প্রথমেই বলে রাখি ইউমিডিজি একটি চায়না মোবাইল ব্র্যান্ড। কম বাজেটের ভিতরে ইউমিডিজি দিচ্ছে বেজেল লেস ডিসপ্লে যেটা ২০১৮ সালেও অনেক মোবাইলে পাওয়া সম্ভব হবে না। চায়নাতে ফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলোর ভিতরে ইউমিডিজি অন্যতম একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান। কম দামে এ প্রতিষ্ঠানের দুইটি অসাধারণ স্মার্টফোন ইউমিডিজি এস২ ও ইউমিডিজি এস২ প্রো যেগুলোর দু’টিতেই রয়েছে বেজেল লেস ডিসপ্লে।
ইউমিডিজি অন্য সব মোবাইল ব্রান্ডের সাথে পাল্লা দিয়ে কম বাজেটের ভেতরে দারুন সব ফিচার নিয়ে এসেছে। এমনই দুইটি হ্যান্ডসেট ইউমিডিজি এস২ এবং ইউমিডিজি এস২ প্রো। নিশ্চয়ই নাম শুনে অবাক হচ্ছেন? অনেকে হয়তো ইউমিডিজি নামটাও শুনেননি। যাইহোক, এই দুইটি ফোনের কোনটি কেমন এবং এর সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ইউমিডিজি এস২ ও ইউমিডিজি এস২ প্রো এর প্রধান কিছু স্পেসিফিকেশন
- অপারেটিং সিস্টেম : ৭.০ নোগাট (আপগ্রেডেবল) ৭.০ নোগাট (আপগ্রেডেবল)
- ডিসপ্লে : ৬.০ ইঞ্চি IPS (১৪৪০*৭২০) ৬.০ ইঞ্চি In-cell (২১৬০*১০৮০)
- প্রসেসর : ২.৩ গিগাহার্জ অক্টা কোর ২.৫ গিগাহার্জ অক্টা কোর
- ক্যামেরা : (১৩+৫) মেগাপিক্সেল রেয়ার, ৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট (১৩+৫) মেগাপিক্সেল রেয়ার, ৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট
- র্যাম : ৪জিবি ৬জিবি
- স্টোরেজ : ৬৪ জিবি ১২৮ জিবি
- ব্যাটারি : ৫১০০ মিলি অ্যাাম্পিয়ার ৫১০০ মিলি অ্যাাম্পিয়ার
- ফিঙ্গারপ্রিন্ট : হ্যা হ্যা
দুইটি হ্যান্ডসেটের ওজনই ১৮৬ গ্রাম এবং থিকনেস ৮.৮ মিলিমিটার। বডিতে এ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছে দুটিতেই। ইউমিডিজি এস২ এবং ইউমিডিজি এস২ প্রো দুইটি হ্যান্ডসেটই লাল এবং কালো রঙের পাওয়া যাবে। উভয়ই হাইব্রিড সিম, ন্যানো সিম (ডুয়েল স্টান্ডবাই) সাপোর্টেড।
ডিসপ্লে
৬.০ ইঞ্চির ডিসপ্লে দুইটি ফোনেই দেওয়া হয়েছে। তবে ডিসপ্লের ক্ষেত্রে দুইটি ফোনে কিছু তারতম্য রয়েছে। ইউমিডিজি এস২ তে দেওয়া হয়েছে IPS ডিসপ্লে যেটা ১৪৪০*৭২০ পিক্সেল রেজ্যুলেশনে প্রতি ইঞ্চিতে ২৯৬ পিক্সেল ঘনত্বের। ১৬ এম কালারসের সাথে IPS শার্প ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে। ডিসপ্লে প্রোটেকশন হিসেবে থাকছে স্ক্র্যাচ প্রতিরোধী কাচ।
অন্যদিনে ইউমিডিজি এস২ প্রো তে দেওয়া হয়েছে In-cell ডিসপ্লে যেটা ২১৬০*১০৮০ পিক্সেল রেজ্যুলেশনে প্রতি ইঞ্চিতে ৪০১ পিক্সেল ঘনত্বের। এটাতেও ১৬ এম কালারস এবং একই ভাবে শার্প ডিসপ্লে এটাতেও দেওয়া হয়েছে। তবে ইনসেল ডিসপ্লে হওয়াতে কালার কিছুটা বেশি মনে হতে পারে। প্রটেকশন হিসেবে এটাতে থাকছে কর্নিং গোরিলা গ্লাস ৪ যা এস২ প্রো কে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। দুইটি হ্যান্ডসেটে FULL HD ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে।
প্রসেসর
ইউমিডিজি এস২ তে ২.৩ গিগাহার্জ Helio P20 অক্টা কোর প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যেটা ১৬ ন্যানোমিটারের একটি প্রসেসর। ইউমিডিজি এস২ প্রো তে ২.৫ গিগাহার্জ Helio P25 অক্টা কোর প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটাও ১৬ ন্যানোমিটারের প্রসেসর। এই দুইটি ফোনেই Mali T880 MP2 900MHz এর জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে মিডিয়াটেক প্রসেসর হওয়াতে কিছুটা পিছিয়ে আছে হ্যান্ডসেট দুইটি।
ক্যামেরা
ইউমিডিজ এস২ এবং ইউমিডিজি এস২ প্রো তে দেওয়া হয়েছে (১৩+৫) মেগাপিক্সেলের SONY IMX258 ডুয়েল রেয়াল ক্যামেরা। উভয় হ্যান্ডসেটিতেই রেয়ার ক্যামেরায় f/2.0 এপেচার দেওয়া হয়েছে এবং রেয়ার ক্যামেরার সাহায্যে ৪৯২০*৩২৬৮ পিক্সেলের ছবি তুলতে পারবেন। উভয়েই এলইডি ফ্লাশ লাইট, জিও-ট্যাগিং, ফেইস ডিটেকশন, টাচ ফোকাস,প্যানোরামা এবং HDR মোড আছে।
উভয় হ্যান্ডসেটেই রেয়ার ক্যামেরা ১০৮০পিক্সেল@৩০এফপিএস এর ভিডিও করতে সক্ষম। এস ২ এর ফ্রন্ট ক্যামেরা ৫ মেগাপিক্সেলের। ক্যামেরায় f/2.0 এপেচারের সাথে ৩০০৮*২০০০ পিক্সেলের সেলফি তুলতে পারবেন। এস ২ প্রো তে ফ্রন্ট বা সেলফি ক্যামেরায় ১৬ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। এস২ প্রো এর সেলফি ক্যামেরায় f/2.0 এপেচারের সাথে ৪২৯০*২৮০০ পিক্সেলের ছবি তুলতে পারবেন। দুইটিরই সেলফি ক্যামেরার সাহায্যে ১০৮০পিক্সেল@৩০এফপিএস এর ভিডিও করতে পারবেন এবং ফ্রন্টেও প্যানোরামা এবং HDR মোড দেওয়া হয়েছে।
র্যাম
ইউমিডিজি এস২ তে ৪ জিবি র্যাম এবং ৬৪ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ দেওয়া হয়েছে। ইউমিডিজি এস২ প্রো তে ৬ জিবি র্যম এবং ১২৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ দেওয়া হয়েছে। দুইটি হ্যান্ডসেটেই এক্সটার্নাল স্টোরেজ ২৫৬ জিবি পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
সাউন্ড
দুইটি হ্যান্ডসেটেই MP3,WAV,WMA,AAC এবং Noise Cancellation সাপোর্ট করে। তবে হ্যান্ডসেট দুইটিতেই ৩.৫ মিলিমিটারের হেডফোন জ্যাক অনুপস্থিত। দুইটি হ্যান্ডসেটেই ক্লিয়ার সাউন্ড কোয়ালিটি পাওয়া যাবে।
কানেকটিভিটি বা সংযোগ
ওয়াই-ফাই ৮০২.১১, ডুয়েল ব্যান্ড, ওয়াই-ফাই ডাইরেক্ট এবং ওয়াই-ফাই হটস্পট সুবিধা রয়েছে। ব্লুটুথ ভার্সন ৫.০, A2DP, ২জি, ৩জি, ৪জি, A-GPS, GLONASS, মাইক্রো ইউএসবি টাইপ – সি ২.০, ওটিজি এবং এফ এম রেডিও ইউথ RDS দেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য ফিচারসমূহ
ফিঙ্গারপ্রিন্ট, অ্যাকসিলারোমিটার, প্রক্সিমিটি, জাইরোস্কোপ, লাইট সেন্সর এবং কম্পাসের মত সেন্সর দেওয়া হয়েছে। MP4, H.264 প্লেয়ার সাপোর্টেড, ব্রাউজার HTML 5 সাপোর্টেড। ডকুমেন্ট এবং ফটো এডিটর ব্যবহারযোগ্য। দুইটি ফোনই মাল্টিটাচ সাপোর্ট করে এবং ধুলাময়লা/পানি প্রতিরোধক (যদিও কোনো water resistant স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি)।
ব্যাটারি
চমকে দেওয়া ব্যাপার হলো এই দুইটি ফোনেই ৫১০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। যা আপনাকে দেবে দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহারের সুবিধা। ফাস্ট চার্জিং এর সুবিধাও দেওয়া হয়েছে উভয় ফোনেই।
হ্যান্ডসেট দুইটির দামও অনেক কম নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউমিডিজি এস২ এর দাম মাত্র ১৬, ৫০০ টাকা এবং ইউমিডিজি এস২ প্রো এর দাম মাত্র ২৪, ৯৯০ টাকা রাখা হয়েছে। এত কম বাজেটের ভিতর বেজেল লেস ডিসপ্লে সহ ৪ জিবি এবং ৬ জিবি র্যামের দুইটি আকর্ষনীয় হ্যান্ডসেট কেনা যেতেই পারে।
তাছাড়া যাদের রম/স্টোরেজের সমস্যা হয় বিশেষ করে তারা এই ফোনটিকে বেছে নিতে পারেন। কেননা ৬৪ জিবি এবং ১২৮ জিবির বিশাল স্টোরেজ আপনি ইন্টারনাল হিসেবে সেটেই পাচ্ছেন। ইচ্ছা করলে বাড়তি স্টোরেজ ব্যবহারের সুবিধা তো থাকবেই। সুতরাং, ভালো মানের দুইটি ফোন এত কম দামের হওয়াতে যে কেউ বাজেটের ভিতরেই বেশি র্যাম এবং স্টোরেজ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
Leave a Reply