নিজ দেশি সফটওয়্যার ডেভেলপারের অভাব, ডলার দিয়ে সফটওয়্যার কেনার মতো সামর্থ্য না থাকা এবং অনলাইন বাজারে প্রচারণার অভাব এর কারণে বাংলাদেশ এর ৯০ শতাংশ মানুষ অফিসের কাজেও এখনো ক্র্যাকড ভার্সন এর অপারেটিং সিস্টেম চালিয়ে থাকেন। আর এ তো কেবল শুরু, তারপর আবার মাইক্রোসফট অফিস এর ভার্সন টাও ক্র্যাকড অথবা আনরেজিস্টার্ড।
কিন্ত অপারেটিং সিস্টেম এর বিকল্প না থাকলেও কমপক্ষে পেইড সফটওয়্যার এর বিকল্প হিসেবে অনেক সফটওয়্যার রয়েছে যাদের মধ্যে কিছু সফটওয়্যার আবার পেইড ভার্সনগুলোর চেয়ে বেশি ফিচার অ্যাড করে থাকে। তবে ফ্রি এবং প্রচলিত সিস্টেমের খাতিরে এদের প্রচারণা চাপা পড়ে গিয়েছে। এই পেইড সফটওয়্যারগুলোর বিকল্প সব প্রোগ্রাম নিয়েই আজ আপনাদের কাছে আমাদের এই পরিবেশনা।
পেইড সফটওয়্যারগুলোর বিকল্প
নিম্নে সফটওয়্যারগুলোর পেইড ভার্সন আর ফ্রি ভার্সন এর মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য এবং ফ্রি ভার্সন এর লিংকসহ ইন্টারফেস এর স্ক্রিনশট তুলে দেয়া হয়েছে।
Libre Office
উইন্ডোজ এর মাইক্রোসফট অফিস বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়। MSWord বা MSExcel এর কাজ না জানলে চাকরির বাজারে আপনার মূল্য থাকবে না। কিন্তু সেই অফিসটাও যখন হয়ে থাকে আনরেজিস্টার্ড, তখন পুরো ক্ষেত্রটাই কেমন একটা খাপছাড়া ভাব পেয়ে বসে।
যারা চাকরির বাজারে নতুন ফার্ম খুলছেন তাদের জন্য Libre Office দিয়ে ফার্ম চালানো বাজারে আলাদা একটা আকর্ষন হিসেবে কাজে দিতে পারে। কমপক্ষে আপনাদের ফার্মের কেউ ক্র্যাকড বা আনরেজিস্টার্ড প্রোগ্রাম ব্যবহার করছেন না। এক্ষেত্রে এর Writer (MSWord), Impress (MSPowerpoint), Calc (MSExcel), Base (MSAccess) প্রত্যেকটি প্রোগ্রামেরই নিজস্ব সুন্দর ইন্টারফেস রয়েছে এবং মাইক্রোসফট অফিস এর বিকল্প হিসেবে এটি যথার্থ কার্যকরী। এছাড়াও ডেভেলপারের টিম এটিকে প্রতিনিয়ত আপগ্রেড করছে নতুন নতুন সব ফিচার এবং আরো উন্নতমানের ইন্টারফেস দিয়ে।
GIMP
অ্যাডোবি প্রোডাক্টগুলো যদিও খুব মান-সম্মত এবং এদের প্রাইসও এদের মান অনুযায়ী অনেক যথাযথ কিন্তু একটা সমস্যার জন্য অনেকে অ্যাডোবি প্রোডাক্টগুলো কেনার সামর্থ্য রেখেও কেনেন না। এর কারণ হলো অ্যাডোবির রিসোর্স ব্যবহার। অ্যাডোবির রিডার থেকে শুরু করে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারগুলোও মারাত্বক র্যাম ও মেমরি কনজিউম করে যা কম্পিউটারকে করে দেয় ধীরগতিসম্পন্ন। আর এরই মধ্যে একটি প্রোগ্রাম পড়ে যার নাম ফটোশপ।
স্মার্টফোনের যুগেও মোবাইলে এতো ভালো কোনো ফটো এডিটর আসেনি যা ফটোশপ এর মতো নিখুঁত এডিটিং সম্পন্ন করতে পারে। হয়তোবা একদিন পিক্সার্ট বা অ্যাডোবি নিজেই এরকম প্রোগ্রাম তৈরী করে ফেলবে। তবে ততোদিনে মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখুন GIMP নামের চমৎকার এই সফটওয়্যারটির দিকে।
অ্যাডোবির কমিউনিটির মতোই বড়-সড় একটি কমিউনিটি এই সফটওয়্যারটিকে দিয়েছে অফুরন্ত শ্রম আর ভালোবাসা। তাই এটির অনলাইন ফোরামগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফটোশপ এর লিকুইফাই এর চেয়েও জনপ্রিয় সব প্লাগইন। এমনকি অ্যাডোবির প্লাগইনগুলোও কনভার্ট করে ব্যবহার করা যায় এই সফটওয়্যারটিতে।
এছাড়াও সফটওয়্যারটি অনেক কম রিসোর্স ব্যবহার করে, তাই পিসিও অনেক ভালো সার্ভিস দিতে পারে এর ইন্টারফেসটিকে। আজই ট্রাই করে দেখুন এই বিকল্পটি। না পারলে ইউটিউবে হাজার হাজার টিউটোরিয়াল তো আছেই!
CCleaner
অনেকেই আছেন যারা এখনো কম্পিউটারের সিস্টেম পরিষ্কার রাখতে দায়িত্বভার দিয়ে রেখেছেন Advanced System Care বা Tune Up Utilities এর মতো ব্যয়বহুল সফটওয়্যারগুলোকে। এদের ফাংশন অনেক বেশি হতে পারে কিন্তু ফাংশন অনুযায়ী অনেক ব্যয়বহুল এবং এদের পরিচর্যার মান একটু বাড়াবাড়িই লাগে আমার কাছে।
মিনিট পরপর স্ক্যানিং, রিবুট দিয়ে দিয়ে পিসি ফাস্ট করার চেয়ে ট্রাই দিয়ে দেখুন সিক্লিনারকে। প্রোগ্রামটির পোর্টেবল ভার্সনই যথেষ্ট প্রোগ্রামটি কতো সাশ্রয়ী তা বুঝে নেয়ার জন্য। র্যাম ফ্রি করা, ব্রাউজার এর ক্যাশ, অব্যবহৃত বা ডুপ্লিকেট ফাইল ডিলিট, রেজিস্ট্রির ইস্যু ঠিক করা ছাড়া হার্ড ড্রাইভ ওয়াইপ ও করা যায় এই ছোট্ট প্রোগ্রামটিতে। আর ব্যবহার করার জন্য অনেক ভালো মানের কাস্টমাইজেশন অপশন আর ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস এর সুযোগ সুবিধাও পাবেন এতে।
Blender
অ্যানিমেশন বা থ্রিডি মডেল তৈরী করতে চাইলে পাওয়া যায় বিভিন্ন মডেল তৈরীর উইন্ডোজ এর পেইড জনপ্রিয় সফটওয়্যার। এইসব যেমন অ্যাডভান্সড, তেমন এদের টিউটোরিয়ালগুলিও পেইড হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু সফটওয়্যার আবার চালাতেও অনেক দামী কম্পিউটার লাগে যেখানে এই সফটওয়্যার এর রিসোর্স বরাদ্দ দেয়ার পর আবার আলাদা রিসোর্স লাগে।
এই রিসোর্সখোরদের থেকে মুক্তি দিতেই তৈরী করা হয়েছিলো ব্লেন্ডার। ফ্রি একটি সফটওয়্যার যা মাঝারী আকারের কম্পিউটারেই ভালো মানের অ্যানিমেশন রেন্ডার করতে পারে। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়ায় এই সফটওয়্যারে দেয়া হয় নিজস্ব গেইম ইঞ্জিন এবং উন্নতমানের রেন্ডার করার অপশন সমূহ।
এছাড়াও ইউটিইবে ব্লেন্ডার এর জন্য প্রচুর টিউটোরিয়াল আছে, যে-সব দেখে একজন বিগিনারও ভালো মানের অ্যানিমেশন তৈরী করে ফেলতে পারেন। আর হাল্কা মানের কোডিং জানলে তো কথাই নেই, নিজের বানানো প্রথম গেইমের জন্য নিজস্ব মডেল বানিয়ে সেখানেই কোডিং দ্বারা একটা গেইম দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন।
এছাড়াও ব্লেন্ডার এ বিভিন্ন ধরণের প্লাগ ইন সেট করে অব্জেক্ট বানিয়ে ফিজিক্স বেজড্ মজার মজার বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করে ফেলতে পারবেন এই অদ্ভুত ইঞ্জিনে।
Free Download Manager
ইন্টারনেট ডাউনলোড ম্যানেজার, ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীদের অন্যতম এক সম্বল। এর লোডিং স্ক্রিনটা দেখেও টাইম পার করে দেয়া যায় ডাউনলোডের সময়টা। কিন্তু সবচেয়ে বিরক্তিকর হলো এর পেইড স্ট্যাটাস মডিউলটা। আর ধীরে ধীরে মডিউল এর ডেভেলপমেন্ট এর জন্য কিছু কিছু ভার্সন এ ক্র্যাক করলেও অনলাইন এ যাওয়ার পর ধরে ফেলে ডেভলপাররা।
এতো ঝামেলা বাদ দিয়ে এখনি নামিয়ে ফেলুন Free Download Manager সফটওয়্যারটি। এর ফাংশন এ সীমাবদ্ধতা থাকলেও ফাইল ডাউনলোডিং এর ক্ষেত্রে IDM এর বিকল্প হিসেবে যোগ্য একটি সফটওয়্যার এটি। ইউজারদের ডাউনলোডিং সার্ভিস এ ফাইল এর প্রায়োরিটি সেট করে দেয়া থেকে শুরু করে ব্রাউজিং স্পিড আলাদা করে দেয়াও সম্ভব এই ডাউনলোডারটিতে।
Special Mentions
উইন্ডোজ ১০ ইউজার রা Microsoft Store এর ভেতরে পাওয়া যায় অনেক ফ্রি অ্যাপ্লিকেশন, যে-সব উইন্ডোজ ডিভাইসে চালানোর জন্য সহকারী।
ধীরে ধীরে উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা এই প্লাটফর্মে বেশ আগ্রহী হচ্ছেন আর উইন্ডোজও তাদের সাধ্যমতো প্লাটফর্মে প্রতিদিন অ্যাড করছে বিভিন্ন ফ্রি অ্যাপ্লিকেশন। এছাড়াও উইন্ডোজ এর ডিফেন্ডার ছাড়িয়ে যাচ্ছে এভাস্ট, ক্যাস্পারস্কি এর ব্যবহারকারীদের সংখ্যা। তাই উইন্ডোজ ৭ এ পড়ে থাকলে এখনই আপগ্রেড করে নিন আপনার অপারেটিং সিস্টেম।
এই ছিলো আমাদের ফ্রি উইন্ডোজ এর পেইড সফটওয়্যারগুলোর বিকল্প কিছু ফ্রি সফটওয়্যার। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ, টেকনোলজি বিষয়ক আরো আপডেট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
নাজমুস সাকিব says
খুবই দারুণ এবং দরকারি একটি আর্টিকেল…
মাহামুদুল হাসান আসিফ says
ধন্যবাদ। আশা করি ভবিষ্যৎ এ আরো ভালো আর্টিকেল নিয়ে আস্তে পারবো আপনাদের সামনে।
রাশেদুল ইসলাম পাভেল says
ফ্রি এবং ওপেন সোর্স সফট্ওয়্যার নিয়ে আরো কিছু পোষ্ট চাই।
মাহামুদুল হাসান আসিফ says
অবশ্যই। ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু ফ্রি এবং ওপেন সোর্স সফটওয়্যার নিয়ে আসবো।