নিজের মূল্যবান তথ্যগুলোকে সংরক্ষিত রাখা আামাদের সকলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। আর তথ্যকে নিরাপদে সংরক্ষণ করার জন্য ফ্রি ক্লাউড সার্ভিস এর বিকল্প নেই। এছাড়া পরিবার, বন্ধু-বান্ধবসহ সকলের সাথে প্রয়োজনীয় ফাইল শেয়ার করার জন্য ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস ব্যপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
অনলাইন স্টোরেজ সিস্টেম বা ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কম্পিউটার বা মোবাইলে সংরক্ষিত যে কোন ডিজিটাল ফাইলকে ইন্টারনেটে সংরক্ষণ করা এবং পরবর্তীতে যে কোন স্থান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফাইলটিকে ডাউনলোড বা এডিট করা সম্ভব।
আপনার ডিভাইসের সাথে সিঙ্ক করার মাধ্যমে ক্লাউড স্টোরেজে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ফাইলগুলিকে সংরক্ষণ করতে পারেন। বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন কোম্পানি ফ্রিতে ক্লাউড সার্ভিস অফার করে থাকে যেগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার মূলবান ফাইলগুলোকে সংরক্ষণের মাধ্যমে টেনশন ফ্রি থাকতে পারেন।
ফ্রি ক্লাউড সার্ভিস
ব্যক্তিগত বা অন্যান্য প্রয়োজনে আমাদের প্রতিনিয়তই ফাইল শেয়ারিং এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর এ চাহিদা পূরণের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করে থাকি। যদিও এটি স্বীকার করতেই হবে যে ফ্রি ক্লাউড সার্ভিস এর তুলনায় প্রিমিয়াম সার্ভিসগুলো অনেক বেশি স্পেস প্রদান করে থাকে। কিন্তু আমার মনে হয় ফ্রি ক্লাউড সার্ভিস এ যে পরিমাণ স্পেস অফার করা হয় তা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। তাই চলুন দেরি না করে জেনে নিই সেরা ফ্রিতে ব্যবহার করা যায় এমন ক্লাউড সার্ভিসগুলো সম্পর্কে:-
গুগুল ড্রাইভ – ১৫ জিবি ফ্রি
ক্লাউড সার্ভিস এর মধ্যে আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ হলো গুগল ড্রাইভ। বর্তমান সময়ে আমি মনে করি সবারই কম বেশি একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আপনারও যদি একটি গুগল অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে বা আপনি যদি জিমেইল ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে সেটি দিয়েই আপনি আপনার গুগল ড্রাইভ অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল আপলোড করতে পারবেন। আপলোডকৃত ডকুমেন্ট এডিট করার জন্যেও গুগলের একাধিক সার্ভিস রয়েছে। তাছাড়া কম্পিউটার থেকে ব্যবহারের জন্য গুগল ড্রাইভের রয়েছে ডেক্সটপ ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই নির্দিষ্ট ফোল্ডারের মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করতে সক্ষম হবেন।
গুগল ড্রাইভের ফ্রি অ্যাকাউন্টে আপনি ১৫ গিগাবাইট ক্লাউড সার্ভিস পাবেন যা গুগল ড্রাইভ, জিমেইল এবং গুগল ফটো এই তিনটি গুগল সার্ভিসের সমন্বয়ে ব্যবহার করা যাবে। পরবর্তীতে আপনি যদি পেইড সার্ভিসে যেতে চান তাহলে ১.৫৯ ডলার প্রতি মাসের বিনিময়ে আপনি পাবেন ১০০ গিগাবাইট এবং ২৩৯.৯৯ ডলার প্রতি মাসের বিপরীতে ৩০ টেরাবাইট ক্লাউড স্টোরেজ। গুগল ড্রাইভ আপনি আপনার ব্রাউজার, আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড, ব্লাকবেরী এবং উইন্ডোস ডিভাইস থেকে ব্যবহার করতে পারবেন।
বক্স – ১০ জিবি ফ্রি
ফ্রি ক্লাউড সার্ভিস এর ক্ষেত্রে গুগল ড্রাইভের পরেই বক্স তাদের বিজনেস এবং পারসোনাল স্টোরেজ প্লানগুলি দিয়ে সকলের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে। আপনার কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক এবং ক্লাউড স্টোরেজ সিঙ্ক প্রসেস এর জন্য বক্সের রয়েছে ডেক্সটপ অপ্লিকেশন। ফ্রি সার্ভিসের ক্ষেত্রে বক্স প্রতি ইউজারকে ১০জিবি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ দিয়ে থাকে।
বক্সে আপলোড করার জন্য একটি ফাইলের সর্বোচ্চ সাইজ অবশ্যই ২৫০ মেগাবাইটের নীচে হতে হবে। তবে পেইড সার্ভিসের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে ৭ ডলারের বিপরীতে তারা ১০০ গিগাবাইট স্পেট এবং একটি ফাইলের সর্বোচ্চ সাইজ অবশ্যই ৫ গিগাবাইট পর্যন্ত সমর্থন করে থাকে। বক্স আপনি আপনার ব্রাউজার, আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড, ব্লাকবেরী এবং উইন্ডোস ডিভাইস থেকে ব্যবহার করা ছাড়াও তাদের বিল্ট-ইন অফিস প্রোগ্রামের মাধ্যমে বক্সে থাকা অফিস ফাইলকে এডিট করতে পারবেন।
ওয়ান ড্রাইভ – ৫ জিবি ফ্রি
মাইক্রোসফট টিমের পূর্বের স্কাইড্রাইভের নতুন সংষ্করণটি হলো ওয়ান ড্রাইভ এবং এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য একটি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। আপনার হটমেইল বা লাইভমেইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই আপনি এটি পরিচালনা করতে পারবেন। যদিও আমার মনে হয় যে আমাদের দেশে অনেক কম মানুষই হটমেইল বা লাইভ মেইল ব্যবহার করেন, তবুও ফ্রি স্টোরেজ ব্যবহারের জন্য একটি অ্যাকাউন্ট তৈরী করা যেতেই পারে।
ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ওয়ানড্রাইভ ৫ গিগাবাইট স্টোরেজ বরাদ্দ করলেও শিক্ষার্থীদের জন্য এটির পরিমাণ ১ টেরাবাইট। ওয়ান ড্রাইভে প্রতি মাসে ১.৯৯ ডলারের বিনিময়ে ৫০ গিগাবাইট, ৫.৯৯ ডলারের বিনিময়ে ১ টেরাবাইট এবং ৭.৯৯ ডলারের বিনিময়ে ৫ টেরাবাইট স্পেস ব্যবহার করা যায়। ওয়ান ড্রাইভ আইওএস, অ্যান্ডয়েড, উইন্ডোজ ও ব্লাকবেরী থেকে পরিচালনা করা সম্ভব।
অ্যাপল আই ক্লাউড – ৫ জিবি ফ্রি
আপনি যদি আইফোন বা আইপ্যাড ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই অ্যাপল আই ক্লাউড ব্যবহার করে থাকবেন। তবে খুশির ব্যাপারটি হলো আইওএস সমর্থিত আই ক্লাউড বর্তমানে ম্যাক এবং উইন্ডোজকেও সমর্থন করে। আই ক্লাউডের ফ্রি সার্ভিসটিতে ৫ গিগাবাইট স্পেস বরাদ্দ থাকে যার মাধ্যমে ছবি, ভিডিও, ইমেইল, নোট, ক্যালেন্ডার, অ্যাপ্লিকেশন ডাটা, কনট্যাক্ট এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট ব্যাকআপ করা যায়।
আইফোন বা আইওএস ব্যবহারকারীদের জন্য এটি আদর্শ হলেও বর্তমানে উইন্ডোজসহ বিভিন্ন ডিভাইস এটিকে সমর্থন করে। অ্যাপল আই ক্লাউড আপনার তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম।
ড্রপবক্স – ২ জিবি ফ্রি
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ড্রপবক্স ফ্রি ক্লাউড সার্ভিস এর জগতে অনেক বড় একটি নাম। এটি ব্যবহারের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিটি হলো এটিকে আপনার কম্পিউটার বা ডিভাইসে ইনষ্টল করে নেয়া। একবার ইনষ্টল করলে ড্রপবক্স নির্দিষ্ট ফোল্ডারের মাধ্যমে ফাইল ব্যাকআপ করে থাকে।
ড্রপবক্সের বেসিক অ্যাকাউন্টে ২ গিগাবাইট স্পেস বরাদ্দ থাকলেও রেফারেল প্রোগ্রামের মাধ্যমে এটিকে বাড়িয়ে নেওয়া যায়। আপনি যদি কাউকে আপনার রেফারেল লিংক এর মাধ্যমে ড্রপবক্সে সাইন আপ করান তাহলে আপনারা দুজনেই ৫০০ মেগাবাইট অতিরিক্ত স্পেস লাভ করবেন যা সর্বোচ্চ ১৬ গিগাবাইট পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব।
ফ্রি ক্লাউড সার্ভিস বর্তমানে বিপুলভাবে ব্যবহৃত হলেও এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে আমি মনে করি। পাসওয়ার্ড নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। সহজেই অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। সম্ভব হলে ভালো কোন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে হবে। অধিকাংশ সফটওয়্যার বা সার্ভিসে অটো আপলোড ফিচারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন করা থাকে, এটিকে ডিজেবল করে রাখাই ভালো। তাছাড়া কম্পিউটারে অ্যান্টি-ভাইরাস সবসময় আপডেট রাখার চেষ্টা করতে হবে।
এম তহিদুল ইসলাম সুমন says
খুবই ভালো একটি পোষ্ট, বিশেষত তাদের জন্যে যাদের কম্পিউটার ও মোবাইলে অনেক জরুরী তথ্য থাকে এবং তা সংরক্ষণের প্রয়োজন অনস্বীকার্য্য। এটি মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের অনেক উপকারে আসবে, ধন্যবাদ।