আইইএলটিএস পরীক্ষা দিতে উৎসাহী যারা, তাদের জন্য সেরা দশটি আইইএলটিএস রিডিং টিপস নিয়ে এলাম আজ। আইইএলটিএস পরীক্ষায় ৪টি সেকশনে রিডিং দ্বিতীয় এবং চেষ্টা করলে এই সেকশনেই সবচেয়ে ভাল মার্কস পাওয়া সম্ভব। কাজেই এই সেকশনের প্রস্তুতি নেয়ার সময় অবহেলা করবেন না।
আজকাল ঘরে বসেই আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া যায়। আর এই প্রস্তুতির একটা বড় পোর্শন হচ্ছে রিডিং। বাংলাদেশিরা এই সেকশনে তুলনামূলক ভাল, তাই সহজে তারা এতে খারাপ ফল করেন না। কিন্তু দেখা যায় খারাপ না করলেও খুব ভাল করে উঠতে পারেন না অনেকেই। এর কারণ হল সামান্য একটু কৌশলের অভাব।
একটু স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং করলে আপনি সহজেই রিডিং সেকশনে ভাল নাম্বার পাবেন। যার ফলে আপনার গড় নাম্বারও কিন্তু বাড়বে। তাই, রিডিংয়ে ভাল করার জন্যে নিন্মোক্ত টিপসগুলো অনুসরণ করুন।
সেরা ১০টি আইইএলটিএস রিডিং টিপস
আপনার জন্যে আজ আইইএলটিএস পরীক্ষার ফলাফলে স্কোর বাড়ানোর জন্যে ১০টি রিডিং টিপস্ রইলো। এগুলো শুধু আপনার রিডিং এক্সামের স্কিলই বাড়াবে না, পাশাপাশি আপনার ইংলিশ নলেজকে সমৃদ্ধ করবে।
১। বেশি করে ইংরেজি গল্পের বই পড়ুন
আমার এক শিক্ষক বলেছিলেন, ভাষা শেখাটাকে কষ্ট হিসেবে না নিয়ে ফান হিসেবে নিন। আপনি শিখবেন অনেক সহজে এবং মনেও থাকবে বেশি।
গল্পের বই পড়ার চেয়ে ভাষা শেখার মজার উপায় আর কি আছে? এতে আপনার এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মরবে। আপনার পড়ার অভ্যাস যেমন গড়ে উঠবে, তেমনি নতুন নতুন শব্দ শিখতে পারবেন। প্রচলিত ইডিয়ম এবং কলোকুইয়ালিজম বা আঞ্চলিক শব্দও শিখতে পারবেন যা শুধু পত্রিকা পড়লে হবে না।
কি কি পড়বেন? নীলক্ষেতে বা শাহবাগে গেলে প্রচলিত বেস্ট সেলার ইংরেজি বইগুলো পাবেন। এ ছাড়া ইংরেজি অনার্স ও মাস্টার্স লেভেলের পাঠ্য বইগুলো পড়তে পারেন। এতে আপনার ক্লাসিক ইংরেজি সাহিত্য সম্পর্কে ধারণাও আসবে।
২। ভোকাবুলারি বাড়ান, রিডিং স্কিল বাড়বে
ইংরেজি শব্দভাণ্ডার যদি সমৃদ্ধ না থাকে, তবে রিডিং এ কিছুতেই ভাল মার্কস তোলা সম্ভব নয়। কাজেই আপনার ভোকাবুলারির সংখ্যা বাড়ান। যদি আপনার ভোকাবুলারি ছয় হাজার শব্দের কম থাকে, তবে প্রতিদিন অন্তত পাঁচটি করে নতুন ইংরেজি শব্দ শিখুন।
আপনি যে বই পড়বেন সেগুলো থেকেই নিয়মিত নতুন নতুন শব্দ সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া আইইএলটিএস এর জন্য প্র্যাকটিস টেস্ট থেকেও অচেনা শব্দগুলো সংগ্রহ করে শিখে ফেলুন।
৩। গ্রামারের উপর জোর দিন
ভোকাবুলারির মতই গ্রামারের দক্ষতাও প্রয়োজন। সামারি করা বা সেনটেন্স কমপ্লিশন জাতীয় প্রশ্নগুলোতে আপনাকে প্রায়ই গ্রামাটিকালি শুদ্ধ উত্তরটি বেছে নিতে হয়। কাজেই বেসিক ইংলিশ গ্রামার সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখতেই হবে রিডিং সেকশনে ভাল করতে চাইলে।
৪। যে ধরনের বিষয়গুলো পরীক্ষাতে আসে সে বিষয়ে পড়াশুনা করতে থাকুন
আইইএলটিএস পরীক্ষায় যে ধরনের বিষয়ের ওপর থেকে কম্প্রিহেনশনগুলো আসে সে ধরনের সাবজেক্টের ওপর পড়াশুনা রাখুন। তাহলে অপেক্ষাকৃত জটিল বিষয়গুলোও অভ্যাসের ফলে সহজ হয়ে আসবে এবং পরীক্ষার হলেও আপনি দ্রুত মূল টপিকটি ধরতে পারবেন।
সাধারণত যে ধরনের বিষয়গুলো আসে তা হল বিজ্ঞানের সমসাময়িক বা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, পরিবেশসংক্রান্ত বিষয় যেমন গ্রিন হাউস ইফেক্ট, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির আশঙ্কা ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী, বাণিজ্য, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজব্যবস্থা ও সরকার, যোগাযোগব্যবস্থা ও প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়েও কম্প্রিহেনশন আসে। এ ধরনের বিষয় নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে যাতে আপনার সাধারণ একটা ধারণা থাকে ও প্রচলিত শব্দগুলো সহজেই ধরতে পারেন।
৫। সুযোগ পেলেই পড়ুন
আমরা অনেকেই পড়ার সময় পাই না। কথাটা কি সত্যি? সম্পূর্ণ সত্যি নয়।
আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভাল করতে চাইলে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে ইংরেজি পড়ার অভ্যাস গড়তেই হবে। এক্ষেত্রে আপনার পড়ে থাকা সময়টা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে খুব সচেতন হোন।
যেমন আমরা ঢাকার বাসিন্দারা দিনের বড় একটা অংশ ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে কাটাই। এই সময়টা ফেসবুকে না কাটিয়ে পার করুন বই পড়ে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময় করে এক দুই পৃষ্ঠা পড়ে নিন। রাতে ঘুমানোর আগে অন্তত দুতিন পাতা পড়ুন।
এভাবে দেখবেন দিনের মাঝে প্রচুর সময় আমরা অলস নষ্ট করি বা মোবাইলে অযথা ব্রাউজিং করে কাটাই, যা হয়তো মোবাইলেই একটা তথ্যপূর্ণ আর্টিকেল পড়ে আরও ভালভাবে ব্যয় করা যায়।
৬। পুরো প্যাসেজ পড়বেন না
পরীক্ষার হলে এই ভুলটা প্রায় সবাই করেন। পুরো প্যাসেজ ভাল করে খুঁটিয়ে পড়তে যান। এতে মহা মূল্যবান সময় নষ্ট হতে থাকে। মনে রাখবেন পরীক্ষার হলে প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি কতটুকু জানেন তার চেয়েও কতটুকু দেখাতে পেরেছেন তার গুরুত্বই পরীক্ষায় অনেক বেশি।
আপনি পুরো প্যাসেজটা আগে একবার চোখ বুলিয়ে খুব দ্রুত পড়ে নিন। তারপর প্রশ্নগুলো দেখুন এবং প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তরগুলো প্যাসেজের ভেতর থেকে খুঁজে বের করুন। এভাবে পড়লে আপনি খুব দ্রুত এবং যথাযথভাবে প্রশ্নের উত্তর সলভ করতে পারবেন।
৭। স্পিড রিডিং শিখুন
স্পিড রিডিং হলো পড়ার একটি পদ্ধতি, যার দ্বারা আপনি খুব দ্রুত একটি প্যাসেজ পড়তে পারবেন। সাধারণত মিনিটে ছয়শ থেকে আটশ শব্দ পড়তে পারলে আপনি স্পিড রিডিং জানেন বলে ধরে নেয়া হবে।
স্পিড রিডিং জানা পরীক্ষায় খুব কাজে দেবে, কারণ এতে আপনি খুব তাড়াতাড়ি প্যাসেজটা পুরোটা শেষ করে তার মানেটা বুঝতে পারবেন। তাই নিয়ম করে খুব দ্রুত পড়ার অভ্যাস আয়ত্ত করে নিন।
৮। চোখ বুলানোর কৌশল আয়ত্ত করুন
স্পিড রিডিঙের একটি রকম ফের হল দ্রুত চোখ বুলিয়ে নেয়ার কৌশল। অর্থাৎ আপনি এক পৃষ্ঠার ওপর দ্রুত চোখ বুলিয়ে যাবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো, অর্থাৎ কি ওয়ার্ডস আপনার চোখে ধরা পড়বে। এটিও আপনাকে নিয়মিত অভ্যাস করে শিখতে হবে।
এই অভ্যাস কাজে লাগবে পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর প্যাসেজের মধ্যে থেকে খুঁজে বের করতে গিয়ে।
৯। কি ওয়ার্ডস ব্যবহার করুন
প্রশ্নের থেকে কি ওয়ার্ডস চিনে নিন এবং সেটিকে সূত্র ধরে দ্রুত উত্তর বের করতে শিখুন। চোখ বুলানোর যে কৌশলটার কথা বলেছি তার সাথে এটা সম্পর্কযুক্ত। সাধারণত প্রশ্নের যে শব্দটি দেয়া থাকবে তার একটি সিনোনিম আপনি প্যাসেজের মধ্যে খুঁজে পাবেন এবং তার সাথেই থাকবে আপনার উত্তরটি।
উদাহরণ:
Q: Was early timekeeping invention affected by cold weather?
Excerpt from the passage: Ancient timekeeping devices did not always perform correctly in the freezing temperature of Northern Europe.
এখানে আপনি দেখতে পাচ্ছেন প্রশ্নে বলা হয়েছিল timekeeping ও cold weather। আপনি এর সিনোনিমগুলো বের করার উদ্দেশ্যে প্যাসেজে চোখ বুলালে পেয়ে যাবেন timekeeping ও freezing temperature, এগুলোই হলো আপনার কি ওয়ার্ডস।
১০ । বার বার প্র্যাকটিস করুন
মনে রাখবেন, ভাল করতে চাইলে প্র্যাকটিসের কোন বিকল্প নেই। এ বিষয়ে মার্শাল আর্টের গুরু ব্রুস লি-র একটি কথা স্মরণীয়। তিনি বলেছিলেন, যে লোক এক হাজারটি মার্শাল আর্টের কৌশল জানে তাকে আমি ভয় পাই না। কিন্তু যে লোক একটা মাত্র কৌশল এক হাজার বার প্র্যাকটিস করেছে তাকে আমি ভয় করি।
আশা করি, উপরোক্ত ১০টি আইইএলটিএস রিডিং টিপস আপনার ভাল লেগেছে। সেই সাথে এও আশা করি যে, আপনি এই টিপসগুলো মেনে চলবেন। নিয়মিত পড়াশোনার মধ্যে থেকে আপনার দক্ষতাকে শাণিত করুন। দেখুন যে কোন জায়গায় আপনার দুর্বলতা রয়েছে, এবং সেগুলোকে সমাধান করার পেছনে জোর দিন। তবেই আপনার উন্নতি হবে।
Leave a Reply