কোন পাবলিক প্লেসে থেকে হয়তো বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দারুণ একটি ছবি তুলেছেন আর তখনই সেটি আপনার সোশ্যাল প্রোপাইলে শেয়ার করতে চাইছেন। আর শেয়ারের জন্যে মোবাইলে ডাটা না থাকায় আপনার প্রয়োজন হবে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করা। কিন্তু ভেবে দেখা দরকার এই অপরিচিত এই পাবলিক ওয়াইফাই আপনার জন্যে কতটুকু নিরাপদ।
ওয়াইফাই আমারদের ইন্টারনেট ব্যবহারকে আরো অনেক সহজ করে দিয়েছে। আগে আমাদের ব্রডব্যান্ড কানেকশন এর দরকার পড়ত ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু এখন আমরা খুব সহজেই ওয়াইফাই এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি।তবে ওয়াইফাই এর সঙ্গে আরেকটা ব্যাপার চলে এসেছে, সেটা হল পাবলিক ওয়াইফাই।
এই পাবলিক ওয়াইফাই আমাদের সবাইকে অনেক আকর্ষিত করে। কিন্তু এই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার আপনার সাইবার নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারে। এট ব্যবহার করলে অনেক সময় আপনার তথ্য অন্য কারো হাতে চলে যেতে পারে। আর তাই সব সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাই বলে থাকেন যে, পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার না করাই সব থেকে উত্তম। কিন্তু কেউ এটা বলেনি যে, কিভাবে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়!
পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় সুরক্ষিত থাকার উপায়
আজকে কিছু সমাধান দিব যেটার মাধ্যমে আপনি পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় নিজের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। এই পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে আপনি যদিও ১০০% নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন না, কিন্তু পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার এর সময় ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবেন। তাই চলুন আর দেরি না করে বলে দেয়া যাক সেই পদ্ধতিগুলো।
১। আসল ওয়াইফাই পয়েন্ট যাচাই করুন
পাবলিক ওয়াইফাই এ কানেক্ট হতে হলে আমাদের সবার আগে কোনো ওয়াইফাই পয়েন্টে কানেক্ট হতে হয়। তারপরেই আমরা ওয়াইফাই ব্যবহার করতে সক্ষম হই। আর এ জন্যই সবার আগে আমাদের সেই ওয়াইফাই পয়েন্টটা যাচাই করে নিতে হবে।
কেননা, হ্যাকাররা প্রায়ই ফেক ওয়াইফাই পয়েন্ট তৈরি করে থাকে। যেন সাধারণ মানুষরা সেই ফেক ওয়াইফাই পয়েন্টকে আসল মনে করে সেখানে কানেক্ট হয়ে যায়। আর তারপর সেই হ্যাকাররা সেইসব মানুষদের সব তথ্য চুরি করে নিতে পারে। আর তাই আমাদের প্রয়োজন কোনো ওয়াইফাই পয়েন্ট এ কানেক্ট হওয়ার আগে টা যাচাই করে নেয়া।
ওয়াইফাই পয়েন্ট যাচাই এর কাজটা অনেকভাবে করা যেতে পারে। যেমন আপনি একটি রেস্টুরেন্ট এ গেলেন, তারপর সেখানকার কোনো বেয়ারার কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন যে তাদের কোনো ওয়াইফাই পয়েন্ট আছে কিনা। যদি থেকে থাকে, তাহলে তার দেখিয়ে দেয়া ওয়াইফাই এর সঙ্গেই কানেক্ট হন।
তাছাড়া ধরুন, আপনি এমন কোনো স্থানে আছেন যেখানে এভাবে কাউকে জিজ্ঞাসা করা সম্ভব না, তখন আপনি নিজের বুদ্ধির সাহায্যে তা যাচাই করবেন। যেমন ধরুন, আপনি একটা স্থান এ ওয়াইফাই পয়েন্ট এ কানেক্ট হতে গিয়ে দেখলেন যে ওখানে এক নামের দুইটি পয়েন্ট আছে। তখন আপনি কোনটা বেছে নিবেন?
আপনাকে তখন খেয়াল করতে হবে ওয়াইফাই পয়েন্ট এর নাম এর দিকে এবং তার ধরন এর দিকে। অর্থাৎ দেখতে হবে যে কোনটাতে পাসওয়ার্ড দেয়া আছে, আর কোনটাতে নেই। কারণ, ফেক ওয়াইফাই পয়েন্ট এ কখনই পাসওয়ার্ড দেয়া থাকে না। তবুও যদি আপনি দেখতে পান যে দুটিতেই পাসওয়ার্ড নেই, তবে সেখান থেকে সরে আসাই উত্তম।
২. অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবলিক ওয়াইফাই এর মাধ্যমে আদান-প্রদান করবেন না
কখনই পাব্লিক ওয়াইফাই এর মাধ্যমে নিজের অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান করবেন না। কেননা, আপনি যখন পাবলিক ওয়াইফাই এ বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তখন আপনর কোনো তথ্যই গোপণ থাকছে না। আপনার সব তথ্য তখন অনিরাপদ।
আর তাই, তখন যদি আপনি নিজের কোনো অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান করেন, যেমন নিজের ব্যাংকের যাবতীয় তথ্যাদি বা কোনো পণ্য ক্রয় এর তথ্য বা নিজের বাড়ির ঠিকানা ইত্যাদি যদি আপনি আদান-প্রদান করেন, তাহলে তা কোনো হ্যাকার খুব সহজেই চুরি করতে সক্ষম হবে। আর তখন আপনাকে পরতে হতে পারে বড় কোনো ঝামেলাতে।
আবার, অনেক সময় আমরা নিজের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাসওয়ার্ড দিয়ে থাকি। সেটার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, এটার মাধ্যমে আপনার পাসওয়ার্ড হ্যাকার এর হাতে চলে যেতে পারে আর আপনি হতে পারেন নিঃস্ব।
এনক্রিপটেড কানেকশন ব্যবহার করুন-
এনক্রিপটেড কানেকশন কি?
উঃ যে কানেকশন এ আপনার তথ্য প্লেন টেক্সট এ না থেকে বরং মেশিন ল্যাংগুয়েজ এ কনভার্ট হয়ে যায় এবং তা কোনো মানুষ পড়তে পারে না, তাকে এনক্রিপটেড কানেকশন বলে।
আপনাদের আগেই বলেছি যে, আপনি যখন কোনো পাবলিক ওয়াইফাই এর আওতাধীন আছেন, তখন আপনার সব তথ্যই কিন্তু পাবলিক হয়ে আছে। অর্থাৎ, আপনার কোনো তথ্যই এখন গোপন নেই। আর চিন্তা করুন যে, এটা আপনার জন্য কতটা অপ্রীতিকর হতে পারে। আর এই অপ্রীতিকর অবস্থাটা এড়ানোর জন্যই আপনার দরকার একটি এনক্রিপটেড কনেকশন, যে কানেকশন এর মাধ্যমে আপনার সব তথ্যকে আপনি সাধারণ মানুষদের থেকে গোপন রাখতে পারবেন।
কিভাবে এনক্রিপটেড কানেকশন ব্যবহার করতে হয়?
উঃ এনক্রিপটেড কানেকশন ব্যবহার করার জন্য আপনাকে কোনো প্রযুক্তিবিদ হতে হবে না। এনক্রিপটেড কানেকশন এর জন্য কম্পিউটার এবং মোবাইল দুটির জন্যই কিছু টুলস রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটা হলোঃ
- ১। HTTPS Everywhere (কম্পিউটার এক্সটেনশন)
- ২। টর ব্রাউজার (কম্পিউটার এবং মোবাইল ব্রাউজার)
আবার এই ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার হলো যে ধরুন আপনি এই মুহূর্তে কোনো এনক্রিপটেড কানেকশন ব্যবহার করতে পারছেন না। তখন আপনাকে যা করতে হবে তা হলো যেসব ওয়েবসাইট এ HTTPS কানেকশন শুধু সেসব ওয়েবসাইটই ব্যবহার করুন। এ রকম করলেও কিছুটা আপনি সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।
৪। ভিপিএন ব্যবহার করুন
যখন বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া হয় তখন আমরা প্রায় সবাই ভিপিএন ব্যবহার করেছি।কিন্তু আমরা সেটার সঠিক ব্যবহারটা কি তাই জানিনা। ভিপিএন এর পূর্ণ অর্থ হলো ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। আমরা যখন ভিপিএন ব্যবহার করি তখন আমরা একটি নিজস্ব নেটওয়ার্ক এর আওতাধীন হয়ে যাই। আর তখন আমাদের সব তথ্য গোপন রাখতে এবং আমাদের নিজের পরিচয় গোপন রাখতে সক্ষম হই।
আর এই ভিপিএন ব্যবহার করেই আমরা নিজেরদের তথ্য সুরক্ষিত রাখব পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময়। ভিপিএন এর মাধ্যমে যখন আমরা পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করব, তখন আমদের কোনো তথ্যই অন্য কারো হাতে চলে যেতে পারবে না। আর যদি চলেও যায় তবে সেই লোকটি তা পরতে পারবে না। কারণ, সেগুলো এনক্রিপটেড ডাটাতে পরিণত হবে।
কিছু ফ্রি ভিপিএন টুলসঃ
- ক। Windscribe VPN
- খ। Zero VPN (শুধু মোবাইল)
- গ। Express VPN
৫। কম্পিউটার এর ফাইল শেয়ারিং অপশন বন্ধ রাখুন
আপনারা অনেকেই জানেন, আবার অনেকেই জানেন না যে আমাদের কম্পিউটার এর মধ্যে একটি অপশন আছে। যেটার মাধ্যমে আপনি ওয়াইফাই এর সাহায্যে ফাইল আদান-প্রদান করতে পারবেন। আর এই অপশনটি যদি আপনি পাবলিক ওয়াইফাই এ ওপেন করে রেখে দেন, তাহলে এটার সাহায্য কেউ চাইলে আপনার কম্পিউটার এ ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিতে পারবে।
আর এই জন্য আপনার অবশ্যই সেই ফাইল শেয়ারিং অপশনটি বন্ধ করে রাখতে হবে পাবলিক ওয়াইফাই এ। অবশ্য এই অপশনটি সর্বদা জন্য বন্ধ করে রাখাই উত্তম। কেননা, এটা আমদের তেমন কোনো কাজে লাগছে না।
যেভাবে অপশনটি বন্ধ করবেনঃ
১। উইন্ডোজ কম্পিউটারঃ
কন্ট্রোল প্যানেল >> নেটওয়ার্ক এন্ড ইন্টারনেট >> নেটওয়ার্ক এন্ড শেয়ারিং সেন্টার >> এডভান্স শেয়ারিং সেটিংস>> টার্ন ওফ
ফাইল এন্ড প্রিন্টার শেয়ারিং
২। ম্যাক কম্পিউটারঃ
অ্যাপেল মেনু >> সিস্টেম প্রেফারেনস >> শেয়ারিং >> ফাইল শেয়ারিং (টিক মার্ক না দেয়া থাকলে, বুঝতে হবে আগে থেকেই বন্ধ আছে।)
এভাবে আপনারা নিজেদের কম্পিউটার এর ফাইল শেয়ারিং অপশন বন্ধ করতে পারবেন। আর এটা বন্ধের মাধ্যমে আপনারা নিজেদের কম্পিউটার এ কোনো ফাইল ওয়াইফাই এর মাধ্যমে প্রবেশ করা রোধ করতে পারলেন।
৬। ব্যবহার শেষে ওয়াইফাই কানেকশন বিছিন্ন করে দিন
আমাদের সবার একটা বদ অভ্যাস আছে, সেটা হলো আমরা যে কারো ওয়াইফাই ব্যবহার করার পর তা বিছিন্ন না করেই চলে আসি। এটা কিন্তু একটি মারাত্মক ভুল হতে পারে। ওয়াইফাই কানেকশন বিছিন্ন করার অর্থ হলো ওয়াইফাই পয়েন্ট এর থেকে বিছিন্ন হয়ে যাওয়া।
কেননা, কাজ শেষে যদি পাবলিক ওয়াইফাই থেকে বিছিন্ন না হয়ে যান, তাহলে হ্যাকাররা সেটার মাধ্যমে আপনার তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। মোবাইল ফোনে ওয়াইফাই অপশন এ গিয়ে ‘ফরগেট দিস নেটওয়ার্ক’ এর মাধ্যমে সেই ওয়াইফাই এর থেকে বিছিন্ন হয়ে যেতে পারবেন।
এই ছয়টি নিয়ম অনুসরণ করে আপনি ১০০% নিরাপদ হয়ত এখনো নয়। তবে এগুলো যদি মেনে চলেন পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার এর সময়, তাহলে আশা করা যায় আপনি নিজের তথ্য চুরির হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন। আশা করি, এই পদ্ধতিগুলো আপনাদের পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার এর সময় নিরাপত্তা প্রদান করবে।
Leave a Reply