অনেকেই অনেক কৌতুহলের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন উইন্ডোজ ১১ এর ফিচার, ইন্টারফেস, প্রোডাক্টিভিটি, দাম ও অন্যান্য আরো নানা বিষয় সম্পর্কে জানার জন্যে। মাইক্রোসফট্ এর মাস্টারপিস হতে যাওয়া এই অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে যাবতীয় সমস্ত কিছুই আজ আপনাদের জানিয়ে দেবো, ইংশাল্লাহ্।
উইন্ডোজ ১১ কি?
মাইক্রোসফট্ কর্পোরেশনের নতুন কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম হলো উইন্ডোজ ১১। উইন্ডোজ ১০ এর সুবিধা ও সাফল্যের পর, ৬ বছরের মাথায় রিলিজ হওয়া এই OS আরো অনেক মর্ডান, সিমপ্লিপাইড, ক্রিয়েটিভ ও প্রোডাকটিভ।
নতুন নতুন ফিচার আর ভিন্ন রকম ইন্টারফেস ইতিমধ্যেই ব্যবহারকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আশা করা যায়, নতুন এই অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যবহারকারী সংখ্যা ও জনপ্রিয়তার দিক থেকে উইন্ডোজ ১০ কেও ছাড়িয়ে যাবে।
উইন্ডোজ ১১ এর ঘোষণা
২০২১ সালের জুন মাসের ২৪ তারিখে মাইক্রোসফট্ কর্পোরেশন উইন্ডোজ ১১ এর রিলিজ ডেট ঘোষণা করে। ‘মাইক্রোসফট্ বিল্ড ২০২১’ নামক একটি ডেভেলপার কনফারেন্সে প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং চেয়ারম্যান Satya Nadella এই ঘোষণা দেন।
ঘোষণা দেয়ার সময় তিনি আরো জানান যে, কয়েক মাস ধরেই তিনি উইন্ডোজ ১১ এর ডেভেলপার ভার্সণ ব্যবহার করছেন এবং এর ফিচার ও প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত।
উইন্ডোজ ১১ এর রিলিজ ডেট
২০২১ এর অক্টোবর মাসের ৫ তারিখকে রিলিজ ডেট হিসেবে ঘোষণা দেয় মাইক্রোসফট্ কতৃপক্ষ। ঘোষণা অনুযায়ী ইতিমধ্যেই উইন্ডোজ ১১ কে ডেভেলপার ভার্সণ থেকে অবমুক্ত করে ইউজেবল ভার্সণে রূপ দেয়া হয়েছে এবং বহু ব্যবহারকারীই তাদের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১১-তে আপডেট করেছেন।
উইন্ডোজ ১১ কারা পাবে
বর্তমানে যারা উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন, তারা উইন্ডোজ ১১-তে আপডেট করে নতুন ও আলোচিত এই অপারেটিং সিস্টেমটি ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারবেন। উইন্ডোজ ১০ আছে এমন কম্পিউটারগুলোর স্ক্রিণেই উইন্ডোজ ১১ এর আপডেট সম্পর্কে নোটিফিকেশন আসছে এবং সেখান থেকেই ব্যবহারকারী আপডেট করে নিতে পারছেন।
উইন্ডোজ ১১ এর সিস্টেম রিকোয়্যারমেন্ট
উইন্ডোজ ১১ এর ওভারভিউ পেজে এর সিস্টেম রিকোয়্যারমেন্ট দেয়া হয়েছে। যদিও উইন্ডোজ ১০ এর রিকোয়্যারমেন্টের সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য নেই, তবু কিছু ভিন্নতা তো রয়েছে। নিচের লিস্ট থেকে দেখে নিন উইন্ডোজ ১১ এর সিস্টেম রিকোয়্যারমেন্ট-
- প্রসেসর রিকোয়্যারমেন্ট: 1GHz 64-bit dual-core processor.
- র্যাম রিকোয়্যারমেন্ট: কমপক্ষে ৪ জিবি।
- ড্রাইভ রিকোয়্যারমেন্ট: কমপক্ষে ৬৪ জিবি।
- ডিসপ্লে রিকোয়্যারমেন্ট: ৯ ইঞ্চি ডিসপ্লে
- রেজ্যুলেশন রিকোয়্যারমেন্ট: 1366×768 resolution
- গ্রাফিক্স রিকোয়্যারমেন্ট: DirectX 12 compatible graphics/WWDM 2.x
- সিস্টেম ফার্মওয়্যার রিকোয়্যারমেন্ট: UEFI, Secure Boot capable
- টিএমপি রিকোয়্যারমেন্ট: version 2.0
উইন্ডোজ ১১ এর ফিচার
ফিচার পরিবর্তণের দিক থেকে উইন্ডোজ বরাবরই ব্যতিক্রম। উইন্ডোজ ৭ থেকে শুরু করে ১০ পর্যন্ত প্রতিটি আপডেট ভার্সণেই উইন্ডোজ নতুন নতুন অনেক ফিচার নিয়ে এসেছে। উইন্ডোজ ১১ তার ব্যতিক্রম নয়। এই ভার্সণটিরও প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকছে নতুন ফিচার। আসুন, জেনে নেই উইন্ডোজ ১১ এর আলোচিত ফিচারগুলো সম্পর্কে।
ডিজাইন এন্ড ইন্টারফেস – Design and interface
উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের সবাই জানেন যে, উইন্ডোজের টাস্কবার (taskbar) থাকে ডিসপ্লে স্ক্রিনের নিচের বাম কর্ণারে। কিন্তু, উইন্ডোজ ১১-তে এসে সেটা আর কেউ দেখছেন না, মাইক্রোসফট্ এটাকে পরিবর্তণ করেছে। উইন্ডোজ ১১ এর টাস্কবার এখন মাঝখানে দেখতে পাচ্ছেন ব্যবহারকারীরা।
শুরুর দিকে ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেই একই ভুল করছিল যে, Start বাটনের জন্যে মাউস কার্সর বারবার বামপাশের দিকে চলে যাচ্ছিল। অর্থাৎ, মাঝখানে থাকা Taskbar বা Start button এ অভ্যস্থ হতে সময় লাগছে অনেকেরই।
উইন্ডোজ ১১ এর অ্যাপস্ লিস্টে Start Menu রিডিজাইন করা হয়েছে। কাজেই, এটি এখন আরো সিসটেমেটিক ও অর্গানাইজড্ হয়েছে। ফলে, ব্যবহারকারী চাইলে এখন যে কোনও অ্যাপসকে পিন করে রাখতে পারবেন। এমনকি, এখানে একযোগে সমস্ত অ্যাপস দেখা যাবে। এখানে একটি রিকোমেন্ডেড সেকশন রয়েছে যেখানে ব্যবহারকারী সম্প্রতি ব্যবহার করা সকল ফাইল ও ফোল্ডার দেখতে পাবেন।
এক কথায়, উইন্ডোজ ১১ এর ডিজাইন এন্ড ইন্টারফেস এখন আরো অনেক সুন্দর ও গোছানো।
নেগেটিভ ইফেক্ট: কিছু কিছু ব্যবহারকারী Start Menu মাঝখানে থাকাটা পছন্দ করছেন না। মাইক্রোসফট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের কমেন্টস্ থেকে এটা জানা গিয়েছে।
উইজেট – Widgets
উইন্ডোজ ১১ এর ব্যবহারকারীরা টাস্কবার থেকে উইজেট অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এটি প্রকৃতপক্ষে অ্যাপস্ ও সার্ভিসের দ্রুত আপডেট (quick updates) শো করে থাকে। এখানে থাকা নিউজ উইজেট সাম্প্রতিক বিশ্বের খবরাখবর, রাজনীতি, ইভেন্টস্, ফিন্যান্স, স্পোর্টস্ ও টেকনোলোজিসহ আরো অনেক কিছুই শো করছে।
এই উইজেটটা যদিও উইন্ডোজ ১০-এও ছিল, কিন্তু এখানে এটি আরো অনেক গোছানো। এমনকি, এটি ১০ এর চেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। ১০-এ এটি ছিল নিচের রাইট কর্নারে। ১১-তে এটিকে রাখা হয়েছে লেফট্ কর্নারে।
আপনি চাইলে এখানে আরো অনেক উইজেট অ্যাড করতে পারবেন। যারা মাঝে রয়েছে, স্পোর্টস্ স্কোর, আউটলুক ক্যালেন্ডার, ট্রাফিক আপডেট, ফটোজ, এন্টারটেইনমেন্ট, ফ্যামিলি সেইফটি, ইত্যাদি।
নোটিফিকেশন প্যানেল ও সেটিংস্ – Notifications Panel and Settings
উইন্ডোজ ১১ এর বড় ধরণের পরিবর্তণগুলোর মধ্যে Notifications Panel and Settings অন্যতম। এটাকে আপনি রাউন্ডেড কর্ণার আকারে সব জায়গাতেই দেখতে পাবেন। এটি UI দিয়ে ইমপ্লিমেন্ট করা, যা মূলত অ্যান্ড্রয়েড ও ম্যাক ওএস এর ইনস্পাইরেশন।
এটি নোটিফিকেশন সেন্টারেও দেখা যাবে। এমনকি, এটি এখন সময় ও দিনপঞ্জিতেও (Time and Calendar) ইন্টিগ্রেট করা হয়েছে। উইন্ডোজ ১১তে এটি সত্যিই আগের ভার্সণগুলোর চেয়ে বেশি ভাল লাগছে।
ফাইল এক্সপ্লোরার – File Explorer
সম্পূর্ণ নতুনভাবে File Explorer ডিজাইন করা হয়েছে। File Explorer এর আইকনটি এখন দেখতে অনেক স্মার্ট। UI এর চারপাশে এটিকে ফ্রস্টেড গ্লাস দিয়ে সেট করা হয়েছে। তবে, এটি দেখে অনেকেই বলছেন যে, উইন্ডোজ ম্যাক ওএস এর মতো হতে চাইছে।
File Explorer-এ পিকচার, ভিডিও, ডকুমেন্টস্, ডাউনলোডসহ প্রায় সকল কিছুই এখন কালার কোডেড। ফলে, সেগুলো দেখতে অনেকটা কার্টুন আইকনের মতো এবং সহজেই চেনা যায়।
স্ন্যাপ লে-আউটস্ ও গ্রুপস্ – Snap Layouts and Groups
মাইক্রোসফট্ উইন্ডোজ ১১ তৈরির ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ের দিকে ফোকাস দিয়েছে তার মাঝে অন্যতম একটি হচ্ছে স্ন্যাপ লে-আউটস্ ও গ্রুপস্। উইন্ডোজ ৮ দিয়ে মাইক্রোসফট্ সর্বপ্রথম আমাদেরকে Snap এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তার আগ পর্যন্ত একটা ডকুমেন্ট খুলে এবং বন্ধ করে আরেকটা ডকুমেন্টে নোট নিতে হতো।
অর্থাৎ, দুইটা ডকুমেন্ট একসঙ্গে পাশাপাশি খোলা যেতো না। উইন্ডোজ ১১ এখন এই সুবিধা নিয়ে এসেছে যে, Snap অ্যাপস্ দিয়ে সাইড বাই সাইড মাল্টিপল ডকুমেন্ট ওপেন ও এডিট করা যাবে। কারণ, উইন্ডোজ ১১ Snap Groups সুবিধা সম্বলিত।
নতুন মাইক্রোসফট্ স্টোর – New Microsoft Store
উইন্ডোজ ১১ এর একটি বড় ঘোষণা হচ্ছে মাইক্রোসফট একটি নতুন অ্যাপ স্টোর তৈরি করছে, যাতে একটি নতুন fluid UI যুক্ত করা হয়েছে। এটা কিন্তু বড় খবর নয়। স্টোরের ক্ষেত্রে মূল খবর হচ্ছে মাইক্রোসফট্ তাদের পলিসিতে প্রচুর পরিবর্তণ এনেছে। বিশেষ করে, কোন অ্যাপস্গুলো স্টোর ফ্রন্টে থাকবে, সে ব্যাপারে নতুন নীতিমালা তৈরি হয়েছে।
নতুন এই মাইক্রোসফট্ স্টোরে এখন অ্যাপ ডেভেলপাররা unpackaged Win32 apps in .exe or .msi form সাবমিট করতে পারবেন। এমনকি, তারা এখন থেকে কন্টেন্ট ডেলিভারী নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন। সেই সাথে, নিজস্ব কমার্স প্লাটফর্মও ক্রিয়েট করতে পারবেন, যেখান থেকে মাইক্রোসফট্ কোনও ধরণের রেভিনিউ নেবে না।
মাইক্রোসফট আরও ঘোষণা করেছে যে, উইন্ডোজ ১১-তে টিকটকের মতো অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস চলবে এবং মাইক্রোসফ্ট স্টোর সেগুলোকে সাপোর্ট দেবে। তবে, লঞ্চিং এর শুরু থেকেই এটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সাপোর্ট করবে না। কিন্তু, ২০২২ সালের শুরুর দিকেই উইন্ডোজ ইউজাররা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট্ অ্যাপ স্টোর।
গেমস্ – Games
এটা কি হয় যে মাইক্রোসফট্ নতুন অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আসবে আর তাতে গেম ও গেমারদের কথা ভাববে না? উইন্ডোজ ১১ নতুন কিছু গেমিং-সেন্ট্রিক ফিচার নিয়ে এসেছে। এগুলোর মাঝে অন্যতম কয়েকটি হলো অটো এইচডিআর (High Dynamic Range), ইন্টিগ্রেটেড এক্সবক্স অ্যাপস্, ডিরেক্ট স্টোরেজ, ইত্যাদি।
উইন্ডোজ ১১ এর দাম
এখন পর্যন্ত উইন্ডোজ ১১ এর জন্যে কোন দাম নির্ধারণ করেনি মাইক্রোসফট্ কর্পোরেশন। যে কেউই এখন উইন্ডোজ ১০ থেকে ১১-তে আপডেট করতে পারছে একদম ফ্রিতে। তবে, সামনে হয়তো দাম নির্ধারণ হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে হয়তোবা উইন্ডোজ ১০ এর সাথে খুব বেশি পার্থক্য থাকবে না। উইন্ডোজ ১০ হোম এর দাম ছিল ১১০ ডলার, প্রো এর দাম ছিল ১৫০ ডলার। উইন্ডোজ ১১ এর ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনও ভার্সণ আসেনি এবং দামও ধরা হয়নি।
Akash Biswas says
আমি উইন্ডোজ ১১ আসার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবহার করা শুরু করেছি। এর ফিচারগুলো অসাধারণ, তবে উইন্ডোজ ১০ এর কিছু কিছু ফিচার ১১ থেকে কিছুটা ভাল।