ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে আইপি এবং ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসের রয়েছে নির্দিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস। আমরা অনেকেই হয়তো আইপি কিংবা আইপি অ্যাড্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না।
আইপি অ্যাড্রেস মূলত কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের আইডেনটিটি, নাম বা ঠিকানা। এই মুহূর্তে আপনার হাতের স্মার্টফোন বা ডেস্কটপটিরও কিন্তু রয়েছে একটি আইপি অ্যাড্রেস।
তাহলে, চলুন দেরি না করে জেনে নেয়া যাক, আইপি অ্যাড্রেস কি এবং কিভাবে খুব সহজেই আপনার কম্পিউটার ও মোবাইলের আইপি অ্যাড্রেস জানবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
আইপি কি?
আইপি হচ্ছে দুইটি শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ যার পূর্ণ রূপ হচ্ছে ইন্টারনেট প্রটোকল। প্রটোকল বলতে আমরা বুঝি আচরণ বিধি। আপনাকে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বিচরণ করাতে আপনার স্মার্ট ডিভাইসটিকে একটা মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। মূলত আইপি হলো কম্পিউটারের নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যার যা কিছু নিয়ম নীতি অনুসরণ করে আপনাকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করে।
আইপি অ্যাড্রেস কি?
আইপি মানে ইন্টারনেট প্রটোকল, তাই আইপি অ্যাড্রেস মানে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় যে ইন্টারনেট প্রটোকল অ্যাড্রেস যা একটি নির্দিষ্ট সংখা বা সাংখ্যিক প্রতিরূপ। এর সাহায্যে নেটওয়ার্কভূক্ত অসংখ্য কম্পিউটারকে একটি আরেকটি থেকে পৃথক করা যায়। সাধারণত আইপি অ্যাড্রেস ইন্টারনেট প্রটোকল ব্যবহার করে তথ্যবলি গ্রহণ ও প্রেরণ করে থাকে।
মনে করুন, আপনার বন্ধু আপনাকে কিছু গিফট পাঠিয়েছে। কুরিয়ার থেকে আপনার বাসায় গিফটটি পৌঁছে দিতে আপনার এলাকা, রাস্তা বা হাউজ নং অর্থাৎ আপনার ঠিকানা জানতে হবে। সেভাবে নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে আইপি অ্যাড্রেস হলো আপনার কম্পিউটারের ঠিকানা। আপনার বন্ধুর ইমেইলটি আপনার কম্পিউটারে পৌঁছাতে আইপি অ্যাড্রেসটির প্রয়োজন।
আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে, একজন মানুষ যখন একলা থাকে, তখন তার নাম বা আইডেনটিটির প্রয়োজন নেই। কারণ, কারো কাছে তার পরিচয় দিতে হচ্ছে না, কারো সাথে তার কোনও লেন-দেন হচ্ছে না। কিন্তু অনেক মানুষ যখন একসঙ্গে থাকে, তখন প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে চেনার জন্যে নামের প্রয়োজন হয়। এতে একজনকে পাঠানো জিনিস অন্যের কাছে চলে যাওয়ার চান্স থাকে না।
একইভাবে, একটি কম্পিউটার যখন অন্য কোনও কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত না থাকে, তখন তার কোনও আইপি অ্যাড্রেসের দরকার নেই। কিন্তু একটি কম্পিউটার যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের জন্যে অন্যান্য কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত হয়, তখন তার একটি আলাদা আইডেনটিটি প্রয়োজন। অর্থাৎ, আইপি অ্যাড্রেস প্রয়োজন যাতে করে অন্যান্য কম্পিউটার সেটিকে চিনতে পারে এবং বুঝতে পারে কোন তথ্যটি কার জন্যে, কোন তথ্যটি কাকে পাঠাতে হবে।
এটাই হচ্ছে মানুষের নামের মতো কম্পিউটারের আইপি অ্যাড্রেস যা দিয়ে কম্পিউটারকে আলাদা করে চেনা যায়। তবে, মানুষের নাম শুরু হয় সাধারণ কোনও না কোন অক্ষর দিয়ে কিন্তু কম্পিউটারের নাম বা আইপি শুরু হয় সংখ্যা দিয়ে। আর এই সংখ্যাটি সম্পূর্ণ ইউনিক। অর্থাৎ, আপনি একই সংখ্যা দিয়ে অর্থাৎ একই আইপি অ্যাড্রেসের দুইটা কম্পিউটার পাবেন না। একই নামে একাধিক মানুষ পাওয়া যায়, কিন্তু একই আইপি অ্যাড্রেসে দুইটা কম্পিউটার পাওয়া অসম্ভব।
পৃথিবীর যেখানে যত কম্পিউটার আছে, যদি সেটি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে, তবে অবশ্যই প্রতিটি কম্পিউটারেরই একটি নাম বা আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে। তবে, মাঝে মাঝেই আমাদেরকে বিভিন্ন প্রয়োজনে আইপি হাইড করতে হয়। এর জন্যে ভিপিএন সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং, আইপি হাইড করে কাজ করার জন্যে ৫টি ফ্রি ভিপিএন সফট্ওয়্যার সম্পর্কে জেনে নিন।
আইপি অ্যাড্রেস দেখতে কেমন?
আইপি অ্যাড্রেস দেখতে পুরোপুরি সংখ্যার একটি সেট যেখানে আপনি চার সেট সংখ্যা দেখতে পাবেন। আর প্রতি সেটেই থাকে এক বা একাধিক সংখ্যা। প্রতিটি সেটকেই ডট (.) চিহ্ন দিয়ে আলাদা করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১ থেকে ৩ ডিজিটের সংখ্যা দেখতে পাওয়া যায়। কয়েকটি আইপি অ্যাড্রেসের নমুনা দেখুন-
- 58.127.0.709
- 103.106.242.78
- 155.205.675.0
আইপি অ্যাড্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত
বিশেষজ্ঞরা যখন প্রথমদিকে আইপি অ্যাড্রেস প্রচলনের কথা ভাবেন, তখন ইন্টারনেটের ব্যবহার ছিলো সল্প পরিসরে। তাই, ৩২ বিট দিয়ে শুরু হয় আইপি অ্যাড্রেসের প্রথম সংস্করণ। এরপর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় ১৯৯৫ সনে দ্বিতীয় সংস্করণ চালু করা হয়। যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে ১২৮বিট।
সংস্করণ
এখন পর্যন্ত আইপি অ্যাড্রেসের সংস্করণ রয়েছে দুইটি যার মধ্যে প্রথমটি ৩২ বিটের (IPv4) এবং দ্বিতীয়টি ১২৮ বিটের (IPv6)
IPv4 (Internet Protocol version 4) Address
IPv4 ৩২বিটের অর্থাৎ ২^৩২ বা ৪,২৯৪,৯৬৭,২৯৬ টি অনন্য অ্যাড্রেস তৈরিতে সক্ষম। এই সিস্টেমে ৩২ বিটকে ৪টি অক্টেটে ভাগ করা হয়। প্রতিটি অক্টেট ডট (.) দ্বারা পৃথক করা। আইপি অ্যাড্রেসের প্রথম অক্টেট (৮বিট) নেটওয়ার্ক আইডি এবং পরের তিন অক্টেট (২৪ বিট) হোস্ট আইডি নির্দেশ করে।
উদাহরণ স্বরূপ, 103.25.250.227
IPv6 (Internet Protocol version 6) Address
IPv6 ১২৮বিটের অর্থাৎ ২^১২৮ বা ৩.৪*১০^৩৮ টি অনন্য আইপি অ্যাড্রেস তৈরিতে সক্ষম। এখানে ১২৮বিটকে ৮টি অক্টেটে ভাগ করা হয়েছে এবং অ্যাড্রেসগুলোকে হেক্সাডেসিম্যাল সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছে। IPv6 সিস্টেমে প্রতিটি অক্টেট কোলন (:) দ্বারা বিভক্ত।
উদাহরণস্বরূপ, 2001:cdba:0000:0000:0000:0000:3257:9647
এক্ষেত্রে কোনো অক্টেট যদি শূণ্য হয়, তবে স্পেস কমানোর জন্য কোলন বসিয়ে ঐ গ্রুপটিকে উহ্য রাখা যায়।
যেমন, 2001:cdba::3257:9647
আইপি অ্যাড্রেস কত প্রকার ও কি কি?
আইপি অ্যাড্রেস প্রধাণত দুই প্রকার। যথা-
- প্রাইভেট আইপি অ্যাড্রেস
- পাবলিক আইপি অ্যাড্রেস
পাবলিক আইপি অ্যাড্রেস আবার দুই প্রকার। যথা-
- ডায়নামিক আইপি অ্যাড্রেস
- স্টেটিক আইপি অ্যাড্রেস
ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে আইপি অ্যাড্রেস আবার দুই প্রকার। যথা-
- শেয়ার্ড আইপি অ্যাড্রেস
- ডেডিকেটেড আইপি অ্যাড্রেস
আইপি অ্যাড্রেসের ভার্সণ দুই প্রকার। যথা-
- IPv4
- IPv6
আইপি অ্যাড্রেস ও ডোমেইন নেমের মধ্যে পার্থক্য কি?
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে, আইপি অ্যাড্রেস মূলত কম্পিউটারের নাম যা সংখ্যা দিয়ে নির্ধারিত আর এই সংখ্যা মূলত সিকোয়েন্স আকারে থাকে। কিন্তু সংখ্যার এই সিকুয়েন্স মনে রাখা মানুষের পক্ষে বেশ কঠিন। তাই, সংখ্যাটাকে বর্ণমালায় রূপ দেয়ার ধারণা থেকেই এসেছে DNS বা ডোমেইন নেম সিস্টেম।
কাজেই, বুঝতেই পারছেন যে ডোমেইন নেম আসলে আইপি অ্যাড্রেসের টেক্সচুয়াল ভার্সন ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি এমন একটি নাম্বার যা কোনও একটি ওয়েবসাইটকে নির্দেশ করে। মূলত, আইপি অ্যাড্রেস ও ডোমেইন নেম একই বিষয়। যেমন, যে ওয়েবসাইটে আপনি এই লেখাটি পড়ছেন তার ডোমেইন নেম হচ্ছে https://hoicoibangla.com। কিন্তু যদি এটি আইপি অ্যাড্রেস দিয়ে ভিজিট করতে হতো, তখন হয়তো নামটা এ-রকম হতো- http://173.252.100.16 যা মনে রাখা সহজ হতো না।
কিভাবে আপনার কম্পিউটার ও মোবাইলের আইপি অ্যাড্রেস জানবেন?
এতোক্ষণে আমরা জেনে নিলাম নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে আইপি অ্যাড্রেসের গুরুত্ব ও এর আদ্যোপান্ত। এখন জেনে নেয়া যাক কিভাবে খুব সহজেই আপনার ব্যবহৃত মোবাইল ও কম্পপিউটারের আইপি অ্যাড্রেসটি বের করবেন সে সম্পর্কে। বর্তমানে বিভিন্ন রকম আইপি অ্যাড্রেস চেকারের সাহায্যে জেনে নেয়া যায় আইপি অ্যাড্রেস।
আপনার ডিভাইসটিকে ইন্টানেটের সাথে সংযুক্ত করে এক ক্লিকেই দেখে নিতে পারেন আপনার কম্পিউটার ও মোবাইলের আইপি অ্যাড্রেস। নিম্নোক্ত যে কোন লিংকে ঢুকে ইন্টারফেসটি লক্ষ্য করুন। IPv4 ও IPv6 উভয় ভার্সনে আইপি অ্যাড্রেসসহ দেখতে পাবেন আইপি লোকেশনও।
এছাড়া Show Complete IP Details এ ক্লিক করে দেখা যাবে Hostname, ASN, ISP সহ বিস্তারিত।
আইপি অ্যাড্রেস কি, আইপি অ্যাড্রেসের প্রকারভেদ, ডোমেইন নেমের সঙ্গে পার্থক্যসহ যাবতীয় সবকিছুই জানলেন। সেই সাথে, নিজের কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের আইপি অ্যাড্রেস বের করার সহজ উপায়ও পেয়ে গেলেন।
আশা করি, আইপি অ্যাড্রেস সম্পর্কিত এই লেখাটি আপনার কিছুটা হলেও উপকারে এসেছে। সুতরাং, লেখাটি শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকেও আইপি অ্যাড্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন।
Leave a Reply