শিরোনামটা দেখে অনেকেই হয়ত একটু অবাক হয়েছেন, ভাবছেন- মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং তো একই ব্যাপার! কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, শব্দ দুটোকে পরিপূরকভাবে ব্যবহার করা হলেও এদের ভূমিকা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমনকি, দুটো শব্দই পৃথক পৃথক অর্থ বহন করে।
এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং এর মধ্যে পার্থক্য নিজে সহজভাবে বুঝার পাশাপাশি অন্যকেও ভালোভাবে বুঝাতে পারবেন।
পেশাজীবীদেরকে প্রায়ই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পোর্টফোলিও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং দুটোরই বিস্তর প্রয়োগ করতে দেখা যায়। তাহলে, এদের মধ্যে অমিলটা ঠিক কোথায়! চলুন, দেখা যাক।
মার্কেটিং কি?
মার্কেটিং হলো কতগুলো ধারাবাহিক কাজের সমষ্টি, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোন পণ্য বা সেবা অথবা কোম্পানিকে আগ্রহী জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়। মার্কেট পর্যালোচনা থেকে শুরু করে পণ্য বা সেবার মূল্য নির্ধারণী এবং অবশেষে প্রচারের মাধ্যমে পণ্য বা সেবাটিকে জনসাধারণের সামনে নিয়ে আসা হয়।
বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তির কল্যাণে টিভি, রেডিও এবং প্রিন্টিং মিডিয়ার পাশাপাশি ডিজিটাল মিডিয়াগুলোতেও বিজ্ঞাপন খুব সহজসাধ্য হয়ে পড়েছে। অনেকেই এখন ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে। কারণ, ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার সুবিধা ও লাভ এখন সবারই জানা।
ব্র্যান্ডিং কি?
ব্র্যান্ডিং হলো এমন কিছু কাজ, যেগুলোর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা অথবা কোম্পানির প্রতি জনসাধারণের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হয়, যা তাদেরকে সেই পণ্য বা সেবাটি কিনতে উদ্বুদ্ধ করে। জনসাধারণের প্রয়োজনীয়তা এবং চাহিদা যাচাই করে পণ্য বা সেবা অথবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য সার্বজনীন নাম, লোগো, স্লোগান ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণ, যুগপৎ মান সংযোজন ইত্যাদির মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং এর কাজ সম্পাদন করা হয়।
উল্লেখিত পারিভাষিক সংজ্ঞা দুটি বিশ্লেষণ করলেই মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং এর মধ্যে পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হবে।
নতুন উদ্যোক্তা প্রথমেই তার উদ্যোগের জন্য একটি নাম এবং একটি স্পষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক করেন। পরবর্তীতে এই নামকে ঘিরেই তৈরী হয় বিজ্ঞাপন। তদুপরি এই বিজ্ঞাপনের নিমিত্ত্বে আগ্রহী জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী সেই নামের সাথে যুক্ত হয় মান। অতঃপর, জনসাধারণের প্রয়োজনের তাগিদে মার্কেটে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার দরুণ মার্কেটে নামটির নিজের একটি আলাদা অবস্থান তৈরী হয়ে যায়।
অর্থাৎ, প্রথমেই আসছে ব্র্যান্ডিং; তারপর মার্কেটিং। অবশেষে মার্কেটিং এর ফলাফলের উপর নির্ভর করে আবার হচ্ছে ব্র্যান্ডিং।
আপনার পণ্য বা সেবার প্রচারের জন্য সকল পরিকল্পণা এবং কৌশলের পূর্বে একটি কোম্পানি হিসেবে আপনার পরিচিতিটা স্পষ্ট হতে হবে। আর প্রাথমিক প্রচারের পর এই পরিচিতির সাথে সময়োপযোগী মান সংযোজন পরবর্তী মার্কেটিং কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করবে।
উদাহরণস্বরূপ, মার্কেটিংয়ের ফলেই এলাকায় নতুন উদ্বোধন হওয়া ফার্মেসীটার ব্যাপারে আপনি জানতে পারেন। আর ব্র্যান্ডিংয়ের কারণেই সেই নতুন ফার্মেসীটা ছেড়ে আপনি চলে যান কয়েক বছরের পুরোনো ফার্মেসীতে যেখানে আপনি নিয়মিত যান।
কৌতূহলের বশে দু-একবার হয়ত নতুনটাতে ঘুরে আসেন কিন্তু শেষে আবার ফিরে যান সেই আগের ফার্মেসীতেই। কারণ, দীর্ঘ দিন যাওয়া-আসার জন্য ওরা আপনার নিয়মিত ঔষধের ব্যাপারে জানে এবং সেই সাথে আপনারও তাদের উপর একটা আস্থা গড়ে উঠেছে।
আবার কিছু দিন পর দেখলেন, নতুন সেই ফার্মেসী ২৪ ঘন্টা বাসায় ঔষধ পৌছে দেয়ার সার্ভিস চালু করেছে। তখন স্বভাবতই রাত ১২টার পরে জরুরী অবস্থায় তাদের কাছ থেকে ঔষধ নেয়ার ব্যাপারটা আপনি বিবেচনায় রাখবেন।
মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং উভয়ের লক্ষ্য একই- পণ্য বা সেবার প্রতি জনসাধারণকে আগ্রহী করে তোলার মাধ্যমে ব্যবসায়ের উন্নতি সাধন করা। কিন্তু, পৃথক পৃথকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনের জন্য একটাকে ছেড়ে আরেকটা চিন্তা করা যায় না।
শুধু মাত্র মার্কেটিং এর দিকে গুরুত্ব দেয়ার কারণে গ্রাহক এক সময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। ফলে, বিভিন্ন ধরণের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সত্ত্বেও পুরো মার্কেটিং এর প্রচেষ্টা বিফলে যায়। অন্যদিকে, প্রচারের সঠিক প্রয়োগের অভাবে আগ্রহী গ্রাহক জানতেই পারবে না পণ্য বা সেবার নতুন সংযোজিত মানের ব্যাপারে।
পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়। মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং এর মধ্যে পার্থক্য বুঝে এ দুয়ের সুষ্ঠু প্রয়োগ শুধুমাত্র ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেই নয়, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও প্রয়োজন। মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডি এর সঠিক অনুশীলন পেশাগত জীবনে যেমন অগ্রগতির কারণ হতে পারে, ঠিক তেমনি সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনেও উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
আমাদের আশে-পাশের মানুষগুলোর সাথে মিলেমিশে চলতে এবং সবার কাছে নিজেকে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলতে অবশ্যই প্রাত্যহিক কাজে মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং এর যথাযথ অনুশীলন দরকার। সেটা কিভাবে করা যেতে পারে সে ব্যাপারে আপনাদের পরামর্শ কমেন্ট বক্সে লিখে আমাদের পাঠকদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার বন্ধুদের সাথে লেখাটি শেয়ার করে তাদেরকেও ব্যক্তিগত মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং এর ব্যাপারে জানাতে পারেন।
YappoBD says
এমন অনেকেই আছেন যারা মার্কেটিং এর সাথে ব্র্যান্ডিং কে গুলিয়ে ফেলেন। অর্থাৎ, দুইটা সম্পর্কে ভালভাবে জানে না। তাদের জন্যে দারুণ একটি লেখা যা পড়ে ব্র্যান্ডিং আর মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য বোঝাটা সহজ হবে।