আপনি কি নতুন উদ্যোক্তা? নাকি অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী? নাকি কোনো কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি? প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটা বিষয় নিয়ে আপনাকে সবচেয়ে বেশী মাথা ঘামাতে হয়। আর সেটা হচ্ছে- কিভাবে রকেট গতিতে বিক্রি বাড়াবেন।
আপনার সর্বোত্তম পণ্য বা সেবাটিকে কিভাবে মার্কেটে সবার সামনে উপস্থাপন করছেন, তার উপর নির্ভর করছে সেই পণ্য বা সেবাটি বিক্রির হ্রাস-বৃদ্ধি।
আপনার পণ্য বা সেবার ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে আপনি ঠিক তাদের কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন, যারা আপনার পণ্য বা সেবাটি চাচ্ছে।
এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি ৭টি মার্কেটিং কৌশলের ব্যাপারে জানতে পারবেন, যেগুলো দ্রুত গতিতে আপনার পণ্য বা সেবার বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করবে।
কিভাবে রকেট গতিতে বিক্রি বাড়াবেন
১. নিরবচ্ছিন্ন গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করুন
২৪/৭ পণ্য বা সেবার ব্যাপারে জানা থেকে শুরু করে বিক্রি; তারপর বিক্রি পরবর্তী সেবাসহ যেকোনো তথ্যের সহজলভ্যতা আপনার কোম্পানির প্রতি গ্রাহকদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাড়াবে। বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তির প্রসারে আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাৎক্ষণিক গ্রাহকসেবার ব্যব্স্থা করতে পারেন। যেমন-
- ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেইজে চ্যাটবট সংযোজন, যা যে কোনো সময় আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে গ্রাহকের কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসার জবাব দিবে।
- একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা, যেখানে আপনার গ্রাহকেরা যে কোনো স্থান থেকে তাদের মোবাইলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে মূল্য পরিশোধসহ অর্ডার দিতে পারবে।
করোনাকালীন সময়ে তাৎক্ষণিক হোম ডেলিভারি সার্ভিস অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনার কোম্পানিতে এই মান সংযোজনটা গ্রাহককে আপনার পণ্য বা সেবাটি কেনার প্রতি আকৃষ্ট করবে।
আজকাল অনেক কোম্পানি শুধু রাইড শেয়ার সেবা দিচ্ছে, যেগুলোর সাথে চুক্তির ভিত্তিতে আপনার পণ্যটি পৌছে দিতে পারেন আপনার গ্রাহকের কাছে।
২. বিভিন্ন উপলক্ষে ক্যাম্পেইন আয়োজন করুন
আমরা সবাই ফ্রি অফার পেতে পছন্দ করি। জনসাধারণের এই মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টিকে সামনে রেখে বিভিন্ন উৎসবসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলোতে কোম্পানিগুলোকে ফ্রি অফার দিয়ে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে দেখা যায়। মার্কেটিং এর পুরোনো কৌশল হলেও সময়ের সাথে সাথে নতুন মাত্রায় এই ক্ষেত্রটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আপনি অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও বিভিন্ন গিফ্ট, মূল্য ছাড় ও ফ্রি অফারের মাধ্যমে ক্যাম্পেইনের আয়োজন করতে পারেন।
যে কোনো অনলাইন স্টোর বা ই-কমার্স সাইট তৈরি করার সময় তাতে একটি ই-কমার্স থিম বা টেমপ্লেট ইন্স্টল করতে হয়। এই থিমগুলোতে আপনি খুব সহজেই ক্যাম্পেইন তৈরি করা থেকে শুরু করে নিজের মত করে বিভিন্ন অফার বানানো, মেয়াদ নির্ধারণ এবং প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করতে পারবেন।
৩. জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে কন্টেন্ট মার্কেটিং করুন
একবিংশ শতাব্দীতে “কিভাবে রকেট গতিতে বিক্রি বাড়াবেন” প্রশ্নটির একমাত্র ঊত্তর হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। কন্টেন্ট মার্কেটিং বলতে ইন্টারনেটে টেক্সট, ছবি, অডিও এবং ভিডিওর মাধ্যমে মার্কেটিংকে বুঝায়।
- আপনার বিজ্ঞাপনটি আপনি শুধু লিখে প্রচার করতে পারেন, ঠিক যেমনটা করা হয় ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার পোস্টের মাধ্যমে।
- ছবির মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মিডিয়াগুলো হলো- ইন্স্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট।
- আপনার কন্ঠটি হতে পারে আপনার বিজ্ঞাপনের সরঞ্জাম। আপনার রেকর্ডিংটা প্রকাশ করতে পারেন অ্যাপল পডকাস্ট্স, গুগল পডকাস্ট্স-এ।
- বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে কার্যকরী সরঞ্জাম হলো ভিডিও। এক্ষেত্রে ইউটিউব ও ফেসবুক সর্বোত্তম মাধ্যম।
শুধুমাত্র ইউটিউবের মাধ্যমে আপনার পণ্য বা সেবার ভিডিও মার্কেটিং খুব কম সময়ের মধ্যে আপনাকে হাজার হাজার গ্রাহক এনে দিতে পারে। একই সাথে, ফেসবুকের ফিচারগুলোর সঠিক ব্যবহার আপনার দীর্ঘ মেয়াদী মার্কেটিং পরিকল্পনায় সাহায্য করবে।
৪. ডিজিটাল সেল্স ফানেল ও ইমেইল মার্কেটিং করুন
সেল্স ফানেল হচ্ছে কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির উদ্দেশ্যে একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে গ্রাহককে তার পছন্দের সাপেক্ষে কোনো ফ্রি সেবা বা উপহার দেয়া থেকে শুরু করে কয়েকটি পর্যায়ে সেই পণ্য বা সেবাটি ক্রয় করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
ইন্টারনেটের যে কোনো জায়গায় দেয়া কোনো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহক পণ্য বা সেবা অথবা কোম্পানির নিজস্ব ওয়েব সাইটে চলে আসে। অতঃপর সাইটটির কোনো কন্টেন্ট তার পছন্দ হলে ফ্রি কোনো গিফটের বিনিময়ে ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে সাইটটিতে নিবন্ধন করে। তারপর তার ইমেইলে গিফ্টসহ পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপনটি পাঠানো হয়। এই বিজ্ঞাপনেই থাকে পণ্য বা সেবাটির সেল্স পেজের লিঙ্ক। অবশেষে আগ্রহী হয়ে গ্রাহক যদি ঐ পেইজে গিয়ে পণ্য বা সেবাটি কিনে নেয়, তখনই একটি ফানেল সম্পূর্ণ হয়। এভাবে একজন সম্ভাব্য ক্রেতাকে চূড়ান্ত ক্রেতায় পরিণত করা হয়।
৫. জনপ্রিয় ডিজিটাল বিজ্ঞাপন মিডিয়াগুলোতে অপটিমাইজ্ড বিজ্ঞাপন দিন
অনলাইন জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন মিডিয়াগুলোর মধ্যে গুগল অ্যাড, ফেসবুক অ্যাড অন্যতম। প্রচুর লোক সমাগম হওয়ায় এই মাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞাপন অনেক ফলপ্রসূ হয়।
অপটিমাইজ্ড বিজ্ঞাপন বলতে বিজ্ঞাপনকে সাধারণ কিছু শব্দ দিয়ে এমনভাবে তৈরি করা যেন সার্চ ইঞ্জিন থেকে যে কেউ খুব সহজেই খুঁজে পেতে পারে।
অ্যাডওয়ার্ড অথবা ফেসবুক অ্যাড-এ শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন তৈরি নয়, কোনো ধরণের লোকের কাছে কতবার বিজ্ঞাপনটি প্রদর্শিত হবে, কতবার ক্লিক হয়েছে, কতদিন ধরে চলবে ইত্যাদি সব কিছুর উপর বিশদ একটি রিপোর্ট পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, একটা ডিজিটাল সহকারী পেয়ে যাচ্ছেন যে আপনাকে বলে দিবে- আপনি কিভাবে রকেট গতিতে বিক্রি বাড়াবেন। আর এর উপর নির্ভর করে আপনি আপনার ভবিষ্যত মার্কেটিং পরিকল্পনা ও কৌশলে পরিবর্তন এনে আপনার বিজ্ঞাপনকে দর্শকদের জন্য আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারবেন।
৬. একই ইন্ডাস্ট্রির এক্সপার্টদের মাধ্যমে মার্কেটিং করুন
আপনার বাছাই করা পণ্য বা সেবাটি নিয়ে ব্যবসা করে যারা সফলতা অর্জন করেছেন, আপনি তাদের মাধ্যমে পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে আপনার পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করতে পারেন। এতে তার বিরাট ফলোয়ার গ্রুপের কাছে আপনার পণ্য বা সেবাটি প্রচার পাবে।
এরকম কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে এক্সপার্টদেরকে ইনফ্লুয়েন্সার বলা হয়।
আপনি বিভিন্নভাবে এক্সপার্টের ব্র্যান্ডকে কাজে লাগাতে পারেন।
- আপনি তার সাথে আপনাদের পণ্য বা সেবাটি নিয়ে কথা বলে একটা ভিডিও বানাতে পারেন।
- আপনার পণ্য বা সেবাটির ব্যাপারে তার কাছ থেকে প্রশংসা বার্তা রেকর্ড করতে পারেন।
- পণ্য বা সেবাটি নিয়ে তার একটা ইন্টারভিউ নিতে পারেন।
- আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে তার কোনো আর্টিকেল বা ভিডিও শেয়ার করতে পারেন।
৭. চলমান ধারার সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রিন্টিং ও ব্রডকাস্টিং মিডিয়া ব্যবহার করুন
বর্তমানে ডিজিটাল মিডিয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে গতানুগতিক প্রিন্টিং ও ব্রডকাস্টিং মিডিয়াগুলো (টিভি ও রেডিও) আকর্ষণীয়ভাবে মার্কেটিং করছে। এখনো জনসাধারণের চাহিদাকে কেন্দ্র করে অনেক অ্যাড এজেন্সি প্রিন্টিং মিডিয়াসহ, টিভি ও রেডিওতে বিজ্ঞাপন দিয়ে লাভজনক ব্যবসা করছে।
কিন্তু এখানে মানুষের পছন্দকে ধরে রাখার জন্য বিজ্ঞাপনের কথাগুলো অবশ্যই নতুন আঙ্গিকের হতে হবে। তা না হলে একঘেয়ে কন্টেন্টের কারণে মানুষ পণ্য বা সেবা বিমুখ হয়ে পড়বে যা বিক্রির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে সেগুলো হচ্ছে-
- চলমান সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি সার্বজনীন স্লোগান।
- জনসাধারণের আবেগ-অনূভুতির মিশ্রণে নাটকীয়ভাবে মুল কথার বহিঃপ্রকাশ।
- অপ্রাসঙ্গিকভাবে জনাকীর্ণ স্থানে বিজ্ঞাপন না দিয়ে প্রাসঙ্গিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার করা।
সাধারণত উপর্যুক্ত মার্কেটিং কৌশলগুলো প্রয়োগ করে গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া নিরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত মার্কেটিং কৌশলটি নির্বাচন করা হয়। আর “কিভাবে রকেট গতিতে বিক্রি বাড়াবেন” প্রশ্নটির সঠিক জবাব নিহিত থাকে এই কৌশলটিতেই। তাই আপনিও আপনার ব্যবসায় কৌশলগুলো কাজে লাগাতে পারেন।
অতঃপর নির্দিষ্ট কোনো কৌশলের ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে কমেন্ট বক্সে লিখে আমাদের জানাতে পারেন। তাছাড়া এই পোস্টের মার্কেটিং টিপ্সগুলোর মধ্যে কোনটি ইতোমধ্যে আপনি আপনার ব্যবসায় কাজে লাগিয়েছেন এবং কোনটি আপনার বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করেছে তা সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
Leave a Reply