ফেসবুক আমাদের জীবনের কতোটা অংশ জুড়ে আছে, আশা করি আর বলতে হবে না। কিন্তু ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা স্ক্যান্ডাল ও ফেসবুক মানুষের ফোনের ব্যক্তিগত তথ্যে ঢুকে পড়া এই দুটি মারাত্মক অভিযোগ পাওয়া গেছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। তাই বহির্বিশ্বে অনেকেই যুক্ত হচ্ছেন ‘ডিলিট ফেসবুক’ আন্দোলনের সাথে। কিন্তু ফেসবুক ছেড়ে দেওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়। কতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে ফেলি আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে। কতো আবেগ ও জড়িয়ে থাকে এই ফেসবুকের সাথে। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছেন, ফেসবুক সিক্রেট আইডি তৈরি করলে কেমন হয়!
ফেসবুক সিক্রেট আইডি
আজ নিয়ে এসেছি কিভাবে তৈরি করবেন ফেসবুকে গুপ্ত আইডি। আপনি যদি আপনার সকল তথ্য ব্যক্তিগত অবস্থায় রেখে ফেসবুক চালাতে চান, তাহলে চলুন শুরু করা যাক, দেরী না করে।
ইউনিক ইমেইল অথবা ফোন নাম্বার বানান
প্রথমত, আপনি যদি সুরক্ষিতভাবে ফেসবুক ব্যবহার করতে চান, তাহলে আপনাকে এমন একটি ইমেইল অথবা ফোন নাম্বার দিয়ে সাইন আপ করতে হবে, যেটি শুধু আপনার নতুন প্রোফাইলের জন্য ব্যবহৃত হবে। কিন্তু আপনি যদি আগে থেকে ব্যবহৃত আপনার ইমেইল অথবা ফোন নাম্বার দিয়ে নতুন অ্যাকাউন্ট বানাতে যান, তাহলে আপনার মেসেজ, সার্চ হিস্টোরি, কানেক্টেড অ্যাপস এবং গেমস ইত্যাদিতে এক্সেস করে সহজেই ফেসবুক তার বিজ্ঞাপনের জন্য ফায়দা ওঠাতে পারে।
এ পর্যায়ে দুটো উপায় আছে-
প্রথম, আপনি আপনার সদ্য তৈরী করা ইমেইল দিয়ে সাইন আপ করতে পারেন ফেসবুকে, যেটা শুধু আপনার সিক্রেট আইডির জন্য ব্যবহৃত হবে, অন্য কোনো কাজের জন্য নয়। এর জন্য আপনি যে কোনো ইমেইল কোম্পানির সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন, যেটা আপনার সবচেয়ে ভালো মনে হয়। আমরা সবাই জানি গুগল কতো বড়ো একটি কোম্পানি, তাই আমার মতে জিমেইল ব্যবহার করাই উচিত হবে। কিন্ত আপনাকে এটাই নিশ্চিত করতে হবে যে, এই ইমেইলটি যাতে অন্য কোথাও ব্যবহৃত না হয়।
দ্বিতীয়ত, আপনি একটি মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করতে পারেন ইমেইল অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে, যদি আপনার ইমেইল পছন্দ না হয়। এক্ষেত্রে , আপনাকে একটি ভুয়া নাম্বার ব্যবহার করতে হবে। আপনি অবশ্যই আপনার আসল ফোন নাম্বারটি ব্যবহার করবেন না, কারণ ফেসবুকের কাছে এক বিশাল ডাটাবেজ আছে নাম এবং ফোন নাম্বারের, তারা এগুলো সংরক্ষণ করে রাখে।
এ রকম ফেইক নাম্বার তৈরী করার সহজ উপায় হচ্ছে Google Voice এর মাধ্যমে আপনি আপনার আসল ফোন নাম্বারের মাধ্যমে একটি ফেইক নাম্বার বানাতে পারবেন। কিন্তু ফেইক নাম্বারটি আসল নাম্বারের সাথে লিঙ্ক করা থাকবে, এক্ষেত্রে ফেসবুক আপনারা আসল নাম্বারের খোঁজ পাবে না কোনো সময়।
আপনার ফোনে একটি নতুন ইউজার স্পেস সেটাপ করুন (শুধু অ্যান্ড্রয়েডের জন্য)
আপনি যদি আপনার অ্যান্ড্রয়েড দিয়ে একটি ফেসবুক একাউন্ট খুলেন, এটা ফেবুকের জন্য খুব সহজ কাজ হবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গুলো উঠিয়ে নেওয়া যেগুলো আপনার মোবাইলে সংরক্ষিত আছে। উপরন্তু আপনার আইডেন্টিটির হুবুহু কপি করতে পারবে ফেসবুক ,যা আপনার ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
এই সমস্যারও সমাধান রয়েছে। আপনি যদি আপনার অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে নতুন একটি ইউজার স্পেস বানিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন অথবা ব্যবহার করেন, সেটা হবে অধিক নিরাপদ, এক্ষেত্রে আপনার নতুন ইউজার স্পেসে কোনো ব্যক্তিগত তথ্য রাখলে চলবে না।
নতুন ইউজার সেটাপ করার জন্য স্টেপগুলো অনুসরণ করুন-
open Settings –> Users & Accounts –> Users –> Add user
আপনার অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের ভিত্তিতে একটু এদিক সেদিক হতে পারে ইউজার সেটিংস খুঁজে পেতে, এক্ষেত্রে আপনি সেটিংস এ গিয়ে ইউজার লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন।
এরপর ইউজার খোলার জন্য একটি গুগল অ্যাকাউন্ট চাইতে পারে সেক্ষেত্রে আপনি স্কিপ করে চলে যাবেন। যদি প্লে স্টোর থেকে কিছু ইনস্টল করতে হয়, তাহলে আপনি আগের তৈরী করা ফেসবুকের ইমেইলটি ব্যবহার করতে পারেন।
এখন থেকে আপনি আপনার নিয়মিত কাজের জন্য সবসময় ব্যবহৃত ইউজার স্পেসটি ব্যবহার করবেন এবং ফেসবুক ব্যবহারের সময় নতুন তৈরী করা ইউজার স্পেসে সুইচ করে নেবেন। ইউনিক ইমেইল এবং ফোন নাম্বারের মতো এই নতুন ইউজার স্পেসটি শুধু ফেসবুকের জন্য ব্যবহার করবেন অন্য কিছুর জন্য নয়। ইউজার পালটাতে আপনার সেটিংস এ গিয়ে ইউজারে গেলেই পুরোনো ইউজার টি দেখতে পাবেন।
নিজেকে ফেসবুকের অফিসিয়াল অ্যাপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলুন
আপনার স্মার্ট ফোনে ইনস্টল করা ফেসবুক অফিসিয়াল অ্যাপটিও আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। কারণ ফেসবুকের অফিসিয়াল অ্যাপের অনেক এক্সেস থাকে আপনার ফোনের। এক্ষেত্রে আমি আপনাকে পরামর্শ দেব এদের অফিশিয়াল অ্যাপটি ব্যবহার না করার। আমি জানি আপনি কি ভাবছেন ! হ্যা ঠিকই, ফেসবুকের আসল মজা এই অ্যাপেই। ফেবুকের অনেক ফিচার এই অ্যাপ ছাড়া পাওয়া যাবে না। কিন্তু কিছুই করার নেই। নিজে একটু নিরাপদ থাকতে গেলে এই ত্যাগ টুকু স্বীকার করতেই হবে।
বিকল্প হিসেবে থাকছে ফেসবুক মোবাইল সাইট অথবা Facebook wrapper app
যদি আপনি অ্যান্ড্রয়েড ইউজার হন তাহলে রয়েছে Metal নামের একটি অ্যাপ। এটি ফেবুকের রিপ্লেস অ্যাপ। এর আসল সুবিধা হচ্ছে এটি কোন বিজ্ঞাপন দেখাবে না এবং অফিসিয়াল অ্যাপের মতো এতো চার্জ খাবে না। এছাড়াও কোনো ডিভাইস পারমিশন চাইবে না আপনার কাছে যেটা খুবই ভালো ব্যাপার। তবে এটা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে Metal অ্যাপটি আপনি আপনার ফেসবুকের জন্য খোলা ইউজার স্পেসে ইনস্টল করবেন। তাহলে নিরাপত্তার জন্য আর চিন্তা করতে হবে না।
কিন্তু আপনি যদি আইফোন ইউজার হন তাহলে দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে এক্ষেত্রে Metal এর মতো কোনো অ্যাপ নেই। আপনাকে ব্রাউজারে ওয়েবসাইটেই ফেসবুক সার্ফিং করতে হবে।
ভিপিএন ইনস্টল করুন
একটা ব্যাপার থেকেই যায়, সেটা হলো আপনি যে কোনো উপায়েই হোক ফেসবুক ব্যবহার করলেই তারা আপনার লোকেশন জানবেই। তাহলে ভালো একটি উপায় হলো ভিপিএন ব্যবহার করা। এখানকার ৫টি ফ্রি ভিপিএন সফট্ওয়্যার থেকে যে কোন একটি ভিপিএনে কান্ট্রি পালটিয়ে ব্যবহার করলে আর সমস্যা নেই।
শেষের কথা, আপনি না চাইলে ফেইক নাম, ছবি, ঠিকানা ব্যবহার করতে পারেন। ফেসবুক সিক্রেট আইডি খোলার জন্য আপনাকে সব কিছুই গোপন রাখতে হবে বলা বাহুল্য।
Leave a Reply