আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি কি ঘরে বসেই নেয়া যায়? উত্তর হলো, হ্যাঁ, যায়! কিভাবে, তা জানার জন্যে পড়তে থাকুন।
আইইএলটিএস কি?
আইইএলটিএস (IELTS) হলো ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম- এর সংক্ষিপ্ত রূপ। উচ্চশিক্ষার জন্য, বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য বা মাইগ্রেশন করার জন্য ইংরেজিতে দক্ষতা প্রমাণ করতে এটি সবচেয়ে প্রচলিত পরীক্ষা সিস্টেম।
পৃথিবীর বেশীরভাগ ইংরেজিভাষী দেশ বা প্রতিষ্ঠানে আইইএলটিএস এর রেজাল্ট গ্রহণযোগ্য। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে মাইগ্রেশনের জন্য এই সিস্টেমেই প্রসেস করা হয়। কাজেই বাইরের দেশে উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে চাইলে আইইএলটিএস-এর কোন বিকল্প নেই।
আইইএলটিএস পরীক্ষা কিভাবে হয়?
আইইএলটিএস পরীক্ষা হয় চারটি আলাদা ক্যাটেগরিতে-
- রিডিং
- রাইটিং
- স্পিকিং
- লিসেনিং।
এই চারটি বিষয়ে আপনি আলাদা আলাদাভাবে কত মার্কস পাচ্ছেন তা গড় করে আপনার মোট মার্কস পাওয়া যাবে।
পরীক্ষার নাম্বার হয় শূন্য থেকে ৯ পর্যন্ত। এর মধ্যে ৫ পাওয়া মানে আপনি মডেস্ট ইউজার, ৬ পাওয়ার অর্থ হল কম্পিটেন্ট ইউজার, ৭ হল গুড ইউজার, ৮ ভেরি গুড ইউজার ও ৯ এক্সপার্ট ইউজার বোঝায়। ৫ পেলে আপনাকে মোটামুটি ইংরেজি জানেন বলে ধরা হবে। কিন্তু এই স্কোর দিয়ে আপনি ভাল কোথাও পড়া বা চাকরির সুযোগ পাবেন না। ভাল ইউনিভার্সিটিগুলোতে সুযোগ পাওয়ার জন্য আপনাকে ৬ থেকে ৬.৫ এর উপরে স্কোর তুলতে হবে।
আইইএলটিএস কোর্স হয় দু ধরনের, একাডেমিক ও জেনারেল। বিদেশে উচ্চশিক্ষা, যেমন পোস্টগ্র্যাজুয়েটের জন্য যেতে চাইলে আপনাকে একাডেমিক কোর্স করতে হবে। ইমিগ্রেশনের জন্য বা গ্র্যাজুয়েটের নিচে কোর্স করার জন্য জেনারেল আইইএলটিএস করাই যথেষ্ট।
বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে রেজিস্ট্রেশন করে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেয়া যায়। ব্রিটিশ কাউন্সিল ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার দিন, তারিখ ও সম্ভাব্য খরচ জেনে নিন।
আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য ঘরে বসেই প্রস্তুতি নেয়া কি সম্ভব?
অনেকেই ভাবেন যে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য বহু টাকা খরচ করে কোচিং করতে হবে। কথাটা ঠিক নয়। আপনার যদি ইংরেজির বেসিক জ্ঞান থাকে, তাহলে আপনি বাড়িতে বসেই প্রস্তুতি নিয়ে সরাসরি ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে পরীক্ষা দিয়ে ভাল রেজাল্ট করতে পারেন। এর জন্য শুধু প্রয়োজন আপনার ইংরেজি ভাষার ভিত্তি শক্ত থাকা।
ইংরেজি ভাষা শেখা অনেক সহজ, কারণ ইংরেজি ভাষা কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলে। এই নিয়মগুলো জানা থাকলে আপনার ইংরেজি জানা আছে। আপনি যদি বাংলাদেশের প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে পাঠ্য ইংরেজি গ্রামার বই ও সহায়ক বইগুলো পড়ে থাকেন, তবে আইইএলটিএস দেয়ার যোগ্যতা আপনার আছে।
কিভাবে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য তৈরি হবেন:
১। নিজের লেভেল চিহ্নিত করুন
আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আগে আপনার জানতে হবে আপনার বর্তমান যোগ্যতা কতটা। তবেই আপনি বুঝতে পারবেন পরীক্ষার জন্য তৈরি হতে আপনার কতটা সময় লাগবে ও কি কি পড়তে হবে।
- ক) ভোকাবুলারি বাড়ান
আইইএলটিএস-এ ভাল স্কোর তোলার জন্য আপনাকে ৬ থেকে ৭ হাজার শব্দ জানতে হবে। শুনতে যদিও মনে হচ্ছে এ তো অনেক! আসলে তা নয়। অনার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করা সকলেই এই পরিমাণ বা এর কাছাকাছি ইংরেজি শব্দ জানে। আপনার ইংরেজি শব্দভাণ্ডার কত বড় তা টেস্ট করুন Test Your Vocab এ। এরপর সে অনুযায়ী নিজের ভোকাবুলারি বড় করতে থাকুন।
- খ) মক টেস্ট দিন
মক টেস্ট দিয়ে নিজের যোগ্যতা যাচাই করে নিন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Free IELTS practice tests পেজ থেকে ফ্রি টেস্ট দেয়া যায়।
গ) দুর্বল স্থান চিহ্নিত করুন
এভাবে পরীক্ষা দিয়ে আপনার দুর্বলতাগুলো আগে চিহ্নিত করে নিন। তারপর এ বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়ে পড়াশুনা করুন। আপনার সুবিধামত রুটিন তৈরি করুন এবং তা ভালভাবে ফলো করুন।
২। আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিন:
আপনার দুর্বলতাগুলো কি তা তো আপনি বের করে নিয়েছেন, এবার তা সমাধান করার জন্য কিভাবে পড়াশোনা করবেন তা জেনে নিন।
রিডিং
এই অংশ ভাল করার দিকে তুলনামূলক জোর কম থাকে, কারণ রিডিং অন্যান্য ক্যাটেগরির চেয়ে সহজ বলে মনে করে সবাই। কিন্তু তাই বলে একে অবহেলা করবেন না। কারণ রিডিঙের মাধ্যমেই আপনার ভোকাবুলারি সবচেয়ে ভাল গড়ে উঠবে, যা অন্যান্য অংশেও কাজে লাগবে।
রিডিং পার্ট ভাল করার জন্য তাই বেশি করে ইংরেজি বই ও আর্টিকেল, জার্নাল ইত্যাদি পড়ুন। ইংরেজি ভাষায় ভাল বই নীলক্ষেত বা শাহবাগ গেলেই পেয়ে যাবেন, সেগুলো পড়ুন। ইংরেজি পত্রিকাগুলোর এডিটোরিয়াল পড়ুন। নিউ ইয়র্ক পোস্ট, দি ইকোনোমিস্ট, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ইত্যাদি পড়তে পারেন। এই লিঙ্কে আরও কিছু সহায়ক পাঠ্যতালিকা পাবেন।
রাইটিং
আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য আপনাকে দুটি এসে লিখতে হবে, প্রথমটির জন্য ১৭০ থেকে ২০০ শব্দ, ও পরেরটির জন্য ২৭০ থেকে ৩০০ শব্দ লিখতে হবে। কোন বানান ভুল, ব্যাকরণ ভুল বা এক শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহার চলবে না।
তাই রিডিং থেকে যা শিখবেন তা রাইটিং-এ কাজে লাগান। যে টপিকগুলো পড়বেন তার থেকেই প্রতিদিন অন্তত দুতিন পাতা করে কিছু না কিছু লিখুন। এই লিঙ্কে পাবেন সাধারণত কি ধরনের বিষয়ের ওপর এসে লিখতে হয়।
লিসেনিং
লিসেনিং এ ভাল করার জন্য সবাই বিবিসির খবর শোনার উপদেশ দেয়। আমি বলব এর পাশাপাশি বেশি করে ইংরেজি মুভি ও টিভি সিরিজ দেখুন। বিশেষ করে বিবিসি টিভি সিরিজগুলো দেখা খুব উপকারী, কারণ এতে আপনি ব্রিটিশ উচ্চারণে ইংরেজি শেখার পাশাপাশি প্রচুর আনন্দও পাবেন। আনন্দের মাঝে দিয়ে শিখলে তা আপনার মনে থাকবে বেশি।
স্পিকিং
এই অংশে ভাল করার জন্য ইংরেজি বলার অভ্যেস থাকা জরুরি। এবং এর জন্য সবচেয়ে ভাল হয় বন্ধু কাউকে যোগাড় করে নিলে, যে আপনার মতই ইংরেজি শিখতে আগ্রহী। দুজনে মিলে বসে প্র্যাকটিস করুন। একটা টপিক বেছে নিয়ে তার ওপর কথাবার্তা বলতে থাকুন।
৩। সময় ভাগ করুন:
অনেকে ভাল ইংরেজি জানার পরেও ঠিক সময় মত পরীক্ষা দিতে না পারায় ভাল নম্বর পায় না। এ বিষয়ে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে।
রিডিং টেস্টের জন্য ১ ঘণ্টা, রাইটিং-এর জন্য ১ ঘণ্টা, স্পিকিং-এর জন্য ১১ থেকে ১৪ মিনিট ও লিসেনিং-এর জন্য ৩০ মিনিট সময় থাকে। এই অনুযায়ী সময় বেঁধে নিয়ে প্র্যাকটিস করুন, যাতে আপনি সঠিক সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে পারেন। এই পরীক্ষার ফরম্যাট বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য এই লিঙ্কে দেখুন।
৪। অনলাইনে প্র্যাকটিস করুন:
অনলাইনে মক টেস্ট দেয়ার পদ্ধতি বলে দেয়াই হয়েছে। এভাবে আপনি নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি মক টেস্ট দিতে থাকুন। এতে পরীক্ষার নিয়ম নীতিতে আপনি অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন ও ভয় কেটে যাবে।
এভাবে ঘরে বসেই প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিলে আপনি সহজেই ৬.৫ থেকে ৭ এর উপরে স্কোর করতে পারবেন, এমন কি চেষ্টা করলে এর চেয়েও ভাল করবেন। কারণ আপনি নিজেই সবচেয়ে ভাল বুঝবেন আপনার যোগ্যতা কতটা, এবং ভাল করার জন্য আপনাকে কি কি করতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন, প্ল্যান তৈরি করুন এবং তা অনুসরণ করুন, দেখবেন ভাল ফলাফল আপনার হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।
Golam Rabbi says
ঘরে বসে আজকাল সহজেই আইইএলটিএস প্রিপারেশন নেয়া যায়। তবে, একাডেমিক কোর্স করে নেয়া আরো ভাল। আমাদের সাইটেও আইইএলটিএস প্রিপারেশনের উপর বেশ কিছু ব্লগ পোস্ট আছে, পাঠকরা চাইলে পড়তে পারেন।
Md:Riaj says
আমি কিভাবে IELTS এ পড়াশোনা করবো? আমি এখন নমব শ্রেণিতে। এটি আমার সবচেয়ে বড় আশা।
riaj uddin says
আমি IELTS পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চাই, কিন্তু নবম শ্রেণীতে পড়াকালীণ কি IELTS পরীক্ষা দেয়া যায়?