প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১১০টি লোক স্ট্রোকের শিকার হয়ে থাকে। এর মাঝে ৬৫ লক্ষ মানুষ স্ট্রোকে মৃত্যু বরণ করে থাকে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি যে, স্ট্রোকে আক্রান্ত ১১০ কোটি মানুষের অধিকাংশই স্ট্রোকের ব্যাপারে কিছু ভুল বিশ্বাস লালণ করে থাকেন। আসুন, সেগুলো সম্পর্কে জানা যাক-
স্ট্রোক সম্পর্কে ভুল তথ্য ও ভুল বিশ্বাস
আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই জেনেছেন যে স্ট্রোক কি আর কিভাবে হয়, স্ট্রোকের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্র্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত। এবার আসুন, স্ট্রোক সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের কিছু ভুল ধারণা সম্পর্কে জানা যাক-
ভুল তথ্য – ভুল বিশ্বাস-১: স্ট্রোক শুধুমাত্র বয়স্কদের হয়
সত্য হচ্ছে বয়স্ক রোগীদের স্ট্রোকের প্রবণতা বেশি। কিন্তু প্রায় ২৫ শতাংশ স্ট্রোক কম বয়সী ব্যক্তিদের হয়ে থাকে, বিশেষত তরুণ-তরুণীদের। বিশ্ব বিখ্যাত স্ট্রোক চিকিৎসক ডাঃ সিমিওনেস্কু বলেছেন, তরুণ-তরুণীদের বেশিরভাগই হৃদরোগ বা রক্ত জমাট বাঁধার ঝামেলায় পড়ে থাকেন। অর্থাৎ, রক্তে ব্লক বাঁধিয়ে থাকেন।
ভুল তথ্য – ভুল বিশ্বাস-২: স্ট্রোক অনেক কষ্টদায়ক
সত্য হচ্ছে স্ট্রোকের রোগী ব্যথা অনুভব করতেও পারেন, আবার না’ও করতে পারেন। এমনকি, অধিকাংশ স্ট্রোকের রোগী কোনও ব্যথাই অনুভব করেন না। আসলে ব্যথা স্ট্রোকের কোনও সাধারণ লক্ষণ নয়।
যখন মস্তিষ্কের কোনও রক্তনালী ফেটে যায়, আর হেমোরেজিক স্ট্রোক ঘটে, তখন রোগী মাথাব্যথা অনুভব করতে পারেন। তবে বেশিরভাগ স্ট্রোক – মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে – ব্যথা সৃষ্টি করে না।
ভুল তথ্য – ভুল বিশ্বাস-৩: স্ট্রোক করলে সহজে বোঝা যায় না
সত্য হচ্ছে কয়েকটি টেস্টের মাধ্যমে সহজেই স্ট্রোক ধরা পড়ে। তাছাড়া, টেস্ট করার আগেই কেউ স্ট্রোক করেছে কিনা সেটা বোঝার একটা সহজ সূত্র আছে। সূত্রটি হচ্ছে BE FAST যার পুরো মিনিং হলো –
- B for Balance: রোগী যদি ব্যালেন্স রাখতে পারছে না বলে মনে হয়, তবে ধরে নিতে পারেন স্ট্রোক করেছে।
- E for Eyes: রোগী একচোখে কিংবা উভয় চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করে, তবে বুঝে নিতে পারেন তার স্ট্রোক ঘটেছে।
- F for Facial: রোগীর face যদি ঝুলে পড়ে কিংবা সামান্য বা বেশি পরিমাণে বাঁকা হয়ে যায়, তবে স্বাভাবিকভাবেই এটিকে স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- A for Arm: রোগীর বাহু যদি দূর্বল হয়, বিশেষত যদি হাত বা বাহু মাথার উপর উঠাতে এবং ধরে রাখতে সক্ষম না হয়, তবে স্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়।
- S for Speech: রোগীর ক্ষেত্রে যদি বাক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়, অর্থাৎ কথা বলতে যদি সমস্যা হয়, তবে স্ট্রোক হয়েছে বলেই ধরে নেয়া যায়।
- T for Time: উপরোক্ত যে কোন একটি কিংবা একাধিক সমস্যা দেখা দিলেই সময় নষ্ট না করে রোগীকে ডাক্তার দেখাতে হবে, কিংবা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
ভুল তথ্য – ভুল বিশ্বাস-৪: স্ট্রোক বংশগত নয়
সত্য হচ্ছে যেসব শারীরিক সমস্যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, যেমন যে কোনও ধরণের হৃৎরোগ, ব্লাড ক্লোট ডিজঅর্ডার কিংবা কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা বংশগত হতে পারে এবং হয়ে থাকে।
ভুল তথ্য – ভুল বিশ্বাস-৫: ছোট-খাট স্ট্রোকের চিকিৎসা না হলেও হয়
সত্য হচ্ছে ছোট হোক আর বড় হোক, সমস্ত স্ট্রোকেরই চিকিৎসা করা দরকার। যে কোনও ছোট স্ট্রোক বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এমনকি, ছোট স্ট্রোকের যথাযথ চিকিৎসা করা না হলে সেটি বারবার রিপিট হতে পারে। আরো মনে রাখতে হবে, ছোট স্ট্রোক যদি সঠিক স্থানে অবস্থিত হয় তাহলে আপনার মস্তিষ্কের ক্ষমতার বড় ঘাটতি হতে পারে।
ভুল তথ্য – ভুল বিশ্বাস-৬: অ্যাসপিরিন দিয়ে স্ট্রোকের চিকিৎসা করা যায়
সত্য হচ্ছে সর্বোত্তমভাবে এটি স্বীকৃত যে ইস্কেমিক স্ট্রোক নিরাময়ের জন্য অ্যাসপিরিন কিছুই করতে পারে না। অ্যাসপিরিনের সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, এটি হেমোরেজিক স্ট্রোকের সমস্যাটাকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যায়।
ভুল তথ্য – ভুল বিশ্বাস-৭: উপসর্গ চলে গেলে ডাক্তার দেখানোর দরকার নেই
সত্য হচ্ছে উপসর্গ থাক আর চলে যাক, উভয় অবস্থাতেই ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। যদি উপসর্গ চলেও যায়, তবুও একটি সাধারণ স্ট্রোক আপনাকে একটি বড় স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে। কাজেই একটি বড় স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে ছোট স্ট্রোকের লক্ষণ চলে গেলেও ডাক্তার দেখানো উচিৎ।
ভুল তথ্য – ভুল বিশ্বাস-৮: স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায় না
সত্য হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়। আপনি যদি ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তবে অনেকাংশেই স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এমনকি, খাদ্যাভ্যাশ ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমেও স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়।
ভুল তথ্য – ভুল বিশ্বাস-৯: স্ট্রোকের পরে আর বাঁচন নাই
স্ট্রোক করার পর সঠিক চিকিৎসা নিয়ে অসংখ্য রোগী বেঁচে আছে এবং ভবিষ্যতেও বেঁচে থাকবে। বর্তমানে স্ট্রোকের নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বহু ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো অবলম্বণের মাধ্যমে একজন রোগী দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভাল থাকতে পারেন। পুনর্বাসনের সাথে রোগীদের একটি ভাল শতাংশ আসলে বেশ ভালভাবে কাজ করতে এবং পূর্ণ জীবনযাপন করতে সক্ষম।
শেষ কথা
স্ট্রোকে প্রতি বছর বহু মানুষ মৃত্যু বরণ করলেও এটিকে সহজেই প্রতিহত করা সম্ভব, বিশেষত মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে। কারণ, যেসব স্ট্রোকের রোগী মারা যায় কিংবা গুরুতরো অবস্থায় পড়ে যায়, সেসব রোগীর ক্ষেত্রে কিছু মিসইনফরমেশন ও মিসআন্ডাস্ট্যান্ডিং দায় বলে চিকিৎসকরা মনে করে থাকেন।
Working at Walmart says
Great post to let the people know everything about stroke!