যে পৃথিবীতে আমরা এই মুহুর্তে বসবাস করছি সেখানে দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজনে স্মার্টফোনের দখল অনেকখানি। এমনও অনেকে আছেন যারা জাগ্রত থাকার পুরো সময়টাই স্মার্টফোনের সাথে কাটিয়ে দেন। কোন কারণে ভুলে ফোন বাসায় রেখে বাইরে চলে গেলে তাদের মধ্যে সব সময় কি যেন একটা নেই ভাব কাজ করে। শুধু তাই নয়, এটি রীতিমত তাদের একটি বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, যার কারণে স্মার্টফোনের কাছাকাছি ঘুমানোর প্রভাব তাদের উপর সবচেয়ে বেশি।
প্রতিনিয়ত ফোন ব্যবহার করা যাদের বদ অভ্যাস তারা সারাদিন ফোন ব্যবহার করা ছাড়া রাতের বেলাতেও ফোনটি বন্ধ করে ঘুমান না। অথচ রাতের বেলায় ফোন ব্যবহার করা বা ফোনের কাছাকাছি ঘুমানো যে আমাদের উপর কতটা খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে তা আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
স্মার্টফোনের কাছাকাছি ঘুমানোর প্রভাব
ডিজিটাল এই যুগে প্রতিদিন স্মার্টফোনের মাত্রাতিরিক্ত ববহারের কারণে আমরা অনিদ্রা, নিঃসঙ্গতা আর নৈরাশ্যের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এই সমস্যা এতটাই প্রবল আকার ধারণ করেছে যে একদিকে আমরা যেমন স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করতে পারছিনা, অন্যদিকে এই সময়টিকে উপযুক্ত কোন কাজে ব্যবহার করার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি। আপনিও যদি সেই কোটি কোটি মানুষের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন, আর আপনিও যদি স্মার্টফোন কাছে না নিয়ে ঘুমাতে পারেন না, তাহলে আজকের এই পোষ্টটি আপনার জন্যই।
ক্ষতিকর দিক:
স্মার্টফোনের কাছাকাছি ঘুমানোর যেটি সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ তা হচ্ছে এর রেডিয়েশন। এভাবে ঘুমানোর অভ্যাসের ফলে ফোন এর রেডিয়েশন এতটাই আপনার স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াবে যা আপনার কল্পনার বাইরে। যদিও দিনের বেলায় ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
কিন্তু রাতের বেলায় এটি আপনার শরীরের এবং হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ কর্মে বাধা সৃষ্টি হওয়াতে এ ধরনের কাজের পরিণাম হিসেবে অতিরিক্তভাবে দুঃস্বপ্ন, অনিদ্রা আর এক রাতে কয়েকবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার মত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
দি ওয়ার্ল্ড হেল্থ অরগানাইজেশনের বিবৃতি মতে স্মার্টফোন এবং এর মত অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি মানবদেহ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। প্রতিমুহুর্তে এই ধরনের ডিভাইসের রেডিয়েশনের ফলে আমাদের শরীরে এক ধরনের টক্সিক উৎপন্ন হয় যা পরবর্তীতে ক্যান্সারের মূল কারণ হিসেবে রুপ নেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়াতে একটি গবেণায় প্রমানিত হয়েছে স্মার্টফোনের ব্যবহারের কুফল হিসেবে পুরুষদের পুরুষত্ব শক্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি পিতৃত্বলাভের ক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
আমরা অনেকেই সকালে সময় মতো ঘুম থেকে উঠার জন্য ফোনে এলার্ম ব্যবহার করে থাকি। যারা এই ফিচারটি ব্যবহার করছি, তাদের সাথে সাথে যারা এটি ব্যবহার করেন না তাদেরও ঘুমানোর সময় ফোনের এলার্ম ক্লক অ্যাপটি পুরোপুরি বন্ধ করে ঘুমানো উচিৎ।
কারণ আপনি এলার্ম না সেট করে থাকলেও এই অ্যাপটি প্রতিনিয়ত রেডিও ট্রান্সমিশন ব্যবহার করতে থাকে। এর অর্থ হলো আপনি এলার্ম ব্যবহার করেন আর নাই করেন আপনার ফোনটি প্রতি সেকেন্ডে পরিবেশে এক ধরনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ নির্গমন করে যাচ্ছে যা মোটেই আপনার স্বাস্থের জন্য ভালো খবর নয়।
কোথায় এবং কিভাবে ঘুমাবেন:
যদি সত্যিই আপনি সমস্যাটি বুঝতে সক্ষম হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনি ভাবছেন যে কিভাবে এবং কোথায় ঘুমালে এ ধরনের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এ কাজটি করার জন্য দুইটি উপায় রয়েছে। প্রথমটি হলো ঘুমানোর সময় আপনার ফোনটিকে বন্ধ করে দিন এবং যে কোন স্বাভাবিক জায়গায় এটি রেখে দিন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে এটিকে আপনার শোবার স্থান থেকে অনেক দুরে রাখুন।
যদি সম্ভব হয়, তাহলে ঘুমানোর রুমে ফোন না রাখাটাই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। কিন্তু আমরা অনেকেই এই কাজটি করে স্বস্তিতে থাকতে পারবো না। কারণ ফোন বন্ধ করে দিলে বা অন্য রুমে রেখে আসলে জরুরী কোন সময়ে আপনার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভবপর হবে না।
সেক্ষেত্রে আমি আপনাদের বলবো একান্তই উপরোক্ত পদ্ধতি না অনুসরণ করলেও কমপক্ষে ঘুমানোর আগে ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ এবং ওয়াইফাই বন্ধ করে দিন। কারণ এটি রেডিও ওয়েভের চেয়ের কয়েকগুন বেশি ক্ষতিকর। অভিজ্ঞদের পরামর্শ হলো ঘুমানোর সময় ফোনটি আপনার শরীরের থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দুরত্বে রাখতে হবে। তাই সম্ভব হলো বিছানার থেকে তিন ফুট বা তার বেশি দুরত্বের কোন টেবিল বা অন্য কোন স্থানে ফোন রেখে ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্র কিছু স্বাস্থসচেতন অভ্যাস:
- কল করার সময় সেটি যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত করুন। কয়েক মিনিট পর পর ফোন এক কান থেকে অন্য কানে নিয়ে কথা বলুন।
- যদি সম্ভব হয় তাহলে ফোন কানের সাথে লাগিয়ে কথা বলার পরিবর্তে ফোন হ্যান্ডস ফ্রি রেখে কথা বলুন।
- বাচ্চাদের ফোন থেকে সব সময় দূরে রাখুন। কোন গেমস খেলার জন্যে হলেও শিশুদের ফোন ব্যবহার করতে দেবেন না।
- যে-সব স্থানে নেটওয়ার্ক কম পায় সেসব যায়গায় ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। কারণ দুর্বল সিগন্যাল থাকলে ফোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে।
- ফোন বহনের জন্য ব্যাগ ব্যবহার করুন। পকেটে বা শরীরের খুব কাছাকাছি থাকে এমন কোন স্থানে ফোন বহন করবেন না।
- অফিসে থাকাকালীণ সময়ে টেবিলে একটি নির্দিষ্ট দুরত্বে ফোন রেখে দিন।
স্মার্টফোনের কাছাকাছি ঘুমানোর প্রভাব ও স্বাস্থগত ঝুঁকির পাশাপাশি নিরাপত্তা জনিত ঝুঁকিও রয়েছে। চার্জে থাকা অবস্থায় অবশ্যই ফোন কাছে বা বালিশের নিচে নিয়ে ঘুমানো উচিত নয়। বিগত কয়েক বছরে এমন কাজ করতে যেয়ে দুর্ঘটনায় মুখমন্ডল পুড়ে যাওয়া ছাড়াও গুরুতরভাবে জখম হওয়ার অনেক নজির পাওয়া যায়।
আবার দূরে ফোন রেখে ঘুমালে আমাদের আশে-পাশে কি ঘটছে এক ধরনের অস্থিরতা মনের মধ্যে কাজ করে। যার কারণে রাতে বার বার ঘুম থেকে উঠে অনেকে ইমেইল, সোস্যাল মিডিয়া ইত্যাদি চেক করে থাকেন। তাই সম্ভব হলে রাতের বেলায় ফোন বন্ধ করে ঘুমানোটাই সবচেয়ে ভালো অভ্যাস। এতে একদিকে যেমন আপনার ফোনটি একটানা চলা থেকে বিরতি পাবে অন্যদিকে আপনিও অস্থিরতা মুক্ত থাকতে পারবেন।
Leave a Reply