এসি! শীতকালে ভুলে গেলেও গ্রীষ্মকালে যাকে ছাড়া জীবন অতিষ্ঠ মনে হয়। বাইরের হলকা গরম হাওয়া এসে যখন স্পর্শ করে, তখন এসির ঠান্ডা শীতল বাতাসের জন্য মনটা যেনো চাতকের মত বসে থাকে৷ কী ভাবছেন? এই গরমে একটা এসি কিনেই নেবেন? তাহলে তো কিছু বিষয় আপনাকে জানাতেই হয় যেগুলো এসি কেনার আগে আপনার যাচাই করে নেয়া উচিৎ।
সুতরাং, আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই, যখন এসি কিনতে গিয়ে আপনি বিভিন্ন অনিশ্চয়তায় ভুগছেন, যে কী করা উচিত!
আসুন, তবে জেনে নেই এসি কিনতে যাওয়ার আগে কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত-
এসি কেনার আগে বিবেচ্য বিষয়
১. রুমের আকার অনুযায়ী এসির সক্ষমতা দেখে নেবেন
গ্রীষ্মকালে কাঠফাটা রোদ্দুরে যখন প্রাণ আনচান করে এসি তখন যেনো বিশাল এক সমস্যার সমাধান। কিন্তু এই এসি হতে হবে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক। আপনি যে রুমে এসি লাগাবেন, তার আকার যদি ১০০-১২০ বর্গফুট পর্যন্ত হয় তাহলে ১ টন পরিমাপের এসি আপনার জন্য যথেষ্ট।
কিন্তু এর থেকে বেশি হলে ১.৫ কিংবা ২ টন এসির প্রয়োজন পড়বে৷ তাই, এসি কেনার আগে এটি অবশ্যই দেখে নেবেন। নয়ত এসি বিস্ফোরণের মত ভয়াবহ দুর্ঘটনা ও বিপদের শিকার হতে পারেন আপনি।
২.ইনভার্টার এসি কিনুন
এসি কেনার আগে ইনভার্টার এসির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া অত্যন্ত লাভজনক। কারণ, এটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। একইসাথেম এর সক্ষমতাও অত্যন্ত কার্যকারী। বর্তমানে বিদ্যুৎ এর যে চাহিদা, তা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। তাই, আপনার আরামের সাথে সাথে যদি সরকারেরও কিছুটা সাশ্রয় হয় তবে তাতে তো আখেরে লাভটা আপনারই হবে, তাই না?
৩. এসির সাথে আপনার রুমের সামঞ্জস্য মিলিয়ে নিন
আপনি কত তলায় থাকেন এবং আপনার ঘরে কী পরিমাণ আলো প্রবেশ করে, এসি ক্রয় করার আগে তা অবশ্যই নজরে রাখবেন। কারণ, উপরের তলায় ঘর ঠান্ডা রাখতে বেশি ওজনের এসি প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ৫ তলায় থাকেন, তবে এর নিচের তলাগুলোর তুলনায় আপনার কমপক্ষে ০.৫ টন বেশি ওজনের এসির প্রয়োজন পড়বে।
৪. এসি কেনার আগে বিইই রেটিং অবশ্যই দেখে নিবেন
বিইই রেটিং বলতে বোঝায় এসির সক্ষমতার হার। আপনি দেখবেন যে এসির বিইই রেটিং বেশি সেই এসির সক্ষমতা এবং কার্যকারিতা অনেক বেশি। যেমন, ফাইভ রেটিং সমৃদ্ধ এসি অত্যন্ত ভালো মানের হিসেবে ধরা হয়। তাই, এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
৫. স্মার্ট এসি নাকি নন-স্মার্ট এসি?
স্মার্ট এসি বলতে বোঝায় যেগুলোতে ওয়াইফাই এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন, ভয়েস কন্ট্রোল সিস্টেম, অটো টেম্পারেচার কন্ট্রোল, ইত্যাদি। এই এসিগুল্পতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকার কারণে কিছুটা সুবিধা বেশি পাবেন। আর যেখানে সুবিধা বেশি পাচ্ছেন, সেখানে দামটাও অবশ্যই তুলনামূলক বেশিই হবে।
নন-স্মার্ট এসি হল সাধারণ এসি যেগুলো রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী তাপমাত্রা বাড়াতে কমাতে পারবেন। স্মার্টের তুলনায় দাম কিছুটা হলেও সাশ্রয়ী হবে। তবে, ভালো কার্যকারিতাসম্পন্ন নন স্মার্ট এসি আপনি সাশ্রয়ী দামে পেতে পারেন। তাই, এই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আপনার বাজেট অনুযায়ী যেমন চান, সেভাবেই আপনার প্রয়োজন মত এসি কিনতে পারেন।
৬. এসির অভ্যন্তরীণ অংশের শব্দের ব্যাপারটি মাথায় রাখবেন
এসির অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কার্যকারিতার জন্য সাধারণত কিছুটা শব্দ হয়ে থাকে। ব্র্যান্ড এবং মান অনুযায়ী এই শব্দ কম বা বেশি হয়ে থাকে। আপনি আপনার চাহিদামত এই বিষয়টির উপর নজর দেবেন।
যেমন, আপনি যদি আপনার বাচ্চার রুমের জন্য এসি কিনেন অথবা অল্প শব্দেই আপনার ঘুম ভেঙে যায়, এমন কোনো সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে আপনার এমন ব্র্যান্ডের এসি কিনতে হবে যাতে শব্দ খুবই কম হয়। অথবা, আপনি এমন এসি কিনতে পারেন যাতে শব্দ কমানোর অর্থাৎ ব্রিজ (Breeze) মোড সচল থাকে।
৭. আপনার ঘরের সদস্য সংখ্যার দিকেও নজর দিন
এসির ধরণ যেমন ঘরের উপর নির্ভর করে, তেমনি সেই ঘরে কতজন মানুষ থাকবে সেটার উপরও নির্ভর করে। সবসময় মাথায় রাখবেন একটি ঘরে যদি বেশি মানুষ থাকে, তবে সেই ঘরে বেশি টনের এসি প্রয়োজন হবে।
৮. প্রয়োজনে আপনি এসির সাথে হিটারও পেতে পারেন
এসি গরমের দিনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অবশ্যই। কিন্তু বিশেষভাবে আপনি শীতের দিনেও এসি কাজে লাগাতে পারেন, যদি আপনার এসিতে হিটার মোড সচল থাকে। এর জন্য আপনাকে কিছুটা অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। তবে, কিছু দিক বিবেচনায় এই অপশনটি নিঃসন্দেহে খুব ভালো। কেননা পুরো শীতকাল এসি না চালানোর ফলে এতে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় সার্ভিসিং করানোর পরও সমস্যা থেকেই যায়। ইলেকট্রনিকস এর উপকরণ সাধারণত দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকলে তা নষ্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাই, হিটার মোড অন থাকলে এই ঝুঁকি থেকে আপনি বেঁচে যেতে পারেন। বাকিটা অবশ্যই আপনার বাজেট এবং প্রয়োজনের উপর নির্ভর করবে।
৯. এসি কেনার সময় কপার কয়েলযুক্ত এসির কথা বিবেচনা করতে পারেন
বাজারে আপনি বিভিন্ন ধরণের এসি পাবেন। এক এক এসির কার্যকারিতা, উপকরণ এক এক রকমের। তবে কপার কয়েল সমৃদ্ধ এসি কেনার সুবিধা অনেক। এটি দ্রুত আপনার ঘর ঠান্ডা করবে এবং সার্ভিসিং করানোও সহজ।
দামে কিছুটা বেশি হলেও অন্যান্য এসির তুলনায় এটি অধিক নির্ভরযোগ্য। এর কার্যক্ষমতা অত্যন্ত ভালো। তাই, এসি কেনার আগে এই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আশা করি এতে আপনার লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১০. অতিরিক্ত ফিল্টার সমৃদ্ধ এসি কিনুন, যদি আপনার প্রয়োজন হয়
কিছু এসিতে ঘর ঠান্ডা করার পাশাপাশি আরও কিছু সিস্টেম থাকে। যেমন দুর্গন্ধ দূরীকরণ, ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের হার কমানো ইত্যাদি। এগুলো এসির অতিরিক্ত কিছু কাজের নমুনা, যা একান্তই নির্ভর করবে আপনার বাজেট এবং প্রয়োজনের উপর। এর জন্য অবশ্যই বিদ্যুৎ খরচ এবং অন্যান্য খরচ বেশি হবে। তাই, প্রয়োজন আছে কিনা সেটার উপর ভিত্তি করে এই ফিল্টারগুলোর প্রতি নজর দেবেন।
১১. অতিরিক্ত সংযুক্তি
এসির বাতাসে যেমন অভ্যন্তরীণ কিছু ফিল্টার সিস্টেম রয়েছে, তেমনি আরও কিছু কার্যকারিতা রয়েছে এর। যেমন স্লিপ টাইমার যার মাধ্যমে আপনি আপনার ঘুমের সময় নির্ধারণের কাজে এসি ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি, মশা মারার কাজেও চাইলে এসি ব্যবহারযোগ্য। এসিতে অটো ক্লিন সিস্টেমও থাকে। তবে, এগুলো একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছের উপর নির্ভর করে। অতএব, আপনি এই অপশনগুলো নেবেন কিনা তা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত।
উপসংহার
এসি ব্যবহার এখনকার জীবনের সাথে যেনো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রচন্ড তাপের প্রদাহে জীবন যখন অতিষ্ঠ, তখন একটু হিমশীতল স্পর্শ কে না চায়। তাই, এক্ষেত্রে একইসাথে সাশ্রয়ী এবং লাভবান হতে হবে আপনাকে। আপনার যদি সীমিত বাজেট হয়, তবে অতিরিক্ত অংশগুলো বাদ দিয়ে সাধারণ যে এসি সেটা কিনতে হবে।
তবে, তা যেনো অবশ্যই ভালো মানের হয়। কেননা, কেনার কিছুদিন পর পরই যদি সার্ভিসিং করানো লাগে অথবা মেকানিকের কাছে ছুটতে হয়, তবে তো খাজনার চেয়ে বাজনাটাই বেশি হয়ে গেল। আর যদি বাজেট নিয়ে আপনার কোনো চিন্তা না থাকে আর অন্যান্য অপশনগুলোও প্রয়োজন হয়, তবে বিভিন্ন ফাংশন সমৃদ্ধ স্মার্ট এসিগুলো তো আছেই আপনার জন্য। নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে কিনে ফেলুন।
না না, একেবারে চোখ বন্ধ করে নয়। ভালো ব্র্যান্ডের এসি খোঁজ খবর নিয়ে দেখে শুনে কিনুন। তারপর না হয় বাড়িতে এসে আরামে চোখ বন্ধ করে এসির শীতল আবহাওয়ায় চোখ বন্ধ করে একটা ঘুম দেবেন।
Leave a Reply