন।
অাপনার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরির মূল কাজ শেষ। অাপনি প্রয়োজনে প্রিভিউ দেখে এডিট করে কনফার্ম করতে পারেন। সুবিধামত প্যাকেজ বাছাই করে অাপনার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি প্রচার, নিরাপত্তা ও ইন্টারনেটে বাজারজাত করণে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
অ্যাপটি তৈরি করার পর আমি বিকাশের মাধ্যমে অ্যাপটি থেকে কি টাকা পেতে পারি
এই অ্যাপ তৈরির প্রক্রিয়াটি তাদের জন্যে যারা কোডিং জানেন না, কিন্তু শখের বশে অ্যাপ তৈরি করতে চান। আপনি যদি অ্যাপ দিয়ে টাকা আয় করতে চান, তবে আপনাকে প্রপেশনাল্লি অ্যাপ তৈরি করতে হবে। আর সেজন্যে আপনাকে ৬টি প্রপেশনাল প্রোগ্রামিং লাংগুয়েজ এর যে কোনটি শিখে নিতে হবে। প্রোগ্রামিং লাংগুয়েজ শেখার জন্যে আপনি যে কোনও ভাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে পারেন। আবার চাইলে, নিজে নিজেই ফ্রিতে শিখে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে হয়তো আপনার একটু বেশি সময় লাগতে পারে, তবে কোন খরচ হবে না।
এভাবে তৈরি অ্যাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে, ভাই?
আপনার প্রশ্নের জন্যে ধন্যবাদ, Md Murshed Alam ভাই। এভাবে তৈরি করা অ্যাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতোটা ভাল হবে না। এভাবে অ্যাপ তৈরির প্রক্রিয়াটি মূলত বিগিনারদের জন্যে, নন-প্রপেশনালদের জন্যে। যারা মূলত প্রোগ্রামিংয়ে নতুন, অ্যাপ তৈরি করা শিখছেন, তাদের জন্যে প্র্যাকটিস করার একটা প্লাটফর্ম হতে পারে এটি।
ভাই, মোবাইলে অ্যাপ তৈরি বিষয়ে আপনার টিউটোরিয়ালটা খুবই ভাল লাগলো। কিন্তু যে লিংক এর দ্বারা অ্যাপ তৈরি করব সেই লিঙ্কটাই তো নেই।
কমেন্ট করে আপনার সমস্যা জানানোর জন্যে ধন্যবাদ, আবু হানিফ ভাই। লিংকটা আছে, লেখাটির শুরুর দিকেই আছে, আপনি হয়তো খেয়াল করেন নাই। তৃতীয় প্যারাগ্রাফে দেখুন, “এই লিংকটিতে” প্রবেশ করুন লেখাটিতে হাইপার লিংক করা আছে। আপনাকে যেটা করতে হবে, সেটা হচ্ছে নীল রঙের এই লেখাটিতে ক্লিক করা, তাতেই দেখবেন আপনি ওই সাইটে চলে যাবেন, যে সাইটের মাধ্যমে অ্যাপ তৈরি করবেন।
মোবাইল দিয়ে অ্যাপস্ তৈরির উপর সুন্দর একটি পোষ্ট। একটা কথা বঝলাম না, আমি যে অ্যাপটা তৈরি করলাম সেটা ডানলোড করতে পারবো কিনা।
পারবেন কিন্তু সাইজ অনেক বেশি।
এটা খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার যে, একজন চাইলেই তার হাতের মোবাইল দিয়ে অন্যদের মোবাইলের জন্যে প্রয়োজনীয় অ্যাপস্ বানাতে পারবে। হৈচৈ বাংলাকে ধন্যবাদ, সাধারণ মোবাইল ইউজারদের জন্যে এমন ইনফরমেটিভ তথ্য শেয়ার করার জন্যে।
ভাই, আমি কী এই অ্যাপটা তৈরি করার পরে আবার এডিট করে গুগল এডমোব এর এড বসাতে পারবো?