কেউ বলেন, অ্যান্টি-মসকিটো অ্যাপ দারুণ কাজ করে, কেউ বলেন, কিছুটা কাজ করে, আবার কেউ বলেন কাজ করে না। তাহলে কোনটা সত্য, কাদের কথা গ্রহণযোগ্য, কোন সব ব্যবহারকারীদের বিশ্বাস করবো! আমার মতে, অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে নয়, বরং নিজেই ব্যবহার করে দেখুন মশা তাড়ানোর অ্যাপগুলো আসলে কি কাজ করে, নাকি করে না।
মশা মারার প্রচলিত যে মেডিসিনগুলো বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলোর সাইড ইফেক্টের কথা আমরা সবাই জানি। কাজেই, এটা খুবই বিস্ময়কর ও আনন্দের ব্যাপার যে এসব মেডিসিন, যেমন কয়েল কিংবা স্প্রে ব্যবহার না করে মোবাইলে মশা তাড়ানোর অ্যাপ ব্যবহার করেই মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে, প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কি যায়!
অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবী তাদের অ্যাপগুলো অবশ্যই মশা তাড়াতে সক্ষম। আবার, পাশাপাশি তারা প্রত্যেকেই প্রায় কমন একটা স্বীকারোক্তি প্রদান করে থাকে যে, তারা শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। তার মানে কি এরকম যে এই অ্যাপগুলো কম বেশি কিছু না কিছু কাজ করে? মানে অল্প হলেও মশা তাড়ায়? আসুন, এই অ্যাপগুলোর থিউরি সম্পর্কে কিছুটা আইডিয়া নেয়া যাক…
মশারা হাই প্রিকোয়েন্সির সাউন্ড সহ্য করতে পারে না!
এটা একটা প্রচলিত মিথ যে, মশারা উচ্চ মাত্রার শব্দ নিতে পারে না। যেখানে অনেক হাই প্রিকোয়েন্সি শব্দ হয়, মশারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তবে, প্রচলিত এই মিথের স্বপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, মশারা আল্ট্রা সনিক সাউন্ড পেলে সহ্য করতে না পেরে দূরে চলে যায়, এই কথাটা প্রায় সময়ই সত্য প্রমাণিত হলেও এর পেছনে কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আপনি যেটা করতে পারেন, সেটা হচ্ছে আপনার ঘরে উচ্চ মাত্রার শব্দ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে, সাধারণত আমরা গান শুনতে যে সাউন্ড ব্যবহার করি, সেই সাউন্ড নয়। এটা হতে হবে একই রকমের একটা বিশেষ সাউন্ড যা অ্যাপগুলো ব্যবহার করে থাকে। কাজেই, আপনাকে আসলে কোন না কোন অ্যাপ ব্যবহার করেই দেখতে হবে যে মশারা হাই-প্রিকোয়েন্সি সাউন্ড সহ্য করতে পারে কিনা।
মশা তাড়ানোর অ্যাপ কিভাবে কাজ করে?
মূলত, উপরে আলোচিত এই মিথের উপর ভিত্তি করেই অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো মশা তাড়ানোর অ্যাপ্লিকেশনগুলো তৈরি করে থাকে। এ ধরণের প্রায় সব অ্যান্টি-মসকিটো অ্যাপই ২০ কিলোহার্টস্ থেকে ১০০ কিলোহার্টস্ সাউন্ড প্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে থাকে।
তবে, আমরা জানি যে বাচ্চারা সাধারণত ৩০ কিলোহার্টস্ এর বেশি সাউন্ড সহ্য করতে পারে না। অর্থাৎ, এর বেশি সাউন্ড হলে বাচ্চাদের কানে সমস্যা হয়, এমনকি সেটা মস্তিস্কেও প্রভাব ফেলে। তাই, ৩০ কিলোহার্টস্ এর বেশি সাউন্ড প্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। কোন কোনটির বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
তবে, কিছু অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দাবী করছে যে, তাদের অ্যাপে ব্যবহৃত সাউন্ড মানুষ শুনতে পায় না। এটা কেবল মশা আর পোকা-মাকড়রাই শুনতে পায়। কাজেই, মানুষের জন্যে এ রকম হাই প্রিকোয়েন্সির সাউন্ড মোটেই ক্ষতিকর নয়। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান এত উচ্চ মাত্রার প্রিকোয়েন্সি ব্যবহার না করে মাত্র ১৭ কিলোহার্টস্ প্রিকোয়েন্সি দিয়েই মশা তাড়ানোর নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
অ্যান্টি-মসকিটো অ্যাপ আসলেই কি কাজ করে?
উপরের কথাগুলো পড়ে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছেন। আপনার জন্যে বাড়তি তথ্য হচ্ছে মশা তাড়ানোর এই অ্যাপগুলো মূলত মজা করার জন্যে তৈরি করা হয়। যেমন, আপনাকে মজা দিতেই তৈরি করা হয়েছে গোস্ট হান্টিং অ্যাপস্ বা ভূত দেখার অ্যাপ। এখন, যদি কিছু অ্যাপ কাজ করে, তবে সেটা বোনাস হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিৎ।
কিছু প্রতিষ্ঠান সত্যিকার অর্থ্যেই মানুষের উপকারের জন্যে এসব অ্যাপ তৈরি করে থাকে। আবার, পাশাপাশি এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে এমন অনেক অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মূলত মানুষের সঙ্গে প্রতারণাই করে থাকে। তাদের উদ্দেশ্যই হয়ে থাকে, এসব অ্যাপে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন থেকে রেভিনিউ আয় করা।
যাইহোক, যার উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, আমাদের তো আর লস নেই। আমরা অ্যাপগুলো ব্যবহার করেই দেখতে পারি। কাজ না হলেও তো আনন্দ পাবো, সেটাই বা কম কিসে?
Leave a Reply