যখন যেখানেই যাই না কেন মোবাইল আমাদের সাথেই থাকে। ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ছবি তোলা, গেম খেলা সহ আরো নানা প্রয়োজনে এই মোবাইল আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। সুতরাং, মোবাইল কেনার আগে যাচাই বাছাই করে সেরাটা নির্বাচন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনার প্রয়োজন এবং বাজেটের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে একটা ভালো মোবাইল বেছে নিতে পারেন অল্প কিছু কৌশল মাথায় রেখে। মোবাইল কেনার আগে অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন :-
- iOS ব্যবহার করা সহজ, অ্যানড্রয়েডে পাবেন অনেকগুলো অপশন। যদি iOS বা অ্যানড্রয়েড কোনটাই না চান এবং এমন কিছু চান যেটা ব্যবহার করা সহজ, যথেষ্ট আপডেটেড অ্যাপও রাখা সম্ভব তাহলে নিতে পারেন আই-ফোন।
- একটা ফোনের জন্য যতটুকু খরচ করা প্রয়োজন কখনোই তার বেশি দাম দিবেন না।
- খেয়াল রাখবেন যেন স্ক্রিনের সাইজ মাপমতো হয়। আপনি যদি এক হাতেই ব্যবহার করতে চান তাহলে মোবাইল কেনার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন স্ক্রিন যেন ৫.৫ ইঞ্চির কম হয়। তবে আপনি যদি ভিডিও দেখতে বা গেম খেলতে পছন্দ করেন তাহলে বড় স্ক্রিনের ফোন নিতে পারেন।
আরো পড়ুন: মোবাইলের জন্য সেরা ১০টি অ্যাকশন গেম
- ফোনের ডিসপ্লের জন্য কালার কোয়ালিটি এবং ব্রাইটনেস রেজোলিউশনের চেয়ে বেশি গুরত্বপূর্ণ। ডিসপ্লে ঠিক কতটা ব্রাইট তা জানা আবশ্যক। কারণ আউটডোর মুডে ডিসপ্লে পর্যাপ্ত ব্রাইট না হলে ভালোভাবে দেখা যায় না। এক্ষেত্রে এলসিডির চেয়ে অ্যামোলেড বেশি ভালো।
- ক্যামেরা মেগাপ্রিক্সেল এড়িয়ে যেতে পারেন। ব্যাটারি লাইফের মতো ক্যামেরাও এখন স্মার্টফোনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ক্যামেরার ক্ষেত্রে ডুয়েল লেন্স থাকা ভালো। তবে কত মেগাপ্রিক্সেল সেটা নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে।
- প্রসেসরের বিষয়টা এখন আগের চেয়ে কম খাটায়। কারণ মুডরেঞ্জের ফোনও এখন যথেষ্ট ভালো চলে। তবে আপনি যদি বেশি পাওয়ারের গেম এবং এর জীবন্ত রূপ দেখতে চান তাহলে Snapdragon 821 চিপ ব্যবহার করতে পারেন। অথবা Snapdragon 835 বা Snapdragon 600 সিরিজও ব্যবহার করতে পারেন।
- কখনোই ৩০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের কম ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি কিনবেন না।
- অন্তত পক্ষে ৩২ জিবি স্টোরেজের নিচে ফোন কিনবেন না। আপনি যদি গেম খেলতে পছন্দ করেন এবং অনেক গেম ডাউনলোড করার ইচ্ছে থাকে অথবা 4K ভিডিও শুটের প্রতি আগ্রহী হন তবে ৬৪ জিবি বা তার বেশি স্টোরেজ রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে একটা আলাদা মাইক্রো এসডি কার্ডও ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই সুবিধাটি কতিপয় অ্যানড্রয়েড ফোনেই সীমাবদ্ধ।
মোবাইল কেনার আগে আপনার যা জানা উচিৎ
অনেক মোবাইলর ভিড়ে আপনার পছন্দ এবং বাজেট অনুযায়ী সেরা মোবাইলটি নির্বাচন করতে মোবাইল কেনার আগে অবশ্যই কিছু জিনিস সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান রাখা ভালো। মোবাইল কেনার আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই আপনার মাথায় রাখা জরুরি তা নিয়ে এখানে আলোচনা করা হবে।
দাম : কত দাম দেয়া উচিত?
কোন কোন জায়গায় মাসিক পেমেন্টের মাধ্যমে মোবাইলের দাম পরিশোধ করা যায়। কিন্তু অমনটা না করে আপনি চাইলে একবারেই তা পরিশোধ করতে পারেন।
যদি আপনি টাকা বাঁচাতে চান এবং একই সাথে মোবাইটাও চান ভালো তাহলে আনলক অ্যানড্রয়েড ফোন দেখতে পারেন। ভালো পারফরমেন্স, পুরো এইচডি স্ক্রিন এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির জন্য এটা বিখ্যাত। এরকম একটা মডেল হচ্ছে ৫.৫ ইঞ্চি OnePlus 3T।
অপারেটিং সিস্টেম: অ্যানড্রয়েড, iOS বা অন্যান্য?
অ্যানড্রয়েড
স্মার্টফোনের বাজারে অ্যানড্রয়েড রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে। iOS এর তুলনায় এখানে আরো বেশি অপশন যেমন : ডিজাইন, ডিসপ্লে সাইজ, স্পেস, ক্যাপাবিলিটি এবং দাম।
নতুন অ্যানড্রয়েড ভার্সনে দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি, মাল্টিমিডিয়া উইন্ডো এবং আপডেট নটিফিকেশন সিস্টেম সহ যুক্ত হচ্ছে আরো নতুন সব ফিচার।
iOS 10
লেটেস্ট আইফোনগুলো যেমন : iPhone 7, iPhone 7 plus এবং iPhone SE অ্যাপল অপারেটিং সিস্টেমের লেটেস্ট ভার্সনে তৈরি। iOS10 মেসেজিং অ্যাপের আরো উন্নত ও বর্ধিত রূপে তৈরি।
iOS কেনার প্রথম কারণ হচ্ছে এটার সহজ ব্যবহার, OS আপডেটের সহজ পক্রিয়া এবং অ্যাপল ডিভাইসের মতই কাজ করার ক্ষমতা।
উইন্ডোজ ফোন
এই ফোনের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে ইউনিভার্সাল উইন্ডো সিস্টেম। ডেভলপাররা এই ইউনিভার্সাল অ্যাপের মাধ্যমে উইন্ডোজ ১০ দিয়ে একই সাথে ডেক্সটপ এবং মোবাইল চালানো সম্ভব করেছেন।
স্ক্রিন সাইজ
ছোট স্ক্রিন (৫.৫ বা এর কম)
ছোট স্ক্রিনের ফোন কেনার সুবিধা হচ্ছে এটাকে হাতের মুঠোয় রাখা যায়। খুব সহজেই ছোট স্ক্রিনের ফোন পকেটে খাপ খেয়ে যায়। ৪.৭ ইঞ্চির iPhone 7, ৫ ইঞ্চি Google Pixel, ৪.৬ ইঞ্চি Xperia X Compact ছোট স্ক্রিনের ফোনের মধ্যে অন্যতম।
মাঝারি স্ক্রিন (৫-৫.৫ ইঞ্চি)
মাঝারি স্ক্রিন সাইজ ফোনগুলোর মধ্যে ৫.৩ ইঞ্চি LG X power এর দাম এবং দীর্ঘাস্থায়ী ব্যাটারির জন্য জনপ্রিয়। তবে Samsung Galaxy S7 (৫.১ ইঞ্চি) আছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
বড় স্ক্রিন (৫.৫ ইঞ্চির চেয়ে বড়)
ভিডিও দেখা, বই পড়া এবং পাশাপাশি দুটো অ্যাপ চালানোর জন্য বড় স্ক্রিনের ফোন দরকার।
৫.৫ ইঞ্চি iPhone 7 plus, ৫.৫ ইঞ্চি Google Pixel XL বড় স্ক্রিনের ফোনগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ডিসপ্লে কোয়ালিটি
স্ক্রিনের সাইজই কেবল একমাত্র বিবেচনার বিষয় নয়। মোবাইল কেনার আগে ব্রাইটনেস, কালার কোয়ালিটি এবং দেখার অ্যাঙ্গেল যাচাই করে নিবেন।
প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে আপনার ফোনের ব্রাইটনেস আউটডোরের প্রখর আলোতে ভালোভাবে পড়ার জন্য যথেষ্ট কি না।
স্ক্রিন কতটা কালারফুল সেটাও দেখার বিষয়। AMOLED স্ক্রিনের ফোন যেমন : Samsung Galaxy সবসময় LCD স্ক্রিনের চেয়ে ভালো সার্ভিস দেয়।
ফোন রেজোলিউশনের জন্য ফুল এইচডি (১৯২০ x ১০৮০ পিক্সেল) ভালো। বেশির ভাগ ফোনই আজকাল কোয়াড-এইচডি রেজোলিউশন (২৫৬০ x ১৪৪০ পিক্সেল ) সার্ভিস দিয়ে থাকে। আর এ-সব ফোন দিয়ে অনায়াসেই হাই-রেজুলেশনের ভিডিও তৈরি করা যায়।
আরো পড়ুন: মোবাইলে ভিডিও তৈরির ৫টি ফ্রি অ্যাপস্
ডিজাইন
মোবাইল কেনার আগে আপনি যদি কোয়ালিটির কথা চিন্তা করেন তাহলে অবশ্যই মেটাল অথবা গ্লাস বডি ডিজাইন করা মোবাইল কিনবেন। তবে টাকা বাঁচানোই যদি আপনার কাছে মূখ্য হয় তবে প্লাস্টিক বডি ডিজাইনের মোবাইলও পাবেন।
কিছু কিছু ফোন ১ মিটার গভীরতার পানিতে আধ ঘণ্টা ফেলে রাখলেও কোন ক্ষতি হবে না। স্থায়িত্বের কথা চিন্তা করলে আপনার ওয়াটার প্রুফ ফোন কেনাই উত্তম।
ক্যামেরা
এখনকার দিনে প্রসেসরের চেয়েও ক্যামেরা মানুষের কাছে বেশি গুরত্বপূর্ণ। কারণ বেশির ভাগ লোকই মোবাইলকে নিজের ক্যামেরা হিসেবেই ব্যবহার করে। অনেক স্মার্টফোনই এখন ১২ মেগাপ্রিক্সেলেরর মতো ক্যামেরা দিয়ে থাকে। কিন্তু মোবাইল কেনার আগে কেবল মেগাপ্রিক্সেল দেখে নয়। বরং ছবির কোয়ালিটি, অ্যাপারচার, স্পিড এবং ফিচার দেখে মোবাইল কিনুন।
সম্ভব হলে মোবাইল কেনার আগে ছবি তুলে দেখুন যে সেটটি কত দ্রুত ছবি ক্যাপচার করতে পারে। আর আপনি যদি প্রচুর ছবি তুলতে অভ্যস্ত হন তবে এমন সেট কিনুন যেটাতে মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট থাকবে।
আরো পড়ুন: মোবাইলে ছবি তুলুন আর ঘরে বসে আয় করুন
প্রোসেসর
মোবাইল কেনার আগে এটা মনে রাখবেন যে ফোনের প্রসেসর যদি ভালো হয় তবে অ্যাপ ওপেন হবে দ্রুত, গেম প্লে করা যাবে ভালোভাবে এবং ফটো এডিটিং হবে তাড়াতাড়ি।
RAM
১ জিবি সিস্টেম মেমোরি যুক্ত ফোনগুলো এড়িয়ে চলুন। ২ জিবি স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। কিন্তু লেটেস্ট ভার্সনে আপনি ৪ জিবি পর্যন্ত পাবেন।
ইন্টারনাল স্টোরেজ
ইন্টারনাল স্টোরেজ যত বেশি হয় ততই ভালো। বেশির ভাগেই ৩২ জিবি করে থাকে। আপনি যদি প্রচুর ছবি তোলেন এবং ভিডিও দেখেন সেক্ষেত্রে ৬৪ জিবি আপনার জন্য ভালো এবং 4K ভিডিও, প্রচুর গেমের জন্য ১২৮ জিবির জুড়ি নেই।
আরো পড়ুন: মোবাইলের জন্য ১০টি ফ্রি কার রেসিং গেম
একটা মাইক্রো এসডি কার্ডও রাখতে পারেন। বেশির ভাগ অ্যানড্রয়েডই এই সুবিধা দিয়ে থাকে।
ব্যাটারি লাইফ
স্ক্রিন সাইজ, প্রসেসর এবং অপারেটিং সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয় যে ব্যাটারি কতক্ষণ সার্ভিস দিবে। একবার চার্জে ৯ ঘণ্টার সার্ভিস পাওয়া যাবে এমন ব্যাটারি দেখা ভালো। মোবাইল কেনার আগে দেখবেন ব্যাটারির ক্ষমতা যেন কিছুতেই ৩০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারেরর কম না হয়।
আরো পড়ুন: মোবাইলের জন্য সেরা ৫টি ব্যাটারি সেভার অ্যাপস্
রিমোভাল ব্যাটারি
কিছু কিছু ফোন থেকে আপনি ডাবল ব্যাটারি সার্ভিস পাবেন। অর্থাৎ, একটা ব্যাটারিতে সমস্যা হলে আপনি সম্পূর্ণ ফ্রি আরেকটি ব্যাটারি ব্যবহার করতে পারবেন।
অন্যান্য কি ফিচার
মোবাইল কেনার আগে আরো কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিৎ। ছোট ছোট হলেও বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, তাই মনোযোগ দেয়া উচিৎ এগুলোর প্রতিও।
ওয়্যারলেস চার্জিং
তারবিহীন চার্জিং পদ্ধতি এখন বেশ জনপ্রিয়। একটা তারছাড়া চার্জিং ম্যাটের ওপর ফোন রাখলেই সেটা চার্জ হবে।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিকিউরিটি
ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিকিউরিটি আপনার স্মার্টফোনের সার্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে সক্ষম এবং আপনার যেকোন পেমেন্ট ভেরিফাই করার জন্যও যথেষ্ট।
যেহেতু মোবাইল ফোন আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী এবং বলতে গেলে প্রতিটা ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন অপরিহার্য। সুতরাং, নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে সেরা ফোনটি নির্বাচনে দক্ষ হওয়া জরুরি। মোবাইল কেনার আগে উপরিউক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখলেই একটা ভালো ফোন সহজেই নির্বাচন করা সম্ভব।
Leave a Reply