আপনি যত ভাল এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট বা অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজগুলো পারেন না কেন, একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার হিসাবে আপনার ওয়েব ডিজাইন দ্রুত এবং সহজ করতে কিছু ওয়েব ডিজাইনিং টুল যেমন বিভিন্ন লাইব্রেরি বা ফ্রেমওয়ার্ক বা অন্যান্য অফলাইন বা অনলাইন টুলের সাহায্য আপনাকে নিতেই হবে। আর এদের মধ্যে ওপেন সোর্স সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক অন্যতম।
ওয়েব ডিজাইনের অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু বুটস্ট্র্যাপ ফ্রেমওয়ার্কের নাম শোনেন নি, এমন হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু কখনও কি মনে প্রশ্ন জেগেছে যে বুটস্ট্র্যাপ ছাড়া আর কি কি ওপেন সোর্স সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক আছে তা জানার? যদি জেগে থাকে এবং ব্যস্ততার কারণে তার উত্তর খোঁজার সময় না হয়ে থাকে, তবে আপনার জন্যই আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা।
ওপেন সোর্স সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক
আজকের এই আর্টিকেলে বুটস্ট্র্যাপ ছাড়াও আরও চারটি সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে আমরা আলোচনা করব। আর আপনারাও চাইলে বুটস্ট্র্যাপ ইউজ করার বদলে অন্যান্য ফ্রেমওয়ার্কগুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
১. বুটস্ট্র্যাপঃ
ওপেন সোর্স সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক হিসেবে বুটস্ট্র্যাপ-ই যে সবচেয়ে বিখ্যাত, এই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। গিটহাবের সবচেয়ে পপুলার প্রোজেক্টগুলোর একটি হল এই বুটস্ট্র্যাপ এবং এটাকে সবচেয়ে বিখ্যাত রেসপন্সিভ সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক বলা হয়। ওয়েব ডিজাইনিং কনসেপ্ট গঠনে, মোবাইল ফার্স্ট অ্যাপ ডিজাইনে, গ্রিড সিস্টেম ডিজাইন বা টাইপোগ্রাফিতে এর প্রতিদ্বন্দি অন্য কোন ফ্রেমওয়ার্ক পাওয়া কঠিন।
বুটস্ট্র্যাপের কোন নিজস্ব কম্পোনেন্ট নেই, তবে বেশ কিছু নিজস্ব এলিমেন্ট আছে। আর, এর প্রচুর থার্ড পার্টি প্লাগিন যেমন গ্লিফাইকন, ফন্ট অসাম ইত্যাদি এভেইলেবল। এছাড়াও, বুটস্ট্র্যাপ এর ডকুমেন্টেশনও খুবই ভাল। আপনি প্রায় যে কোন ওয়েব ডিজাইনিং টিউটোরিয়ালের সাইটেই বুটস্ট্র্যাপের উপর টিউটোরিয়াল পাবেন।
বুটস্ট্র্যাপের ভার্শন ২ থেকেই রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইনের সুবিধা দিয়ে আসছে তারা। বর্তমানে ভার্শন ৩ বের হয়ে গেছে এবং বুটস্ট্র্যাপ ৪-এরও বেটা ভার্শন বের হয়ে গেছে। তবে, বুটস্ট্র্যাপ অস্বাভাবিক রকমের পপুলার হলেও, এ কথা এক বাক্যে বলে দেয়া যায় না যে এটা বাকি ফ্রেমওয়ার্কগুলোর চেয়ে ভাল। অন্যান্য ফ্রেমওয়ার্কের চেয়ে বুটস্ট্রাপের সবচেয়ে বড় সুবিধা এটাই যে এর টিউটোরিয়াল অন্যান্য ফ্রেমওয়ার্কগুলোর চেয়ে অনেক বেশি এভেইলেবল।
২. ফাউন্ডেশনঃ
বুটস্ট্র্যাপের মত ফাউন্ডেশনও একটি ওপেন সোর্স প্রজেক্ট এবং বেশ শক্তিশালী একটি সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক। এটাও ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপারদের ব্যবহারের জন্য বুটস্ট্র্যাপের মতই সহজ এবং রেসপন্সিভ একটি ফ্রেমওয়ার্ক। আর পাশাপাশি এর কিছু নিজস্ব কম্পোনেন্টও আছে, যেমন কি-স্ট্রোক, জয়-রাইড, ফ্লেক্স, ভিডিও ইত্যাদি।
এই ফ্রেমওয়ার্কটা মূলত রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইন এবং মোবাইল ফার্স্ট ডিজাইনের জন্যই ব্যবহৃত হয়। তবে, ওয়েব টেমপ্লেট, ইমেইল টেমপ্লেট, মোবাইল অ্যাপ ডিজাইন ইত্যাদিতে ব্যহারের জন্যও এটি যথেষ্ট ভাল একটি ফ্রেমওয়ার্ক।
ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার যার্ব ফাউন্ডেশনের মতে, পার্ফেক্ট ওয়ার্কফ্লো এর জন্য এটি বেস্ট ফ্রেমওয়ার্ক। আর যদি ফাউন্ডেশন সম্পর্কে শিখতে চান, তাহলে বলব, হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, ফাউন্ডেশনের টিউটোরিয়াল বুটস্ট্র্যাপের সমান এভেইলেবল নয়। তবে, এর পরও এর ডকুমেন্টেশন যথেষ্ট ভাল। সুতরাং, ফাউন্ডেশন শিখতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে বলে মনে হয় না।
৩. বালমাঃ
বালমাও একটি অসাধারণ ওপেন সোর্স সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক এবং যথেষ্ট সহজ আর টাইম সেভিং হওয়ায় দিন দিন পপুলারও হয়ে উঠছে ওয়েব ডিজাইনারদের মধ্যে। এই ফ্রেমওয়ার্কটি যেমন শিখতে সহজ, তেমনি ব্যবহার করতেও সহজ। ফাউন্ডেশনের মত বালমারও বেশ কিছু নিজস্ব কম্পোনেন্ট আছে যেমনঃ বক্স প্যানেল, ট্যাব, নেভিগেশন বার ইত্যাদি।
বালমার আরেকটি অসাধারণ ব্যাপার হল, এই ফ্রেমওয়ার্কটি একটি মডিউলার ফ্রেমওয়ার্ক। ফলে আপনি বালমার যেই অংশটুকু চান, শুধু মাত্র সেটুকু ইম্পোর্ট করেই কাজ করতে পারবেন। পুরো ফাইল ইম্পোর্ট করে আপনার ফাইলের সাইজ অযথা ভারি করার প্রয়োজন পড়বে না। আর বালমার ক্লাসগুলোও যথেষ্ট রিডেবল, আর তার জন্যে এগুলো মডিফাই করাও বেশ সহজ।
সত্যি কথা বলতে ব্যবহার করার জন্য বালমা খুবই ভাল একটি আন্ডাররেটেড ওপেন সোর্স সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক। কিন্তু বুটস্ট্র্যাপের খ্যাতির জন্যে আমরা অনেকেই বালমার ব্যাপারে ঠিকমত জানি না।
৪. ইউ আই কিটঃ
ইউ আই কিট ফ্রেমওয়ার্কটি যথেষ্ট আন্ডাররেটেড একটি ওপেন সোর্স ফ্রেমওয়ার্ক। এই ফ্রেমওয়ার্কটি ব্যবহারের জন্যও বেশ সহজ একটি ফ্রেমওয়ার্ক আর এর ফাংশনালিটিও অন্য কোন ফ্রেমওয়ার্কের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
বরং এই ফ্রেমওয়ার্কের সবচেয়ে সুবিধাজনক যে ব্যাপারটি রয়েছে সেটি হল, এটি অন্যান্য ফ্রেমওয়ার্কগুলোর চেয়ে লাইট ওয়েট। মডিউলার ফ্রেমওয়ার্ক হওয়ায় এর ক্ষেত্রেও আপনার শুধু মাত্র যেটুকু অংশ দরকার, সেটুকুই ইম্পোর্ট করতে পারেন।
ইউ আই কিট এর নিজস্ব কম্পোনেন্টের মধ্যে আছে এইচটিএমএল এডিটর, ফ্লেক্স ইত্যাদি। রেসপন্সিভ ওয়েব ডিজাইনিং, মোবাইল ফার্স্ট অ্যাপ এবং ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপ করতে ইদানিং অনেক ডেভেলপারই এই ফ্রেমওয়ার্কটি ব্যবহার করছেন।
৫. সিমান্টিক ইউ আইঃ
নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, এই ফ্রেমওয়ার্কটির মূল উদ্দেশ্য হল ওয়েব ডিজাইনকে আরও সিমান্টিক তথা অর্থবহ করে তোলা। সিমান্টিক ইউ আই এর মূল লক্ষ্য হল নেচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে কোড আরও বেশি রিডেবল করে তোলা, যাতে এর আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও মোডিফিকেশন সহজ হয়।
সিমান্টিক ইউ আই ফ্রেমওয়ার্কটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এর ওয়েব সাইটে আপনি ওয়েল অরগানাইজড ডকুমেন্টেশন পাবেন আর কিভাবে এটা শেখা শুরু করবেন তার উপরেও ভাল গাইডলাইন পাবেন এদের ওয়েব সাইটে।
৩ সহস্রাধিক থীমিং ভেরিয়েবল, ৫০ টির-ও বেশি ইউ আই কম্পোনেন্ট আর অর্গানাইজড ডকুমেন্টেশন সমৃদ্ধ এই ফ্রেমওয়ার্কটি ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার হিসাবে অবশ্যই একবার ট্রাই করা উচিত।
এক নজরে ফ্রেমওয়ার্কগুলোর পার্থক্যঃ
আমি আগেই বলেছি, বুটস্ট্র্যাপ সবচেয়ে বিখ্যাত, তার মানে এই নয় যে বাকি ফ্রেমওয়ার্কগুলো বুটস্ট্র্যাপের চেয়ে খারাপ। আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকলে এতক্ষনে অবশ্যই বুঝে গেছেন যে প্রতিটা ফ্রেমওয়ার্কেরই কোন না কোন ভাল দিক আছে। চলুন, নিচের ছবিতে এক নজরে দেখে নেই ফ্রেমওয়ার্কগুলোর পার্থক্যগুলোঃ
যাই হোক, আজকের মত এ পর্যন্তই, যারা ডেভেলপার হিসেবে নতুন নতুন জিনিস ট্রাই করতে পছন্দ করেন এবং অন্যান্য ফ্রেমওয়ার্কগুলো সম্পর্কে খুব ভাল করে জানতেন না, আশা করি তারা এতক্ষনে প্রস্তুত হয়ে গেছেন অন্যান্য ফ্রেমওয়ার্কগুলো ট্রাই করে দেখতে। ট্রাই করতে থাকুন এই ৫টি ওপেন সোর্স সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক, অর্জণ ওয়েব ডিজাইনের ভিন্ন অভিজ্ঞতা। কোনটা ব্যবহার করে কেমন লাগল তা অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আর, পোস্টটি অবশ্যই শেয়ার করবেন, যাতে আপনার অন্যান্য বন্ধুরাও আপনার মাধ্যমে জানতে পারেন এই ফ্রেমওয়ার্কগুলো সম্পর্কে।
Leave a Reply