আপনি পে পার ক্লিক বা পিপিসি মার্কেটিং সম্পর্কে শুনেছেন এবং হয়তো এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আগ্রহী। অথবা, হতে পারে আপনি পিপিসি সম্পর্কে সবকিছু জানেন। তবে, কিছু বিষয় এখনো পুরোপুরি আয়ত্বে আসেনি। এখন যেহেতু চাইছেন এটি ব্যবহার করে আপনার ব্যবসার বিস্তার ঘটাতে, তাই পিপিসি সম্পর্কে প্রপারলি জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে আপনার।
এই লেখাটি হতে যাচ্ছে আপনার জন্যে পিপিসি সম্পর্কে প্রথম পাঠ যা আপনাকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবে। চলুন, প্রথমেই এর সংজ্ঞার দিকে মনোযোগ দেয়া যাক। অর্থাৎ, বেসিক থেকে শুরু করে পিপিসি’র পুরোটাই বোঝার চেষ্টা করা যাক।
পিপিসি কী?
পে পার ক্লিক এর সংক্ষিপ্ত রূপ পিপিসি। এটি একটি অনলাইন অ্যাডভার্টাইজিং মডেল যেখানে বিজ্ঞাপনদাতারা প্রতিবার তাদের বিজ্ঞাপনগুলির যে কোনটিতে ক্লিক করার পরে একটি ফি প্রদান করে। অর্থাৎ, বিজ্ঞাপনদাতা তার পণ্য বা সেবা বিক্রি করার জন্যে যে অনলাইন অ্যাড দিয়ে থাকে, তাতে একজন ভিজিটরের প্রতিবারের ক্লিকের জন্যে ইউজারকে যে পেমেন্ট করে থাকে, তাকেই পিপিসি বা পে পার ক্লিক অ্যাডভার্টাইজিং বলে।
বিভিন্ন ধরণের পিপিসি অ্যাডস্ রয়েছে। তবে, সবচেয়ে কমোন যে ধরণটি রয়েছে তা হচ্ছে পেইড সার্চ অ্যাড। এ ধরণের অ্যাড তখনই আসে যখন একজন ভিজিটর গুগল কিংবা অন্য কোনও সার্চ ইঞ্চিনে কোনও কিছু সার্চ করে থাকেন। বিশেষ করে, যখন কেউ কোনও কমার্শিয়াল সার্চ করে অর্থাৎ কোনও পণ্যের খোঁজ করে থাকে, তখন পেইড অ্যাড বা পিপিসি অ্যাড শো হয়।
তার মানে বুঝতেই পারছেন সার্চ ইঞ্জিন অ্যাডভার্টাইজিং হচ্ছে পিপিসি’র সবচেয়ে জনপ্রিয় ফর্ম। এই ফর্মটি বিজ্ঞাপনদাতাদের এই সুবিধা দেয় যে, একজন নেট ইউজার যখন তাদের পণ্য বা সেবা রিলেটেড কোনও কিওয়ার্ড সার্চ করে, তখন তারা সেই সব ইউজারদের কাছে সার্চ ইঞ্জিন স্পন্সরড্ লিংক ব্যবহার করে তাদের পণ্য বা সেবার প্রচার ঘটাতে পারে। যেমন, কেউ যদি recondition car লিখে সার্চ দেয়, তবে রেজাল্ট পেজের শুরুতেই সে পেইড অ্যাড দেখতে পাবে যেটাকে আমরা পিপিসি বলে থাকি।
এ ধরণের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্যে কি-ওয়ার্ড বেসিস বিড করার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ, বিড করার মাধ্যমেই পার ক্লিকের কষ্ট নির্ধারণ করা হয়। আর এই পে পার ক্লিক অ্যাডভার্টাইজিং এর ক্ষেত্রে, বিজ্ঞাপনদাতার কেবল তখনই খরচ হয়, যখন কেউ তার অ্যাডে ক্লিক করে, নচেৎ নয়।
পিপিসি কিভাবে কাজ করে?
পিপিসি বা পে পার ক্লিক কিভাবে কাজ করে, এই প্রশ্ন অনেকটা ‘ইকোনোমি কিভাবে কাজ করে’ তার মতো।
পিপিসি একটি বড়ো ক্যাটেগরি, বা ব্রড একটি বিষয় যার মধ্যে বিভিন্ন প্লাটফর্ম ও মিডিয়াম রয়েছে। তবে, এটিকে মূলত দুইটি বড়ো ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়। আর সে দুইটি হলো-
- গুগল পিপিসি অ্যাডস্
- সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডস্
গুগল পিপিসি অ্যাডস্: আপনি যখন গুগল পিপিসি অ্যাড ক্যাম্পেইনে অংশ নেবেন, তখন আপনার কোম্পানীর অ্যাড ইউজারের সার্চ রেজাল্ট পেজের টপে কিংবা ট্র্যাডিশনাল অর্গানিক সার্চের নিচে ডিসপ্লে করার জন্যে গুগলকে পে করতে হবে। এছাড়া, গুগলের ডিসপ্লে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যান্য সাইট বা পেজেও অ্যাড ডিসপ্লে করা যায়। সে ব্যাপারে আমরা পরে কথা বলবো।
যখন একজন ইউজার আপনার কোম্পানীর কোনও একটি অ্যাডে ক্লিক করে, তখন কস্ট পার ক্লিক বা সিপিসি হিসেবে আপনার ডেইলি বাজেট থেকে সেই অ্যামাউন্টটি কেটে নেয়া হয়। বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে এই অ্যামাউন্টটি নির্ধারণ করা হয়। তার মাঝে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টরটি হচ্ছে কি-ওয়ার্ড। দামী বা বেশি সার্চ করা কিওয়ার্ডের ক্ষেত্রে খরচের অ্যামাউন্ট বেশি হয়, আর লো সার্চ ভলিউমের ক্ষেত্রে সাধারণত খরচ কম হয়। তবে, কিছু কিওয়ার্ড রয়েছে যেগুলোর সার্চ ভলিউম কম হলেও দামী হওয়ার কারণে খরচ অনেক বেশি হতে পারে।
আপনার বাজেট থাকা অবস্থায় গুগল আপনার অ্যাডটি কন্টিনিউ করতে থাকবে, যতক্ষণ না যথেষ্ট পরিমাণ ইউজার আপনার অ্যাডে ক্লিক না করে। আর যখন আপনার বাজেট শেষ হয়ে যাবে এবং আপনি একই ক্যাম্পেইনের জন্যে নতুন বাজেট নির্ধারণ না করবেন, তখন গুগল অটোমেটিকভাবে আপনার অ্যাডটি ডিসপ্লে করা বন্ধ করে দেবে। গুগল যে-সব উপায়ে অ্যাড ডিসপ্লে করে থাকে, সেগুলো হলো-
- সার্চ অ্যাডস্
- লোকাল সার্চ অ্যাডস্
- ডিসপ্লে অ্যাডস্
- রি-মার্কেটিং
সার্চ অ্যাডস্: সবচেয়ে কমোন অ্যাড হচ্ছে সার্চ অ্যাড যেটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং গ্লোবাল কোম্পানীগুলোর ক্ষেত্রে এটিই সর্বাধিক ব্যবহৃত পিপিসি। এ ধরণের অ্যাড ইউজারের কোয়েরির উপর নির্ভর করে অর্গানিক রেজাল্টের উপরে কিংবা পাশে ডিসপ্লে করা হয়ে থাকে।
লোকাল সার্চ অ্যাডস্: লোকাল বা লোকেশন বেইজড্ অ্যাডস্ হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড সার্চ অ্যাডের সাবসেট। এই ধরণের অ্যাডস্ সাধারণত বিশেষ কোনও স্থানের ইউজারদেরকে টার্গেট করে ডিসপ্লে করা হয়। গুগল ম্যাপ বা ইউজারের কাছাকাছি বিজনেস প্রতিষ্ঠান হিসেব করে এ ধরণের অ্যাড শো করা হয়।
ডিসপ্লে অ্যাডস্: গুগল ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক বা জিডিএন ট্র্যাডিশনাল সার্চ থেকে কিছুটা ভিন্ন। তবে, এটি দিয়েও অনেক বেশি ইউজারের কাছে পণ্য বা সেবার প্রচার ও প্রসার ঘটানো হয়ে থাকে। এ অ্যাড দিয়ে লাখ লাখ থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে টেক্সট্ এবং ক্রিয়েটিভ অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ব্যবহার করা যায়।
রি-মার্কেটিং: একজন ইউজার হিসেবে আপনি কোনও একটি কোম্পানীর ওয়েবসাইটে কতবার গিয়েছেন, ফিরে এসেছেন, তার উপর নির্ভর করে এই অ্যাড ডিসপ্লে করা হয়। ধরুন, আপনি ইলেকট্রিক সাইকেল বিক্রি করে এমন একটা ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন। এখন আপনি যত ওয়েবসাইটেই যান না কেন, সেই ওয়েবসাইটের অর্থাৎ ওই কোম্পানীর ইলেকট্রিক সাইকেলের অ্যাড দেখতে পাবেন। এটাকে বলে রি-মার্কেটিং বা রি-টার্গেটিং।
সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডস্: আমরা এতক্ষণ গুগল পিপিসি অ্যাডস্ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। এবার আসুন, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডস্ সম্পর্কে জানা যাক। একজন ইউজার যতক্ষণ না গুগলে কোনও কিছু সার্চ দিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত গুগল কোনভাবেই তার কাছে পিপিসি অ্যাডস্ শো করতে পারে না। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন কিছু সার্চ করা হোক আর না হোক, যদি কেউ সেটি ইউজ করে, তবে তার সামনে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডস্ ডিসপ্লে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা অ্যাডস্ এর সবচেয়ে বড় জায়গাটি দখল করে আছে ফেসবুক। এরপর রয়েছে টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, ইত্যাদি। ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোর ক্ষেত্রে বর্তমানে গুগল অ্যাডের চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাড বেশি ইফেক্টিভ। কেননা, এখানকার টার্গেটিং অপশনটা বেশ পাওয়ারফুল এবং বিটুবি বিজনেসের জন্যে পারফেক্ট সলিউশন।
Leave a Reply