আজকাল শহর থেকে শুরু করে গ্রাম বাংলার লোকজনও এনজিওগ্রাম এর সাথে পরিচিত। কারণ, গ্রাম হোক আর শহর হোক, সবখানেই হরহামেশা হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটছে। আর হার্টে কোনও সমস্যা হলেই যে ডাক্তাররা এনজিওগ্রাম করতে বলেন, তা সবারই জানা। যাদের জানা নেই, তাদের জন্যে এনজিওগ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে আমাদের আজকের পোস্ট।
এই পোস্টে আমরা জানবো এনজিওগ্রাম কি, কেন করা হয়, কিভাবে করা হয়, এনজিওগ্রাম এর রিস্ক ফ্যাক্টর এবং সাইড ইফেক্টসহ আরো অনেক কিছু।
এনজিওগ্রাম কি?
সহজ ভাষায় এনজিওগ্রাম হচ্ছে রক্তনালীর (blood vessels) এক্স-রে। বিশেষ করে, হার্টের ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। সুতরাং, আমরা বলতে পারি হার্টের রক্তনালীর ভেতরের অবস্থা দেখতে যে এক্স-রে ইমেজিং করা হয়, তাকে এনজিওগ্রাম বলে। সাধারণত, হার্টের ধমনী বা শিরার (arteries or veins) ভেতরের অবস্থা, বিশেষত রক্তপ্রবাহ দেখার জন্যে এনজিওগ্রাম করা হয়।
তবে, এনজিওগ্রাম যে শুধু হার্টের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, তা কিন্তু নয়। বরং, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভেতরের অবস্থা জানার জন্যেও এনজিওগ্রাম করা হয়। তবে, হার্টের ক্ষেত্রেই এটির ব্যবহার বেশি। এছাড়া, ব্রেন, বাহু এবং পাঁয়ের বেলায় এনজিওগ্রাম করা হয়ে থাকে।
এনজিওগ্রাম রিপোর্টের মাধ্যমে ডাক্তাররা বুঝতে পারেন শরীরের কোনও বিশেষ অঙ্গের ভেতরের ব্লাড ভেসেল বা রক্তনালীর মধ্যে রক্ত প্রবাহিত হতে কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা। বিশেষত, রক্তনালীতে প্লাক ডিপোজিট আছে কিনা, রক্তনালী শুকিয়ে গিয়েছে কিনা, রক্তে ক্লোট হয়েছে কিনা, মোট কথা রক্তনালীতে রক্ত প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে কিনা।
এনজিওগ্রাম প্রসিডিউর দুই ধরণের হতে পারে। ডায়াগনোস্টিক এবং থেরাপিউটিক। আমাদের শরীরের ধমনী সিস্টেমের ব্লকেজ পরীক্ষার জন্যে এটিকে গোল্ডেন ডায়াগনোস্টিক বলা হয়ে থাকে।
ইসিজি ও এনজিওগ্রামের পার্থক্য
ইসিজি সম্পর্কে সমস্ত কিছু নিয়ে বিস্তারিত একটি লেখা আমি আগেই লিখেছিলাম। ইসিজি এবং এনজিওগ্রাম, দু’টোই হার্টের সমস্যা চিহ্নিত করার জন্যে করা হয়ে থাকে। দু’টোর মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে ইসিজি দিয়ে হার্টের ইলেকট্রিক্যাল অ্যাক্টিভিটি বা হার্ট বিট পরীক্ষা করা হয়। আর এনজিওগ্রাম দিয়ে হার্টের ব্লকেজ বা প্লাক পরীক্ষা করা হয়।
এনজিওগ্রাম কেন প্রয়োজন?
রোগীর ক্ষেত্রে ঠিক কী ধরণের ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে এনজিওগ্রাম ডাক্তারকে সহযোগীতা করে। অনেক প্রয়োজনেই এনজিওগ্রাম করতে হতে পারে। যেমন-
- হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের ইন্টারনাল কোনও পরিবর্তণ ঘটেছে কিনা, তা যাছাই করতে এনজিওগ্রাম প্রয়োজন হয়।
- হার্টের যে কোনও ধরণের অস্বাভাবিকতা খুঁজে বের করতে ডাক্তাররা রোগীর এনজিওগ্রাম করে থাকেন।
- ধমনীর ঠিক কোন স্থানে প্লাক হয়েছে তা জানা এবং রক্তপ্রবাহ কতোটা স্লো তা ডিটেক্ট করার জন্যে এনজিওগ্রাম প্রয়োজন।
যেসব রোগ নির্ণয়ের জন্যে এনজিওগ্রাম করা হয়
- Atherosclerosis – স্ট্রোক কিংবা হার্ট অ্যাটাক।
- Peripheral arterial disease – পায়ের মাংশপেসীতে রক্তপ্রবাহের কমতি।
- Angina – হার্টের পেশী বা ধমনীতে রক্তপ্রবাহে বাধা।
- A brain aneurysm – ব্রেনের রক্তনালীতে ষ্ফীতি।
- Blood clots or a pulmonary embolism – ফুসফুসে ব্লকেজ।
- Renal artery stenosis – কিডনিতে ব্লকেজ।
কিভাবে বুঝবেন আপনার এনজিওগ্রাম করা প্রয়োজন?
- আপনার যদি করোনারি আর্টারি (coronary artery) ডিজেজ এর লক্ষণ থাকে। যেমন, বুক ব্যাথা (Chest Pain); যেটাকে Angina বলে।
- ঘাড়, বাহু, চোয়াল বা বুকে যদি এমন ব্যাথা থাকে যার কোনও কারণ খুঁজে না পাওয়া যায়। অর্থাৎ, অন্যান্য টেস্ট করার পরও ডাক্তার যদি বুঝতে না পারেন কি কারণে উপরোক্ত অর্গানগুলোতে ব্যথা হচ্ছে।
- আপনার যদি জন্মগতভাবে হার্টের সমস্যা বা ক্রুটি থাকে, যেটাকে মেডিকেলের ভাষায় Congenital Heart Disease বলে।
- আপনি যদি নি:শ্বাস নিতে কষ্ট বোধ করেন, অক্সিজেনের স্বল্পতা অনুভব করেন।
- বুকে যদি বড় ধরণের কোনও আঘাত পেয়ে থাকেন। এক্সিডেন্টের কারণে হতে পারে, কিংবা মারামারির জন্যে।
- হার্ট অ্যাটাক কিংবা হার্ট ফেল করার মতো লক্ষণ দেখা দিলে।
- হার্টের বাল্বে যদি কোনও ধরণের সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়াও অন্য কোনও কারণে যদি আপনার কোনও ধরণের সার্জারি করতে হয়, যেটা হার্টের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তবু সেক্ষেত্রেও এনজিওগ্রাম করার প্রয়োজন হয়। কারণ, যে কোনও বড় ধরণের সার্জারির ক্ষেত্রে রোগীর হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবণা থাকে।
এনজিওগ্রাম কত প্রকার ও কি কি?
শরীরের কোন অর্গানের এনজিওগ্রাম করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে এটি বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। তার মাঝে যে ধরণগুলো সবচেয়ে বেশি পরিচিত সেগুলো হলো-
- Coronary Angiogram – হার্ট এবং তার আশে-পাশের রক্তনালী পরীক্ষার জন্যে Coronary Angiogram করা হয়।
- Cerebral angiography – ব্রেনের চারপাশের রক্তনালীর অবস্থা জানতে Cerebral angiography করা হয়ে থাকে।
- Pulmonary angiography – ফুসফুসের রক্তনালী পরীক্ষা করতে Pulmonary angiography করা হয়।
- Renal angiography – কিডনীর রক্তনালী পরীক্ষা করার জন্যে Renal angiography করা হয়।
উপরোক্ত এনজিওগ্রাপিগুলোর প্রকারগুলো মূলত রোগের উপর নির্ভরশীল। আরো কিছু এনজিওগ্রাফির ধরণ রয়েছে, টেকনিক্যাল দিক থেকে যেগুলোর নাম ভিন্ন ভিন্ন হয়। সেগুলো হলো-
- Digital Subtraction Angiography – সংক্ষিপ্ত রূপ DSA। এটি করতে এক ধরনের রেডিওলোজি ব্যবহার করা হয়।
- Magnetic Resonance Angiography – এটিকে সংক্ষেপে এমআরআই বলা হয়। এমআরআই সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জেনে নিন।
- Computed Tomography Angiography – সংক্ষেপে এটিকে CTA বলে। আর এটি করা হয় রক্ত ধমনীতে এক ধরণের ইনজেকশন পুশ করার মাধ্যমে।
- Pulmonary Angiogram – কুঁচকি বা বাহুতে ইনজেকশন দিয়ে এটি করা হয়। কখনো কখনো এই পরীক্ষার ফ্লুরোস্কোপি ব্যবহার করা হয়।
- Radionuclide Angiogram – এটি এক ধরণের নিউক্লিয়ার মেডিসিন টেস্ট, যাতে রেডিওলোজি ব্যবহার করা হয়।
- Renal Angiogram – রক্তনালীতে ক্যাথেটার নামক এক ধরণের ফ্লেক্সিবল টিউব ব্যবহার করে এটি সম্পন্ন করা হয়।
কিভাবে এনজিওগ্রাম করা হয়?
এনজিওগ্রাম কিভাবে করা হয় তা নির্ভর করে শরীরের কোন অঙ্গের এনজিওগ্রাম করা হবে এবং কোন পদ্ধতিতে করা হবে তার উপর। তারপরও, কমোন যে বিষয়গুলো রয়েছে, আমরা সেগুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করেছি।
এনজিওগ্রাম করার আগে
ব্লাডের ক্লোটিং ক্ষমতা যাছাই করার জন্যে এনজিওগ্রাম করার আগে রোগীর কিছু ল্যাব ওয়ার্কের প্রয়োজন হয়। যেদিন এনজিওগ্রাম করা হবে, তার আগের রাত্রে নিম্নের কাজগুলো করতে হবে।
মেডিকেশন
- আপনি যদি অন্যান্য রোগের জন্যে ঔষধ খেয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই এনজিওগ্রাম করার পূর্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। নিজ থেকে ঔষধ বন্ধ করবেন না। আবার, নতুন কোনও ঔষধও সেবন করবেন না। নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন-
- আগের রাতে অ্যাসপিরিন এবং অ্যাসপিরিন জাতীয় কোনও ঔষধ খাবেন না।
- এনজিওগ্রাম করার ৭২ ঘন্টা আগে থেকে ডিপাইরিডামল বা ওয়ারফারিন জাতীয় কোনও ঔষধ খাবেন না।
- ৫ দিন আগে থেকে Plavix এবং এ জাতীয় কোনও ঔষধ খাবেন না।
যদি ডায়াবেটিস থাকে
- আপনি র্যাপিড অ্যাক্টিং কিংবা শর্ট অ্যাকটিং কোনও ইনসুলিন নিয়ে থাকেন, তবে যেদিন এনজিওগ্রাম করবেন, সেদিন ইনসুলিন নেবেন না।
- যদি লং-অ্যাক্টিং ইনসুলিন নিয়ে থাকেন, তবে সেটি কন্টিনিউ করতে পারেন।
- আপনি যদি NPH কিংবা Detemir নিয়ে থাকে, তবে হাফ ডোজ নেবেন।
- যদি আপনি ৭০/৩০ ইনসুলিন নিয়ে থাকেন এবং আপনার ব্লাড সুগার ২০০ এর চেয়ে বেশি হয়, তবে সকালে হাফ ডোজ নিতে পারেন। কিন্তু, যদি ব্লাড সুগার ২০০ এর নিচে হয়, তবে সকালে ইনসুলিন নেবেন না।
খাওয়া ও পান করা
- প্রায় সকল রোগীর ক্ষেত্রেই মধ্য রাতের পর থেকে ভারী খাবার বন্ধ করে দেয়া হয়। সাধারণ হালকা বা স্ন্যাক্সও খেতে নিষেধ করেন ডাক্তাররা।
- যেদিন এনজিওগ্রাম করা হবে, সেদিন সকালের নাস্তায় শুধুমাত্র পাতলা লিকুইড জাতীয় কোনও কিছু খাওয়া যেতে পারে। পাতলা লিকুইড বলতে চা, কফি এবং এ জাতীয় খাবার।
- যেসব রোগীর ক্ষেত্রে অ্যানেসথিয়া ব্যবহার করা হবে, তাদের ক্ষেত্রে রাত থেকেই সকল ধরণের খাবার গ্রহণ নিষেধ।
এনজিওগ্রামের প্রস্তুতি
রোগীর দিক থেকে প্রস্তুতি হিসেবে উপরোক্ত কাজগুলোই যথেষ্ট। এর বাইরে যেসব প্রস্তুতি রয়েছে, সেগুলো হাসপাতাল বা ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের দিক থেকে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। যেমন-
ডাক্তারের দিক থেকে
- প্রয়োজনীয় সব মেডিসিনের ব্যবস্থা রাখা।
- কিডনী ফাংশন দেখার জন্যে যাবতীয় রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
নার্সের দিক থেকে
- রোগীর শরীর থেকে সব ধরণের মেটালিক জিনিসপত্র খুলে রাখা।
- রোগীর ওজন, বডি টেম্পারেচার, ব্লাড প্রেশার এবং হার্ট রেট চেক করা।
এনজিওগ্রামের রিস্ক ফ্যাক্টর
এনজিওগ্রাম টেস্ট শরীরের উপর এক ধরণের আক্রমণাত্মক প্রসিডিউর। কাজেই, এর কিছু রিস্ক রয়েছে। সম্ভাব্য যেসব রিস্ক ও কমপ্লিকেশন রয়েছে, সেগুলো হলো-
হেমাটোমা: ত্বকের নিচে রক্ত জমা কিংবা ক্ষত হওয়াকে হেমাটোমা বলে। এনজিওগ্রামের সবচেয়ে কমোন সমস্যা এটি। তবে, এটি তেমন জটিল কোনও সমস্যা নয়। এনজিওগ্রাম করার এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে হেমাটোমা ভাল হয়ে যায়।
অ্যারিথমিয়া: অনিয়মিত হার্ট বিট বা হৃৎস্পন্দনকে অ্যারিথমিয়া বলে। এনজিওগ্রাম করার সময় হার্টে ক্যাথেটার বা এক্স-রে ডাই কিংবা কন্ট্রাস্ট ইনজেকশ দেয়ার কারণে সাধারণত অ্যারিথমিয়া হয়ে থাকে।
অ্যালার্জি: এক্স-রে ডাই বা কন্ট্রাস্টের কারণে কারো কারো ক্ষেত্রে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। তবে, সাধারণ ঔষধের দ্বারাই এটি ভাল হয়ে যায়।
হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক: রক্ত ধমনীর দেয়ালে ব্লাড ক্লোট বা ফ্যাটি প্লাক থাকলে ক্যাথেটারের মাধ্যমে সেটি অপসারিত বা নির্মূল হয়ে যায়। তবে, এই ক্লোট অনেক সময় হার্ট কিংবা ব্রেনে ব্লাড ফ্লো বন্ধ করে দিতে পারে এবং স্ট্রোক কিংবা হার্ট অ্যাটাকের মতো বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে, ভয়ের কিছু নেই। কারণ, এটা পুরো বিশ্বে প্রতি ১ হাজার জনে মাত্র ১ জনের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে।
মৃত্যু: যাদের আগে থেকেই ফুসফুস কিংবা কিডনী সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এনজিওগ্রাম করার পর মৃত্যুর সামান্য সম্ভাবণা থাকে। এটিও হাজারে ১ জনের ক্ষেত্রে হতে দেখা যায়।
অন্যান্য: কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে এক্স-রে ডাইয়ের কারণে কিডনী ড্যামেজ হতে পারে। কিংবা, রেডিয়েশন এক্সপোজারের কারণে পাংচার সাইটে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
উপরোক্ত সবগুলো রিস্কের ক্ষেত্রেই একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, অধিংকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এগুলোর কোনটিই হয় না। কাজেই, এনজিওগ্রাম করতে গিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই।
এনজিওগ্রাম করতে কি কষ্ট হয়?
এনজিওগ্রাম করতে সাধারণত তেমন কোনও কষ্ট হয় না। প্রসিডিউর করার সময় ডাক্তার অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করতে পারেন। কিছু লোকের ক্ষেত্রে সিডেটিভ বা রিলাক্সিন টাইফের ঔষধ দরকার হতে পারে। এরপরও, যদি কেউ ব্যথা অনুভব করে, তবে তার জন্যে মেডিসিনের ব্যবস্থা আছে।
রেডিয়েশন রিস্কের কারণে কি ভয় পাওয়া উচিৎ?
এক কথায়, না। কারণ, আপনাকে রেডিওশনের আন্ডারে থাকতে হবে খুবই সামান্য সময়। আর এনজিওগ্রাম করতে এখন অনেক উন্নত ও আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, যা রেডিয়েশন রিস্ককে কমিয়ে আনে প্রায় পুরোটাই। বর্তমান সময়ের এনজিওগ্রাম ইকুইপমেন্ট এতই আধুনিক যে, এর রেডিয়েশন অনেকটা সূর্যের আলো বিকিরণের মতো, যা আপনি অনায়াসেই সহ্য করতে পারবেন। আপনার মনে হবে, আপনি রোদ পোহাচ্ছেন।
এনজিওগ্রামের পর কখন ডাক্তার দেখাবেন?
- বাহু বা কুঁচকিতে যদি ব্লিডিং হয়।
- পেইন কিলার নেয়ার পরেও যদি ক্যাথেটার সাইডে ব্যথা না কমে।
- আপনার ত্বক যদি লাল বা গরম হয়ে যায়।
- যদি ত্বকের উপর ইনফেকশনের সম্ভাবণা দেখেন।
- প্রসিডিউরের সময় যে বাহু বা পাঁ ব্যবহার করা হয়েছে, যদি তাতে টেম্পারেচার কম বা বেশি অনুভব করেন।
এনজিওগ্রামের ফলাফল
এনজিওগ্রামের মূল ফলাফল হচ্ছে এটি ডাক্তারকে ডিটেক্ট করতে সাহায্য করবে যে, আপনার রক্তনালীর (blood vessels) কোথায়, কি সমস্যা রয়েছে। এটা হতে পারে-
- আপনার করোনারি ধমনীত ঠিক কয়টি ব্লকেজ তৈরি হয়েছে কিংবা কয়টি ফ্যাটি প্লাক (atherosclerosis) আছে।
- আপনার রক্তনালীর ঠিক কোথায় ব্লকেজ হয়েছে তা এক্সাটলি চিহ্নিত (Pinpoint) করা।
- পূর্বের করোনারি বাইপাস সার্জারির রেজাল্ট চেক করে দেখা।
- হার্ট এবং রক্তনালীর ব্লাড ফ্লো চেক করা।
এনজিওগ্রামের উপরোক্ত রেজাল্ট ডাক্তারকে সাহায্য করবে এটা জানতে যে রোগীর অবস্থা কতটা খারাপ। আর কিভাবে রোগীর ট্রিটমেন্ট করতে হবে। অবস্থার উপর নির্ভর করে ডাক্তার রোগীকে রিং বসানোর পরামর্শ দিতে পারেন। কিংবা, বাইপাস সার্জারি করতে বলতে পারেন।
বাংলাদেশে এনজিওগ্রামের খরচ
বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এনজিওগ্রামের খরচে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এমনকি, ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোর ক্ষেত্রেও কিছু তারতম্য আছে। তবে, নানা ধরণের এনজিওগ্রাম করতে কমোনলি যে খরচ হয়, নিচে আমরা সেগুলো উল্লেখ করলাম।
- Coronary Angiogram ———— ১৫, ০০০ টাকা।
- Coronary Angio + Scoring ———— ১৬, ০০০ টাকা।
- Cerebral Angiogram ———— ১১, ৫০০ টাকা।
- Carotid Angiogram ———— ১১, ৫০০ টাকা।
- Renal Angiogram ———— ৯, ০০০ টাকা।
- Congenital Angiogram ———— ১৩, ০০০ টাকা।
- Peripheral Angiogram ———— ১৫, ০০০ টাকা।
- Coronary Angiogram + Peripheral Angiogram ———— ২৫, ০০০ টাকা।
Leave a Reply