প্রতিটি শিশুই খেলনা পছন্দ করে। আর এ কারণেই শপিংমল, বেবি শপ কিংবা খেলনার দোকানের পাশ দিয়ে গেলে আপনার সন্তান খেলনা কিনে চাওয়ার আবদার করে বসে। একজন আদর্শ বাবা-মা হিসেবে আপনি আপনার সন্তানকে সবসময় খুশি দেখতে চান। এ কারণেই আপনার সন্তানের আবদার পূরণ করতে তাকে বিভিন্ন সময় খেলনা কিনে দেন।
কিন্তু আপনার সন্তানকে খুশি করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই তার ক্ষতি করছেন না তো?
এমন অনেক খেলনাই আছে যেগুলো বাচ্চাদের জন্যে ভয়াবহ ক্ষতিকর। আপনার সন্তানকে তাই কিছু কিছু খেলনা কখনই কিনে দেয়া উচিৎ নয়। আর আজ আপনাদের সেই ধরণের খেলনাগুলো সম্পর্কেই জানাবো।
অধিকাংশ অভিভাবক খেলনা কেনার আগে কোন কিছু চিন্তা না করে সেটা কেনার পর অনুশোচনা করে। অনেকেই দেখা গিয়েছে অনেক দামি খেলনা কিনে ফেলছেন, আবার আছে অনেকেই কিছু বাজে খেলনা কিনছেন। তন্মধ্যে খুব কম সংখ্যক লোক চিন্তা-ভাবনা করেই খেলনা কেনেন।
কিন্তু আপনার শিশুর জন্য সুন্দর কোনও খেলনা কেনার আগে আপনাকে তার ব্যবহারিক দিকটি ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে, অবশ্যই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত। যা আপনাকে এবং আপনার সন্তানকে অপ্রত্যাশিত ক্ষতি থেকে বাঁচাবে। এই পোষ্টে আপনাদের জানাব আপনার সন্তানকে যে ১০ ধরণের খেলনা কখনই কিনে দেয়া উচিৎ নয়।
যেসব খেলনা বাচ্চাদের জন্যে ক্ষতিকর
সাধারণত, আমরা বাচ্চাদের খুশি করার জন্যে খেলনা কিনে দেই যাতে সে পড়াশুনায় মনোযোগী হয়। কিন্তু খেলনা দেয়াই বাচ্চাদের পড়াশুনার আসল সহায়ক নয়। বাচ্চাদের লেখাপড়ায় মনোযোগী করে তোলার ১০টি দারুণ উপায় রয়েছে যেগুলো অ্যাপ্লাই করে যে কোনও বাচ্চাকেই ভাল ছাত্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
খেলনাও যে একেবারে ফেলনা, তা কিন্তু নয়। তবে, কিছু খেলনার ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরী।
১. যেসব খেলনা ভয়ঙ্কর বা বিকট শব্দ তৈরী করে
অনেকেই হয়তো ভাবেন যে শব্দ সৃষ্টিকারী খেলনা শিশুদের আনন্দ দেয়। কিন্তু আপনার ধারণা ভুল। এমন কোন খেলনা যা সাইরন বাজায় কিংবা কানে খুব তীক্ষ্ণ অনুভূতির সৃষ্টি করে এমন আওয়াজ সৃষ্টি করে এই ধরণের খেলনা আপনার সন্তানকে দেওয়া উচিত নয়।
কারণ, বার বার এই শব্দ শুনে এটি শিশুদের মস্তিষ্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, এই শব্দটি আপনাকে পাগল প্রায় করে তুলবে। কিছু সময় পর শিশুটি এই খেলনাটি অপছন্দ করতে শুরু করবে। অভিভাবকদের জন্য এই খেলনাটি নির্যাতনের একটি সরঞ্জাম হয়ে দাঁড়াবে।
যেসব খেলনা বিকট বা ভয়ঙ্কর শব্দ সৃষ্টি করে-
- ফায়ারিং গান
- ফায়ারিং ট্রাক বা ট্রাকটর
- মেডিকেল অ্যাম্বুলেন্স
- রেসকিউ ফায়ার ইঞ্জিন
- রোড রিপার রাস
- ট্রাফিক কার
- পুলিশ অফিসার মাইক্রোফোন
- এয়ার হর্ন, স্টেডিয়াম হর্ন কিংবা হাইপ বাটন
- গেম বা প্লে ম্যাচ হুইসেল
২. খেলনা যেগুলো অপ্রত্যাশিত ময়লা-আবর্জনার সৃষ্টি করে
বাজারে চকচকে চমকপ্রদ অনেক খেলনা আছে যেগুলো আপনার সন্তানের জন্য খুবই বাজে একটি উপহার। এসব খেলনা আপনার অপ্রত্যাশিত ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
কারণ, আপনার সন্তান যখন এটি নিয়ে খেলবে তখন এই খেলনাগুলোর চকচকে বা চিকিমিকি উপাদানটি আপনার পুরো বাড়ি জুড়ে পড়ে থাকবে যা আপনার কষ্ট বাড়িয়ে দেবে।
যেসব খেলনা ময়লা-আবর্জনার সৃষ্টি করে-
- ওয়্যার ক্রাফ্ট রিং সেট।
- প্লে ফম
- গতিময় বালির স্যান্ডক্যাসল সেট
- চিকিমিকি যুক্ত পুতুল
- ছোট ছোট স্টিকি স্টার
- যে কোন প্রকার স্টিকার
৩. এমন খেলনা যা খুব সহজেই ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হয়ে যেতে পারে
শিশুরা স্বভাবতই খেলনা নিয়ে খেলার সময় সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে। যেমন কাঁচের তৈরী খেলনা। আপনার সন্তান কাঁচের তৈরী খেলনা মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলার পর নিমিষেই এটা কয়েকশ খন্ডে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। আপনার চোঁখের পলকেই আপনার সন্তান এই ভাঙ্গা অংশ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
অথবা, আপনি হঠাৎ এই খেলনার উপর পা দিয়ে নিজের পা কেটে ফেললেন। এরকমের খেলনা অবশ্যই কেউ কিনবেন না যা আপনার এবং আপনার সন্তানের ক্ষতি করবে।
যেসব খেলনা খুব সহজেই ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হয়ে যায়-
- কাঁচের তৈরী খেলনা; যেমন: হাতি, ঘোড়া, বানর।
- মার্বেল, ইত্যাদি।
৪. সেসব খেলনা যেগুলোর সাথে পিতামাতার জড়িত থাকা প্রয়োজন
খেলনা এমন হওয়া উচিত যা নিয়ে শিশু একা একা খেলতে পারে। বাজারে কিছু কিছু খেলনা পাওয়া যায় যেগুলোতে পিতা-মাতা কিংবা বড়দের জড়িত থাকার দরকার হয়। এটি প্রায়শই অভিভাবকদের জন্য বিরক্তির একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শিশুদের জন্য এমন কোন খেলনা কেনা উচিত নয় যেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়। কিংবা, যেগুলোতে বারবার অভিভাবকের মনযোগ দেয়ার প্রয়োজন হয়। বরং, অভিভাবকের মনোযোগী হওয়া উচিৎ সন্তানের জন্যে শিক্ষামূলক অ্যাপ ব্যবহারের সময়। অন্যান্য, খেলনায় জড়িত না থাকাই ভাল।
যেসব খেলনা খেলতে পিতামাতার জড়িত থাকা প্রয়োজন-
- নার্সারি মোবাইল
- পুশ-পুল খেলনা
- টেডি রক্সপিন
৫. এমন খেলনা যেগুলো সরাসরি অস্ত্র বা অস্ত্রে পরিণত হতে পারে
আপনার শিশুকে এমন কোন খেলনা দিবেন না যেগুলো অস্ত্র বা যেকোন সময় অস্ত্রে পরিণত হতে পারে। কেননা, এসব খেলনা আপনার শিশুর মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে।
যেসব খেলনা অস্ত্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবণা রাখে-
- নেইল কাটার
- ড্রামস্টিকস
- হার্ড বল
- কাঠের ব্লক
- গাড়ির ট্র্যাকস
- অপসারণযোগ্য মাথাসহ পুতুল, ইত্যাদি।
৬. হিংস্রাত্মক খেলনা
গবেষণায় লক্ষ করা গিয়েছে যে, হিংস্রাত্মক খেলা, যেমন শ্যুটিং এর সাথে জড়িত খেলনাগুলি শিশুদের আক্রমণাত্মক করে তোলে। এটি আপনার শিশুর মস্তিষ্কের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে।
কাজেই, ভয়ঙ্কর ছবি যুক্ত লোগো বা অস্ত্র আকারের খেলনা কখনই আপনার শিশুকে দেওয়া উচিত নয়।
কয়েকটি হিংস্রাত্মক খেলনা-
- পিস্তল
- বুম সিটি রেসার্স
- পাওয়ার রেঞ্জার্স “বিস্ট মরফার্স” ক্লে
- সাবমেশিন গান
৭. ক্ষুদ্রাকার কোন খেলনা
সবসময়ই আপনাকে যেটি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো খেলনা যাতে একদম ছোট ছোট আকারের না হয়। কারণ, একদিকে এগুলো হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া মুশকিল, অন্যদিকে এ জাতীয় খেলনা আপনার সন্তানের আকস্মিক আহত হওয়ার কারণ হতে পারে।
এমনিক, ভুল করে যদি আপনি নিজেও এগুলোর উপর পা রাখেন, খেলনাটি যত ছোট হবে আপনি খালি পায়ে পা রাখলে তত বেশি ব্যথা পাবেন।
যেসব খেলনা অতি ক্ষুদ্রাকার-
- বিজি বোর্ড
- মোটর টয়
- মিনি সারপ্রাইজ ডল
৮. যেসব খেলনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে
এমন কোন খেলনা সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যে খেলনাতে টাইমার বা ফ্রেস কম্পিলিট সিস্টেম না থাকে। অর্থাৎ, সেইসব খেলনা কখনই কিনবেন না যেগুলো কোনও ভলিউম নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত কোলাহল করে কিংবা তাদের বাক্যাংশ এবং পুনরাবৃত্তির সংখ্যা শেষ না করা পর্যন্ত এগুলি থামানো যায় না। কারণ, এসব খেলনাগুলি ঘরের সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিস হয়ে উঠবে।
যেসব খেলনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে-
- ব্যাটারি চালিত খেলনা গাড়ি
- স্কাইল্যান্ডার্স
- লাইট সিকার অ্যাওয়েটিং
৯. বাচ্চাদের জন্য ট্যাবলেট, আইফোন বা স্মার্টফোন
এখন অনেক অভিভাবকই আছেন যারা তার সন্তানকে শান্ত রাখার জন্য তাদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেন। এটি মোটেও ভালো কাজ করছেন না। একেতো এটি খুব দ্রুত ভেঙ্গে যাওয়া বা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, অন্যদিকে আপনি আপনার সন্তানের শারীরিক ও মানসিক উভয় দিকেই ক্ষতি করছেন। কারণ, সে এগুলোর অপব্যবহার করবে। যেমন, গেম খেলবে, ভিডিও দেখবে।
অনেক বাবা-মা’ই নিজেরা রিলাক্স পেতে সন্তানের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়ে এখন খুব চিন্তায় আছেন। কারণ, সন্তান ইতিমধ্যে গেম খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েছে যা থেকে তাকে আর ফেরানো যাচ্ছে না। তবে, চিন্তার কিছু নেই। আপনার সন্তানকে সর্বক্ষণ গেম খেলা থেকে বিরত রাখার ৪টি কার্যকরী উপায় আছে।
যারা এখনো সন্তানের হাতে ফোন তুলে দেননি, তাদের কোনভাবেই তুলে দেয়া উচিৎ হবে না। মোবাইল ফোনের পরিবর্তে আপনার বাচ্চাদের এমন খেলনা কিনে দিতে হবে যা সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং বাদ্যযন্ত্র, ঘর খেলা, খেলনা স্ট্যাকিং বা বিল্ডিং ব্লকগুলির মতো ক্রিয়াকলাপে বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখে।
১০. এমন খেলনা যা তার বয়স উপযোগী নয়
অনেক অভিভাবকই বয়সের ব্যাপারে কোনরকম বিবেচনা না করে খেলনা কিনে থাকেন। যখন আপনি খেলনা কিনবেন তখন সেটি আপনার সন্তানের জন্য উপযোক্ত কি না তা পর্যালোচনা করে কিনবেন। আপনার সন্তানের বয়সের পক্ষে যদি খেলনাটি উপযুক্ত না হয়, এমন কোনও জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকুন।
বাজারে বিভিন্ন রকম খেলনা পাওয়া যায়। কিন্তু এর মধ্যে থেকে আপনাকে ভেবে-চিন্তে খুব বিবেচনা করে বেস্ট খেলনাটিই কিনতে হবে। আপনি আপনার সন্তানকে এমন কোন খেলনা কখনই কিনে দিবেন না যা আপনার বা আপনার সন্তানের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আশা করি, আপনার সন্তানের জন্য উপরে উল্লেখিত খেলনাগুলো কখনই কিনে দিবেন না যেগুলো তাকে সৃজণশীল না করে প্রোবলেমেটিক করে তুলবে।
Leave a Reply