পরিচয় গোপন রেখে ইন্টারনেট ব্যবহার করার গুরুত্ব অনেক বেশী। কেননা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হচ্ছে গোপনীয়তা বজায় রাখা। হতে পারে সবাই আপনার তথ্য নিচ্ছে না কিন্তু তারপরও গোপনীয়তা সম্পর্কে আমাদের চিন্তা করতে হবে এবং পরিচয় রক্ষা করতে হবে । যখন আমরা অনলাইনে ওয়েব সাইট ব্রাউজ করি তখন আমাদের ব্যাক্তিগত ডাটা ইন্টারনেটের ডিজিটাল স্টোরেজে সংরক্ষিত থাকে। আর এটাই আমাদের জন্য ভীষণ চিন্তার বিষয়। তাই জেনে নিন নিজের পরিচয় বা তথ্য গোপন রেখে যেভাবে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন।
পরিচয় গোপন রেখে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার
বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা এখন নেই বললেই চলে। আমরা যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করি তখন সরকারি সংস্থাগুলো সব সময় আমাদের কার্যক্রমের প্রতি লক্ষ্য রাখছে। এছাড়া ব্লাক হ্যাট হ্যাকার, কিছু কিছু ওয়েব সাইট এবং ব্রাউজার, আমাদের সার্চ ইন্জিনে করা সার্চ, ওয়েব সাইট ভিজিট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমের তথ্য নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থার কাছে বিক্রি করে দেয়। যখন আপনি কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন তখন আপনার নেটওয়ার্ক অপারেটর এবং সরকার জানতে পারে যে আপনি কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন।
যাই হোক ভয় পাবার কিছু নেই। এই লেখায় আমি নিরাপত্তার সম্ভাব্য উপায়গুলো আলোচনা করব। যার মাধ্যমে আপনি অনলাইন গোপনীয়তা বজায় রেখে, অ্যানোনিমাসলি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
যদি আপনি এমন একটি দেশে থাকেন যেখানে ফেসবুক ওয়েব সাইটটি ব্লক করা, তাহলে আপনি এই দেশ থেকে ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে পারবেন না। ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে আপনার পরিচয় লুকিয়ে তারপর প্রবেশ করতে হবে। আর এই সুবিধা গুলো আপনি সম্পূর্ন ফ্রি পাবেন, আপনার অ্যান্ড্রেয়েড ফোনে। আমি এরকম শক্তিশালী ৩টি অ্যাপের বর্ণনা দিচ্ছি –
Orwall
আপনার মোবাইলের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য Orwall বিখ্যাত ফ্রি অ্যাপ। আপনার ফোনে এটি ফায়ারওয়ালের মতো কাজ করবে। অবৈধ নেটওয়ার্ক এক্সেস থেকে প্রায় সব অ্যাপ্লিকেশন কে রক্ষা করবে। আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যেমে নিরাপদে যে কোন জায়গায় সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন এবং এর জন্য শুধু একটি দরজাই থাকবে। ফলে অন্য কোন অবৈধ নেটওয়ার্কের আক্রমনে পড়তে হবে না। ও হ্যাঁ, এই অ্যাপটির সম্পূর্ন সুবিধা ভোগ করতে হলে আপনার ফোনটি রুট করা থাকতে হবে।
Orbot
আপনার নিরাপত্তার ২য় অস্ত্র হল Orbot। ভিপিএন এবং প্রক্সির কাজ করে এটা। এই অ্যাপটি ডাউনলোড এবং ব্যবহার করা খুবই সহজ। আর চাইলে আপনি উন্নত অনেক ফিচারও ব্যবহার করতে পারবেন। এটা Guardian Project এর তৈরি করা অ্যাপ। তাই এটাতে অনেক ভাল ভাল কিছু ফিচারস আছে। ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন।
Orweb
এটা একটি মোবাইল ওয়েব ব্রাউজার। এটাও Guardian Project এর তৈরি করা অ্যাপ। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে নিরাপদ মোবাইল ব্রাউজার। এটা Tor নেটওর্য়াক ব্যবহার করে, ফলে এর নিরাপত্তা সম্পর্কে আশা করি আর কিছু বলতে হবে না। এর মাধ্যমে আপনি শতভাগ না হলেও, অনেক বেশী নিরাপদ থাকবেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারের অনান্য আরও কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ইন্টারনেট ব্যবহারকে নিরাপদ রাখতে, হ্যাকার কিংবা যে কারো নজরদারি থেকে নিরাপদ থাকতে, আপনি আরো যে-সব ব্যবস্থা নিতে পারেন, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
VPN ব্যবহার করুন
VPN যার অর্থ Virtual Private Network। অ্যানোনিমাসলি ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য VPN চমৎকার হাতিয়ার। তারা আপনার বর্তমান আইপি ঠিকানাটিই একটি নতুন আইডির মাধ্যমে স্থানান্তর করে, যা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্থানকে নির্দেশ করে। এটি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে সরকারি সংস্থা এবং হ্যাকারদের ট্র্যাক থেকে নিরাপদ রাখে। Play Store অনেক ফ্রি VPN আছে এইগুলো ব্যবহার করতে পারেন আর অধিক নিরাপত্তা এবং স্পীডের জন্য টাকা দিয়ে ক্রয় করেও ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রাউজারের কুকিজ (Cookies) মুছে ফেলুন
কুকিজ মানে মি: কুকি বিস্কুট নয়। এটা মূলত আপনার ব্রাউজারের ক্যাশ মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকে। যখন কোনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ব্যবহারকালে কোনো ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে, তখন ব্যবহারকারীর ওয়েব ব্রাউজার এ ওয়েবসাইট প্রেরিত ক্ষুদ্র তথ্যপূর্ণ কিছু টেক্সট জমা হয়। এই জমা হওয়ার স্থানটি হলো ব্রাউজার কুকি।
বেশিরভাগ ওয়েবসাইটগুলিতে কুকিজ সক্রিয় থাকে। মনে করেন আপনি কোন ই-কর্মাস সাইটে গেলেন সেখানে কিছু পন্যের সার্চ করলেন এবং একটি Iphone X ক্রয় করলেন। তো আপনার ব্রাউজার এই তথ্যগুলিই ঐ ওয়েব সাইটকে প্রেরণ করে। আর এ-সব কুকি আপনি ব্রাউজারের সেটিংস থেকেও ব্লক করে রাখতে পারবেন এবং আরও বুদ্ধিমানের কাজ হবে ইন্টারনেট ব্যবহারের পর ব্রাউজারের কুকি মুছে ফেলা।
ফ্রি WiFi ব্যবহারের সময় সর্তক থাকুন
ফ্রি WiFi এখন প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। এই ফ্রি সেবা ভালো থেকে বেশি ক্ষতি করতে পারে আপনার। এই নেটওয়ার্কে যারা সংযুক্ত সবাই ভাল মানুষ না অনেক ব্লাক হ্যাট হ্যাকারও থাকতে পারে। এছাড়া যারা ফ্রি WiFi দেয় তারা চাইলে সহজেই প্রত্যেকের তথ্য পুনরুদ্ধার করতে পারবে। তাই ফ্রি WiFi ব্যবহারের সময় কোন সাইটে লগিন করা থেকে বিরত থাকবেন এবং সব সময় ভিপিএন ব্যবহার করবেন।
ব্রাউজারের Incognito mode এ ইন্টারনেট ব্যবহার
Incognito mode এ ইন্টারনেট ব্যবহারের সবচেয়ে মজার ব্যপার হল এটা সব ব্রাউজারেই আছে। এটার মাধ্যমে আপনি প্রাইভেটলি যে কোন ওয়েব সাইটে ব্রাউজ করতে পারবেন। আপনার কোন ব্রাউজিং ইতিহাস, কুকি, এমন কি কোনকিছুই ব্রাউজার সংরক্ষন করবে না।
শেষ কথা
আশা করি, লেখাটি পড়ে পরিচয় গোপন রেখে কিভাবে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন, সে সম্পর্কে ভাল ধারণা পেয়েছেন। আমি চেষ্টা করেছি কিভাবে কোন খরচ ছাড়াই আপনি অনলাইন গোপনীয়তা বজায় রেখে, অ্যানোনিমাসলি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন সেটাকে সহজভাবে তুলে ধরতে। যদি আমি কোন কিছু মিস করে থাকি এবং আপনার কিছু ভালো ধারণা থাকে, তবে দয়া করে আমাদের কমেন্টে জানান। আর আমাদের পোস্টটি যদি ভাল লাগে এবং মনে করে থাকেন অন্যদেরও জানানো দরকার তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
Leave a Reply