আপনি যদি আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরীর জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয় আপনি একটি ভালো হোস্টিং কেনার কথা ভাবছেন। হোস্টিং কেনার আগে কিছু বিষয়ের দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। যেমন, আপনি যে হোস্টিং সার্ভিসটি ক্রয় করবেন তা অবশ্যই ভালো মানের, সাশ্রয়ী এবং আধুনিক সব ফিচার সমৃদ্ধ হতে হবে।
যদিও বর্তমান বাজারে এই তিনটি বৈশিষ্টের সমন্বয় করে হোস্টিং সার্ভিস ক্রয় করা কষ্টসাধ্য। তারপরেও আপনাকে অবশ্যই ভালো কোন কোম্পানী থেকে এমন একটি হোস্টিং প্লান নির্বাচন করতে হবে যা একদিকে আপনার খরচ কমাবে অন্যদিকে ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ফিচার সরবরাহ করবে।
আবার খরচ কমাতে গিয়ে কিংবা কম মূল্যের লোভনীয় অফারের প্রলোভনে পড়ে এমন হোস্টিং নেবেন না যা আপনার ওয়েবসাইটের স্বপ্নটাকেই মাটি করে দেয়। যেমন, আপনি একটি ব্লগ তৈরি করেছেন কিংবা একটি বিজসেন ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন যাকে ঘিরে আপনার অনেক স্বপ্ন রয়েছে। কিন্তু কম মূল্যের হোস্টিং কেনার ফলে দেখা গেল যে প্রায়ই আপনার ওয়েবসাইট ডাউন থাকে। ফলে, আপনি যতই এসইও বা অন্য অনেক কিছুই করুন না কেন, আপনার সাইটটিকে র্যাংকে তুলতে পারবেন না। কাজেই, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বেশি মূল্যের হলেও ভাল মানের হোস্টিং কেনা উচিৎ।
বর্তমানে ইন্টারনেটে এমন অনেক হোস্টিং সার্ভিস পাওয়া যায়, যারা একটি নির্দিষ্ট হোস্টিং প্লানের ভিত্তিতে যে কোন ব্যাক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানকে তাদের ওয়েবসাইট হোস্ট করার মাধ্যমে ইন্টারনেটে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ করে দেয়। সাধারণভাবে একটি হোস্টিং সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের একটি বা একাধিক সার্ভার থেকে থাকে, যেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট স্পেস তারা আপনাকে বরাদ্দ দিয়ে থাকে।
কিন্ত আপনার জন্য এই অসংখ্য হোস্টিং সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সঠিক প্রতিষ্ঠান এবং সঠিক প্লানটিকে বেছে নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। বিশেষ করে আপনি যদি এ ব্যাপারে নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে হোস্টিং প্লান নির্বাচন আপনার জন্য একটি বড় দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
হোস্টিং কেনার আগে গুরত্ব দিন এ বিষয়গুলোর প্রতি
আপনার ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিং নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। আপনি চাইলে ভালো হোস্টিং নির্বাচনের জন্য সার্চ ইঞ্জিন বা অভিজ্ঞ কারো নিকট থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। আমি এটা বলছি না যে সবাই খারাপ। মোটামুটি ইন্টারনেটে যারা হোস্টিং সেবা প্রদান করে থাকে তাদের অধিকাংশই ভালো। তবে এর মাঝে কিছু এমনও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের সেবার মান সন্তোষজনক নয়।
আপনার ওয়েবসাইটি যতই ভালো মানের হোক না কেন আপনি যদি ভুল প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হোস্টিং সেবা গ্রহণ করেন তাহলে আপনি কিছু মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। যেমন-
- হোস্টিং ভালো মানের না হলে হোস্টেড ওয়েবসাইটের লোডিং টাইম বহুগুনে বেড়ে যায়, যার ফলে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংকিং পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
- একটি বাজে হোস্টিং সার্ভিস থেকে আপনি কখনোই আপনার কাঙ্খিত সুযোগ সুবিধা বা প্রয়োজনের সময় সহায়তা পাবেন না। যার কারণে এটিকে আসলে আপনার অর্থ, সময় আর পরিশ্রমের অপচয় ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।
- আপনার ওয়েবসাইটের উপর নেতিবাচক প্রভাবের মানে হলো আপনার ভিজিটররা আস্তে আস্তে আপনার ওয়েবসাইটের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়বে এবং খুব বেশি সময় পর্যন্ত আপনি অনলাইন জগতে নিজের অস্তিস্ত ধরে রাখতে পারবেন না।
২০১৭ সালে ইন্টারনেটে ছোট বড় ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় যে মানুষের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অনলাইনে বিনিয়োগ করার প্রবণতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই প্রতিযোগীতার বাজারে আপনি আপনার মূল্যবান অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন এটি যাচাই করে নেওয়া খুবই জরুরী। তাই ওয়েবসাইটের জন্য কোন হোস্টিং সেবা নির্বাচন করার আগে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখুন-
আপনার ওয়েবসাইটের ধরনের দিকে নজর দিন
হোস্টিং নির্বাচনের সময় প্রথমেই নিজের ওয়েবসাইটের ধরনের দিকে নজর দিন। লক্ষ্য করুন আপনার ওয়েবসাইটটি স্বাভাবিকভাবে পরিচালনার জন্য যে ধরনের সুবিধাদি প্রয়োজন সেগুলি হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ করছে কিনা। উদাহরণ স্বরুপ আপনি যদি একটি সোস্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট বানাতে চান তাহলে আপনাকে হোস্টিং এর পারফরমেন্স, ওয়েবসাইটের ব্যাকগ্রাউন্ড কার্যাবলী সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং ফ্রন্ট এন্ড এ সে অনুযায়ী সঠিক ও সাবলিলভাবে ফলাফল প্রদর্শন করা ইত্যাদি বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সব ওয়েবসাইটের জন্য একই ধরনের সুবিধাদি প্রয়োজন হলেও প্রকার ভেদে কিছু বিশেষ ফিচারের প্রয়োজন হয়।
খরচের প্রতি সতর্ক থাকুন
হোস্টিং সার্ভিস গ্রহণের ক্ষেত্রে যে খরচ হয়ে থাকে তা দুইটি ধাপে বিভক্ত। প্রথম ধাপে আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইটটির জন্য হোস্টিং কিনবেন এবং আপনার ওয়েবসাইট ইনষ্টলেশন এবং সেটিং করবেন তখন একটি নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করতে হয়। পরবর্তীতে মেয়াদ শেষে যখন আবার সেবা নবায়ন করবেন তখন দ্বিতীয় ধাপে আপনার ওয়েবসাইটটিকে সচল রাখার জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অনেক প্রতিষ্ঠান প্রথম ধাপে ওয়েবসাইট ইনষ্টল করার সময় অনেক কম মূল্যে রেজিষ্ট্রেশন করার সুযোগ দিয়ে থাকলে, সেবা নবায়নের সময় অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি মূল্য দাবি করে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং যেখান থেকেই হোস্টিং কেনেন না কেন তাদের টার্মস এন্ড সার্ভিসগুলি অবশ্যই ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে।
শেয়ার্ড বনাম ডেডিকেটেড ওয়েব হোস্টিং
হোস্টিং কেনার আগে একজন সাধারণ ব্যবহারকারী শেয়ার্ড হোস্টিং না ডেডিকেটেড হোস্টিং কিনবেন তা নিয়ে ভাবনায় পড়ে যান। এখানে আপনাকে অবশ্যই আপনার প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দিতে হবে, কারণ শেয়ার্ড হোস্টিং তুলনামূলক অনেক খম খরচে পাওয়া যায়। কিন্তু এ ধরনের হোস্টিং ব্যবস্থায় একই সার্ভারে অনেক ওয়েবসাইট হোস্ট করা থাকে এবং এ ধরনের হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ নাও থাকতে পারে। তাই, এ ধরণের হোস্টিং নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সার্ভারের দূর্বল পারফরমেন্স মানিয়ে নেওয়ার মত মন মানসিকতা আপনার থাকতে হবে।
অপরদিকে ডেডিকেটেড হোস্টিং এ আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি নির্দিষ্ট সার্ভারের সবটুকু স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং সার্ভারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই থাকে। কিন্তু এ ধরনের হোস্টিং এর জন্য ধার্যকৃত সেবামূল্য শেয়ার্ড হোস্টিং থেকে কয়েকগুন বেশি হয়ে থাকে। তাই আপনার ওয়েবসাইটের জন্য কোন ধরনের হোস্টিং বেশি উপযোগী সেটি আগে বিবেচনা করুন।
হোস্টিং কেনার আগে কোন লোভনীয় হোস্টিং প্লান দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় অবশ্যই আপনি যে প্রতিষ্ঠান থেকে হোস্টিং কেনার কথা ভাবছেন তার সুনাম কতটুকু সেটি যাচাই করে নিতে হবে। তাছাড়া আপনি যে হোস্টিং সেবা ক্রয় করছেন সেটি কতগুলি অ্যাড-অন ডোমেইন ব্যবহার করা যাবে, হোস্টিং সেবা ছাড়াও আপনি অন্যান্য আর কি কি সুবিধা লাভ করছেন ইত্যাদি বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা নেওয়ার পরেই সিদ্ধান্ত নিন।
Leave a Reply