উইন্ডোজ ১১ লঞ্চ হওয়ার পর এ যাবৎ অনেকেই এটি ব্যবহার করেছেন এবং আরো অনেকে ১১-তে আপডেট করতে চাইছেন। কিন্তু, যারা ইতিমধ্যেই আপডেট করেছেন, তাদের কাছ থেকে উইন্ডোজ ১১ এর সমস্যা সম্পর্কে নানা রকম তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও অপারেটিং সিস্টেম অ্যানালাইজাররা উইন্ডোজ ১১ এর অসুবিধা সম্পর্কে কথা বলেছেন। উভয় পক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আমরা এর ১১টি অসুবিধা বা সমস্যা নিয়ে এই পোস্টটি তৈরি করেছি।
তবে, একটা কথা আগেই বলে রাখা ভাল যে, সমস্যা চিহ্নিত করার উদ্দেশ্য কিন্তু এই নয় যে আপনাকে উইন্ডোজ ১১ ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা। কিংবা, যারা আপডেট করতে চাইছেন, তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা। বরং, উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনাকে সচেতন করা, জানিয়ে দেয়া। যেমন, এর আগে আমরা আপনাকে উইন্ডোজ ১১ এর সকল ফিচার সম্পর্কে জানিয়েছিলাম।
যে কোনও প্রোডাক্ট, হোক সেটা ফিজিক্যাল কিংবা ডিজিটাল, ব্যবহার করার আগে সেটার ফিচার সম্পর্কে জেনে নেয়া ভাল। সেই সাথে, সেটির ভাল-মন্দ, বিশেষ করে নেগেটিভ সাইডগুলো জেনে রাখা প্রয়োজন। তো চলুন, উইন্ডোজ ১১ এর নেগেটিভ বিষয়গুলো জেনে নেয়া যাক।
উইন্ডোজ ১১ এর সমস্যা
সমস্যা-১: উইন্ডোজ ১১-তে বাগ (bugs) আছে
Bug হচ্ছে মূলত যে কোনও সফটওয়্যারের error, যেটাকে প্রোগ্রামিং এরর বলা হয়। এটা এক ধরণের Flaw বা Fault যা সফটওয়্যার বা অপারেটিং সিস্টেমকে সম্পূর্ণ সঠিকভাবে কাজ করতে বাধাগ্রস্থ করে। উইন্ডোজ ১১-তে এখনো অনেক বাগ রয়েছে যা ফিক্স করা প্রয়োজন। কারণ, এ বাগগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নতুন এই অপারেটিং সিস্টেমকে প্রভাবিত করে।
যদিও নতুন অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে বাগ থাকা স্বাভাবিক, তবু সেগুলো চিহ্নিত করা এবং সলভ্ করা জরুরি। সে কারণেই, মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম টিম উইন্ডোজ ১১ এর বাগ বের করা, সেগুলো ফিক্স করার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ: উইন্ডোজ ১১-তে এখনই সুইচ না করে কিছুদিন অপেক্ষা করুন। অপারেটিং সিস্টেমটি পুরোপুরি বাগমুক্ত হওয়া পর্যন্ত উইন্ডোজ ১০ই ব্যবহার করুন।
সমস্যা-২: Start Menu মধ্যখানে
উইন্ডোজ ১১ এর Start Menu উইন্ডোজ ১০ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং রিডিজাইনড্। উইন্ডোজ ১০-এ এটি ছিল বাম পাশে যেখানে ১১-তে এটিকে কম্পিউটার স্ক্রিণের সেন্টারে রাখা হয়েছে। এতে করে উইন্ডোজ ১০-এর রেগুলার ইউজারদের জন্যে এটি কিছুটা টাইম কিলার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেই সাথে, এই Start Menu এর ডিজাইনও নতুন হওয়ায় ব্যবহারকারীদেরকে প্রথম প্রথম একটু বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আর যারা এর আগে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করেননি, তাদের জন্যে তো একেবারেই নতুন। যাইহোক, এটি খুব একটা বড় সমস্যা নয়। ব্যবহার করতে করতে এক সময় সবাই এই স্টার্ট মেন্যুটির সঙ্গে নিশ্চয়ই অভ্যস্থ হয়ে যাবে।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ: Start Menu নিয়ে বেশি ভাবনার দরকার নেই। এর ব্যবহারের দিকে ফোকাস দিন। ধীরে ধীরে অভ্যস্থ হয়ে যাবেন।
সমস্যা-৩: সিস্টেম রিকোয়্যারমেন্ট (System Requirements)
সত্যি বলতে গেলে উইন্ডোজ ১১ এর সিস্টেম রিকোয়্যারমেন্ট কোনও সমস্যাই নয়। কিন্তু, এটি কারো কারো ক্ষেত্রে উইন্ডোজ ১১ ব্যবহারে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা, একজন ব্যবহারকারী যদি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার রিকোয়্যারমেন্ট ফুলফিল করতে না পারে, তবে সে উইন্ডোজ ১১ ব্যবহার করতে পারছে না। সেক্ষেত্রে, তাকে হয় কম্পিউটার আপগ্রেড করে নিতে হবে, নতুবা নতুন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার ইচ্ছাটা বাদ দিতে হবে।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ: আপনার পিসি যদি ৫ বছরের চেয়ে বেশি পুরনো না হয়, তবে আশা করা যায় যে এটি নতুন রিকোয়্যারমেন্ট মিট করতে পারবে। আর উপরে ভূমিকার ২য় প্যরায় লিংক করা “উইন্ডোজ ১১ এর সকল ফিচার” লেখাটি পড়ে নিন। সেখানে সিস্টেম রিকোয়্যারমেন্ট দেয়া আছে, দেখে নিন।
সমস্যা-৪: মাইক্রোসফট্ অ্যাকাউন্ট লাগবেই
উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টিকে বিভিন্নভাবে এড়িয়ে যাওয়া যেতো। উইন্ডোজ ইনস্টলেশন এবং ইউজের ক্ষেত্রে এটা তেমন কোনও সমস্যাই ছিল না। কিন্তু, উইন্ডোজ ১১ ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই একটি মাইক্রোসফট্ অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। যদিও মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম খুবই সহজ, তবু অনেকের ক্ষেত্রেই এটি একটি বাড়তি ঝামেলা।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ: ঝামেলা মনে হলেও মাইক্রোসফট্ অ্যাকাউন্টের ৯টি দারুণ সুবিধা রয়েছে। সুতরাং, একটি অ্যাকাউন্ট খুলেই নিন।
সমস্যা-৫: সার্চ মেন্যু (Search Menu) সমস্যা
উইন্ডোজ ১০সহ পূর্ববর্তী সকল অপারেটিং সিস্টেমেই Search Menu টি Start Menu এর ভেতরেই ছিল। অর্থাৎ, কোন কিছু সার্চ করার জন্যে আমাদেরকে আলাদা করে সার্চ অপশন খুঁজতে হতো না। উইন্ডোজ ১১-তে Search Menu টিকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এতে যদিও খুব একটা সমস্যা হয় না, তবু আলাদা হওয়ার কারণে ২টা ক্লিক বেশি দিতে হয়।
কোনও অ্যাপ বা অন্যকিছু সার্চ করার জন্যে এখন আলাদা সার্চ বারে ক্লিক করতে হয়। আর তখন সার্চ বারটি ওপেন হয় এবং সেখানে লিখতে হয়। এটাকে যদিও উইন্ডোজ ১১ এর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না, তবু এই অপূর্ণতা অনেক ব্যবহারকারীই ভাল লাগেনি বলে জানা গিয়েছে।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ: Search Menu নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। এটা আলাদা হওয়ায় কিছু সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে, দেখতেও সুন্দর লাগছে।
সমস্যা-৬: এখনো কোনো অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ নেই
Windows ১১ এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বিষয়গুলো ছিলো, সেগুলোর অন্যতম হলো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ। মাইক্রোসফট্ এর নিজস্ব অ্যাপ স্টোর আগে থেকেই ছিল। নতুন ভার্সণে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলো তারা অনেক আগেই। কিন্তু, লঞ্চিং এর সময় মাইক্রোসফট্ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সুবিধা চালু করেনি। এমনকি, এত দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত যুক্ত করতে সমর্থ হয়নি।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ: অপেক্ষা করুন; মাইক্রোসফট্ যেহেতু কথা দিয়েছে, সেহেতু অবশ্যই তারা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ অ্যাড করবে।
সমস্যা-৭: ডার্ক মোড আগের মতো ডার্ক নেই
উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাদের কম্পিউটারে ডার্ক মোড ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। আমি নিজেও ডার্ক মোড ব্যবহার করি এবং এনজয় করি। কিন্তু উইন্ডোজ ১১-তে ডার্ক মোডটাকে অনেক বেশি কালারফুল করে ফেলা হয়েছে। যারফলে, এটি আগের মতো আর ডার্ক নেই।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ: ডার্ক মোড আগে পর্যায়ে না থাকলেও এর মাঝে Start Menu টাকে অনেক সুন্দর দেখায়। কারণ, এটি আগের ভার্সণের চেয়ে অনেক বেশি ট্রান্সপারেন্ট।
সমস্যা-৮: টাস্কবার (Taskbar) কাস্টমাইজেশন
Windows ১১-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবী ছিল এর ইন্টারফেসটিকে আরও সহজ করা। কিন্তু, কিছু দিক আছে যেখানে এটিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অনেক ব্যবহারকারী পাওয়া গিয়েছে যারা এতে খুশি নয়। তাদের ভাষ্যমতে, বর্তমান ভার্সণের টাস্কবার খুব একটা কাস্টমাইজযোগ্য নয়। এমনকি, এটিকে এখন আর আগের মতো স্থান পরিবর্তণ করানো যায় না। আগে যেমন মাউসের মাঝখানের বোতাম টিপে এটিকে স্ক্রিনের বিভিন্ন অংশে সরানো যেতো, এখন আর যায় না।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ: টাস্কবারকে খুব একটা কাস্টোমাইজ করার প্রয়োজন হয় না। বিশেষ করে, আপনি যদি একজন সাধারণ ইউজার হয়ে থাকেন, তবে এই অ্যাডভান্স লেবেলের কাজটি আপনার প্রয়োজন নেই।
সমস্যা-৯: উইন্ডোজ ১১-তে স্কাইপ (Skype) নেই!
পিয়ার-টু-পিয়ার ভিডিও কলিং এর ক্ষেত্রে প্রথম জনপ্রিয় উইন্ডোজ অ্যাপ্লিকেশন ছিল skype। এর মাঝে অনেক অ্যাপ্লিকেশন আসলেও অনেকের কাছে এখনো স্কাইপই সর্বাধিক গ্রহণীয় ভিডিও কলিং অ্যাপ। কিন্তু, উইন্ডোজ ১১-তে স্কাইপ বিকল্পের সমুদ্রে হারিয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। মাইক্রোসফট্ নিজেও এর বিকল্প হিসেবে টিমস্ কে গ্রহণ করেছে যা অনেক ব্যবহারকারীরই পছন্দ হয়নি।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ: আপনিও স্কাইপ এর বিকল্প হিসেবে হোয়াটস্ অ্যাপ, ভিবার বা উইচ্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
সমস্যা-১০: উইন্ডোজ ১১-তে কর্টানা (Cortana) নেই!
উইন্ডোজ ১১ এর সমস্যা হিসেবে এটি অন্যতম। কারণ, উইন্ডোজ ১০ এর ইউজারদের মধ্যে কর্টানা অনেকেরই খুব প্রিয় ছিল। বিশেষ করে, ভয়েস সার্চের ক্ষেত্রে এটি অনেকের কাজে আসতো। বর্তমান ভার্সণে এটি না থাকায় অনেক ইউজারই হতাশ।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ: আপনি চাইলে ম্যানুয়্যালি কর্টানা ইনস্টল করে নিতে পারেন। জেনে নিন কিভাবে Cortana Install করবেন।
সমস্যা-১১: অ্যাপ্লিকেশন ডিলিট
আপনি যদি মোবাইল থেকে কোনও অ্যাপ ডিলিট করতে চান, তবে সেটি যে কত সহজ তা আপনাকে আর বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু, কম্পিউটার থেকে কোনও অ্যাপ ডিলিট করতে গেলে আপনাকে কিছু প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। চাইলেই আপনি এক ক্লিকে কোনও অ্যাপ্লিকেশন ডিলিট করতে পারবেন না।
উইন্ডোজ ১১-তে সেটাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। আপনি যদি কম্পিউটার থেকে কোনও অ্যাপ্লিকেশন ডিলিট করতে চান, তবে আপনাকে প্রথমে কন্ট্রোলে প্যানেলে যেতে হবে। সেখান থেকে অ্যাপটি খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সেখান থেকে আরো কয়েক ক্লিকে কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সেটি ডিলিট করতে হবে।
শেষ কথা
মাউক্রোসফট্ এর নতুন অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১১ এর সমস্যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হলো। আশা করি, এগুলো আপনাকে উইন্ডোজের নতুন ভার্সণটি ব্যবহারে কিছুটা হলেও সচেতন করবে। আবার, এই ছোট খাট সমস্যাগুলো আপনি অনায়াসেই অ্যাভয়েড করে যেতে পারেন। অর্থাৎ, নিশ্চিন্তেই এটি ব্যবহার করতে পারেন। নিশ্চয়ই আগামীতে উইন্ডোজ টিম সবগুলো সমস্যাই সমাধান করে দেবে।
Leave a Reply